অধমের আত্ম কথন
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৬ মে, ২০১৫, ০৩:২৪:৩১ দুপুর
কম্পিউটার জগতে পদচারণা ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রথমে বেসিক অফিসিয়াল প্রোগ্রাম (ওয়ার্ড, এক্সেল, একসেস, পাওয়ার পয়েন্ট, প্রন্ট পেইজ) আরবী ও উর্দূর জন্য 'ইনপেইজ' অরঃপর গ্রাফিক্স ডিজাইন (ইলাষ্ট্রেটর, ফটোসপ, কোয়ার্ক এক্সপ্রেস, পেইজ মেকার) তারপর হার্ডওয়ার (BIOS, DOS মোড, সেফ মোড, মী, ৯৫, ৯৮, ০০, এক্সপি, ফরমেটিং, ইনস্ট্রলিং, ট্রাবলস্যুটিং) ও ইন্টারনেট এর বেসিক ব্যবহার শিখলাম। কিছুদিনে মোবাইল সপ্টওয়ারের কাজও আয়ত্ব করি।
২০০৬ সালের প্রথম দিকে ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করলেও ব্রাউজিং ছাড়া অন্য কিছুই জানা ছিল না। জেলা শহরে একটি কম্পিউটার সেন্টারে চাকুরীতে জয়েন্ট করি। শুরু হয় কর্মজীবনের পথচলা। টাইপিং ডিজাইন প্রিন্টিং ছাপারকাজ সহ অফিসিয়াল কম্পিউটার প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করি।
বছর খানিক চলার পর থেমে গেল আমার এই পেশা। পিছু নিল চিরচেনা ও চিরসাথী শিক্ষকতার পেশা। এই পেশা নিয়ে আমার অনেক অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি আছে। শিক্ষকতা আমার সবচেয়ে প্রিয় পেশাও বটে। ভেবেছিলাম প্রিয় পেশা নিয়ে কিছু লিখবো, কিন্তু প্রতিযোগীতায় প্রিয় পেশা না থাকায় তা হয়ে উঠেনি।
চিরচেনা ও চিরসাথী এ জন্য বলেছি যে, যখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি, আমাদের বাড়ীতে লজিং থাকতো এক মাদরাসার ছাত্র, সকালে মক্তব ও বিকালে স্কুলের পড়া উনার কাছে পড়তাম। আমার স্বরণশক্তি ভালো থাকায় হুজুর একবার পড়ালেই আমি আয়ত্ব করে নিতাম। আমার কাজিনদের (তিনজন বয়সে আমার বড় হলেও) সেই পড়া আমি বার বার পড়াতাম। সেই থেকে ১১সালে প্রবাসে আসা পর্যন্ত শিক্ষকতা আমার পিছু ছাড়েনি। কখনো মামার বাড়ীতে, কখনো লজিংয়ে, কখনো প্রফেসনাল শিক্ষকতা চলেছিল।
প্রবাসে থেকে আজও মন ছুটে যায় সেই ছোট কোমলমতি শিশুদের প্রতি যাদেরকে ছাত্র/ছাত্রী হিসাবে পেয়েছিলাম। সন্তানের মতই শিশুরা আমার কাছে অনেক আদরের ছিল।
নকিয়ার কিছু সেটে শিক্ষকতার জীবনে মাঝে মাঝে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। ১১ সালে প্রবাসে আসার পর ইন্টারনেটে নিয়মিত হই। চাকুরীর তাগিদে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে অন্তত ১২ ঘন্টাই ইন্টারনেটে কাটাতে হয়।
১১ সালের মাঝামাঝি থেকে ফেসবুকে নিয়মিত হই। কাজের ফাঁকে অবসরে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি, টুকিটাকি শেয়ার করা, লাইক কমেন্টস ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করতাম। "আমার দেশ" আমার প্রিয় পত্রিকা ছিল। ছাপা বন্ধ হলেও অনলাইনে চালু থাকায় নিয়মিত পড়তাম। মাহমুদুর রহমান প্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়ার প্রিয় পত্রিকাটির জন্য একবার সামান্য সহযোগীতাও করি।
১৩ সালের কোন ফাঁকে টুডে ব্লগের একটি লিংক খুজে পাই। টুডে নিউজ ও ব্লগের নিয়মিত পাঠক হই। মাঝে মাঝে ফেসবুক থেকে কমেন্টস করতাম। মন্তব্য ফেসবুক থেকে হওয়ায় প্রতি মন্তব্য পেতাম না। তাই একাউন্ট করার কথা ভাবলাম।
১৪ সালের ২১মে একটি একাউন্ট খুলে আপনাদের দলে নাম লিখাই। গত পাঁচ দিন আগে আমার বর্ষপূর্তি চলে গেলেও কাজের ব্যস্ততায় কোন পোষ্ট লিখা হয়ে উঠেনি।
প্রথম দিকে লিখার কোন ইচ্ছাই হতো না। কিছুদিন পর লিখার ইচ্ছা হলেও ভাবতাম আমি কিছু লিখে ব্লগারদের হাসির খোরাক হতে চাই না। তাই কমেন্টস করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলাম।
এক সময় প্রবাসে আসার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা ও "আত্ম সমালোচনা" নামে ছোট ছোট কয়েকটি পোষ্ট লিখলাম। আমার ধারনাই সত্যি হল। ব্লগারদের হাসির খোরাক হলাম। মানে লিখাগুলোর মান মন্তব্য পাওয়ার পর্যায়ে ছিলো না।
কিছু দিন পর ইক্লিপ্স নামের এক ব্লগারাণীর এই পোষ্টটি পড়ে অনেক কিছু শিখলাম, অনুপ্রাণীত হলাম ও টুকিটাকি লিখা আরম্ভ করলাম। একটু একটু করে একটি বছর পার করলাম। কাউকে তেমন কিছু না দিতে পারলেও আমার পাওনা অনেক। তাই ব্লগটিকে আপন করে নিলাম।
চলার পথে অনেক আপনজন পেলাম, যাদের মায়াজালে আবদ্ধ হওয়ার কারণে ব্লগ ছাড়তে পারছি না। ব্লগ ও ব্লগারদেরকে কেমন যেন আপন মনে করে ফেললাম। কয়েকজন ব্লগারের সঙ্গে সাক্ষাতও ঘটে। কয়েকজনের সঙ্গে ফেসবুকে ও মোবাইলে কথাবার্তাও হয়।
অন্য দশ জন বন্ধুর থেকেও ইসলামীক মাইন্ডের ব্লগারদের কেমন যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু মনে হয়। বিশেষ করে যেদিন আব্দুর রহীম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত হয়। অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছিল। লোকটি দেখতে কেমন, বয়স কত, চেহারা কেমন হবে, ফিটনেস কেমন, মনটি কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক ভাবনা।
আমি যাদের প্রিয় ও যারা আমার প্রিয় তারাতো লিষ্টেই আছেন, অন্য ব্লগাররাও কিন্তু এই দু'য়ের বাহিরে নন। সকল মুসলিম ব্লগারদের ভালোবাসী। দেশে যারা ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ তাদেরকেও ভালোবাসি। বহুধাবিভক্ত হলেও আমি কোন ইসলামী দল বা জামাআতকে ঘৃণা করি না। যথাসম্ভব সহযোগীতা করি।
দোষগুণ মিলেই কিন্তু মানুষ। কোন দলের মাঝে দোষক্রটি দেখা গেলে সমালোচনা না করে দায়িত্ববানদের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা করলেই হয়। তাই তাবলীগ জামাত, জামাআতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খিলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, কাওমী মাদরাসা, সরকারী মাদরাসাসহ কাউকে ছোট করে দেখি না।
কেননা এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কারো না কারো মাঝে ইসলামের খেদমত করে যাছে, কেউ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, কেউ সামাজিক পর্যায়ে, কেউ ব্যক্তি পর্যায়ে, আল্লাহ তায়ালা সকলকে সঠিক বুঝ দান করুক। আমি অধম সবার কাছে দোয়া চাই। (পোষ্টটি একান্ত আমার ব্যক্তি কেন্দ্রীক যা শিরোনাম দেখলেই বুঝবেন)।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৭ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি যে কয়টা লিখা লিখেছেন ভাল লিখেছেন । আরো বেশি বেশি লিখুন ভাইয়া ।
আজকের লেখাটাও খুব ভাল হয়েছে । ধন্যবাদ ভাইয়া ।
সত্যিই আপনাদের উপস্থিতি অনেক অনেক আনন্দ দেয়। সালাম রইল।
তবে আমি আপনার ইচ্ছে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি কর্মব্যস্ততার কারনে। তবে ফের দেখা করার ইচ্ছের কমতি ছিলোনা।
আমার ব্লগিং জীবনের অভিঙ্গতায় আমি অনেক ব্লগারকে ব্লগে আসতে এবং যেতে দেখেছি......।
যেমন ব্লগে এসে দায়সারার অনুভূতি নিয়ে পোস্ট দিয়ে চলে গেলো এ যেন পোস্ট ব্লগিং!!! ব্লগিং কি বুঝতেও চাইনা কেউ কেউ!! আমি মনে করি পোস্ট মন্তব্য প্রতিমন্তব্য সব মিলিয়ে ব্লগিং.....
আপনাকে দেখেছি আমি ব্লগিংয়ের কিছু স্বাদ নিতে!!! পোস্ট মন্তব্য প্রতিমন্তব্যের মাধ্যমে..... আপনার ব্লগিংয়ের এই পথ আরো প্রসারিত হোক এটাই কামনা।
শুভব্লগিং।
আপনার এই কথার সাথে আমিও একমত।
***************************
আমি আরও বলতে চাই যে, নাস্তিক, লেলিনবাদী, স্টালিওন বাদী, মার্ক্সবাদী, সেতু বাদীরা যদি সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্য গড়তে পারে, তাহলে আমরা কেন পারিনা!! আমাদের আল্লাহ্ এক, রাসূল এক, কুরআন(জীবন বিধান) একটি তবুও কেন আমরা ইসলামের জন্য সকল ছোটখাটো মতভেদ ভুলে এক হতে পারিনা ?? এটাই এই জাতীর চরম দুর্ভাগ্য, জাতীর অধঃপতনের অন্যতম প্রধান কারণ।
যেখানে ইসলাম আমাদের সামনে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা নিয়ে এসেছে, মক্কা থেকে হিজরত কারী সকল মুসলিম দেরকে মদিনার মুসলিমরা ভাই হিসাবে গ্রহণ করেছে, শুধু তাই নয় নিজেদের ধন-সম্পত্তিতেও তাদের কে অধিকার দিয়েছিলেন।সেখানে আজ আমরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ভাঙতে মহা ব্যস্ত। তাই আজ দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলে হতাশ হতে হয়, রাসূল (সঃ) এর এই শিক্ষার তিল পরিমাণ ও যদি আমাদের মধ্যে থাকত,তবে শান্তি এবং বিজয় এসে মুসলমানদের পায়ে চুমু খেত।
অথচ আজ মুসলমানরা দলে দলে বিভক্ত, শুধু তাই নয় নিজেই নিজের ওস্তাদকে ব্যাড দিয়ে নিজেকে আমীর ঘোষণা করে দিচ্ছে। কিছু কিছু তথাকথিত মুক্তি, আলেম আছে এদের কথা শুনলেই মনে হয় এদের জন্মই হয়েছে অন্য আলেমের সমালোচনা করা, তিরস্কার করা, নিন্দাকরা, গীবত করা। আল্লাহ্ এদের কে হেদায়েত দিন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন।
আপনি লিখেছেনঃ নাস্তিক, লেলিনবাদী, স্টালিওন বাদী, মার্ক্সবাদী, সেতু বাদীরা যদি সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্য গড়তে পারে, তাহলে আমরা কেন পারিনাসত্যিই দুঃখজনক ব্যপার।
আমরা কি এদের থেকে একটু ব্যতিক্রম হতে পারি না!
আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) ও সাহাবীদের (রাঃ) গুনাবলী বর্ণনায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ محمد رسول الله والذين معه اشداء علي الكفار رحماء بينهم আল্লাহর রাসূল ও তার সাথীরা কুফফারদের প্রতি বর্জ কঠিন, অথচ পরস্পর ঈমানদারদের প্রতি কতই না সদয়।
আসলে ভাই আমাদের সবাইকে এই গুনটি অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা তাওফীক দান করুক।
আপনারা নবাগত হয়েও আমাদের মতো আদুভাইদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
ভাইজান,বড় দু:খে আছি।মোবালে কমেন্ট করতে খুব খুব কসট হয়।অনেক সময় পড়াও যায়না।
ফেবুতে আসেন।
ঘরের মানুষ জানলে কিন্তু সমস্যা।
হ্যালো জান্নাত তোমার আম্মুকই?
বিশ্বের দায়ীদের প্রতি গভীর ভাল বাসা রয়েছে।
চালিয়ে যান, আপনার লেখার হাত রয়েছে।
অনেক সিনিয়র ব্লগার সটকে পড়েছে।
আত্মকথনের পাশাপাশি পরিশেষে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তা অনেক ভালো লাগলো। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের ক্ষেত্রে পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও সন্মানবোধের অভাব মূলত একটি অন্যতম বাধা। মূল্যবান লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
নন মেকি বলছিঃ আপনাদের উৎসাহে আমি এখনো ব্লগে টিকে আছি।
ব্লগে প্রায় সময় দেখি একটি ইসলামী দলের কেউ অন্য দলের সর্বনাশ করছে। একটি প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেগে আছে, তা আমার মোটেও সহ্য হয় না। মুসলমানদের এই দূর্দিনে সকল ভেদাভেদ ভূলে ঐক্যের বিকল্প নেই। তাই আমি যাস্ট আমার অবস্থান ব্যক্ত করলাম।
আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি আমার প্রেরণা হয়ে থাকবে। জাযাকিল্লাহ খাইর।
প্রতিযোগীতার মূল বিষয় "আপনার প্রিয়" । এখানে মডারেটর গণ ব্লগারদের বুঝার সুবিধার্থে কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন হয়ত। নির্দিষ্ট করে প্রিয় কিছু নিয়ে বলেছেন মনে হয়না। যার যা প্রিয় তাই নিয়েই অংশগ্রহন করতে বলা হয়েছে সম্ভবত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন