চঞ্চলময় ব্লগ পাড়া ও জান্নাতী পোষ্ট
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২১ মার্চ, ২০১৬, ০৩:৫১:৩০ দুপুর
অনেকদিন পর মৃতপ্রায় ব্লগটি যেন পুণরায় জেগে উঠলো। অবশ্য এর পেছনে ব্লগ কর্তৃপক্ষের জেগে উঠাকে দায়ী করা যায়, পরপর ৩টি পোষ্ট ষ্টিকি হওয়াই এর প্রমাণ।
বিশেষ ও প্রধান ভুমিকায় ব্লগার গাজী ভাইয়ের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই, যদিও কিছুদিন পূর্বে তিনি নিজেও অনিয়মিত ছিলেন। বর্তমানে উনার ব্লগ ব্যস্ততা সত্যিই উপভোগ্য, যেমনি লিখার ক্ষুর চালিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি মন্তব্যের পসরা সাজিয়ে যাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পারিবারিক পোষ্ট এসেছে, যেমন আফরার পরোটা চুরি, লোকমান ভাইয়ের বাবাকে নিয়েলেখা ও একটি সকাল ব্লগারের ছোট মেয়েকে নিয়ে লেখা।
বছরখানিক পূর্বে জান্নাতকে নিয়ে একটি পোষ্ট লিখেছিলাম,
আমাদের জান্নাতমনি ও কিছু অভিজ্ঞতা এই নামে। গাজী ভাইয়ের অনুরোধে আমার একমাত্র নয়নমনি জান্নাতকে নিয়ে আরো কিছু লিখার প্রত্যয় নিয়ে এলাম।
২০১১ সালের জুলাইতে যখন প্রথম প্রবাসে আসতেছিলাম, জান্নাত তখন ১১ মাসের শিশু। যদিও বাবা প্রবাসী হওয়ার বেদনা তখনো বুঝার বয়স হয়নি। তবুও ওর মা বাবা ও দাদুর কান্না দেখে খুব কেঁদেছিলো।
মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে স্কাইপে ওর ছবি পেতাম, অনেক ভালো লাগতো।
রমজানের ঈদের দিনের ছবি।
কোরবানের ঈদের ছবি।
প্রথমবার বাড়িতে গেলাম, জান্নাতের বয়স ২বছর ২মাস। বাড়ি যাওয়ার সাথে সাথে ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে দৌড়ে এসেছে, আমার সন্ধানি তখন তাকেই খুজছিল। অনুমান করে যে মেয়েটির দিকে হাত বাড়াতেই, পিছন দিকে দৌড় দিল। আমিও পিছু নিলাম, ধরেই ক্ষান্ত হলাম, সব ছেলেমেয়েরা বলতেছেঃ জান্নাত তোর আব্বু, তোর আব্বু, কিন্তু জান্নাত কি তা মানে! সরাসরি চাচার নিকট বিচার প্রার্থনাঃ কাক্কা এই বেটায় আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে তখন চকলেট দিয়ে কাছে এনেছিলাম।
ঘরের ভিতর গিয়ে যখন শোয়ার চেষ্টা করলাম, মাকে সরাসরি বারণ, আম্মু ওর সাথে কথা বলবেন না। আমার দিকে ফিরে ঘুমান। দু'জনে অনেক্ষণ হাসলাম। আরে কথা না বললে যে পৃথিবীতে তোমার অস্তিত্বই আসতো না।
বাইকে বসার মতো বয়স হওয়ায় সাথে সাথে রেখেছি,
পাকঘর তৈরীর সময় ওয়ানটাইম দোলনায় ছড়িয়েছি:
যতদিন বাড়িতে ছিলাম, ততদিনই ঘুম থেকে উঠা থেকে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত সারাক্ষণ আদরে যতনে রাখতাম। প্রায় সময় কাঁধে নিয়ে বাড়িতে ও পুকুর পাড়ে হাঁটাহাঁটি করতাম, চাচী জেঠিরা তখন মজাক করে বলতেনঃ মনে হয় পৃথিবীতে তোরই মেয়ে আছে। একটুু হাসি দেওয়া ছাড়া তাদের প্রশ্নের আর কোন উত্তর ছিল না।
বিদায় বেলায় অনেক কান্নাকাটিতে রেখে এলাম। প্রবাসে আসার পর অনেক কেঁদেছি, আসলে মেয়েরা যে এত আদরের হয়, তা আগে বুঝতে পারিনি।
বাড়ি থেকে পাঠানো ছবিঃ
দুষ্টামিতে রত জান্নাত।
গত বছর যখন বাড়িতে গেলাম, জান্নাত তখন ৪বছর পেরিয়ে, আমাকে রিসিভ করতে বাড়ি থেকে প্রায় ১কি:মি: হেটে দোকানের সামনে অপেক্ষায় ছিল। মা শা আল্লাহ, জান্নাতকে দেখে চক্ষু ভরে গেল, আগের মত দৌড়ানিতে নেই, গাড়ি থামানোর সাথে সাথে সরাসরি কোলে এসে বসল। আমার মনে হল যেন আমার ক্ষুধার্ত বুক ও মন নিমিষেই আনন্দে ভরে গেল।
যেদিকেই যাই, জান্নাত ছিল আমার বাইকের প্রথম যাত্রী। সারাক্ষণ পিছু পিছু থাকতো। অজান্তে কোথাও গেলে তাকে জবাবদিহি করতে হতো।
ছুটির পুরো সময়টি জান্নাতের দাঁত ব্রাশ থেকে শুরু করে গোসল ও কাপড় কাছা সবই আমার কাজ হিসেবে নিয়েছিলাম। আসার সময় জান্নাতকে ঘুমে রেখে আসতে হল, শীতকালে ফজরের আযানের সাথে সাথে ঘর থেকে বেরুলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে না পেয়ে ও যেন কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়েছিল। দু'এক দিন পর অবশ্য মেনে নিয়েছিল, কি আর করা এছিল নিয়তির লিখন।
এখন জান্নাত ২মাইল দূরের মাদরাসায় যায় ভ্যানে চড়ে। ৫টি হাদিস অর্থসহ ও কিছু মাসআলা কালিমা শুনিয়ে আমার অন্তর শীতল করে। মাঝে মােঝে কিছু ছবি পাঠায়।
খালাম্মুনির সাথে জান্নাতমনি।
হাতে ও মাথায় জাম্বুরা নিয়ে জান্নাতমনি।
আমরাও ছোটকালে এমন দুষ্টুমি করতাম, বার বার যেন ইতিহাসেরই পুণরাবিত্তি।
সাজের বেলায় জান্নাতমনি।
বাবার জন্য ছবি তুলতে জান্নাতমনি।
আজ অনেকটা বড় হয়েছে জান্নাত, সরাসরি দেখতে মনটা খুব ব্যাকুল হয়ে আছে। কিন্তু আমি যে গোলামীর জিঞ্জিরে বাধা। মেয়ের মনে বাবাকে কাছে পাওয়ার আকুল আবেদন হয়তো চিৎকার করে বলতে পারছে না, কিন্তু মাঝে মাঝে শুধায়, আব্বুগো কবে আসবেন?
বাবাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতায় জান্নাত আজো অপেক্ষমান।
জান্নাতমনির সুন্দর জীবন ও আখিরাতের মঙ্গল কামনায় আপনাদের দোয়া পার্থী। আবু জান্নাত।
বিষয়: বিবিধ
২২০৬ বার পঠিত, ৫৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাবার বুকে ফিরে আসুক জান্নাত।
উম্মে/আবু জান্নাতের জন্যে শুভকামনা রইলো।
আপনার ভবিষ্যৎ জুটির জন্যও শুভকামনা রইল। জাযাকাল্লাহ
তবে অনেক অনেক শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি
আপনার জান্নাতের জন্য দোয়া রইলো।
আপনাকে কিছু বলতে হবে না। উনার ডায়ালগ আজ উনার উপর বার্তায়। "কবরে বাড়ি দিলে গুনাহগার চ্যাতে"
অকর্মার ঢেঁকি একটা!
জান্নাত মনির জন্য অনেক অনেক আদর ও সুন্দর এই ফুল গুলো
হে আল্লাহ জান্নাত মনিকে নেক হায়াত দান করুন ও তাকে একজন নেককার নারী হওয়ার তৌফিক দিন । আমীন ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আপনার দুঃখিনি মাকে আমার সালাম বলবেন, যদি কিছু মনে না করেন।
কারণ বিবাহিত জিবনে এসে হাড়ে হাড়ে অনূভব করেছি, স্বামী ছাড়া স্ত্রীর জীবন কত কঠিন। আপনার মা সত্যিই এক মহিয়সি নারী।
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
আল্লাহ তায়ালা আপনার বাকি জীবনটুকু আরো আনন্দময় করে তুলুক। জাযাকাল্লাহ
এইডা জান্নাতের ননাইয়্যা আব্বু, তাই ননাইরে লই এত্তো মাতামাতি।
আমি আর কি বইলব, বাপকা বেটা যেমন, বাপকা বেটিও তেমনি হোক, এই দোয়াখানি খোদা তায়ালার কাছে করলাম।
বাহ চমৎকার কবিতাটি। হৃদয়ে গেথে রাখার মতো। আসলেই মেয়েরা বাবাদের কলিজার টুকরো হয়।
আল্লাহ তায়ালা আপনাকেও এমন সুইট মেয়ের বাবা বানিয়ে দিক বিবাহের পর। তখন টের পাবেন. বাপকা বেটি কাকে বলে। শুকরিয়া।
ধার্মীকতায় অন্তত ৮০% চাই ই চাই, বাকিগুলোতে একটা আদটু ছাড় দিলেই ইন শা আল্লাহ পেয়ে যাবেন। আল্লাহ সহায় হোক।
একটু মজা কইল্লাম আর কি
মেয়েরা না আপনার চোক্ষের বিষ???
বিষ খাবার জন্য বুঝি কেউ বেকুল হয়??
হি হি
যত গরযে তত বরষে না
হুম বুঝলাম
আঙ্গুর ফল, এই জন্য ই টক
কথায় নয়, ঠাস ঠাস করে দিয়ে কান গরম করায় আমি বিশ্বাসী। বুইঝেন কিন্তু
ইসসসসস
কবে যে আমার একটা মেয়ে হবে...
তিনটা মেয়ে হলে ভালো হতো,
জান্নাতের টিকেট কনফার্ম করে ফেলতাম
আল্লাহ তায়ালা নেককার সন্তান দিয়ে আপনার কোল ভরে দিক।
জান্নাতে আমাদের জন্যও একটু জায়গা রাখবেন কিন্তু।
অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। জাযাকাল্লাহ
সুম্মা আমিন
امين يارب
শুকরিয়া।
মাশা আল্লাহ! জান্নাতমণি তো বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে ...
প্রবাসী বাবাদের এবং প্রবাসীর পরিবারের কষ্ট শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝেন! আপনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, কথা বলবেন ।প্রয়োজনে ওকে মিস করে যে অনুভূতি অনুভব করেন তাও লিহে রাখেবন! বড় হয়ে ও যখন পড়তে শিখবে তখন বুঝে নিবে বাবাও দূরে থেকে মিস করেছেম ভালোবেসেছে!
অনেক অনেক স্নেহ মাখা দোআ ও দার রইলো জান্নাতের জন্য আর ওর আম্মুর জন্য সহস্র শুভকামনা!
অবশ্যই লিখব। আপনার দোয়া কবুল হোক। আপনার পরিবার ও সন্তানদের প্রতিও রইল শ্রদ্ধা, দোয়া ও ভালোবাসা।
উপস্থাপনায় একজন ব্যথাতুর প্রবাসী পিতার হৃদয় নিংড়ানো কষ্ট পাঠককূলের অন্তরকে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে। অশ্রুসিক্ত করেছে।
বার বার ছবিগুলো দেখেছি আর আপনার লিখাটি পড়ে ব্যথাভারে ভারাক্রান্ত হয়েছি। ছবিগুলো ও বেদনাময় আকুতিগুলো হৃদয় ছুঁয়েছে কেবলিই। যদিও ব্লগে ঢুকতে না পারার কারণে মতামত দিতে বিলম্বিত হল। এটিও আমার জন্য অনেক মর্মপীড়ার কারণ।
আমার মনে হয়েছে মায়াভরা হীরার টুকরার মত হাসিমাখা মুখখানি যেন কুসুমের মত শুভ্র ও সুন্দর। আঁখি তীরে বিষাদের ছায়া। বেদনার্ত অব্যক্ত চাহনীর মাঝে লুকিয়ে আছে বাবাকে কাছে না পাওয়ার শূন্যতা ও না বলা অনেক কথা।
মহান রাব্বুল আলামীন আপনার অন্তরের ইচ্ছা পূর্ণ করে অতি শীঘ্র সোনামণিটার সান্নিধ্য দান করুণ। আর রবের কাছে মিনতি তিনি যেন তাঁর সুবিশাল নিয়ামতরাজির মাঝে তাকে ঘিরে রাখেন। আর জ্ঞানে গুণে আচার আচরণে একজন দায়ী ইল্লাহ হবার পরিপূর্ণ যোগ্যতা দান করেন আমীন।
আসলে আপনার মত সন্ধানী চক্ষু নিয়ে ছবিগুলো দেখিনি। দেখেছি দূরে থাকার বেদনা নিয়ে। আপনার কমেন্ট পড়ে আবারো যেন জান্নাতের শূণ্যতায় কান্না আসতে চাচ্ছে। সত্যিই প্রবাসীরা বড় অসহায়। আহ! প্রবাসীদের পরিবারগুলো যদি জানতো! যে প্রবাসে মানুষ কত অসহায়।
টাকা পয়সার জন্য নয়, সন্তান ও পরিবারের শূ্ন্যতাই বড় অসহায়ত্বের কারন। আপনার কমেন্ট পড়ে ছবিগুলো আবারো দেখলাম।
এত সুন্দর করে লিখেছেন যেন ছবিতে আমি তাই দেখতে পাচ্ছি।
আপনার মহান রব কবুল করুক।
আপনার পরিবার পরিজন ছোট বড় সবার প্রতি রইল অজস্র সালাম ও ভালোবাসা। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুক। আমীন।
লেখাটা আজ দুপুরের আগেই পোস্ট করুন প্লিজ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন