পূর্বতীমুর বনাম জুমল্যান্ড
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৪ আগস্ট, ২০১৫, ০৪:০২:০৪ বিকাল
পার্বত্য অঞ্চলে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, রামগড়, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান জেলাশহর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছি।
যতটুকু বুঝেছি, সমতল ভূমি তথা চট্টগ্রাম জেলা সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়িরা কিছুটা অসহায়।
বাঙ্গালীদের কাজ করে খায়, ধান লাগায়, কাঠ কেটে বাঙ্গালীদের নিকট বিক্রয় করে, ফলফলাদি বিক্রয় করে এরা জিবন ধারন করে।
অনেক পাহাড়ী মেয়েরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, হাটহাজারী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে দুই তৃতীয়াংশই পাহাড়ি ছেলে/মেয়ে অধ্যায়নরত।
উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কেউ কেউ মুসলিম হয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ শান্তি বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে তাদের বিদ্যা বুদ্ধি কাজে লাগাচ্ছে।
যারা সীমান্ত থেকে অনেক দূরে গহীন পাহাড়ে ও জঙ্গলে বসবাস করে, তারা মোটেও অসহায় নয়, ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে, বাঙ্গালীদের উপর হরহামেশা জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০৫ সালে যখন রাঙ্গামাটি সফর করেছি, রাঙ্গামাটি শহর ও আশপাশের প্রতিটি দেওয়াল পোষ্টারে ভরপুর ছিল, কিভাবে বাঙ্গালীদের উপর পাহাড়িরা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, তথ্যচিত্র সহ। তখন স্বাধীনতার ৩৫বছর উদযাপন চলছিল।
পোষ্টারে লিখা ছিল স্বাধীণতার ৩৫বছরে ৩৫হাজারের অধিক বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বেশিরভাগই কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে।
ঝুলন্ত ব্রিজ পার হয়ে মাইল খানিক জঙ্গলের দিকে হাটলাম, অনেক পাহাড়ির বাড়িঘরে গেলাম।
ঘরে সবাই মহিলা, বৃদ্ধ ও ছেলেমেয়ে। কোন যুবককে দেখলাম না। ৫/৬ বছরের এক বাচ্ছাকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাবা কি করে?
সরাসরি উত্তরঃ শান্তি বাহিনীতে চাকরি করে।
আমি আশ্চার্য হলাম, শান্তিবাহিনীর আয়ের উৎস জেনে। খৃষ্টান মিশনারীগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার তাদের পিছনে ব্যয় করে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, পার্বত্য অঞ্চলকে পূর্ব তিমূরের ন্যয় জুমল্যান্ডে রূপায়ন করা।
২০০৪ সালে বান্দরবান এর মেঘলা পর্যটন স্পট দিয়ে অনেক ভিতরের দিকে গেলাম, পাহাড়িরদের বাড়িঘর গাছের উপর, কিছু কিছু ভূমি থেকে ২হাত উচুতে, বাঁশ দিয়ে ঠাঁই লাগানো। একে তো উঁচু টিলা, দ্বিতীয়ত টিলার উপর বাঁশের মাচা বানিয়ে উপরে ঘর বানানো।
বেশির ভাগ ঘর গুলো ছনের তৈরী। ছন বলা হয় এক প্রকারের ঘাঁস, যা অনেকদিন দিন টিকে ঝড় বৃষ্টির মাঝেও।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পাহাড়ের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়, সবার হাত একটি দা, বটি, কাছি সব সময় থাকবেই। জঙ্গলথেকে কলা, আনারস, কচি বাঁশের ছারা সহ বিভিন্ন তরুলতা সংগ্রহে ব্যস্ত।
প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম, আমাদের কোপাতে আসে কি না!
কিছুক্ষণ পর তাদের সাথে সখ্যতা গড়লাম। তাদের জীবন সম্পর্কে অনেক জানলাম। গোসলের সময় দেখলাম পশ্চিমা স্টাইলে পুরুষ মহিলা একসাথে প্রায় উলঙ্গ হয়ে পাহাড়ের নিচে বয়ে যাওয়া ঝর্ণাতে গোসল করে যাচ্ছে।
উপরে দেখতে সাদাসিদে জীবন যাপন মনে হলেও ভিতরে ভিতরে সবাই শান্তিবাহিনির সদস্য। বাঙ্গালীদের জানে দুশমন।
সাময়িক সুযোগ সুবিধার জন্য বাঙ্গালীদের বন্দুত্ব গ্রহন করলেও বগলে ইট সংরক্ষণ করে।
স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে পৃথক হয়ে জুমল্যন্ড নামে দেশ গড়ার জন্য অনেক আগে থেকেই জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাজে তাদেরকে অনাকাঙ্খিত ভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে খৃষ্টার মিশনারীগুলো।
সময় থাকতে সরকার যদি এদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, হয়তো বেশি দেরি নেই পূর্বতিমূরের ভাগ্য বরণ করতে।
ইন্দোনেশিয়ার পূর্বতিমূর নামে দ্বীপটির ইতিহাস প্রায় সকলেরই জানা। মুসলিমদের কিভাবে কচুকাটা করা হয়েছিল, পশ্চিমাদের কাছে তখন মানবতা নামক জানোয়ারটি ঘুমিয়ে থাকে। কোন নাস্তিক ব্লগার জাহান্নামে গেলে ওদের চেতনা জেগে উঠে, কখনো কখনো এফ বি আই'য়ের আগমনও ঘটে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পার্বত্ব্য অঞ্চলকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন, অনেক বাঙ্গালীকে সেখানে বাসস্থান করে দিয়েছিলেন। এরপর আর কোন উদ্যোগ দেখা যায় নি। জানিনা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ভাগ্যে কি আছে।
বিষয়: বিবিধ
৩০০০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
বিগত সরকারগুলোর আমলে শান্তিবাহিনিকে অস্ত্রজমা দিলে যে চাকুরীর অপার দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা গেছে অগ্নেয়াস্ত্রগুলো ওদের প্রাণকেন্দ্রে রেখে, হাতে বানানো কিছু ভাঙ্গা ফাইভগান জমা দিয়ে অনেক চাকমা পুলিশ ও বিডিয়ারে চাকুরী পেয়েছে। এতে করে দেশের সকল তথ্য শান্তি বাহিনির কাছে অতি সহঝে পৌছে যাচ্ছে।
যে হারে চাকমারা টাকা ও সম্পদের লোভে খৃষ্টান হয়ে যাচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা।
জিয়া সেখানে বাংগালীদের রেশন এর ব্যাবস্থা করেছিলেন, একবার দেখলাম জয়ই মামুন রিপোর্ট করেছে বাংগালী কেন রেশন পাবে? পাহাড়ি কেন পাবেনা, তার মানে সেখান থেকে বাংগালী খেদাও, এভাবে এরা প্রচারনা চালাচ্ছে, এগুলো বুঝতে হবে, জানতে হবে, কাজ করতে হবে, না হলে পাহাড় চলে যাবে, থাকবেনা
এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পার্বত্ব্য অঞ্চল বাংলাদেশের অংশ থাকবে না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
সুন্দর করে বলেছেন, নিজেরা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে আল্লাহ তায়ালা কারও ভাগ্য পরিবর্তন করে দেন না। দেশের সব বিষয়ে যেভাবে দলীয় করণ করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে দেশের ১২টা বেজে সীকিম হতে বেশী দেরী নাই।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক শুকরিয়া।
এই এলাকাটি যদি কোন ইউরোপীয়ান দেশে হত, তাহলে এটিকে পূঁজি করে বহু বিলিয়ন ডলার আয় করা যেত। স্বাধীনতার সংগ্রামের অব্যাবহিত পর ভারত সেখানে শান্তিবাহীনিকে অস্ত্র দিয়ে, আপনার দৃষ্টিতে যারা নিরীহ তাদের কে হিংস্র জানোয়ার বানিয়েছিল। অস্ত্র পেলে এই নিরীহ মানুষ গুলো কেমন আগ্রাসী হয়ে হয়ে উঠে, সেটা অতীতের ইতিহাসের পাতায় পাতায় সাক্ষী হয়ে আছে। জাতি বিনাশী এই কাজটি আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র! তথা চাউল দাদা বাবুরা করেছিল। তারা শন্তু লারমার মত অকৃতজ্ঞ, শঠ এবং কপট ব্যক্তির মত মানুষ পেয়েছিল।
সর্বোপরি, পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনদিন চাকমাদের জায়গা ছিলনা। বার্মার শাসকদের অত্যাচারে তারা ব্রিটিশ আমলেই বান্দরবান এলাকায় আশ্রয় গ্রহন করে, পরে আস্তে আস্তে তারা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক ইস্রায়েলী ইহুদীদের মত। এদের কে পাশ্চাত্য শক্তি ভিতরে ভিতরে প্রায় খৃষ্টান বানিয়ে ফেলেছে। এখন একটি খৃষ্টান দেশ হিসেবে স্বাধীন হতে দরকার আন্দোলন!
আন্দোলন ও করা যাবে, আইনগত একটু ছোট সমস্যা আছে, সেটার কারণে হায়েনার মত ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় আছে।
সেটা হল তারা বাংলাদেশের সংবিধানে উপজাতি হিসেবে চিত্রিত, পুরো দুনিয়া তাই জানে। উপজাতি অর্থাৎ যারা পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব করেনা এবং বাংলাদেশের সংবিধানের কথা পছন্দ না হলে 'নিজের রাস্তা নিজে দেখতে পার' এই ধরনের কথার মাঝখানে রয়েছে। যেটা রোহিঙ্গারা ভোগ করছে। উপজাতি এসব চোরা খৃষ্টানদের একটি যথার্থ আন্দোলন করতে হলে, একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দরকার! সেটা হল তাদেরকে আদিবাসী তথা ঐ অঞ্চলের প্রকৃত পুরানা মানুষ হিসেবে বিবেচিত করা, কিংবা প্রমানিত করা। যে সম্ভাব্যতা পূর্ব তিমিরে ছিল!
সেই কারণেই প্রথম আলো পত্রিকা সুযোগ পেলেই তাদেরকে উপজাতি না বলে আদিবাসি বলে উল্লেখ করে। কেননা পত্রিকাটি সাম্রাজ্যবাদীদের দালালি করে। সাধারন মানুষ তো এসব জানেনা বুঝেনা। এই না জানার সুযোগ তারা কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে ফেলে!
প্রকৃত কথা হল, 'সম্পদ থাকলেই হয়না, তা যথাযত ব্যবহারের জ্ঞান না থাকলে সে প্রকৃতই একজন বেকুপ মানুষ, আল্লাহ তাকে গাধার সাথে তুলনা করেছেন। সে কারণে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে প্রথমেই এলেম দরকার এবং সেই এলেম হতে হয় চারিপাশ্বিক বাস্তবতায় ভরপুর।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন লিখায় হাত দিয়েছিলাম, অসুস্থতার কারনে শেষ করতে পারিনি তাই প্রকাশ করাও হয়নি। সেখান থেকে কপি করে আজকের মন্তব্যটি আপনার পোষ্টে ছেড়ে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ
আপনার মন্তব্য আমার ক্ষুত্র লিখাটাকে পূর্ণতা দিয়েছে। মন্তব্যটি পড়ে অনেক জানলাম, বিশেষ করে উপজাতি ও আদিবাসী শব্দ দুটির মাঝে লুকিয়ে থাকা এক ষড়যন্ত্রময় কাহিনী। আপনার পুরাে লিখাটি পোষ্টের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার সু-সাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। জাযাকাল্লাহ খাইর
দুষ্ট পোলার প্রতিচ্ছবি, দেখাচ্ছি মজা......
সাময়িক সুযোগ সুবিধার জন্য বাঙ্গালীদের বন্দুত্ব গ্রহন করলেও বগলে ইট সংরক্ষণ করে।
ঐ এলাকা গুলোতে ১ম দিকে সেনাবাহিনী থাকলেও আওয়ামী সরকার ঐ সেনাবাহিনীকে ঐ জায়গাথেকে সরিয়ে পেলেছে, সরকারের এই আচরন পাহাডী উপজাতীদের সংগঠিত করতে পুরোপুরি সহযোগীতা করেছে। এখন যেভাবে অভিযান চলতেছে সেইভাবে যদি ১০ বছর আগে থেকে নিয়মিত চলতো, তাহলে তারা এতদুর আগাতে পারতোনা, তার উপর সরকার উপজাতীর কোটায় তাদেরকে দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান গুলোতে পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়ে মুলত তাদের কে অনেক অনেক সহযোগীতাই করতেছে।
লিখাটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শান্তি চুক্তি যে ওদের জাতীয় বাবার স্বপ্ন, সেনাবাহিনী না সরালে চুক্তি পরিস্থিতি কিভাবে তৈরী হবে!
ঘোলাটে পরিস্থিতি তেরী করতেই তো এসব করা হচ্ছে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন