প্রবাসে এবারের ঈদটি যেভাবে গেল
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৮ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:১০:৩২ রাত
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
গত ২৪শে সেপ্টেম্বর বৃহঃবার চলে গেল জীবন থেকে আরো একটি ঈদ, বুধবার আরাফার দিন হিসেবে ছুটি পেলাম, টানা তিন দিন ছুটি, কি করবো কোথায় যাব কিছু্ই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই আরাফার দিন রুমমেটদের সাথে রোজা রাখার সিদ্ধান্তটা শেয়ার করলাম। আলহামদু লিল্লাহ আরো চারজন রুমমেট তৈরী হয়ে গেল। সারাটা দিন রুমেই কাটালাম। পরদিন ঈদ, তাই জামাকাপড় ধোলাই ও আইরন পর্ব শেষ করলাম।
বাড়িতে গরু জবাই হবে, কি যে মজা হবো গো, ইমু ভিডিও কলে গরুটিও দেখে নিলাম। প্রবাসে ১০/১৫ জন মিলে রাসূল (সাঃ) এর নামে খাসি বা দুম্বা কোরবানী করে। উদ্দেশ্য হল কোরানীর নামে একটু গোস্ত খাওয়া আর কি। আমরা এ বছর গোস্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে গরু গোস্ত কিনলাম কয়েক কিলো।
বৃহঃবার সকালে ফজরের নামাযের ঘন্টাখানেক পরই ঈদের নামায আদায় করলাম আবুধাবী বাঙ্গালীর প্রাণের মিলন কেন্দ্র আলমোল্লা মসজিদে।
রুমে আসলাম, বাড়িতে কথোপকথনের পর সেমাই ও নুডুলস বানিয়ে খেলাম। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে জোহর পড়ে খাবার খেলাম।
আমার সেজ কাকা আলআইন শহর থেকে ১২০ কিলো দূরে আলক্বুয়া নামক স্থানে আজ প্রায় ২০ বছর যাবৎ ব্যবসা করেন। কাকাকে ফোন দিলাম অবস্থা জানতে।
কাকা শেষবার বাড়ি থেকে এসেছে প্রায় ৯ বছর, এখনো বাড়ি যাওয়ার খরব নাই। ফোন পাওয়ার সাথে সাথে কান্নাকাটি আরম্ভ করল, যে করেই হোক তার কাছে যেতে।
দুপুরের খাবারের পরপরই রাওয়ানা করলাম আবুধাবী বাসষ্ট্যন্ড থেকে আলআইনের উদ্দেশ্যে।
৩টায় আলআইন বাস ষ্ট্যন্ডে পৌছলাম।
আলআইন থেকে জেঠাতো ভাই আযীয আমার সহযাত্রী হলো। বিকাল ৫টার বাসে আলক্বুয়া সফর। সন্ধা ৭টায় পৌছলাম আলকুয়া। চাচার দোকানে গিয়ে কোলাকোলি অতঃপর অশ্রুসিক্তকরণ পর্ব শেষ করে বাড়িতে ভিডিও কল। রাতের বেলায় তারা আমাদেরকে ক্লিয়ার দেখছিল, যদিও আমরা তেমন ক্লিয়ার দেখিনাই। সবার সে কি হৈ হুল্লুড়।
চাচা চাচিকে বলতেছিল: তুমি তো কাশেমের মায়ের মত বুড়ি হয়ে গেছ, চাচিও সুর মেলালেন: তুমিও তো আবুলের বাবার মত বুড়া হয়েছো।
অবশেষে রাতে খানা খেতে গেলাম, একি! কাকা পাঁচ কিলো গরু ও ২ কিলো খাসির গোস্ত পাকাইয়া রাখছে। গরম ভাত আর খাসির গোস্ত ইচ্ছেমত গেলাম। আমাদের এলাকার আরো কয়েকজনের সঙ্গে রাত ১২টা পর্যন্ত ঘাসের উপর বসে দেশীয় ষ্টাইলে আড্ডা চললো।
ফজরের নামায পড়ে বাড়িতে ফোন দিলাম। গরু জবাইয়ের দৃশ্য ও পরবর্তী কার্য্য প্রণালী স্বচক্ষে অবলোকন করলাম। চক্ষু দিয়ে মোবাইল স্ক্রীনে বাড়ীর রান্না খেলাম, যেমনটি ব্লগার আফরা ও সাদিয়াপি মাঝে মাঝে আমাদেরকে ব্লগে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায়।
সকালে আবার রুটি ও খাসির গোস্ত পেটস্থ করলাম। দশটায় অশ্রুসিক্ত নয়নে চাচাকে বিদায় দিলাম। আলআইন এসে জুমআ ও খাওয়া পর্ব শেষে চিড়িয়াখানা দেখার স্বাদ জাগলো। গেলাম আলআইন জাতীয় চিড়িয়াখানায়। এটি আমিরাতের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা।
প্রবেশ ফি মাত্র ২০ দিরহাম।
আয়তনে অনেক বড়, প্রাকৃতিকভাবে মরুময় প্রান্তরে এভাবে তৈরী করা হয়েছে যে, যেন বাংলাদেশের মত কোন এক অঞ্চল।
ভালই লাগলো।
অনেক চেনা অচেনা পশু পাখি কাছ থেকে দেখলাম।
বাজপাখি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে এক ভদ্রলোককে দেখলাম। হাতে নিলাম, ছবি তুললাম।
যারা হাটতে হাটতে ক্লান্ত, তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাইক।
যেন এক দেশীয় প্রান্তর, কেউ চাইলে ঘোড়া ও উটের পিঠে ছড়তে পারে, মাত্র ১০ দিরহাম।
এক টুকরো বাংলার মতো মনে হলো।
সময় স্বল্পতার কারনে বিদায় জানাতে হল।
অতপর রাতেই আবুধাবী ফেরা.........................।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৪ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ জান্নাতের বাবা আমার ভাইয়া ।
সময় স্বল্পতার কারণে দেরি হয়ে গেল।
অনেক অনেক শুকরিয়া সাইয়ারা মনি।
আলহামদু লিল্লাহ পাক খুব দারুন হয়েছিল। একা নই আমার কাযিন আযীয ও সাথে ছিল।
শুকরিয়া ভাইয়া।
আপনজনদের ছেড়ে প্রবাসে ঈদ কোনোপ্রকার আনন্দানুভূতি আসে না!তারপরেও খুঁজে নিতে হয় কিছুটা আনন্দ! তার পুরোপুরি আপনারা করেছেন মনে হলো! আমাদের বাসায় আমরা চেস্টা করি পরিচিত ব্যাচেলর ভাইরা যারা ফ্যামিলি দেশে রেখেছেন মেহমানদারিতে তাদের প্রাধান্য দিতে, উনারা খুব খুশি হন ।
চিড়িয়াখানার দৃশ্যটা খুব ভালো লাগলো! পশুগুলোর মাঝে রাজকীয় সৌন্দর্যের ভাব আছে!
শুকরিয়া আপনার কষ্টানন্দময় ঈদানুভূতি শেয়ার করার জন্য!
আপনাদের আয়েজনে অনেক খুশি হলাম। কিছুদিন আগে সিনিয়র ব্লগার টিপু ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ছিলাম, সত্যিই এক অন্যরকম অনুভূমি। যেন আমারই কোন আত্মীয়ের বাড়ীতে এসেছি।
পশুদের থাকা খাওয়া ও বাসস্থাও কিন্তু রাজকীয় ভাবেই পরিচালিত হয়।
সুন্তর মন্তব্যটির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
একদিন বিকেলে আব্দুর রহিম ভাই'র ফোন পেয়ে কর্ণেশ পার্কে গেলাম। রহিম ভাইয়ের খুব ইচ্ছে টিপুভাইয়ের সাথে দেখা করার। টিপুভাইকে ফোন দিলাম, বাসায় যেতে বললেন। হাটতে হাটতে বাসার নিকটবর্তী হলাম। টিপু ভাই একটু এগিয়ে আমাদের রিসিভ করলেন। উনার সাথে বাসায় প্রবেশ করলাম।
উনার পরিবার ও বাসার বর্ণনা আমার ধারনার থেকেও পরিপাটি পেলাম।
একটাই ছেলে, ক্লাস টেন এ পড়েন। নামটা এ মুহুর্তে মনে আসছে না। দেখতে অনেক লাজুক মনে হয়। খুবই শান্ত, ভদ্র।
তরমুজ, আম, জেলি, চা, বিস্কুটসহ অনেক নাস্তা পেটস্থ করলাম। উনার সংক্ষেপ জীবনিসহ অনেক রসীকতাপূর্ণ আলোচনায় মেতে উঠলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা পর বিদায় নিলাম।
রাতে ১০টার সময় বাহির হয়েছি।
সরি দুপুরবেলা দাওয়াত খেয়েছি কোরবানি গরুর গোসতের।
আমরা কিন্তু এ বছর এখনো কুরবানের গোস্ত খেতে পারিনি। এ দিক দিয়ে আপনার ঈদ ই সেরা।
শুকরিয়া ভাই।
ঈদের দিনও কাজ ছিলো, অবশ্য ব্যক্তিগত কাজ নামাজ পড়ে ঘুম এর পর কাজ আর কাজ।
পোস্টটি এতদিন পর দিলেন!!! বলতে গেলে ঈদের আমেজ পুরোপুরি চলে গেছে। ঈদের সময়ে পোস্টটি দিলে ভালো ভাবে ঈদের আমেজ পাওয়া যেতো। তবে ছবি গুলো বেশ সুন্দর। ধন্যবাদ।
আলহামদু লিল্লাহ ঈদ ভালই কেটেছে।
ঈদের পরপরই ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। এখন অনেক ব্যস্ততায় আছি। তাই পোষ্ট দিতে সময় বের করতে পারছিলাম না। সামান্য সময় নিয়ে অতি সংক্ষেপে কিছু লিখলাম।
সুন্দর ও উৎসাহ মুলক মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
আলহামদু লিল্লাহ চাচার সাথে সাক্ষাতে অনেক অানন্দ পেয়েছি। আপনাদের প্রবাসী জীবন সুখি ও শান্তিময় হোক। শুকরিয়া।
ভালো লাগার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন