কঠিন সংগ্রাম-২ (শেষপর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৮ মে, ২০১৫, ১১:০৪:৩১ রাত
প্রথম পর্ব এখানে
মাইমুনা আজ অনেকটা ভারমুক্ত, দু'বোনের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে, একমাত্র ভাইটি ডিগ্রী কম্প্লিট করেছে। জেলা শহরে মামাদের সহায়তায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিকে এগোচ্ছে। ছোট বোনটি নূরানী শেষ করে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছে।
মাইমুনা মনে মনে ভাবছে, জীবন থেকে প্রিয়তম অনেকগুলো সময় লীন হয়ে গেছে। জানিনা মহান প্রভূকে কতটুকু সন্তুষ্ট করতে পেরেছি, তাছাড়া মৃত্যুর পর দোয়া করবে বা সাদাক্বায়ে জারিয়া হিসাবে এমন কোন সন্তান আমি হতভাগিনী এখনো তৈরী করতে পারিনি। তবে কি বাকি জীবন এভাবেই কাটিয়ে দিতে হবে?
তাহাজ্জুতের সালাতে মাইমূনা প্রায় সময় নিজের আখিরাতের কথা ভেবে কাঁদতো। হে আল্লাহ! দয়াময় প্রভূ, দুনিয়াতে আমি এক হতভাগী বড় অসহায়, আমার আখিরাত যেন বিফল না হয়। হে প্রভূ, তুমিই উত্তর ফয়সালাকারী। আমায় দয়া কর।
মক্তবের ছাত্র/ছাত্রীরাই আমার সন্তান, তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার তুমিই সুযোগ করে দিয়েছ, আর এটাই আমার একমাত্র পুঁজি। ভবিষ্যৎ জীবনে যেন আমি কারোর বোঝা না হয়ে থাকি। তুমি আমার একমাত্র অভিভাবক, তুমিই আমার উত্তর সাহায্যকারী।
কিছু দিনের মধ্যেই মাইমুনার জন্য বিবাহের প্রস্তাব আসতে থাকে, কারো প্রথম স্ত্রী তালাক প্রাপ্তা, কারো প্রথম স্ত্রী মৃতা। মাইমুনার বয়স প্রায় ৩৫ পেরিয়ে, একেতো বিবাহিতা/তালাকপ্রাপ্তা, দ্বিতীয়ত পিতা নেই বিধায় আর্থিকভাবেও অনেকটা দুর্বল। অবিবাহিত ছেলেরতো কল্পনাই করা যায় না, তাই বয়স্ক এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তার সাথে বিবাহে রাজী হল।
মিনহাজ মিয়া, জীবনের প্রায় ৫০টি বছর অতিক্রম করেছেন। ৩ ছেলের মধ্যে সবাই ঢাকায় লিখা পড়ায় ব্যস্ত। বছর খানিক হল তাদের মা বিগত হয়েছেন। বাবার সেবাযত্নের খেয়াল করে বাবাকে বিবাহ করানোর জন্য অনেক পিড়াপিড়র পর রাজি করালেন। তারাই বাবার জন্য মাইমূনাকে প্রস্তাব পাঠালেন।
সাপ্তাহখানিকের মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হল। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের মেজায একটু খিটখিটে হয়। মাইমূনা আগে ভালো করে বুঝতে পারেনি পুরুষ জাতি কেমন! এখন বুঝতে পেরেছে, দুনিয়ার মানুষকে সন্তুষ্ট করা অনেক কঠিন, কিন্তু মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করা অনেক সহজ। তাহাজ্জুদে কেঁদে কেঁদে প্রায় বছরখানিক কাটালেন।
১ বছর পর মাইমূনার কোলজুড়ে এলো ফুটফুটে জমজ সন্তান, রাইহান ও রাইহানা। মাইমূনার আনন্দের সীমা রইল না, অবশেষ তার সেই আকাঙ্খাও পূর্ণ হল: মৃত্যুর পর নেক আমল জারী থাকার বাসনা। যার জন্য তিনি প্রভূর দূয়ারে অনেক কেঁদেছেন।
চলতে চলতে পাঁচ বছর পূর্ণ করলেন। রাইহান ও রাইহানার বয়স আজ চার বছর পূর্ণ হল। মরণব্যাধি বাসা বাঁধলো মাইমূনার শরীরে, পুরো শরীরে পানি এসে গেলে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও আর বাঁচানো গেল না মাইমূনাকে, প্রভূর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বামী ও সন্তান রেখে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন এক সংগ্রামী মা। সেই জানাযায় আমি (লিখক) ও শরীক হয়েছিলাম।
মৃত্যুর ৩দিন আগে একমাত্র ভাইয়ের জন্য জীবন সাথীনীও বাচাই করে রেখে গেলেন। মৃত্যুর ১ সাপ্তাহ পর সেই বিবাহ সম্পন্ন হল। বিবাহে সবাই উপস্থিত থাকলেও সারা জীবনের সেই সংগ্রামী বোনটি আজ অনুপস্থিত। ২০০৭ সালের ঘটনা এটি।
আজ এই লিখা লিখার সময় জানতে পারলাম। রাইহান ও রায়হানা একত্রে নূরানী শেষ করে রাইহান হেফজ শেষ করার পথে, রাইহানা মাদরাসায় ক্লাস ফাইভের ছাত্রী।
মাইমূনা, রাইহান ও রাইহানার জন্য দোয়ার আরজ রইল।
বিষয়: বিবিধ
১২৯২ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাইমুনাকে আল্লাহ উনার খাস মেহমান হিসেবে কবুল করুন! উনার সন্তানদের দ্বীনের খাদিম- খাদিমা হিসেবে কবুল করুন! সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করে নিন! আমিন।
জাযাকাল্লাহু খাইর!~ এমন একজন জীবন সংগ্রামী মহিয়সী নারীর সাথে পরিচয় করে দেয়ার জন্য ।শুকরিয়া!
আল্লাহ মায়মুনার গুনাহ মাফ করুন তার ভাল আমল গুলো কবুল করে তার কবরকে জান্নতের বাগান করেদিন ।রাইহান ও রাইহানাকে সুণ্দর ও সৎ জীবন দান করুন তারা যেন তার মায়ের জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে ।আমীন ।
আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আপনার মন ছোঁয়া দোয়াগুলো মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করুক আমীন ইয়া আল্লাহ।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাযাকিল্লাহ খাইরান।
বাস্তবতা গল্পকে পরাজিত করে সবসময় ।
ধন্যবাদ খুব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন