নতুন সাজে বাঙ্গালী বাজার
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৩৪:২৯ রাত
বরাবরের মতো গত শুক্রবারও গেলাম মুসাফফাহ বাঙ্গালী বাজারের পুরাতন আস্তানায়, যেখান থেকে মাস খানেক আগে আমিরাত পুলিশ বাহিনী আচ্ছা করে পিটিয়ে সব অবৈধ ব্যবসায়ীকে তড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাঙ্গালী বলে কথা, মান-সম্মান জাত-বংশ সহঝে যেতে চায় না। সব যেন সুপার-গ্লু দিয়ে লাগানো।
যাই হোক, ড্রাইভিং ট্রায়াল শেষ করে সেদিকে গেলাম, শুধু দেখার জন্য পুরাতন বাজারের অবস্থা কি!
ও আল্লাহ! দেখে তো অবাক, আগের চেয়ে অনেক বড় পরিসরে ধুমধাক্কার মাঝে বাজার চলছে, প্রথমেই কিছুক্ষন হাটাহাটি করে কিছু ছবি নিলাম।
বাহারী সব সব্জির বাজার।
ফল ফ্রুট যেন আড়ৎ সাজিয়ে আছে।
তাজা শাকসব্জি যেন বাংলার কোন এলাকা ভিত্তিক বাজার, এই মাত্র ক্ষেত থেকে তুলো এনেছে বোধহয়।
ট্রাক টেঙ্কার লরীর ফাঁকেই যেন এ বাজারের প্রাণ।
সামনে দেখা যাচ্ছে জীবিত মুরগীর বাজার, পাশে আবার কেটে পরিস্কার করার মানুষও রেডি আছে।
আর একটু সামনে গিয়ে দেখি মাছের কি বাহারী বাজার, হরেক রকমের মাছের ঝুড়ি, বরফ গলে পানি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মাছ বিক্রি এখনো শেষ হয় নাই, যে কোন পদের মাছ কিলো মাত্র ৫দিরহাম, ২কিলো ৯দিরহাম।
দাম জিজ্ঞেস করতেই চার কেজি ইলিশ প্যাকেট করা শুরু করল। অনেক কষ্টে রেহাই পেলাম।
মাছ পরিস্কার করার ৭/৮ জন লোক দেখলাম, দা বটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
আরেকটু সামলে গেলাম, দেখলাম যেন হাইপার মার্কেট মাঠে বসেছে।
বাচ্চাদের খেলনা, বাহারী সব কসমেটিক, মেকআপ বক্স এর রংবেরঙ্গের পসরা।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, দেখে না কিনে পারা যায় না। আতর ও মেসওয়াক কিনলাম, যাইতুন গাছের তাজা শিকড়। আমাদের দেশের মিসওয়াকগুলো কত বছরের যে পুরাতন হয়, কামড় দিলেই মুড়মুড় করে ভেঙ্গে যায়। এখানে তাজা পাওয়া যায়।
ইলেকট্রিক আইটেমের দারুন সমাহার।
হাকার্স মার্কেট আইটেমও পাওয়া যায়। গার্মেন্টস আইটেমের অল্প মূল্যে দারুন আয়োজন, কম বেতনের শ্রমিকরা এখানের সামানপত্র দেশেও নিয়ে যায়।
ব্লাঙ্কেট বা কম্বল।
হরেক রকমের বিছানা চাদর।
জুতোর পসরা।
বাচ্চাদের জামা কাপড় সহ নানার আইটেমের সামগ্রী।
যেন কোন নামী দামী সুপার মার্কেটের সাজ পেন্টের বেল্ট সমূহের সাজ।
চশমা ষ্টোর
মোবাইল সামগ্রী, দাম জিজ্ঞেস করতে বললেন ভাই আপনি নিবেন না, হুজুর মানুষ বদদোয়া দিবেন।
দাম শুনে অবাক হলাম। মার্কেটে ৪০০দিরহামের মোবাইল মাত্র ৪০দিরহাম। চায়না বলে কথা।
টেইলারী মেশিনও প্রস্তুত, থান কাপড় কিনে সঙ্গে সঙ্গে চলছে সেলাইও, তবে পুরাতন কাপড়ই বেশি সেলাই করা হয়।
সামনে দেখলাম জুয়ার আসর। আমাকে দেখে প্রায় ছয়টি চক্ষু আনিলিমিটেড স্থীর হয়ে আছে। দূরে গিয়ে তাদের চক্ষুর আড়াল হয়ে ছবি নিলাম। অনেক প্রকার জুয়ার আসর থেকে মাত্র দুটির ছবি নিতে পারলাম, বাকিগুলোতে ব্যর্থ হলাম। মনে হচ্ছিল আমাকে আক্রমন করে বসবে।
দেশে মহেশখালির মিষ্টি পানের কথা মনে হলে পান খেতে ইচ্ছে হয়।
পানের দোকানের অবস্থা দেখুন, কত প্রকারের মসলা সাজিয়েছে। দোকানিকে বললাম চুন ছাড়া সব প্রকার মিষ্টি জর্দা ও মসলা দিলে একটি পান দেন, বেশ দারুন লাগলো। দামও বেশি নয়, মাত্র ১দিরহাম।
পান দোকানি বললেনঃ ভাই আপনাকে দেখছি ছবি তুলছেন, সাবধান পাঠানরা দেখলে কিন্তু আপনার সমস্যা হবে, যদি সিআইডি কার্ড দেখাতে পারেন তো ভালো কথা, যদি না দেখাতে পারেন, তবে আপনার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। ব্যস মোবাইলটি পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম, কে এত মাইর খাবে বিনে পয়সায়।
অতঃপর কিছু শাকসব্জি কিনলাম। আসার সময় দেখি ক্ষৌরকর্মের লোকও আছে।
যেখানে দোকানে ১৫দিরহাম নেয়, এখানে মাত্র ৫দিরহাম।
এক কথায় মুসাফফাহ বাঙ্গালীবাজার দেখতে একেবারে পাড়া গাঁয়ের বড় কোন হাট বাজারের প্রতিচ্ছবি।
পান দোকানির কথা শুনে সেখানে আর বেশিক্ষণ থাকার ইচ্ছা উবে গেল, তাড়াতাড়ি ফেরার পথ অনুস্বরণ করলাম।
বিষয়: বিবিধ
২৯২৯ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এত তাড়াতাড়ি মন্তব্য!!!
আমি শুভেচ্ছা নিয়ে আসছি।
জান্নাতের বাবা আমার ভাইয়া অনেক ধন্যবাদ ।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ ছোট্ট বোন।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
জান্নাতের জন্য এই জামাগুলো কিনছেননি? নাকি হেঁটে হেঁটে খালি ওসবের চেদারাই দেখেছেন। খালি দেইখলে অইতন, কিন্তেও অইব। দেশী ভাইদের জন্য কিছু করতে পারলেন।
যাই হোক, ছবিগুলান খুব বাক্কা অইছে
বহুদিন পর মোর বাড়িতে আসায় আপনাকে অন্নেক শুভেচ্ছা।
এসব বাজারের কারণে ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ক্ষতি হচ্ছে, আগ্রহ হারাচ্ছে, মুলত সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তাই তো উচ্ছেদ অভিযান।
জুয়া একটি নেশা, যেটার জন্য জীবন দিবে, তবুও ছাড় দিবে না। এমন পরিস্থিতিতে দৌড়ায়ে পিটানোই আসল চিকিৎসা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমি মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি পোষ্ট উদাও : :
এরা অল্প বেতনের শ্রমিক, মাস শেষে ১৫ থেকে ২০ হাজার বাচে হয়তো, কিন্তু পরিবারের চাহিদা মেটাতে কি আর করা, মাইর খাওয়ার ঝুকি নিয়ে এগুলো করছে।
অনেকে আছেন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, কিন্তু ভিসা ট্রান্সফার না থাকায় এরা অসহায়।
ধন্যবাদ।
আসলেই একেবারে দেশের বাজারের অবস্থা। আমাদের এখানে এরকম বে আইনী খোলা বাজারের সুযোগ নেই! পুলিশ সারাক্ষণ টহল দেয়।
শুকরিয়া ।
এখানেও পুলিশ টহলের কমতি নেই। কিন্তু আর কত পেটাবে, ভিসা বন্ধ করেছে, সামান্য অপরাধে দেশে চালান করছে। তবুও থেকে নেই।
শুকরিয়া।
আসলে আমরা জাতিগতভাবেই অপরাধ প্রবণ, আর আপনি যাদের চিত্র তুলে ধরেছেন ওরা হচ্ছে আমাদের জাতীর শো-রুম। ধন্যবাদ আপনাকে
একদম সত্যি বলেছেন, মাঝে মাঝে মনে হয়, কেন যে বাংলাদেশ নামক এত নিম্ন দেশে জন্ম হলো!
আরবীরা বাংলা শব্দটিকে গালি হিসেবেও ব্যবহার করে।
আসলেই সব বাঙ্গালীদের কর্মের ফলাফল।
দেশে যাদের সৃংখ্যলা নেই, বিদেশে এসে কিভাবে ভদ্র হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন