আমরা স্ব-বিরোধীতায় লিপ্ত, ফায়দা কার?
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৯ জুলাই, ২০১৫, ০২:৪৫:৩৬ দুপুর
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
কয়েকদিন ধরে ব্লগে কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্ক হতে দেখা যাচ্ছে।
একদল চর্মোনাইর হুজুরের বিরুদ্ধ বিষোদাগার করে যাচ্ছে, উনার লিখা ভেধে মা'রেফাত থেকে অস্পষ্ট ও শিরকি কথাগুলো হাইলাইট করে যাচ্ছে, দেখুন এখানে
অন্য দল মাওদূদী হুজুরের লিখা তাফহীমুল কুরআন ও তরজুমানের মধ্য থেকে অস্পষ্ট ও ইসলাম বিদ্বেশী লিখাগুলো হাই লাইট করে যাচ্ছে। এখানে দেখুন
এভাবে চলতে থাকলে কি আমরা কখনো বাতিলের মোকাবিলা করতে পারবো?
আবার ফখরুলইসলাম নামে এক ব্লগার দুই দলকেই বিষোধাগার করে যাচ্ছে, এরই মাঝে নাস্তিকরা মন্তব্য করে ইন্ধন যোগাচ্ছে।
এতে মন্তব্যে ও প্রতিমন্তব্যে একে অন্যকে গায়েল করতে ব্যস্ত, সাধারণ পাঠক কাকে সমর্থন করবে? নাকি আরো অবনতির দিকে ধাবিত হবে?
এমনিতেই জেনারেল শিক্ষিকদের নিকট হুজুর ও আলেম ওলামাদের দোষের অভাব নেই, তার উপর আমাদের এই রেষারেশিগুলো তাদের রসদ যোগাবে বৈ কি!।
আমাদের শক্তি তো আমরা নিজেদের মধ্যে ক্ষয় করে ফেলবো, বাতিল এ সুযোগে কলাগাছের মত ফুলে উঠবে।
তাবলীগের ফাজায়েলে আমালের ব্যপারে অনেক প্রশ্ন থাকায় তারা গত সংস্করণে যাচাই বাচাই করে কিছু সংশোধন করেছেন। তা ছাড়া এখন ফাজায়েলে আমালের চেয়ে মুনতাখাব হাদিস (বিষয়ভিত্তিক বাচাই করা হাদিস) নামক কিতাবটিই বেশী তা'লীম করেন।
সংশোধনের মানসিকতা থাকলে একদিন সবাই সঠিক পথে ও এক কাতারে আসতে পারবেন আশা করি। ইনশা আল্লাহ। উম্মতে মুহাম্মাদীর বর্তমানে একতা'রই একমাত্র বড় অভাব।
রাগ বা একগুয়েমী না করে একটু বিবেচনা করুন প্লিজ:
আমরা জানি তাফসীরে জালালাইনের প্রথম অংশের লিখক আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ূতী (রহ) তাফসীর লিখার ক্ষেত্রে কয়েকটি জাগায় ভূল করেছেন, তন্মধ্যে একটি হল সূরা হজ্বের ৫২ নং আয়াত, তাফসীরে জালালাইন দেখতে পারেন।
সেই ভূলকে উনার লগজসাত বা বেখেয়াল হিসেবে মেনে নিয়ে সঠিক ব্যখ্যাটি পাঠ করে প্রায় সবাই আলেম হয়। কিন্তু কেউ তো উনাকে বাতিল বা মুশরিক বা ইয়াহুদীদের পা চাটা গোলাম বলে না।
এখানেও কি আমরা এ পন্থা অবলম্বন করতে পারি না?
সাহাবী আমিরে মুয়াবীরা (রাঃ) এর একটি কথা বার বার মনে পড়ে।
যখন আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত মুয়াবীয়া (রাঃ) এর মাঝে ওসমান (রাঃ) এর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে দন্ধ চরমে। দুটি যুদ্ধও সংঘঠিত গেল, হাজার হাজার সাহাবী (রাঃ) ও জীবন দিলেন। (এক বর্ণনায় ৭০হাজার সাহাবী শহীদ হলেন)।
ঠিক এই মুহুর্তে রুমের বাদশা হযরত আমীরে মুয়াবীয়ার নিকট প্রস্তাব দিয়ে দূত পাঠালেন যে আপনি যদি চান, আমি এই মুহুর্তে লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে আলীর মোকাবেলায় আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি।
এমন প্রস্তাবের পর হযরত আমীরে মুয়াবীয়া দূতকে এই বার্তা দিয়ে ফেরত পাঠালেন যে, হে রুমের কুত্তা, আমার ও আলীর মধ্যকার ধন্ধ আমাদের একান্ত নিজেদের ব্যপার, তোর মত কুৃত্তার এ ব্যপারে মাথা ঘামানোর অধিকার নেই। যদি এ সম্পর্কে তোর অন্য কোন তৎপরতা শুনি, তবে আমি আলীর সঙ্গে এক হয়ে তোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষনা দিব।
(আজকে যারা হযরত আমীরে মুয়াবীয়া (রাঃ) এর সমালোচনায় ব্যস্ত, তাদের জন্য আমীরে মুয়াবীয়াকে জানতে এই ঘটনাটিই যথেষ্ট।)
আমাদের উত্তরসূরী মহান সাহাবীগণ যদি এমন নীতি গ্রহন করতে পারেন, তবে বর্তমানে ইসলামের এই দূর্নিনে আমাদের ভূমিকা কি হওয়া উচিৎ?
নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছুটাছুটি করবো? নাকি নিজেরা আপসে সংশোধন হয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে ঐক্য হয়ে কাজ করবো!
কোনটি ঈমানের দাবী ও সময়ের দাবী বিবেচনার সময় কি এখনো হয়নি!
আমি জানি মাওলানা মাওদুদী সাহেবের লিখা অনেক ক্রটি বর্তমানে সংশোধন করা হয়েছে, এমনকি আরো কিছু কোরআন হাদীসের বিরোধী থাকলে তারা সংশোধন করতে প্রস্তুত।
কিন্তু চর্মোনাইর হুজুরের পক্ষের ভাইয়েরা কি ভেদে মারেফাতের মত বইগুলির ভূলগুলো সংশোধন করতে প্রস্তুত?
হাদীসে এসেছে: প্রত্যেক আদম সন্তানই ভূলকারী, তবে তাদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা ভূল থেকে ফিরে আসে।
যদিও এই হাদিসটির সনদের ব্যপারে বিভিন্ন মতানৈক্য রয়েছে, তবুও জাল হাদিস কেউ বলেন নাই। হয়তো দুর্বলের পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এর মাঝে হেদায়েত ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বিশাল বাণী রয়েছে।
আমরা জানি পৃথিবীতে আলেম ওলামা ও সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা ও মুহাব্বতের মাধ্যমেই মুর্তি পুজার আগমন ঘটেছে। (হযরত নূহ (আঃ) জীবনী দ্রষ্টব্য)
এ থেকে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, আলেম, ওলামা, বুযুর্গ, সত্যিকারের পীর, শায়েখ ও মাশায়েখদের আমরা সম্মান করবো, তবে তা হতে হবে সীমারেখার মধ্যে। কুরআন হাদীস বিরোধী কোন কথাবার্তা তাদের থেকে বের হলে তা আমরা কখনো গ্রহন করবো না।
হোক সে আল্লামা মওদূদী, চর্মোনাইর পীর, শায়খুল হাদীস, জাকির নায়েক কিংবা ওলামায়ে দেওবন্দ। দ্বীনের ব্যপারে আমাদের সবাইকে সত্যের সন্ধানী হতে হবে।
(বিঃদ্রঃ সংশোধনী পোষ্ট, কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমন আমার উদ্দেশ্য নয়)
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক। সবাই সঠিক পথে আসুক। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
বিষয়: বিবিধ
১৯১০ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিরর্ক মুক্ত ইমান চাইই চাই সংশোধনের মানষিকাতা বিশেষ জরুরী তাই
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর
(আজকে যারা হযরত আমীরে মুয়াবীয়া (রাঃ) এর সমালোচনায় ব্যস্ত, তাদের জন্য আমীরে মুয়াবীয়াকে জানতে এই ঘটনাটিই যথেষ্ট।)
জাযাকাল্লাহ খাইর
কবে যে আমরা এক হতে পারবো!
আল্লাহ তায়ালা তাওফীক দান করুক।
জাযাকাল্লাহ খাইর
তা করতে পারলেই বাতিলের মোকাবেলা করে নিজেদেরকে মুসলিম পরিচয় দিতে পারব। ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য।
সুন্দর নম্র ও মায়া মমতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়, একমজন মানুষকে সঠিক পথে আনা যায়।
কিন্তু কটু কথা ও হেয়পতিপন্ন করে কাউকে সঠিক পথ দেখানো যায় না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
আর এ বইগুলো অনুসরন করার জন্য পীরের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাবে তাগীদ দেওয়া আছে ।
জামায়াত মওদুদী থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে কারন মাওলানা মওদুদী নিজেই বলেছেন আমাকে অন্ধ অনুসরন করো না ।
জামায়াতের অনেকেই মাওলানা মওদুদীর অনেক মন্তব্যের সাথে একমত হন না ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান ভাইয়া অনেক সুন্দর লিখেছেন ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
এজন্যই আমি এধরণের পোস্ট স্বযত্নে এরিয়ে চলি।
ধন্যবাদ।
চমৎকার বলেছেন ভাই।
অন্যকে হেয় করে কোন দিন সঠিক পথ দেখানো যায় না, মায়া মমতায় পাথর হৃদয়কেও গলানো যায়।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
আমার মনের কথাই আপনি লিখে ব্লগারদের বিরাট খেদমত করলেন। ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
বাহিরের শত্রু থেকে মুসলিমদের নিজেদের মধ্যকার অনৈক্য আর বিভেদই অধঃপতনের মুল কারণ!
এ থেকে বের হয়ে আসতে আপনার দরদময় উপস্হাপনা কাজে আসবে ইনশা আল্লাহ!
শুকরিয়া।
কি চমৎকার উপসংহার ই না টানলেন। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। মাশাআল্লাহ্। এ পয়েন্টটিতে আমার মনে হয় কেউই দ্বিমত করবেন না।
এ থেকে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, আলেম, ওলামা, বুযুর্গ, সত্যিকারের পীর, শায়েখ ও মাশায়েখদের আমরা সম্মান করবো, তবে তা হতে হবে সীমারেখার মধ্যে। কুরআন হাদীস বিরোধী কোন কথাবার্তা তাদের থেকে বের হলে তা আমরা কখনো গ্রহন করবো না।
হোক সে আল্লামা মওদূদী, চর্মোনাইর পীর, শায়খুল হাদীস, জাকির নায়েক কিংবা ওলামায়ে দেওবন্দ। দ্বীনের ব্যপারে আমাদের সবাইকে সত্যের সন্ধানী হতে হবে।
আসলে ফেসবুকে ও ব্লগে যখন দেখি আমাদেরই দুই দল বিতর্কে লিপ্ত, তখন নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয় এজন্য যে, যাদের থাকার কথা বাতিল মোকাবেলার ময়দানে, তারা আজ নিজেদের অভ্যন্তরীণ দন্ধে ব্যস্ত।
তাই নিজের মনের ব্যথা থেকে কথাগুলো লিখা।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর।
এখনো কি দেশে আছেন ভাই! নাকি মুসাফফাতে আছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন