আমি বিহীন আনন্দ
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৪ জুন, ২০১৫, ০৯:১০:৫৩ রাত
গত অক্টোবরে আমি দেশে গিয়েছিলাম, আমার ১৫দিন আগে জান্নাতের বড় মামা ও দেশে যায়। বয়সে আমার অনেক ছোট হলেও উম্মে-জান্নাতের বড় ভাই হিসেবে আমি উনাকে ভাইয়া বলেই ডাকি। মাঝে মাঝে মজা করে দুলাভাই বলে ডাকতেও ইচ্ছে করে, কিন্তু লজ্জায় পারি না।
আমার শশুর শাশুড়ীকে তার বিয়ের ব্যাপারে বলেছিলাম, কিন্তু বয়স কম এই ওজর দেখিয়েছে বার বার। বাড়িতে যাওয়ার পর আমার নানাশশুর ও নানীশাশুড়ী বার বার তাগিদ দিতে লাগলো। বড় নাতীর বউ দেখতে চায় ওরা, তাই বিয়ের জন্য নেমে পড়লো।
যেহেতু আমিও বাড়ি যাচ্ছি, তাই তাড়াতাড়ি আমার উপস্থিতিতে শুভ কাজটি করতে মরিয়া হয়ে উঠলো আমার শশুর। দিন নেই রাত নেই, মেয়ের খোজ করেই চলছে। ইতিমধ্যে আমিও গেলাম, কয়েকটি মেয়ের খোজ করলাম। কিন্তু মিল করতে পারলাম না।
আমি বিদেশ ফেরার ঠিক দুদিন আগে ১৮ডিসেম্বর সকালে একটি মেয়ের খোজ পেলাম, আলিমে টেষ্ট পরীক্ষা দিচ্ছে, দিনে দিনে কথা শেষ করে বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী যাওয়ার আগেই বাজারে তার চাচার দোকানে ভাইয়া ও আমার শাশুড়ীকে নিয়ে উপস্থিত হলাম। পরীক্ষার্থী মেয়েটিকে আনা হল, মেয়ের মা ও আসলেন। ভাইয়া এক নজর দেখলেন আর পছন্দ হয়ে গেল, ব্যাস।
মাগরীবের আগেই হবু কনে ও হবু বর যার যার বাড়িতে চলে গেল। আমার শশুর, আমি ও কিছু মুরুব্বী থেকে গেলাম। মেয়ের বাবা যেহেতু প্রবাসী, তাই মেয়ের চাচা ওদের জিম্মাদার। নামাযের পর কলম কাগজ নিয়ে বসে পড়লাম। কিভাবে বিয়ে হবে, লেনদেন, কেনা কাটা সবকিছু লেখালেখি হয়ে গেল। রাতে আলোচনা শেষ পরের দিন দুপুরে বিয়ে।
দেন মোহর ওদের দাবী ছিল ১০লক্ষ। বলেছিলাম শুধু লিখার মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে লিখতে পারেন কিন্তু বিয়ে সহীহ হবে না। শেষ পর্যন্ত ৪লক্ষ টাকা নগদের উপর সিদ্ধান্ত হয়।
আজকাল সমাজে বেশির ভাগ বিবাহের দেনমোহর লিখনমোহরে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। ছেলের পক্ষও দেওয়ার আগ্রহ নেই, মেয়ে পক্ষও পাওয়ার আগ্রহী নয়। কোন কালে বিবাহ ভেঙ্গে গেলেই তখন দৌড়ঝাপ শুরু হয়। এমন বিবাহ সহীহ তো নয়ই বরং আমার ভাষায় জারজ সন্তানের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা মাত্র।
বিয়েতে আমার উপস্থিতির জন্যই আমার শশুরের এত তাড়াহুড়া, যাই হোক ১৯ ডিসেম্বর বিয়ে সম্পন্ন হল। ২০/২৫ জন গিয়ে আক্বদ পড়িয়ে কনে নিয়ে আসলাে। আমি ও উম্মে-জান্নাত কনেদের বাড়ি থেকেই বিদায় নিলাম, যেহেতু ২০ডিসেম্বর ফজরের আগেই আমাকে প্রাবাসের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হতে হবে।
বড় ভাইয়ের বাসরঘর সাজাতে ছোট বোনের অনেক সখ থাকলেও তা আর হয়ে উঠেনি। অপরাধী ছিলাম আমি। আমি প্রবাসে আসার ১৫দিন পর পুণরায় ভাবির সাক্ষাত পায় উম্মে-জান্নাত।
বিয়ের প্রায় ছয় মাস পর জান্নাতের মামী আজ আমাদের বাড়ীতে প্রথম গমন করেছেন। তাই বাড়িতে জান্নাতের সে কি এক মহা আনন্দ চলছে। হয়তো আমি বাড়ীতে থাকলে জান্নাতের আনন্দ আরেকটু বেশি হত।
সাথে আছেন আমার শশুর শাশুড়ী, ৭বছরের শালি সাদিয়া।
আমার বোনের দেবরের সদ্যবিবাহিত স্ত্রী, মানে আমার বোনের ছোট ঝাঁ, বোনের শাশুড়ীসহ অনেক মেহমান।
ইস! আমি বাড়ীতে থাকলে বাজার থেকে যে কত্ত কিছু নিয়ে আসতাম। আম, লিচু, কাঠাল, আনারস, দধি, রসমালাই, চিপস, বুট, বাদাম, পেয়াজু, সিঙ্গারাসহ আরো কত কি!
বাড়ীতে আজ সবাই আছে, আমার ভাই বোন আম্ম আব্বু। কিন্তু নেই শুধু আবু জান্নাত।
আজ মায়ের হাতে যে কত খাবার রান্না হচ্ছে, দেশি মুরগী ও গরুর গোস্ত, ইছামাছ, রুই মাছ, ডিম, ডাল, সব্জি আরো কত কিছু। কি যে ঘ্রাণ, পুরো বাড়ী মৌ মৌ করছে। যেন আমি প্রবাস থেকে সেই ঘ্রাণ ও স্বাধ পাচ্ছি। কিন্তু মা তোমায় বড়ই মিস করছি...
বিষয়: বিবিধ
১৭০০ বার পঠিত, ৫৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন আমি এগুলো পামু কই আমার খুব খেতে মন চাচ্ছে
মন শুধু ওনাকে লেগে গেল কেনু!
বড় ভাইয়া বলে লাভ নেই, আরো ১১বছর অপেক্ষা করতে হপে, তখন আপনি বুড়ো হয়ে যাবেন।
আপনিই বলুন এতসব আয়োজন দেশে রেখে এখানে কি ভালো লাগে? মন চাইতেছে এখুনি চলে যাই!!
কতগুলো জাগ্রত করে দিলেন মনে। ধন্যবাদ।
উপস্থিতির জন্য শুকরিয়া।
বাড়িতে কোন আনন্দঘন অনুষ্ঠানে সবাই একত্রিত হলে সেদিন, মুহূর্ত, ক্ষনগুলো আর কোন কিছুর বিনিময়েই বিকল্প আনা যায় না! মনে কষ্টের মেঘ জমে জমে অবশেষে তা অশ্রু হয়েই ঝরে!
আপনাদের বাড়ির সবার একত্রিত হওয়া কল্যানকর কর! নবদম্পতির জীবন রহমাহ ও বারাকায় পরিপূর্ন থাকুক! আমিন!
আল্লাহ আপনাকে সবর দিন! আবার দেশে গেলে সব পুষিয়ে নিয়েন ভাইয়া!
জাযাকাল্লাহ!
আপনার আন্তরীক ও নিঃস্বার্থ দোয়া মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করুক।
দেশে গেলে ডাবল পোষানো হবে ইন শা আল্লাহ। উপস্থিতির জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
হায়রে প্রবাসী!
বিষয়টি সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন