প্রিয় পেশা শিক্ষকতা
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ৩০ মে, ২০১৫, ১১:২৬:১৪ রাত
আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর বিষেশ গুনাবলীর মধ্যে একটি ছিল মুয়াল্লিম বা শিক্ষক। তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে
প্রিয় নবীর (সাঃ) এই বাণীটিই সারা পৃথিবীতে সমাদৃত, হোক সে যে কোন ধর্মের ও বর্ণের, শিক্ষকতার গুণ যার মধ্যে আছে, তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে।
বর্তমান দুনিয়ায় গুটি কয়েক হতভাগা এই পবিত্র পেশাকে কলোষিত করলেও দুনিয়ার মানুষের কাছে এই পেশা সবচেয়ে সম্মানীত পেশা। অন্য পেশার মানুষগুলো কর্মজীবনে সিনিয়রদের কাছে সম্মানের পাত্র হলেও অবসরে গেলে সম্মানও সমাপ্ত হয়ে যায়, কিন্ত শিক্ষককে আমৃত্যু সবাই শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে, মৃত্যুর পরও নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষকরে জন্য মানুষ দোয়া করে।
শিক্ষা মানে আলো, আর শিক্ষক হলো আলো প্রজ্জলনকারী। বাংলায় একটি প্রবাদ আছেঃ
শিক্ষালয় হল ফুলবাগিছা শিক্ষক হলেন ফুল।
ছাত্ররা সব সেই বাগানের মৌমাছি বুলবুল।
ফুল না থাকলে যেমন ভোমর, মৌমাছি ও বুলবুল পাখি আসে না, তেমনি আদর্শবান ফুল না থাকলে ভোমর, মৌমাছি ও বুলবুল পাখি উপকার গ্রহন করতেও পারে না।
যাই হোক শিক্ষক পেশাটি অন্তত আমার কাছে অনেক অনেক দামী পেশা বিধায় এত কথা বললাম। কারো কাছে হয়তো শিক্ষক মানে অন্য কিছুও হতে পারে। কারণ বর্তমান সময়ে কূলটা শিক্ষকের তো অভাব নেই।
পেশা হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত আমি শিক্ষকতা করি, তেমন কোন বড় প্রতিষ্ঠানে নয়, প্লে, নার্সারীসহ প্রথম থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। এখানে আমি কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবো ইন শা আল্লাহ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেখাযায় ছাত্ররা আসতে চায় না, অভিভাবকগন প্রতিদিন সন্তানদের নিয়ে আসতে হয়, মাঝে মধ্যে পলায়ন করে। আলহামদু লিল্লাহ আমাদের প্রতিষ্ঠানে দু'একজন ছাড়া এমন ঘটনা তেমন একটা ঘটতো না। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছেঃ
আমাদের ক্লাস আরম্ভ হতো সকাল ৮টা থেকে অথচ ছাত্রছাত্রীরা বেশিরভাগ ৬টায় উপস্থিত হয়ে যেতো। প্রশস্ত মাঠে গ্রুপ বানিয়ে খেলায় লিপ্ত হয়ে যেত। শিক্ষকগণ উৎসাহ দিতেন। মাঝে মাঝে শিক্ষকরাও ওদের খেলার সাথী হতেন।
পুরো প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ফুলে শোভা পেত, যেমন সেলবিয়া, ডালিয়া, গেন্ধা, অনেক প্রকারের গোলাপ আরও নাম না জানা অনেক ধরেনর ফুল। এর পিছনের প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অঙ্ক ব্যায় করা হতো। কাটা মেহেদি ও পাতাবাহারে চতুর্দিক বাউন্ডারী করা ছিল, লাল রঙ্গের নাম না জানা একপ্রকারের ঘাস দ্বারা প্রতিষ্ঠানের নাম মাঠের এক কোনে লিখা ছিল। এলাকায় কোন আয়োজন বা অনুষ্ঠান হলে সবাই একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যেতেন। যেন একটি পার্ক।
ছাত্রছাত্রীদের বিনোদনের জন্য কম্পিউটার ছিলঃ বিরতির সময় কম্পোজ করে বিভিন্ন ইসলামী গান তাদের হাতে দেয়া হত আর কম্পিউটারে তা প্লে করা হত। সবাই রিহার্সেলে ব্যাস্ত হয়ে যেত। অনেক সময় মা বাবা ছেলেমেয়েদের দেরী হওয়ায় এখানে চলে আসতেন। দেখতেন হয়তো হাতের লিখা প্রাক্টিস করছে, না হলে ইসলামী গান রিহার্সেল করছে।
প্রতিটি ক্লাসরুমের চতুর্দিকের দেয়ালে ছিল ব্লাক বোর্ড, তাই সহজে তারা বোর্ডে লিখা প্রাক্টিস করতো, বিভিন্ন বাণী ও হাদীসের অর্থ লিখে রাখতো, যা দর্শনকারীদের মন কাড়তো।
শীত কালীন সকালে শরীর চর্চা দেখার জন্য এলাকার মানুষ প্রতিষ্ঠানের মাঠকে স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলতো। এতে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ অনেকটা বেড়ে যেত। শিক্ষকরাই এতে গাইড করতেন।
লংটাইম বন্ধ দিলে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা অানন্দিত হওয়ার কথা, সেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা তেমন আনন্দ পেতেন না। কারণ প্রতিষ্ঠানটি যেন তাদের আপনালয়।
সবসময় আনন্দ ও ফুর্তির মাধ্যেমে পাঠদান করা হত। মারপিঠ ছিলো না বললেই চলে। ক্লাসের পাঠ্য ক্লাসেই পড়িয়ে ও শিখিয়ে দেয়া হত। তাই বাড়িতে শুধু হাতের লিখার কাজ থাকতো।
বাড়তি বিনোদন ও এলাকার মানুষদের কিছু দ্বীনি কথা শুনানোর জন্য বার্ষিক মাহফিলের ব্যবস্থা করা হত। মাহফিলে প্রায় ঘন্টা ব্যাপি প্রদর্শনী করা হতো। পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে মাদরাসার বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগীতা ও ফুলের ছবিগুলোর একটি প্রজেক্ট বানানো হতো। স্টেইজে প্লে করা হতো, শিক্ষার্থীরা একই সূর যৌথ সঙ্গীত গাইতেন।
বিদায়ের দিন অনেক কেঁদেছি, শিক্ষার্থীরাও অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানিয়ে ছিল। আজও মন চায় চিরচেনা পেশায় ফিরে যাই। কিন্তু প্রবাস নামক জন্ত্রুটি কেড়ে নিল সেই সোনালী দিনগুলো। ভবিষ্যতে যে কোন সময় আবার সেই পেশায় ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রবল। কারণ শিক্ষকরাই যে সত্যিকারের জাতি গড়ার কারিগর।
বিষয়: Contest_priyo
১৭৭০ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বেজন্মা শব্দের অর্থ কি?
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার লিখা দুটি লিখা আমি আগেই মনোযোগ সহকারে পড়েছি, মন্তব্যও করেছি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
খুব ভালো লাগলো আপনার প্রিয় পেশা জেনে! আরো আবেগঘন এবং সুখপাঠ্য করার জন্য আপনি সম্পূর্ন লিখাটি প্যারা হিসেবে না দিয়ে বরং আপনার প্রথমদিনের বা বিশেষ কিছু অভিজ্ঞতা, কিছু আনন্দঘন স্মৃতি বা আজো আপনাকে মনের মনিকোঠায় রেখেছে এরকম কিছু সংযোজন করলে ভালো হতো! কিছু মনে করেন নি আশা করি!
চমৎকার লিখনীতে আপনার সফলতা কামনা করছি!
সম্মানিত পেশাদারী আপনার পরিবারের সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল, আপনিও শিক্ষক হয়ে যান, দেখবেন ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
আপনি মনে ভাষনা নিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে যান, আল্লাহ তায়ালা আপনার সহায় হোক। আমীন।
আপনার স্মৃতিময় লেখাটি বেশ ভালো লেগেছে।
আপনাদের মত কিছু শিক্ষক আজ খুব প্রয়োজন। যারা বাচ্চাদেরকে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা দেবে। ধন্যবাদ।
দোয়া চাই সবসময়, বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সময়। জাযাকিল্লাহ খাইরান আপু।
আল্লাহ তায়ালা উত্তম ব্যবস্থাকারী। তিনি নিশ্চয়ই একটা যথযথ ব্যবস্থা করে দেবেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
বাকিটুকু লিখেফেলুন, পড়ার অপেক্ষায়....... ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন