মিলন মেলায় আনন্দাশ্রু
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৪ জুন, ২০১৫, ১০:১৪:১৪ রাত
আবুধাবীতে যখন প্রথম আসি, পরিচিতজন তেমন ছিল না বললেই চলে। এলাকার অনেক লোক প্রবাসী হলেও সবাই ডুবাইতে থাকে। কত অসহায় ছিলাম তখন, মনের কষ্টগুলো শেয়ার করার মত লোক ছিল না।
রুমমেটদের নিকট ও ছিলাম অপদার্থ। কারণ পাক করা জানতাম না। একদিন পাক করে সবার কটু কথা শুনতে হয়েছে। এর পর থেকে টাকা দিয়ে অন্য লোক দিয়ে পাক করাতাম।
অফিসের সহকারীরা সবাই মিসরী, আরবী জানলেও ভাষা জানা ছিলনা, তাছাড়া অফিসের কাজও তেমন জানতাম না। একটু ভূল হলেই বকাঝকা + এরাবিক গালি। ভূল শুধরে দেয়ার মত কোন লোক ছিল না, সবাই শুধু ভুল ধরতেই ব্যস্ত।
গরমের জ্বালাতো আর বলতে হয় না, জুলাই মাস যেন অগ্নিজগত। এত কষ্টের পরও সাপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া দেশে ফোন করা হতো না, সময় পেতাম না। মনমানসিকতা একেবারে দূর্বল ছিলো।
শুক্রবার সকালে ফজরের পর একটি নেট ইউজার মোবাইল নিয়ে আলমোল্লা সিগনালের পাশে ফিক্স টেবিলে বসে বসে বাড়িতে ফোন করতাম। দু'চোখে অস্ত্রু বন্যা বয়ে দিতাম। বাড়িওলাদের বুঝতে দিতাম না। সাথে রুমাল থাকতো, মুখে রুমাল দিয়ে কান্নার কন্ঠ রদ করতাম।
এভাবেই কাটালাম প্রায় ৫টি মাস। আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হতে লাগলো। অবসর সময়গুলো অনলাইনে কাটাতে লাগলাম, ফেসবুক, নিউজ পেপার, ইউটিউব ইত্যাদিতে।
এক সময় ফেসবুকে লিংক পেলাম টুডে ব্লগের। প্রথমদিকে পাঠক ছিলাম, অনেক পরে একসময় ইউজার হলাম। নিয়মিত মন্তব্য করতে লাগলাম। কয়েকজন ব্লগারের খুনসুটি দেখে আমিও শরীক হলাম দুষ্টামিতে।
এক সময় কয়েকজন ব্লগারকে আপন করে নিলাম। খুব আপন মনে হতে লাগলো। বর্তমানে সকল ব্লগারদের আপন মনে হয়।
অনেকের জীবনী জানতে আগ্রহ প্রকাশ করলাম, সময়ের আবর্তে অনেকের সাথে সম্পর্ক গভীর হতে লাগলো। এক সময় কয়েকজন সম্মানীত ব্লগারের সাথে দেখাও হয়ে গেল।
আবুধাবীতে এত ব্লগার আছে আগে জানা ছিলনা। আমার অফিসের পাশেই ব্লগার নজরুল ইসলাম টিপু ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান।
ব্লগের কল্যাণে গতকাল আমাদের পরস্পর সাক্ষাত হয়েছে, আলহামদু লিল্লাহ ভালোই লেগেছে, খুব নম্র স্বভাবের লোক। জানালেন বর্তমানে বিজনেস নিয়ে অনেকটা ব্যস্ত, তাই ব্লগে সময় দিতে পারছেন না। তবুও মোবাইলে নিয়মিত ভিজিট করেন। ১৯৯৩ থেকে প্রবাসী, বর্তমানে পরিবারসহ এখানেই থাকেন।
শিক্ষক পেশায় ব্যস্ত থাকা আরেক ব্লগার ভাই দিল মোহাম্মদ মামুন আটকরই'র কল্যানে শুক্রবার রাতে উনার সাথে সাক্ষাতে সৌভাগ্য হল। সংসার জিবনসহ বর্তমান কাজের ব্যস্ততা নিয়ে অনেক্ষণ আলোচনা করলেন।
সত্যিই এক হাস্যোজ্জ্বল রোমান্টিক লোক। পুরোদমে বিবাহের আয়োজন চলছে, হয়তো কিছু দিনের মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন। অনেক্ষণ আলোচনার পর বিদায়ের পূর্ব মুহুর্তে নাস্তার আয়োজন করা হল।
বাংলা খাবার মোগলাই + সস + চা।
সংসারের বড় ছেলেদের যে অনেক দায়িত্ব, আব্দুর রহীম ভাই এর সাথে সংসার জীবন ও সামাজিক প্রচলিত প্রথার বিষয়ে অনেক আলোচনা হল। ব্লগ ও ব্লগারদের নিয়ে উনার চমৎকার ভাবনাগুলো অনেক ভালো লাগলো।
সত্যিই সাদাসিদে মনের এক আজীব লোক, প্রাণভরে কোলাকুলি করে বিদায় নিলাম। টিপু ভাইয়ের মুখেও রহীম ভাইয়ের প্রসংশা শুনলাম।
আমি দিল মোহাম্মদ ভাই ও আব্দুর রহীম মিলে কয়েকটি ছবি নিলাম, রাতের বেলা হওয়াতে ছবিগুলো আপলোড করার উপযুক্ত নয় বলে দিলাম না।
ব্লগে ছবি আপলোডের ব্যাপারে রহীম ভাইয়ের আপত্তি ছিল। কিন্তু দিল মোহাম্মদ ভাইয়ের একটি কথায় উনার আপত্তি দূর হয়ে গেল। ইসলামের পক্ষে সত্যি কথা ব্লগে লিখার কারণে জালিম কর্তৃক নিহত হলে অবশ্যই শহীদ, এতে ভয়ের কিছু নেই।
অধম আবু জান্নাতএর ছবি না দিলে আবার উনাদের আপত্তি থেকে যাবে।
এত্ত্ব ব্লগারদের কাছে পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত।
বিঃদ্রঃ- আটকরই নামাহ অন্য দিন লিখবো ইন শা আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৩ বার পঠিত, ৪০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিশেষ করে আপনার ছবিটার জন্য!!
আপনার ব্যাপারেও টিপু ভাইয়ের সাথে আলোচনা হয়েছে, অনেক টেলেন্ট ছাত্র ছিলেন।
১.খাবার ব্যাপারে লেখা হলেই খাবার না পাঠিয়ে শুধু লোভনীয় ফটো দিতে হবে কেন?
২.রহিম সাহেবের পেছনে (মেয়েদের) কাপড় দেখা যাচ্ছে মনে হয়| নুর আয়েশা ভাবির জন্য উনি কি কিনলেন তার ডেসক্রিপশন নেই কেন?
এত অপূর্ণতার পরও চমত্কার লেখা | অনেক ধন্যবাদ |
২। ঐটি রহিম ভাইয়ের কর্মস্থল, এর চেয়ে বেশি উনি বলতে পারবেন।
সাবধান! সাবধান! সবাধান!
সাইয়ারা মনি কেও ডে কেয়ার থেকে ওল্ড হোম-২ নামক পোষ্টের নিছে দেখেছিলাম। যদিও কয়েকদিন পর ছবিটি সরিয়ে দিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ
আপনারটা সহ যাদের ছবি দিলেন দেখলে যে কেউ বলবে এরা শিবিরের পোলাপাইন । এভাবে এরকম ট্যালেন্টেড পোলাপান বিদেশে পাড়ি জমালে শিবিরকে তো আওয়ামী বামরা চিবিয়ে খাবে !
ওয়ার্ক পারমিট, লেবার এপ্রোভ, লেবার পেমেন্টসহ শ্রমমন্ত্রনালয়ের যাবতীয় ফাইল অনলাইনে পুরন, লেবারের যাবতীয় ফাইল অনলাইনে সাবমিট করে ই-দিরহাম পেমেন্ট করা।
আমিরাত আইডি কার্ড অনলাইন প্রসেসিং এবং পেমেন্টস।
সিকিউরিটি পারমিট, লিগেল ট্রান্সলেশন, লাইসেন্স নবায়নের কাজগুলো অনলাইনে করাসহ অনলাইন ভিত্তিক গভমেন্টস সেক্টরের নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রাম।
ফাটোকপি মেশিন অফিসের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়।
ফাইলগুলো বিভিন্ন কোম্পানীর জরুরী কাগজপত্র সংবলিত। কাজের অর্ডার পেলে ফাইলগুলো থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কাজ করি।
দেখলেই শিবিরের পোলা ভাবার কারণ উল্লেখ করেন নাই। যেহেতু মুক্তমন তাই ভাবতেই পারে। বাকি দুজন ট্যালেন্টড হলেও আমি নই। ধন্যবাদ।
ওয়ার্ক পারমিট, লেবার এপ্রোভ, লেবার পেমেন্টসহ শ্রমমন্ত্রনালয়ের যাবতীয় ফাইল অনলাইনে পুরন, লেবারের যাবতীয় ফাইল অনলাইনে সাবমিট করে ই-দিরহাম পেমেন্ট করা।
আমিরাত আইডি কার্ড অনলাইন প্রসেসিং এবং পেমেন্টস।
সিকিউরিটি পারমিট, লিগেল ট্রান্সলেশন, লাইসেন্স নবায়নের কাজগুলো অনলাইনে করাসহ অনলাইন ভিত্তিক গভমেন্টস সেক্টরের নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রাম।
ফাটোকপি মেশিন অফিসের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়।
ফাইলগুলো বিভিন্ন কোম্পানীর জরুরী কাগজপত্র সংবলিত। কাজের অর্ডার পেলে ফাইলগুলো থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কাজ করি।
দেখলেই শিবিরের পোলা ভাবার কারণ উল্লেখ করেন নাই। যেহেতু মুক্তমন তাই ভাবতেই পারে। বাকি দুজন ট্যালেন্টড হলেও আমি নই। ধন্যবাদ।
চলে যাবো,
বিদেশে দুদুরপরবাসে,
টাকা পয়সার জন্য,
সব গেল যে ভেসে
বলিননা এখন আমার,
কি উপায়
পালাতে চাইলেও পালাতে পারবোনা,
কিনিয়ে বাচবো হায়
ভাইয়া ৩ বছর পরে একসাতে একদিন রাতের বেলা বাসায় খাবো
আমার কাছে এখনো অনেক বাঙ্গালী লোকের চাহিদা আছে, কিন্তু ভিসা না থাকায় তা পূরণ করতে পারছি না।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
এটি আমার ___>
সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছেন বুঝাই যাচ্ছে! আপানাদের আনন্দে আমরাও আনন্দিতো! প্রবাস জীবনের প্রথমদিকের কষ্টের কথা জেনে খারাপ লাগলো!
শুভকামনা ও দোআ রইলো!
মাশাআল্লাহ্ এ্যানার্জেটিক ইউনাইটেড প্রবাস জীবনচিত্র রূপায়ন করেছেন।
দোয়া করি, আপনাদের সবার জন্য আল্লাহ আরো সুন্দর, আরো প্রডাকটিভ, আরো উপভোগ্য দিন ও রাত উপহার দিক।
ভাল লাগলো পড়তে, আরো ভাল লাগলো লিখার পেছনের মানুষদের রিয়েল ছবির সাথে পরিচয় হয়ে।
আপনার দোয়া মহান প্রভূ কবুল করুক।
ভালো লাগার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন