প্রবাসে ঈদ মানে কি!
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৯ জুলাই, ২০১৫, ০৯:৫৭:৪১ রাত
সীমিত জিবন থেকে একে একে কেটে গেল ১১টি ঈদ। এরই মধ্যে দু'বার ছুটিতে গেলেও ঈদকে কেন্দ্র করে যাওয়ার চেষ্টা করেও হয়ে উঠেনি, কখনো নিজরে অপ্রস্তুতি, কখনো কোম্পানীর অবহেলায়।
ঈদ আসলে ভাবনার জগতে হারিয়ে যাই, মায়ের হাতের রান্না ও আত্মীয়ের বাড়িতে ছুটাছুটির বিষয়টি অনেক ভাবায়।
প্রবাস থেকে ঈদের দিন বাড়িতে ফোন করে আনন্দ ভাগাভাগীর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই, কারণ দেশে তখনও রোঝার ধারাবাহিকতা শেষ হয়নি, কাজেই বাড়িতে আনন্দের আমেঝ নেই।
দ্বিতীয় দিন ফোন করে কিছুটা আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করি, তখন বাড়ি থেকে সাড়া মিললেও আমাদের এখানে (প্রবাসে) যে ঈদ অতীত হয়ে গেছে। ডিউটির ব্যস্ততায় থাকতে হয়।
এভাবেই চলছে জীবনের গাড়ী, তুবও আলহামদু লিল্লাহ, মহান প্রভূর দূয়ারে হাজার শোকর। ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোনের কল্যানে সবার সাথে ভিড়িও কন্ফারেন্সে দারুন মজা হয়েছে।
বাড়ীর ছোট ছোট ভাতিঝিরা সবাই কিরণমালায় ডুবন্ত, জান্নাত মনিও এর ব্যতিক্রম নয়। আমি আশ্চর্য এ কারনে যে আমাদের সমাজে চায়ের দোকন ছাড়া আর কোন বাড়িতে টিভি নেই, কিন্তু কিরণমালার খরবটি কিভাবে পৌছে গেল এই অজোপাড়া গ্রামে।
অনেক প্রবাসীভাই ঈদের দিন ১১টা থেকেই ডিউটি শুরু করেছেন, কেউবা বিকেল ৪টায়। হোটেল রেস্তোরায় কর্মরত প্রবাসী ভাইয়েরা ঈদ ও ঈদের নামায কি জিনিস তাও চোখে দেখে না।
এবারের ঈদটি যেভাবে কাটলোঃ
বৃহঃবার রাত ১১টায় ডিউটি থেকে রুমে গেলাম, জামাকাপড় ধুয়ে গরম হাওয়াতে মেলে দিলাম। রুমে বসে রুমমেটদের সাথে বিভিন্ন আলোচনার ফাঁকে হালকা নাস্তাও হয়ে হয়ে গেল।
রাত ৩ টার দিকে কাপড় আইরন করা, অতপর গোসল সেরে ফজরের প্রস্তুতী, ৪.৪৫মিঃ ফজরের জামাত শেষে মসজিদেই অপেক্ষা করতে লাগলাম, তিলাওয়াত ও তাকবীর পড়তে পড়তে ৬টা। ৬.০০টায় ঈদের জামাত শুরু হল। ৭টায় রুমে গেলাম।
এক সাথী সেমাই রান্না করলেন, ৩কিলো দুধ ৬০০গ্রাম লাচ্ছা সেমাই, (উন্নতমানের দেশী) ১০০গ্রাম কিচমিচ ও ১০০ বাদাম, দারুচিনি, এলাচি, তেজপাতা, লবন ও চিনি পরিমান মত।
খেতে বসে দেখলাম, লাচ্চা সেমাই পুরোই আটা হয়ে গেছে, তারপরও ঈদ বলে কথা, প্লেটে একটু নিলাম। মুখে দিয়ে আর খেতে পারলাম না। তাজা মবিলের গন্ধ। সেমাইতে মবিল এলো কি করে?
তাছাড়া দামী সেমাইয়ের এমন হাল হলে সস্তাগুলোর কি হাল? জরুরী সরকারের আমলে ভেজার বিরোধী অভিযানের সময় মবিলে সেমাই ও চানাচুর ভাজার অনেক খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। মনে হতে লাগলো ক্ষমতার বদল হলেও মবিলের ব্যবহার আর বন্ধ করা যায় নি।
যাই হোক ঈদের দিনে আর সেমাই খাওয়া হল না। নিজের সিটে গিয়ে দেশের আত্মীয়স্বজনদের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ঘুমে মনোনিবেশ করলাম। জুমআর আযানের ১০মিনিট আগে জাগ্রত হয়েই মসজিদের দিকে দৌড়। নামায শেষে রান্না করা গরুর গোস্ত দিয়ে খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম।
আছরের নামাযের পর শহরের বাহীর থেকে আসা দুই বন্ধুর সাথে কিছুক্ষণ ঘুরাঘোরী। মাগরিবের পর আবার নিজের রুমে ডুকে পড়লাম।
এ ছিল এবারের ঈদে আমার সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি।
বন্ধুরা আপনাদের ঈদটা কেমন কাটলো! জানতে ইচ্ছুক। লিখে ফেলুন সংক্ষেপে।
সবাইকে আবারো ঈদ মোবারাক।
বিষয়: বিবিধ
২৩৮৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার ঈদ ফিরিস্তির আমারও প্রায় মিল। নতুন করে কি লিখব। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
লাচ্ছা সেমাইয়ে মুবিলের গন্ধ জানতে পেরে খুবই দুঃখ লাগলো!!! আমাদের রুমেও সামলাইতে রান্না করা হয়েছিল দারুন মজা করে খেয়েছি! আমরা দেশীয় লাচ্ছা সেমাই কিনে এনেছিলাম।
আমরাও তো দেশীয় লাচ্চা সেমাই আলম সুপার মার্কেট থেকে কিনে এনেছি, দামীটা। তবুও কেন এমন জানি না।
আপনার সুন্দর ঈদ পার করা জানতে পেরে ভালাই লাগলো। শুকরিয়া।
প্রবাসের ঈদ মরু পর্বতের মতো হাহাকার বেদনা হূদয়ে চাপা দিয়ে, রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ আত্মীয়স্বজনকে দেশে রেখে একটু শান্তির আশায় বিনোদনের জন্য, কাতারের আল খোর থেকে দোহাতে ঘুরাঘুরি আরো আছে,,,,,,
আপনার ঘুরাঘুরি গুলো ছবিসহ পোষ্ট করুন।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
দেশে থাকলে তো বাইক নিয়ে সারা এলাকা চষে বেড়াতাম, আত্মীয়-স্বজন সবার বাড়িতে ডু মেরে আসতাম।
অবশ্যই জান্নাত আমার বাইকের সামনের দিকে বসা থাকতো। ভালো লাগাই ঈদের স্বার্থকতা।
অনেক অনেক শুকরিয়া। দেরীতে হলেও ঈদ মোবারাক।
খুবই মর্মস্পর্শী ছিল সেটা । দেখে নিতে পারেন ।
প্রবাসীদের সমবেদনা জানানোর জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া্
কেমন আছেন?
ঈদ মোবারাক, জ্বি সত্যিই প্রথম প্রথম অনেক কেদেছি, এখন আর কাদতে ইচ্ছে হয় না। মনের ব্যথা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। অনেক অনেক শুকরিয়া।
আখেরী জামানা সম্পর্কিত অন্যতম সুরা - সুরা কাহাফে গুহাবাসী যুবকরা তাদের একজনকে দিরহাম সহকারে শহরে পাঠিয়েছিল এই জন্য যে, সে যেন শহর হতে খুঁজে নির্ভেজাল খাওয়ার যোগ্য খাবার সংগ্রহ করে আনে।
দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আজকের পৃথিবীতে আপনি লিটারেলী অত্যধিক দাম দিয়েও গ্যারান্টি সহযোগী শহর হতে সেই নির্ভেজাল খাবার সংগ্রহ করতে পারবেন না।
আপনার ঈদের সেমাই এর বিবরন শুনে আমার এটাই মনে এলো।
আল্লাহ আপনাদের জন্য ঈদকে আরো আনন্দমুখর করুক, আগামীর ঈদে পরিবার পরিজনের সাথে থাকার সুযোগ করে দিক - এটাই কামনা এবং ভেজাল সেমাই ও অন্যান্য খাবার হতে রক্ষা করুক।
আপনার মাথায় গুহাবাসীর কথাগুলো সবসময় বিরাজমান থাকে কেন ভাইয়া! আপনার কয়েকটি কমেন্টস এ আমি সূরায়ে কাহাফের ১ম ১০ আয়াত মুখস্ত করার আহবান পেয়েছিলাম।
জাযাকাল্লাহ খাইর সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
আপনার দোয়ার সাথে আমিন।
অথচ স্যেকুলার জ্ঞান দিয়ে স্যেকুলার শিক্ষা দিয়ে কিংবা সমসাময়িক বিশ্বের সিম্পটম গুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে নিয়ে - কোরানের সংশ্লিষ্ট আয়াত কিংবা হাদীস দিয়ে তা বুঝতে গেলে বোঝা যেমন হয় না, বোঝাতে ও পারা যায় না কিংবা অনুভব করা ও সম্ভব হয় না।
স্বভাবতঃই সুরা কাহাফ তুলনামূলক অধিক ভরসার স্থল। ধন্যবাদ।
পাত্রীর খবর কি? দেখাশুনা কম্প্লিট তো!
কবে যাচ্ছেন? শুভদিন কবে হবে জানাবেন।
মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন