পরিচ্ছন্নতা ও জাপানি জ্ঞান
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ৩১ আগস্ট, ২০১৫, ১১:৩২:৪৪ রাত
জাপানিরা ঢাকা শহর পরিস্কার করছে দেখে বাঙ্গালীরা ছবি তুলছে ও ভিডিও করছে। পছন্দসই মন্তব্য সহ সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার করছে।
যেভাবে ময়লা আবর্জনার স্থুপ পড়ে আছে, জাপানিদের পরিস্কার করার হাতিয়ার ও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা সত্যিই পরিস্কার করতে এসেছে। এটা বাঙ্গালীকে সবক দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
কথা হল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কথা ইসলাম চৌদ্দশত বছর পূর্বে শিখিয়ে দিয়েছে, আমরা সেই শিক্ষা ভুলে গেলেও জাপানিদের শিক্ষা যে মনে থাকবে সেরকম কিছু নয়, সাপ্তাহ খানিকপর চিল্লাচিল্লি ও লেখালেখির পর ফলাফল শূণ্য হয়ে যাবে।
ইসলামে শরীর পরিস্কারের পাশাপাশি কাপড় পরিস্কার করাকেও ফরজ করা হয়েছে। পরিবেশ পরিস্কারের গুরুত্বও ইসলামে অপরিসীম। দূষণমুক্ত রাখতে গাছলাগানোর কথাও অনেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
একটি হাদিসে আছে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এলাকাবাসীর ডাস্টবিনের কাছে গেলেন অতঃপর (সেখানে বসার মত পরিবেশ ছিলো না বিধায়) দাড়িয়ে পেশাব করলেন।
এই হাদিস দ্বারা প্রথমে স্পষ্টত বুঝতে পারলাম বিশেষ প্রয়োজনে দাড়িয়ে পেশাব করা জায়েয, দ্বিতীয়ত বুঝতে পারলাম এলাকার ময়লা আবর্জনা ফেলানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ছিল, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা ইসলাম সমর্থিত কাজ নয়।
অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা হল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা। এই হাদিস দ্বারাও বুঝাগেল পথেঘাটে ময়লা ফেলানো ঈমানের তাকাজার বিরোধী।
সমসাময়িক আবুধাবী শহরের কিছু আইন আপনাদের বলিঃ
১। যেখানে সেখানে থুতু ও কফ নিক্ষেপ করলে ২০০ দিরহাম।
২। সিগারেট নিক্ষেপে ২০০ দিরহাম।
৩। প্রকাশ্যে ধুমপানে ২০০ দিরহাম।
৪। চুইংগামের গ্লু নিক্ষেপে ৫০০ দিরহাম।
৫। দোকান বা অফিস ঝাড়ু দিয়ে ময়লা রাস্তায় নিক্ষেপে ৫০০ দিরহাম।
৬। ওয়ান টাইম চায়ের কাপ বা পানীয় এর বোতল বা ক্যান নিক্ষেপে ২০০ দিরহাম জরিমানা গুনতে হচ্ছে প্রবাসীদের।
৭। হোটেল রেস্তোরার সামনে অপরিস্কার থাকলে বা ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকলে ৫হাজার দিরহাম। (মানে বাংলা একলক্ষ সাত হাজার টাকা) জরিমানা আদায়ে দায়বদ্ধ।
এবার আমার দেখা একটি ঘটনা উল্লেখ করছিঃ
প্রায় ৩বছর আগে এক শুক্রবার বিকালে সমূদ্র পাড় কর্ণেশে ঘুরতে গেলাম। নতুন ৪জন বাঙ্গালী কর্ণেশ পার্কে ঘাসের উপর বসে বাদাম খাচ্ছিলেন আর খোসা ঘাসের উপর ফেলছিলেন।
একজন আরবি লোক এসে একজনের পতাকা চেক করে একটি পেপার ধরিয়ে দিয়ে পতাকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন, আমি কাছে গিয়ে বললামঃ আপনারা কি বাঙ্গালী? জ্বী ভাই, দেখুন তো পেপারটিতে লিখেছে?
পার্কের আইন ভঙ্গের দরুন ৫০০ দিরহাম জরিমানা শুনে আমার দেশী ভাইয়েরা প্রায় কান্নায়মগ্ন। বলতেছেন ভাই এক মাসের বেতন পুরাটাই গেল। আবুধাবীতে আর কখনো আসি নাই, নতুন আসলাম, কাজ করি বাগানে, সামান্য বেতন।
ইস! আমারও খুব দয়া হল, সবাইকে নিয়ে ছুটলাম আরবীর পিছু পিছু। অনেক অনুনয় করে বললাম, গরীব অসহায় এরা, শহরে নতূন এসেছে, তাই কানুন জানে না, একটু রহম করুক প্লীজ।
এ দেশে কোন ঘুষ চলে না, একটাই উত্তর দিলেন: সোমবারে খালেদিয়া পুলিশ ষ্টেশনে গিয়ে জরিমানা দিয়ে পতাকা নিয়ে আসবি। দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।
কি আর করা, দেশী ভাইদের খালেদিয়া পুলিশ ষ্টেশনের ঠিকানা দিয়ে দুঃখিত বলে বিদায় নিলাম।
এবার নিজের একটি ঘটনা বলিঃ
২০০৬ সালে ফেনী টাউনে একটি লাইব্রেরী প্লাস ছাপাখানায় কর্মরত ছিলাম। ভাড়া বাসাটি এমন জাগায় ছিল যে আশপাশের ৫০০মিটারের মধ্যে ময়লা ফেলানোর কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। কেউ ড্রেনে, কেউ রাস্তার পার্শে, কেউ জলাশয়ের জমিতে, কেউ পুকুরে ময়লা ফেলতো।
আমাদের তখন কি যে কষ্ট হত, বড় একটি ঝুড়ি ছিল, সাপ্তাকে একদিন দূরে নিয়ে ফেলতাম। কিন্তু যে দিন তেলাপিয়া মাছ পাকাতাম, সেদিন ময়লা জমা রাখা যেত না। অল্প সময়ে অনেক দূর্গন্ধ হয়ে যেত। তাই কষ্ট হলেও অনেক দূর হেটে গিয়ে ময়লা ফেলিয়ে আসতে হতো।
সত্যি বলতে কি! আমাদের দেশে ময়লা আবর্জনার ম্যানেজমেন্ট একেবারেই দূর্বল পর্যায়ের, এরপর রয়েছে দুর্নীতির খড়গ, সব মিলিয়ে বর্ষাকালে সবার একটু হুশ ফিরিয়ে আসলেও সারা বছর দূর্নীতিতে বেহুশ।
তাই সবার প্রতি অনুরোধ, ইসলামী শিক্ষার প্রতি যত্নবান হোন, তাহলে পৃথিবীর কোন জাতি আমাদেরকে জ্ঞান দিতে আসতে না। আমরাই হব সবার অনূস্বরণীয়।
১। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ- মুসলিম।
২। ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা হল রাস্তা থেকে ময়লা আবর্জনা ও কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া - বুখারী ও মুসলিম।
৩। রাস্তা থেকে ময়লা আবর্জনা কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া সাদাক্বাহ - মুসলিম ও আবু দাউদ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৫ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাপানিরা কিছুটা হলেও সচেতন করেছে বলে মনে হয়। যদিও তা আমাদের জন্য অপমানজনক।।।
আমরা কবে নিজেদের শিক্ষিত করে তুলব আল্লাহই জানেন।
আমরা নিজের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলায় জাপানিরা আমাদের জ্ঞান দেয়।
মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
চাই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গীর!!!
জনদূর্ভোগ নিয়ে একুশে টিভির সিনিয়র রিপোর্টার কনক সারওয়ার ও অখিল পোদ্দার ধারাবাহিক রিপোর্ট করতেন, আওয়ামী পুলিশ তাদেরকেও ছাড়েনি, আচ্ছা ভাবে কেলিয়ে দিয়েছে।
জনদূর্ভোগের জন্য একমাত্র প্রশাষন ও সরকার দায়ী। ধন্যবাদ
সেটা তো করার হেডম নেই , উল্টো শিনজো আবে সে সময়ে জাপানের ভূমিকা নিয়ে লজ্জিত হয়েছেন ।
আর আমরাও রাসূল(সা)এর শিক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছি না..আমরা কেমন মুসলমান?
আপনার এই পোস্টের যথাযথ জা যা দিন আল্লাহপাক। অনেক ধন্যবাদ
হায়রে মুসলমান হুশ হবে কবে?
লিখাটি যথাযথ মুল্যায়নের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
এই ইন্সট্রুমেন্ট দাম কিন্তু বেশি নয়। আমরা চাইলে সহজেই এভাবে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি।
এক আরবী তো দেওয়ালের মধ্যে খয়েরি রং দেখে অবাক! কিনে এই রং তো আমি দেওয়ালে করিনি, কোত্থেকে এলো? কিছু দিন পর জানতে পারলেন এটা কাচরা বাঙ্গালীর কাজ।
ময়লা আবর্জনাকে আবরীদের আঞ্চলিক ভাষায় কাচারা ও বলা হয়। তারা সহযে বলে ফেলে কুল্লু বাঙ্গালী কাচরাহ। অর্থাৎ বাঙ্গালী বলতেই খেচড়।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
হুম, হতে পারে। গরমের দিনে শরীরের লবনাক্ত আঠা দুর করতে মানুষ গোসল করে, কিন্তু বাহিরে গেলে আবারও বের হয়, তাই বলে কেউ গোসল করা বন্ধ করে দেয়নি।
ধন্যবাদ! ধন্যবাদ!! ধন্যবাদ!!!
তাই সবার প্রতি অনুরোধ, ইসলামী শিক্ষার প্রতি যত্নবান হোন, তাহলে পৃথিবীর কোন জাতি আমাদেরকে জ্ঞান দিতে আসতে না।"
আপনার পুরা লিখাটা অনেক অনেক ভাল লাগলো, এক কথায় অসাধারণ, তবে নিচের এই দুইটা লাইন থেকে আমাদের অনেক কিচুই শিখার আছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বিয়ের ব্যপারটা বিস্তারীত জানতে আগ্রহী, যদি আপত্তি না থাকে।
যেখানে বিবাহের এলান করার কথা বলা হয়েছে, সেখানে আপনি সবাই জেনে যা্বে বলছেন কেন?
আমি বলবো আপনার বিবাহের বিস্তারীত আলোচনা নিয়ে একটি দীর্ঘ পোষ্ট লিখুন। মিষ্টি না হয় দেখা হয়ে খাবো।
অপেক্ষয় রইলাম................
সত্যিই আমরা যদি একটু সচেতন হই, অন্য জাতিকে আমাদের জ্ঞান দিতে আসতে হত না। ধন্যবাদ ভাই।
ভালো লাগলো আপনার লেখা।
অল্প বাক্যে চমৎকার একটি কথা বলেছেন। সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন