শবে মে'রাজ সম্পর্কে কিছু আলোচনা
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৪ মে, ২০১৬, ০৯:৫৮:১২ রাত
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
সমস্ত প্রসংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেছেন। এবং হাজার দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাজেদারে মদ্বীনা সরদারে দো আলম মুহাম্মদুর রাসূলল্লাহ সাঃ এর উপর যিনি আমাদের মাঝে এসে আমাদের সঠিক পথের পথ পদর্শন করেছেন।
সম্মানীত ভাইয়েরা আজ আমি আপনাদরে সামনে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো, আমাদের সমাজে দেখা যায় রজব মাস আসলে কিছু ভাইয়েরা ২৭শে রযবকে কেন্দ্র করে ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মসজিদে মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। তারা এই রাতকে ফযীলতের রাত মনে করে সারা রাত ইবাদত করে থাকে। এবং ২৭ তারিখে তারা রোযা রাখেন। বিশেষ করে আমাদের সমাজের মা বোনদের দেখা যায় তারা এই রাতের বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
এর কারন হিসাবে তারা বলেন, রযব মাসের ২৭ তারিখে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের হুকুমে রাসূল সাঃ এর মেরাজ হয়েছে। তাই আমরা এই রাতকে অনেক ফযীলতের রাত মনে করে ইবাদত করে থাকি এবং পরের দিন তথা ২৭ তারিখ রোযা রাখি।
আসুন, আজ আমরা জেনে নেবো তাদের এই রাতের আমল শরীয়ত কতটুকু সমর্থন করেন। এটা কি জায়েয না বেদয়াত।
সম্মানিত দ্বীনি ভাইয়েরা, কুরআন-হাদীস এবং ফিকহা-ফাতওয়ার কিতাবসমূহ অধ্যায়নে দিবালকের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের এই ২৭ তারিখের আমল সম্পর্ণ নাজায়েয এবং বেদয়াত।
এর কারন হিসাবে আমরা বলবোঃ
প্রথম কথা হলো,
রাসূল সাঃ এর মেরাজ কবে হেয়েছে এটা একটা অজানা বিষয়। যেমনিভাবে রাসূল সাঃ মেরাজের তারিখ নির্দিষ্ট করে দিয়ে যান নাই তেমনি ভাবে কোন ইতিহাসের কিতাবেও এই বিষয়ে পরিস্কার করে কিছূ লিখা নাই, যে রাসূল সাঃ এর মেরাজ কবে হয়েছে।
রাসূল সাঃ এর মেরাজ কবে হয়েছে, এই বিষয়ে অনকগুলো মত পাওয়া যায়।
কোন কোন উলামায়ে কিরাম বলেন রাসূল সাঃ এর হিযরতের ৬ মাস আগে মেরাজ হয়েছে, কেউ বলেন ৮মাস আগে, কেউ বলেন ১বছর আগে,কেউ বলেন ১কছর ২ মাস আগে, কেউ বলেন ১বছর ৬মাস আগে, কেউ বলেন ৩ বছর আগে আবার কেউ বলেন ৫বছর আগে।
(সীরতে খাতামুল আম্বীয়াঃ ১/২৮৭ আর রাহীকুল মাখতুমঃ ১৩৭)
আল্লামা আলূসী রহঃ তার রচিত তাফসীরগ্রন্থ রুহুল মা’নীতেও একই ধরনের মতানৈক্য উল্লেখ করেন,
اختلف في مبدأ الإسراء اختلف في سنته فذكر النووي في الروضة أنه كان بعد النبوة بعشر سنين وثلاثة أشهر ، وفي الفتاوي أنه كان سنة خمس أو ست من النبوة ، ونقل عنه الفاضل الملا أمين العمري في شرح ذات الشفاء الجزم بأنه كان في السنة الثانية عشرة من المبعث . وعن ابن حزم دعوى الإجماع على ذلك ، وضعف ما في الفتاوي بأن خديجة رضي الله تعالى عنها لم تصل الخمس وقد ماتت قبل الهجرة بثلاث سنين . وقيل كان قبل الهجرة بسنة وخمسة أشهر ، وقيل ثلاثة أشهر ،
(রুহুল মা’নীঃ ১০/৩৫৬)
অনেকগুলো মতের মধ্যে কোন মতটা সঠিক সে বিষয়ে কিছু মতানৈক্য আছে। আল্লামা ইবনে কাইয়ুম রহঃ তার রচিতগ্রন্থ “যাদুল মায়াদে” বলেন, ১১ হিযরীতে রাসূল সাঃ তায়েফের ময়দান থেকে আসার কিছু দিন পর মেরাজ হয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায় রাসূল সাঃ এর মেরাজ নবুয়তের ১১তম বছরে যে কোন এক মাসে হয়েছিলো।
এখন কথা হলো,যে মাসে রাসূল সাঃ এর মেরাজ হয়েছিলো সে মাসটি কোন মাস ছিলো?
এই বিষয়ে যথেষ্ট মাতানৈক্য আছে। এ বিষয়ে মোট ৫টা মত পাওয়া যায়। কিছু কিছু ওলামায়ের কিরাম বলেন সে মাস রবীউল আওয়াল ছিলো। কিছু আলেম বলেন রবীউস সানী ছিলো। আবার কেউ বলেন রযব মাস ছিলো। কেউ বা বলেন রমযান মাসে মেরাজ হয়েছে। আবার এক শ্রেনীর উলামায়ে কিরাম বলেন শাওয়াল মাসে রাসূল সাঃ এর মেরাজ হয়েছে।
(সীরতে খাতামুল আম্বীয়াঃ ১/২৮৮)
এখন কথা হলো এই ৫টা মতের মাঝে কোন মতটা সঠিক। আমাদের সমাজে প্রসিদ্ধ আছে,মেরাজের তারিখ ছিলো রযব মাসের ২৭ তারিখ। কিন্তু তাদের কথাটা কি সঠিক?
আসুন আমরা সে বিষয়ে কিছু আলোচান করি।
আল্লামা ইবনে রযব রহঃ বলেন, রাসূল সাঃ এর মেরাজ ২৭শে রযব হয়েছে এই বিষয়ে যে মত পাওয়া যায় তা ছহীহ নয়।
(যাদুল মায়াদঃ ২/২৭৫)
একই ধরনের কথা আল্লামা ইবনে কাসীরও (রহঃ) বলেছেন, তিনি বলেন, ২৭ তারিখের যে হাদীসটা আছে সে হাদীসটা ছহীহ না। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়াঃ ৩/১০৭)
আল্লামা ইবনে হযর আসকালানী রহঃ তার রচিত বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগন্থ ফাতহুলবারীতে এই ৫টা মত উল্লেখ করার পর বলেন, কিছু কিছু মানুষদের কাছে যে কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, মেরাজ রযব মাসে হয়েছে তা মিথ্যা কথা।
সঠিক কথা হলো, আল্লামা ইবমে তাইমিয়া রহঃ যা বলেছেন তা। আর তা হলো, রাসূল সাঃ এর মেরাজ কবে হয়েছে এই বিষয়ে কোন অকাট্ট দলীল নাই। তাই নির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে, কোন মাসে মেরাজ হয়েছে। (ফাতহুল বারীঃ ৭/২৪৩-৪৩, লতাইফুল মায়ারেফঃ ২৩৩)
সম্মানীত দ্বীনি ভাইয়েরা, যে রাতটি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায়নি সে রাতকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২৭শে রযব এই রাতের আলাদা ফযীলত আছে মনে করে রাত জেগে ইবাদত করা এবং পরের দিন তথা ২৭ তারিখে রোযা রাখা কিছুতেই বৈধ না। শরীয়তে এধরনের ইবাদত কিছুতেই সমর্থন করে না। বরং শরীয়ত বলে এ ধরনের ইবাদত হলো সম্পূর্ণরুপে বেদয়াত।
দ্বিতীয় কথা হলো, তর্কের খাতিরে ২৭শে রযব মেরাজ হয়েছে মেনে নিলেও আমরা বলবো,এই রাতের আলাদা ফযীলত আছে মনে করে রাত জেগে ইবাদত করা এবং পরের দিন তথা ২৭ তারিখে রোযা রাখা সম্পূর্ণ না জায়েয এবং বেদয়াত।
কারন, কুরআন-হাদীস, সাহাবী, তায়েবী,তবে তায়েবী এবং আয়েম্মায়ে মুজতাহিদীনে কিরাম কারো থেকে এই রাতের আলাদা কোন ফযীলতের কথা বর্ণিত আছে বলে প্রমানীত নয়।
রসূল সাঃ বলেন, কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন আমল করে যার মধ্যে শরীয়তের কোন হুকুম নাই তা গ্রহন করা হবে না।
وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ جَمِيعًا عَنْ أَبِى عَامِرٍ قَالَ عَبْدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَمْرٍو حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ الزُّهْرِىُّ عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ قَالَ سَأَلْتُ الْقَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ عَنْ رَجُلٍ لَهُ ثَلاَثَةُ مَسَاكِنَ فَأَوْصَى بِثُلُثِ كُلِّ مَسْكَنٍ مِنْهَا قَالَ يُجْمَعُ ذَلِكَ كُلُّهُ فِى مَسْكَنٍ وَاحِدٍ ثُمَّ قَالَ أَخْبَرَتْنِى عَائِشَةُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ (ছহীহ মুসলিম শরীফঃ ৫/১৩২ হাদীস নং ৪৫৯০, সুনানে দারা কুতনীঃ ৪/২৩০)
অন্য হাদীসে আছে রাসূল সাঃ বলেন,
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِى فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ
অর্থ, তোমরা আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা অনেক ধরনের মাতানৈক্য দেখবে। তখন তোমরা আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধর।ধর্মে নতুন সৃষ্ট জিনিস থেকে তোমরা সতর্ক থাক। কেননা, ধর্মে নতুন সৃষ্ট প্রতিটি কাজই বেদয়াত এবং প্রত্যেক দেবয়াত পথভ্রষ্টতা। (সুনানে আবু দাউদঃ ৪/৩২৯ হাদীস নং ৪৬০৯,সুনানে দারমীঃ ১/৫৭, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বলঃ ২৮/৩৭৩ হাদীস নং ১৭১৪৪)
তাই এ সমস্ত হাদীসকে সামনে রেখে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাতের উলামায়ে কিরাম বলেন, যে রাতের ফযীলত ও ইবাদতের কথা এবং দিনে রোযা রাখার কথা কুরআন-হাদীস, সাহাবী, তায়েবী,তবে তায়েবী এবং আয়েম্মায়ে মুজতাহিদীনে কিরাম কারো থেকে প্রমানীত নয় সে রাতের আলাদা ফযীলত আছে মনে করে রাত জেগে ইবাদত করা এবং দিনে রোযা রাখা সম্পূর্ণরূপে বেদয়াত।
উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা প্রমানীত হয় যে, শবে মেরাজ উপলক্ষে ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে সে রাতের আলাদা কোন ফযীলত আছে বলে ইবাদত করা এবং পরের দিন রোযা রাখা নাজায়েয এবং বেদয়াত।
তবে হ্যাঁ কেউ যদি অন্য সব রাতের মত এই রাতেও ইবাদত করে তাহলে এতে কোন সমস্যা নাই। শুধু মাত্র বেদয়াত বা নিষিদ্ধ হবে ঐ সময় যখন এরাতের আলাদা ফযীলত আছে মনে করে ইবাদত করা হবে তখন।
ঠিক তেমনিভাবে কেউ যদি এই দিনে অন্য সব দিনের মত রোযা রাখে তাহলে কোন সমস্যা নাই।
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে তুমি তোমার সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করো।
আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে তুমি তোমার সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করো।
আমীন।
জাজাকাল্লাহ সুন্দর ও সত্য উপস্থাপন করেছেন
আরে বুঝেন না কেনো ভাই,
সারাবছর নামাজ পড়তে, এক নাগারে ৩০ দিন রোজা রাখতে একটু বেশি পেরেশানি হয়ে যায় না,
তাই এই রকম একটা দুইটা উতসবমুখর দিন রাত পেলে, আমাদের জন্যি ভালো হয়
অথচ আপনাদের মত কিছু বেরসিক পাব্লিক
বেদাত বেদাত বলে, পন্ড করে দেন
এক্কেবারে গুরে পানি ঢেলে দেয়ার মত করে
মন্তব্য করতে লগইন করুন