একটি মাজার গড়ে উঠার সংক্ষিপ্ত কথন

লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৬ মে, ২০১৬, ০৭:২০:২৪ সন্ধ্যা



আল্লাহ তায়ালা সকল পাপ ক্ষমা করলেও শিরকের মত পাপ ক্ষমা করবেন না। এটি কুরআনের বর্ণনা।

যদি কেউ খালেস তাওবা করে ঐ পথে আর পা না বাড়ায়, তবে তার জন্য রয়েছে ক্ষমা ও উত্তম প্রতিদান।

এই শিরকের ঝড় বইছে আমাদের দেশের মাজার গুলোতে। আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করা বা কবর সেজদা সবই শিরকের অন্তর্ভূক্ত।

হাদিসে এসেছে যে, রাসূল সা. বলেছেন : যদি আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করার হুকুম দিতাম, তবে স্ত্রীদের বলতাম তোমাদের স্বামীদের সেজদা কর।

যেহেতু আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করার অনুমতি নেই, তাই স্বামী হোক, মাজার হোক, জিন্দাপীর, মুর্দাপীর, বটগাছ, মুর্তি, পাথর সবকিছুকেই সিজদা করা শিরকের অন্তভূক্ত।



বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ভরে আছে শত শত মাজার, এগুলোর গোড়া তালাশ করলে বেশির ভাগই পাওয়া যাবে কোন মানুষের মনগড়া ও আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে শয়তানকে খুশি করতে গিয়ে ভূয়া কাজের দ্বারা মহান আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হওয়া।

গত কয়েকদিন আগে কক্সবাজার চকরিয়া এলাকা এক প্রবাসী ভাইয়ের মুখ থেকে শুনলাম, ওনাদের পাশের মাজারটির গড়ে উঠার কাহিনী।

পাশের মহল্লার জহির মিয়ারা তিন ভাই। ছোট ভাইটি বয়সে বড় দু'ভাইয়ের সন্তানের সমান। তাদের লিখাপড়া তেমন ছিল না, কিন্তু অনেক ভূমি সম্পদের মালিক ছিলেন।

জহিরদের চালতা তলায় এক জটলা ব্যক্তি প্রায় সময় বসে বিশ্রাম নিতেন। কিন্তু সমস্যা হল ঐ জাগায় জহিরের পরিবারের পুরুষরা রাত বিকালে পেশাব করতেন, দেখা গেল এক সময় বড় দু'ভাই কাশি দেওয়ার সময় ফুশফুশ বের হয়ে যায়, এ অবস্থা কিছু দিন থাকার পর তারা মারা যান।

লোকে বলাবলি শুরু করলো, জটলা বাবার বসার জায়গায় তোমার ভাইয়েরা পেশাব করতো বলে এই অবস্থায় মারা গেল, কিছু দিন পর জহিরেরও এভাবে কাশি আরম্ভ হল।

সবাই পরামর্শ দিল, তুমি এখানে জায়গাটি পবিত্র করে ঘেরাও দিয়ে রাখ, তাই করা হল, এতে করে জহিরের কাশি ভালো হয়ে গেল, আর জহিরের বিশ্বাস অনড় হল যে, জটলা বাবার আশির্বাদে সে ভালো হয়েছে।

এ বিশ্বাসের ফলে সেখানে একটি ঘর বাঁধলো, সকাল বিকাল মোম বাতি ও আগর বাতি দিতে লাগলো, ওর ভাইদের মৃত্যু দিনে এখানে গরু জবাই দিয়ে সবাইকে খাওয়ালো। কিছুদিন পর জহিরের আবুধাবী থেকে ভিসা আসলো, এটাকেও বাবার আশির্বাদ হিসেবেই নিল।

জহিরের প্রবাসে পাঁড়ি দেওয়ার পর আশপাশের মানুষজন বিভিন্ন মানত, সির্নি, পিঠা ইত্যাদি বিতরণ শুরু করলো। এতে করে মাঝারটা দিন দিন জাকজমক হয়ে উঠলো, একক প্রচেষ্টা থেকে বৃহৎ মাজারে রূপ নিল।

প্রবাস থেকে জহির মনে মনে অনেক খুশি, তার প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত একটি মাজার গড়ে উঠেছে। এতে করে তিনি অনেক ছাওয়াবের ভাগী হবেন।

কিন্তু প্রবাসে আসার প্রায় দু'বছর পর স্মার্ট ফোন ও ফেইস বুক, ইউটিউবের কল্যাণে মাঝে মাঝে কিছু বয়ান, ওয়াজ, নসীহত শুনতেন, এক সময় মাজারের হাকিকত ও এর ভয়াবহ পরিণামসহ একটি ভিডিও ওয়াজ শুনার পর জহিরের মনে পরিবর্তন শুরু হয়, অতঃপর জহিরের এলাকারই চকরিয়ার আরেক প্রবাসীর নিকট থেকে এ ব্যপারে অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয় যে, যে করে হোক মাজারটি বন্ধ করতে হবে।

গত বছর দেশে গেল, কিছু আপন লোকের সাথে আলোচনা করলো, সবাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল, মসজিদের মিলাদী হুজুরের পরামর্শ নিতেই বলে উঠলো, বিদেশে গিয়ে ওহাবী হয়ে এসেছো? দেখাচ্ছি মজা।

শুক্রবারে নামাজের পরে মসজিদের সামনে জহিরকে মুরুব্বিদের কাছে ওহাবী হওয়ার অপরাধে ক্ষমা চাইতে হলো।

আজো জহির প্রবাসে বসে মাঝে মাঝে প্রভুর দুয়ারে ধরনা দেয়, হে আল্লাহ! মাবুদ গো, শেষ বিচারের দিন আমি কি মাফ পাবো? আমি তো শিরকে রাস্তা খুলে দিয়েছি, কিন্তু বন্ধ করার ক্ষমতা যে আমার নেই।

তুমি রহম করো মাবুদ।

বিষয়: বিবিধ

২২৮০ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369287
১৬ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : শিরিকই হলো সবচেয়ে বড় গুনাহ এই শিরকের মেলা বইছে আমাদের দেশের মাজার গুলোতে। আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করা বা কবর সেজদা সবই শিরকের অন্তর্ভূক্ত। লেখাটি ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে
১৬ মে ২০১৬ রাত ০৮:১৮
306517
আবু জান্নাত লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। শুকরিয়া।

369292
১৬ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আমি মনে করি পীর ধরা ফরজ, জান্নাতে যেতে হলে আপনাকে পীর ধরতে হবে। পীর ধরা তেমনি ফরজ, চোর ধরা ঠিক যেমনি ফরজ হয়। একটা চোরকে ধরার পর যা কিছু করা হয় পীরকেও ধরার পর তা করা অতি উত্তম। চোর যেমন গৃহ থেকে মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে গৃহস্থকে নিঃস্ব করে দেয়, ঠিক তেমনি পীর তার নিচক দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের জন্য মুরিদ ও ভক্তদের মহামূল্যবান ঈমান কেড়ে নিয়ে তার যাবতীয় আমল নষ্ট করে নিঃস্ব করে দেয়। তাই শিরকের হাত থেকে বাঁচতে হলে, পরিবার ও সমাজের লোকদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে হলে পীর ধরে তাকে চোরের মতই শায়েস্তা করা ঈমানের দাবী।
ধন্যবাদ আপনাকে, এই বিষয়ে কলম ধরার জন্য। আমি আজকেও ফেইজবুকে পীর আর মাজার নিয়ে পোস্ট করেছি।
১৬ মে ২০১৬ রাত ০৮:২১
306518
আবু জান্নাত লিখেছেন : মাজার আর পীর কিন্তু এক জিনিস নয়, পীরের ব্যাপারে আপনার কথাটি ঢালাও ভাবে ঠিক নয়, কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এটি কাজি ইব্রাহীম সাহেবের মন্তব্য, যিনি টাই নিয়ে কুরআনের অপব্যখ্যায় নেমেছেন। (আল্লাহ ক্ষমা করুক)

আমার পোষ্টটি মাযার সম্পর্কিত। পীর নিয়ে না হয় অন্য সময় আলোচনা হবে।

আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১৭ মে ২০১৬ রাত ১২:১৩
306537
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ইসলামে পীরগীরির কোন স্থান আছে নাকি!!!
১৭ মে ২০১৬ দুপুর ১২:১৪
306574
আবু জান্নাত লিখেছেন : মাওলানাগীরী, শাইখগীরী, পীরগীরী, মৌলভীগীরী কিছুই ইসলামে নেই। ধন্যবাদ।
369296
১৬ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বাংলাদেশে শতকরা ৯৯ ভাগ তথাকথিত মাজার গড়ে উঠেছে এভাবে। আর কবরকে কেন মাজার বলা হবে, আমি বুঝে পাই না। মাজার বললে মানুষ একটু বেশি ভক্তি করে আর যদি করব বলে তাহলে দায়সারা গোছের রিঅ্যাকশান। আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে প্শ্ন করেছিলাম "দেশের সব ওরস শীতকালে হয় কেন? বুঝে ব্যাপারটা। ভন্ডামীর একটা সীমা থাকা দরকার। ইসলঅমের লেবেল লাগিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীরা এ জঘন্র কাজ করছে। এদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে একম্রেণীর রাজনৈতিক নেতারা। এর চেয়ে ভাল ব্যবসা মনে হয়-এ মুহুর্তে আর নেই। ধন্যবাদ শিরকা বিদআতের বিরুদ্ধে কলম ধরার জন্য।
১৬ মে ২০১৬ রাত ০৮:২৪
306519
আবু জান্নাত লিখেছেন : ভাই কবর মানে তো সেখানে মৃত দাফন হয়েছে। কিন্তু মাযার মানে যে ব্যবসার ঘর, সেখানে মৃত দাফন হোক বা না হোক।

এ সব শিরকের ব্যপারে অবশ্যই সকলকে সতর্ক হতে হবে।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।

369302
১৬ মে ২০১৬ রাত ০৮:০৮
হতভাগা লিখেছেন : শয়তান মানুষের চোখে এসব কাজকে শোভন করে তোলে। ফলে সে এই কাজকে খারাপ বলে মনে করে না । এই খারাপ কাজের মধ্যে সে ডুবে থাকে । আল্লাহ তাদের মনে মোহর মেরে দেন ।

বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম মুসলমানই মাজার ম্যানিয়া পীর ম্যানিয়ায় আক্রান্ত ।
১৬ মে ২০১৬ রাত ০৮:২৮
306520
আবু জান্নাত লিখেছেন : শয়তানের কাজই তো হলো বিভিন্ন কলাকৌশলে মানুষকে পথভ্রষ্ট করা।

তবে এসব মাযার ব্যবসা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

ধর্মীয় গাম্ভীর্যও কিন্তু দিন দিন কমে যাচ্ছে, মানুষ যেন দিনদিন ধর্ম বিরোধী হয়ে উঠছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক পথে পারিচালিত করুক।

ধন্যবাদ।

369316
১৬ মে ২০১৬ রাত ০৮:৫৫
ইরফান ভাই লিখেছেন : অসাধারন লিখেছেন।তবে আরও কিছু ছবি দিলে ভাল হত।অলরেডি বিডিটুডে এর ফেসবুক পেইজে শেয়ার করেছে।শুভ কামনা রইল।
১৬ মে ২০১৬ রাত ১০:৫৪
306532
আবু জান্নাত লিখেছেন : মুল্যয়নের জন্য শুকরিয়া। তবে কে শেয়ার করেছে, কারা শেয়ার করে? তাতো জানা হলো না।
369329
১৬ মে ২০১৬ রাত ১১:১৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বেশিরভাগ মাজার ই এভাবেই তৈরি হয়। সবই শিয়ালসা পিরের দরগা! আর তথাকথিত মুরুব্বিরা ওয়াহাবি ধরে এই শিরক কে জায়েজ করে রাখেন।
১৬ মে ২০১৬ রাত ১১:২৭
306536
আবু জান্নাত লিখেছেন : আমাদের এলাকায়ও একটি মাজারের কাহিনী আছে, পরে পোষ্ট করে জানাবো। ধন্যবাদ।
369347
১৭ মে ২০১৬ রাত ০২:৩৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাদীয়া দেওয়ার সিস্টেম না থাকলে অন্তত ৯০% পীর উঠে যেত...বা তৈরী হতনা...
১৭ মে ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
306575
আবু জান্নাত লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, ধন্যবাদ।
369349
১৭ মে ২০১৬ রাত ০৩:৪২
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : প্রিয়তে রাখলাম। কাজে আসবে।
১৭ মে ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
306576
আবু জান্নাত লিখেছেন : ধন্যবাদ।
369370
১৭ মে ২০১৬ সকাল ০৭:৫১
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : السلام عليكم ورحمة الله وبركاته।


এই মাজার বিষয় টা এখন একটা সামাজিক ক্যান্সার এ পরিণত হয়ে যাচ্ছে,
আর না ওদের কে কিছু বলা যায়,
না কিছু বুঝানো যায়।
ওদের শিকড় অনেক গভীর এ পৌছে যাচ্ছে,


মহান আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন,
আমিন
১৭ মে ২০১৬ দুপুর ১২:১৭
306579
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, ঠিক বলেছেন, বিদাআত ও শিরকের মুলোৎপাটন অনেক কঠিন।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১০
369390
১৭ মে ২০১৬ দুপুর ১২:২১
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ।
গত কয়েক বছর আগের কথা, একদিন বাজারে যাচ্ছিলাম সামনে পড়লো গ্রামের এক সহজ স্বরল লোক। হাতে ব্যাগ। আমাকে দেখে একটু নার্ভাস হচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম কি করেন। সিলেট শাহজালাল রঃ মাজারের সদকা উঠাই প্রশ্ন করলাম কে বলছে আপনাকে মাজারে জন্য উঠাইতে? সে এক বড় হুজুরের কথা বললো শুনে আমি অবাক হলাম। উনাকে কিছু সময় বুঝাইলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌ কাজ হয়েছে।
অনেকেই না বুঝে এই কাজ করে।
আপনি সচেতন মূলক পোস্টের জন্য জাজাকাল্লাহ খাইর।
১৭ মে ২০১৬ দুপুর ০২:৫৮
306587
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, জি ভাই, অনেকে আছেন না বুঝে করেন, তবে বিশেষ করে চট্টগ্রামের মাজার ভক্ত লোকেরা মাজারের বিরুদ্ধে বললে তাদেরকে মুসলমান ও মনে করেনা, অনেক ধন্যবাদ ভাই।

১১
369417
১৭ মে ২০১৬ বিকাল ০৫:০১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় আংকেলজ্বী।মহান রব আমাদের সকলকেই শিরকমুক্ত রাখুন এবং আল কোরআনের আলোকে জীবন জিন্দেগী পরিচালিত করুন এই প্রার্থনা।

সচেতনতামূলক লিখাটি পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তনসহ শিরক ও বেদাতী কার্যক্রম প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন এটাই প্রত্যাশা।
১৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
306605
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, শ্রদ্ধেয়া খালামনি।
আল্লাহ তায়ালা আপনার দোয়া কবুল করুক, আমীন।
সুন্দর অনুভুতি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File