মুনাফিকদের সাথে রাসূল স. এর আচরণ ও আমাদের বর্তমান সমাজ
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:০৩:১৪ রাত
আব্দুল্লাহ বিন উবাই থেকে বড় কাফের আর কে আছে?
জাহান্নামের ৭টি কয়েদখানা আছে।
১। জাহান্নাম
২। হুতামা
৩। লাজা
৪। সাঈর
৫। সাক্বার
৬। জাহীম
৭। হাভীয়া
সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও নীছে হাভীয়া। ইহাতে মুনাফেকরাই থাকবে।
আবু জাহেল ও ইহাতে নয়, আবু জাহেল জাহীমে যাবে। পাথরের পুজারী জাহীমে এবং মুনাফিক হাভীয়ায়। যাহা জাহান্নামের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হবে, ইহাই হাভীয়া।
আমার নবী স. তো মুনাফেকদেরকেও বুকে জড়িয়েছেন। আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের ছেলে আব্দুল্লাহ রা. পাক্বা মুসলমান ছিলেন। আমাদের নবী স. একদা পানি পান করতেছিলেন, আব্দুল্লাহ রা. বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ সামান্য কিছু পানি বাচিয়ে রাখেন। নবীজি বললেনঃ কি করবেন? তিনি বললেনঃ আমার বাবাকে পান করাবো, হতে পারে উনি ঈমান নিয়ে আসবেন। রাসূল সা. কিছু পানি দিলেন।
আব্বা পানিটা পান করুন। এখানে কি? আল্লাহর নবীর উচ্ছিষ্ট পানি। পান করেন, হতে পারে আপনার ঈমান লওয়ার তাওফীক হবে।
তখন তিনি বললেনঃ যাও কোথাও থেকে পেশাব নিয়ে আস, আমি পান করবো, কিন্তু এই পানি পান করবো না।
আহ! হায় আফসোস।
তখন সাহাবী আব্দুল্লাহ রা. প্রচন্ড রাগান্বিত হল। রাসূল স. কে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাকে অনুমতি দেন, এই মুনাফিকের মাথা দড় থেকে নামিয়ে দেই। এত প্রচন্ড উত্তেজিত হয়েছিলেন।
আমার নবীজি স. বললেনঃ না! না!! তিনি তো তোমার পিতা, যাও উনার ক্বদর করো। আমি মানুষকে একথা বলতে দিব না যে, মুহাম্মাদ ছেলেকে দিয়ে পিতাকে হত্যা করিয়েছে।
সম্মানিত শ্রোতাগণ. তোমরা তো ঐ নবীর উম্মত। একে অন্যকে হত্যা করিও না। তোমরা দলে দলে বিভক্ত হতে চলেছ।
তোমরা পৃথিবীর মানবতাকে কি ছবক দিয়ে যাচ্ছ! একে অন্যের মতানৈক্যকে সহ্য করো। এত তাড়াতাড়ি কুফরির ট্যাগ লাগাইতেছ। আমার নবীতো মুনাফেকদেরও বুকে জড়িয়েছিলেন।
তিনি (আব্দুল্লাহ বিন উবাই) মৃত্যুর দুয়ারে উপনিত হলেন। তখন ছেলে আসলো, বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার আব্বার মৃত্যু হইতেছে, আপনি আপনার একটি জামা দান করেন। আমার আব্বাকে কাফন দিবো, হতে পারে ক্ষমা পেয়ে যাবেন। রাসূল স. জামা খুলে দিয়ে দিলেন। এত বড় খবিছ মুনাফিকের জন্য নিজের জামা দিয়ে দিলেন।
জানাযা প্রস্তুত করা হল, রাসূল স. সামনে দাড়ালেন। হযরত ওমর রা. এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ ইহা আপনি কি করতেছেন। আপনার কি জানা নেই ইনি কে?
রাসূল স. বললেনঃ হ্যাঁ আমি জানি।
ওমর রা. বললেনঃ তবে কেন জানাযা পড়তেছেন!
রাসূল স. বললেনঃ আমার আল্লাহ বলেছেন: "পড় বা না পড় আমি মাফ করবো না"। আমি পড়তেছি, হতে পারে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। আমার আল্লাহ বলেছেন: যদিও সত্তুর পার পড় আমি মাফ করবো না। যদি আল্লাহ বলতেন: সত্তুর বার পড়লে মাফ করে দিবো, তবে আমি সত্তুর বার পড়তাম।
বর্তমানে ছোট ছোট মতানৈক্যে একে অন্যকে এরা কাফের, ওরা কাফের বলে। কেউ কি জান্নাত পর্যন্ত যেতে পারবে? জান্নাতে যাওয়ার কোন পথ আছে কি? জান্নাত তো মুমিনদের জন্য, কাফেরের জন্য কি জান্নাত আছে?
হায়! তাকে কবরের রাখা হয়েছে, রাসূল স. বললেনঃ বাহির করো, দ্বিতীয় বার বাহিরে আনা হলো, রাসূল স. নিজের মুখের লালা ও থুথু তার মুখে লাগিয়ে দিলেন, হয়তো মাফ পেয়ে যাবে। এই এহসান দেখে একশত মুনাফেক কালিমা পড়লেন। (সুবহানাল্লাহ)।
রাসূল স. এক একজন করে মুনাফিক সম্পর্কে জানতেন, অমুক অমুক মুনাফিক, কিন্তু জিন্দেগীতেও রাসূল স. কাউকে মুনাফিক বলেন নাই। সবাইকে বুকে টেনেছেন। তোমরা তাহার উম্মত হয়েও ছোট ছোট মতানৈক্যের কারনে কাফের কাফের বলতে দ্বিধা করছো না।
কিভাবে আমার প্রিয় নবী সবাইকে বুকে জড়িয়েছেন, যুলখুওয়াইসারা নামে একজন মুনাফিক ছিলেন, নবীজি নিজের সম্পদ ভাগ করলেন, নতুন মুসলমানদের বেশি দিলেন, যায়দুনিল খাইর, আকরা বিন হারেছ ও বিন আব্বাসকে একটু বেশি দিলেন। ইনি দাড়িয়ে বললেনঃ এই বন্টনে ইনসাফ হয় নাই।
তখন আমার নবীজির চেহারা কালো হয়ে গেল, দুঃখে কষ্টে বললেনঃ যদি আমি ইনসাফ না করি তবে কে ইনসাফ করবে।
তখন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. উত্তেজিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাকে অনুমতি দেন, তার গর্দান উড়িতে দিই।
রাসূল স. বললেনঃ কেন? উনি তো আমার সাথে ফজরের নামাজ পড়েছে। তখন খালিদ বিন ওয়ালিদ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, সে তো মুনাফেক, তার নামাযে কি ফায়দা হবে। তখন আমার নবীজি বললেনঃ তুমি কি তার অন্তর দেখেছ? অথচ রাসূল স. জানতেন সে মুনাফিক।
প্রিয় ভাইয়েরা তোমরা এমন গুনের অধিকারী নবীর উম্মত, যিনি বলতেন, "যার অন্তর এক, উপর আরেক। তো আমি তার উপর দেখি, অন্তর আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম।"
(তোমাকে কে ঠিকাদারী দিল যে তুমি তার অন্তর দেখছো!)
আমার নবীজি খালেদকে বললেনঃ তুমি কি তার অন্তর দেখেছো! যে তিনি মুনাফিক?
আল্লাহ তায়ালা অন্তরের খবর জানেন কে কে মুনাফিক। তোমরা তো তাহার উম্মত যে মুনাফেকদেরও গলায় জড়িয়েছেন।
তোমরা ছােট ছোট কথার উপর একে অন্যের বিরোধ হলেই তাকে কাফের মুশরিক বলে দিচ্ছো?
(মাওলানা তারিক জামিল হাফিযাহুল্লাহ সাহেবের একটি বয়ানের ৫মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের অনুবাদ)
মাওলানা তারিক জামিল হাফিযাহুল্লাহ সাহেবের বয়ান শুনতে এখানে যেতে পারেন। Click this link
আল্লাহ তায়ালা আমাদের বুঝ দান করুক।
বিষয়: বিবিধ
২০১৩ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খাইরান জান্নাতের বাবা আমার ভাইয়া ।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন সঠিক ভাবে ইসলামকে মেনে চলার তৌফিক দান করুন আর ঐ সব জাহান্নাম গুলো আমাদের থেকে দুরে রাখুন । আমীন ।
আল্লাহ তায়ালা আপনাকেও উত্তম বিনিময় দান করুন।
আপনার দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করুক। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
রাসূল স. জানাযা পড়েছেন তো আমি বলিনি, বলেছি জানাযার জন্য দাড়িয়ে ছিলেন, যতক্ষন পর্যন্ত না সরাসরি নিষেধের আয়াত নাজিল হয়েছিল, ততক্ষণ সেখানে ছিলেন। আপনার ব্যখ্যামুলক মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
জাযাকাল্লাহ খাইর চাচাজান।
আফসোস !যদি আমরা আমাদেরকে উপলব্দি করতে পারতাম।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবী ওয়ালা দরদ দান করুক।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَداً وَلاَ تَقُمْ عَلَىَ قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُواْ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ.
‘তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে তুমি কখনও তার জানাযার ছালাত আদায় করবে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং পাপাচারী অবস্থাতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে’ (তওবা ৯/৮৪)।
এই আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে যে, যখন মুনাফিকদের দলপতি আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই মারা যায় তখন তার পুত্র আব্দুল্লাহ নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার জামাটা আমাকে দিন, ওটা দিয়ে আমি তাকে কাফন দেব। আর আপনি তার জানাযার ছালাত আদায় করবেন এবং তার জন্য ক্ষমা চাইবেন। তিনি তাকে জামাটা দিয়ে বললেন, কাফন জড়ান শেষ হলে আমাকে জানাবে। তিনি কাফন সম্পন্ন করে তাকে জানালেন। তিনি তখন জানাযার ছালাতে ইমামতির জন্য এগিয়ে গেলেন। কিন্তু সে সময় ওমর (রাঃ) তাঁকে টেনে ধরলেন এবং বললেন, আল্লাহ কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযার ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেননি? তিনি কি বলেননি, তুমি তাদের জন্য মাফ চাও কিংবা না চাও সবই সমান। তুমি যদি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা চাও তবুও আল্লাহ তাদের মোটেও ক্ষমা করবেন না? তখন সূরা তওবার অবতীর্ণ হয়- ‘হে রাসূল! তাদের কেউ মারা গেলে তুমি কোন দিন তার জানাযার ছালাত আদায় করবে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না’। তারপর থেকে তিনি মুনাফিকদের জানাযার ছালাতে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দেন।
তবে আপনার পোস্টটি সত্যিই অনবদ্য ভাইয়া। জাঝাক আল্লাহ।
আপনার পোষ্টগুলো অনেক মিস করছি। সময় করে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখে ফেলুন। সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গন্য হবে ইন শা আল্লাহ।
তবে শুধু নিজের জন্যই দোয়া করলেন! আমাদেরকেও দোয়ার একটু শরীক করিয়েন। আমরা যেন হতভাগাদের দলভুক্ত না হই।
সাদাফ'লু'লু।
>>>>>>>>>>-লু'লু
মন্তব্য করতে লগইন করুন