বিয়ের উদ্দেশ্য কেমন হওয়া চাই।
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:২৫:১৮ রাত
এক:
নাজমুদ্দীন আইয়ুব (রহ.)। সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর (রা.) পিতা। তার হাতে তিকরীতের শাসনভারের গুরুদায়িত্ব। কিন্তু বিয়ের বয়েস পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও বিয়ের নামগন্ধ নেই। এটা দেখে ভাই আসাদুদ্দীন শিরকূহ চিন্তিত হয়ে পড়লেন:
-কিরে বিয়ে থা করবে না?
-আমার মনমতো পাত্রী পাচ্ছি না তো।
-আমি পাত্রী দেখবো তোমার জন্যে?
-পাত্রীটা কে শুনি?
-মালিক শাহের মেয়ে অথবা নিযামুল মুলকের মেয়ে?
-নাহ, তারা আমার কাঙ্খিত পাত্রী নয়।
-তা তোমার কাঙ্খিত পাত্রীর বৈশিষ্ট্য কী বলো তো!
-আমি চাই একজন সুশীলা স্ত্রী, যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। যে আমাকে একটি নেক সন্তান উপহার দিবে। সে-সন্তানকে যথাযথ লালন-পালন করে বড় করবে। বড় হয়ে সে ছেলে হবে একজন দুর্দান্ত ঘোড়সওয়ার, সাহসী মুজাহিদ। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।
দুই:
দু'ভাইয়ে যখন কথা হচ্ছিল, তারা ছিলেন তিকরীতে, যেরুযালেম থেকে অনেক অনেক দূরে। বায়তুল মুকাদ্দাস ছিল ক্রুশেডারদের হাতে। কিন্তু নাজমুদ্দীনের তনুমন পড়ে ছিল আল আকসার পানে। এমনকি নিজের বিয়েটা পর্যন্ত স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।
আসাদুদ্দীন ভাইয়ের কথায় আশ্বস্ত হতে পারলেন না:
-তুমি যেমন কনের আশায় বসে আছ, ইহজীবনে পাবে কিনা আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে।
-যে ইখলাসের সাথে আল্লাহকে রাযি করার জন্যে কোনও নিয়্যাত করে, আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন।
উক্ত ঘটনার কয়েক দিন পর, নাজমুদ্দীন তিকরীতেরই এক শায়খের মজলিসে বসে আছেন। তার সাথে কথা বলছেন। এমন সময় এক যুবতী এসে পর্দার আড়াল থেকে শায়খকে সালাম দিল। শায়খ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন:
-তোমার জন্যে যে পাত্রটা পাঠিয়েছিলাম, তাকে তোমরা ফিরিয়ে দিলে কেন? কে কম কিসে?
-শায়খ! আপনার পাঠানো পাত্র জ্ঞানে-গরিমায় কোনও অংশে ফেলনা নয়। রূপে-গুণে-পদে-অর্থেও বাছার মতো নয়।
-তাহলে ফেরত দিলে কেন?
-শায়খ! এই পাত্রের মধ্যে আমার কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য নেই।
-তুমি কেমন পাত্র চাও?
- আমি চাই একজন নেককার পাত্র, যে আমার হাত ধরে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। যে আমাকে একটি নেক সন্তান উপহার দিবে। সে সন্তানকে যথাযথ লালন-পালন করে বড় করবে। বড় হয়ে সে ছেলে হবে একজন দুর্দান্ত ঘোড়সওয়ার, সাহসী মুজাহিদ। আরও বড় হয়ে যে মুসলমানদের জন্যে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরিয়ে আনবে।
নাজমুদ্দীন অবাক হয়ে দুজনের কথোপকথন শুনছিলেন মেয়েটার শেষ কথা শুনে তিনি একেবারে বাক্যহারা হয়ে গেলেন। দুইজন অপরিচিত মানুষের কথা এমন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় কী করে? তিনি ভাবনার অতলে হারিয়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়েই বলে উঠলেন:
-শায়খ! আমি এই পূণ্যবতী মানুষটাকে বিয়ে করতে চাই।
-নাহ, তা কী করে সম্ভব! এই মেয়ে আমাদের মহল্লার সবচেয়ে গরীব ঘরের সন্তান। তুমি হলে আমাদের ওয়ালী! গভর্নর!
নাজমুদ্দীন শায়খকে সব কথা খুলে বললেন। শায়খ সব শুনে অজান্তেই একটা আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
-তাঁর (আল্লাহর) অন্যতম একটা নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্যে, তোমাদের থেকেই স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো।
দুইজন মহৎপ্রাণ যুবক-যুবতীর বিয়ে হয়ে গেল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ইখলাস ও নিয়্যাতের বরকতে তাদেরকে দান করলেন:
= গাজী সালাহুদ্দীন আইয়ুবীকে (রহ.)।
তিন:
আমাদের বিয়ের উদ্দেশ্য কী হয়?
আমরা কেন বিয়ে করি?
আমাদের সন্তান জন্মদানের পেছনে কী নিয়্যাত থাকে?
আসুন না, আমাদের বিয়ে ও সন্তান জন্মদান আরেকজন সালাহুদ্দীনের জন্যে হোক!
মসজিদে আকসা আজ কাঁদছে।
ইহুদিরা নিচ দিয়ে মাটি খুঁড়ে মাযলুম মসজিদকে ধ্বসিয়ে ফেলার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
কেউ কি আছেন?
= আমি লাব্বাইক!
(ফেবু থেকে)
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৭ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বুকে ধুক ধুক শুরু হয়ে গেছে!
আবিয়াইত্যাদের সামনে এইসব গল্প বলার কি মানে!!!!!!
তাও আবার আমাকে ঘিরে গল্প খানি!
তাহলে অপেক্ষায় থাকুন।
লেখা একটা নামাইতেছি ..
নাম আপনার হতে পারে, ব্যক্তিটি কিন্তু মহৎ
এসব ভাবলে আসলেই নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হয়।
আসলে উপন্যাসের বাড়তি সংমিশ্রণের কারণে মূল ইতিহাস খুজে পাওয়া দুস্কর।
সুন্দর ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগায় ধন্যবাদ।
আলহামদু লিল্লাহ পড়তে পড়তে আপনার হার্ট বন্ধ হয়ে যায়নি এটাই শুকরিয়া। আপনার মূল্যায়নে অনেক আনন্দিত হলাম। অনেক অনেক শুকরিয়া।
তবুও ধন্যবাদ জানবেন
শিক্ষণীয় লেখাটি শেয়ার করার জন্য।
ভালো খারাপ মিলেই পৃথিবী, পুরুষদের মাঝে যেমন ভালো লোক আছে তেমনি মহিলাদের মাঝেও ভালো লোক আছে। তবে হয়তো সংখ্যায় কমবেশি হতে পারে।
ধন্যবাদ।
তবে কিনা এই যুগের মেয়েরা বিয়ের উদ্দেশ্য হিসেবে অন্যের কাঁধা চাপা কেই মনে করে!!
দ্বীনের দাওয়াত ও দ্বীনি শিক্ষা ফরজ, কিন্তু আরেকটি ফরজ ত্যাগ করে নয়।
আমি কিন্তু গ্রেপ্তারকে সাপোর্ট করছি না, বলতে চেয়েছি যথাযথ ইসলামী বিধান অনুস্বরণ করার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। তবেই ইন শা আল্লাহ সালাউদ্দিন আইয়্যুবীদের আশা করা যায়।
সুন্দর কমেন্টেসটির শুকরিয়া। ভালো থাকেন ভাই।
ইসলাম যেখানে পর্দানশীলতার মাধ্যমে সব কাজ করার অনুমতি দিয়েছে, সেখানে দাওয়াতের ময়দান কি গুরুত্বপূর্ণ নয়!!! নারী সমাজকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য যদি নারীরা এগিয়ে না আসে তাহলে নারীদের কাছে দাওয়াত নিয়ে কি পুরুষ যাবে???
পর্দানশীলতার মাধ্যমে সব কাজ করার অনুমতি দিয়েছে ঠিক, কিন্তু মাহরাম পুরুষের পাহারায়। কারণ মাহরাম ছাড়া যে বাহিরে যাওয়া হারাম।
নারীরা অবশ্যই পর্দার মধ্যে থেকে সব করবে, কিন্তু মাহরাম পুরুষ গার্ড হিসেবে থাকতে হবে, নাহলে যে কোন মুহুর্তে ক্ষুধার্ত নেকড়ে হামলা করতে পারে। ধন্যবাদ
মহিলা অঢেল সম্পদের মালিক হলেও তার উপর হজ্বের মত বিধানও ফরজ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত উপযুক্ত মাহরাম পুরুষ না থাকে। তালীম ও তারবিয়্যাতের কথা না হয় পরে বললাম।
আপনি ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিত কর্মী, এ ব্যপারে আশাকরি আপনি আমার থেকে বেশি জানেন।
তাবলীগের মাস্তুরাত বা মহিলা জামাতের বর্তমান কর্মপদ্ধতির দিকে একটু খোজ নিয়ে দেখবেন, পুরুষরা একই এলাকার মসজিদে অবস্থান করে, আর মহিলারা মসজিদের পাশেই কোন ঘরে বা কাছারীতে অবস্থান করে।
আমার শশুরের কথাই বলছি, যিনি এক সময় ঘোর আওয়ামীলীগ ছিলেন, কিন্তু দ্বীনের বুঝ আসার পর নিজের পুত্রবধুকে আলীম পরীক্ষা দিতে দেয় নাই, মানে ১ নাম্বারের ছাত্রী, ফাইনাল পরীক্ষার মাত্র দু'মাস আগে বিবাহ হয়েছে, তবুও পরীক্ষা দিতে দেন নাই, কার সাথে যাবে? কার সাথে বসবে?
যাই হোক পরের কথাগুলি এমনিতেই বললাম। হজ্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে আশাকরি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। আরো বিস্তারিত জানতে কোন আলেমের শরনাপন্ন হতে পারেন। ধন্যবাদ হুন্ডা ওয়ালা ভাই।
এই ধরনের কাহিনী যত বার ই পড়া হয়, ততবার ই কান্না পায় আর নিজেকে খুব ছোট মনে হয়,
উনারা দ্বীনের জন্য কি করেছেন আর আমরা কি করছি
আলহামদু লিল্লাহ আপনার তো অনুধাবন শক্তি আছে, কিন্তু আমার যে এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়, মানে অন্তর একদম কালো হয়ে গেছে। আল্লাহ ভীতিও কমে গেছে। দোয়া করবেন, যেন ভালো পথে পরিচালিত হই।
হৃদয় ছোঁয়া মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন