কঠিন সংগ্রাম-১
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৪ মে, ২০১৫, ০৭:১৩:৫২ সন্ধ্যা
মাইমূনা, চার বোন একভাইয়ের মধ্যে সবার বড়, প্রথম সন্তান হওয়ায় তার আদর যত্ন একটু বেশি, আপনজনরা আদর করে মায়া ডাকেন। বাবা ইদ্রিস মিয়া কিছুকাল মাদরাসায় পড়েছিলেন, এই সুবাদে আরবী ভালই রপ্ত করেছিলেন। অন্য দশ/বিশটি পরিবার থেকে ইদ্রিস মিয়ার পরিবার পুরোপুরি ভিন্ন। পরিপূর্ণ ধার্মিক, ভদ্র ও পর্দাশীল।
বয়স ষোল না পেরুতেই মাইমুনার বিয়ের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে প্রস্তাব আসতে থাকে। গভীর ভাবনায় পড়েগেলেন ইদ্রিস মিয়া, শেষ পর্যন্ত শিক্ষাজীবনের এক সাথীর পরামর্শে পাশের গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আকরামের সাথে বিয়ে দেন। আকরাম এলাকায় সবার নজরে ভদ্র ও শান্ত হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
বিয়ের পর বছর পার না হতেই জীবিকার টানে পাকিস্তানে পাড়ি জমান আকরাম। দু'তিন মাস পরপর চিঠি আদান প্রদান হতো। এভাবে আরো এক বছর কেটে যায়। মাইমূনা আকরামকে বার বার অনুরোধ জানাতে থাকে বাড়িতে আসতে। বিয়ের দুবছর হয়ে গেল, অথচ তাদের সংসারে প্রদ্বীপ জালানোর মত কোন নতুনের আবির্ভাব ঘটেনি, আশাপাশের মহিলাদেরতো নিয়মিত আলোচনায় এ বিষয়টি লেগেই থাকে।
মাইমুনার মানষিক চাপ বেড়েই চলেছে, আকরাম আসবো আসবো বলে সময় পার করছে, কয়েক মাস পর থেকে চিঠির উত্তর আসাও বন্ধ হয়ে গেল। এদিকে সংসারের টানাপড়েনে মাইমুনা বাবার বাড়িতেই আশ্রয় নেয়। অনেক চিঠি লিখেছে মাইমূনা। প্রায় সময় চিঠির কাগজও ভিজে যেত চোখের লোনা পানিতে, কিন্তু আকরামের পাষান হৃদয় গলাতে সক্ষম হয়নি।
মেয়ের এমন অবস্থা দেখে এলাকার অনেক পাকিস্তান প্রবাসীর সাহায্য নিয়েও ব্যর্থ হন ইদ্রিস মিয়া। অবশেষে জানতে পারলেন, আকরাম পাকিস্তানে বিয়ে করেছেন। প্রবাসীদের মাধ্যমে আকরামকে জানালেনঃ তুমি হয়তো মাইমূনার খোজখরব নাও, অথবা তাকে তালাক দিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে বসার পথ করে দাও, এভাবে একটি মেয়ের জীবন নিয়ে তুমি খেলতে পার না। কিন্তু আকরাম এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। তার কোন প্রতিক্রিয়াই নেই।
এভাবে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এলাকার বড় বড় আলেমদের কাছে যায় ইদ্রিস মিয়া, শরীয়তে এ ব্যাপারে কি সমাধান জানতে চায়। ৫/৬ জন বিজ্ঞ আলেম ইদ্রিস মিয়াসহ আদালতে ধরনা দেন, আদালত দেশে ও বিদেশে নোটিশ পাঠিয়ে কোন উত্তর না পেয়ে বছরখানিক পর ছুড়ান্ত রায়ে তালাক প্রদান করেন।
মাইমুনা আজ অনেকটা ভারমুক্ত, দু'একটি বিয়ের প্রস্তাব আসলেও মাইমুনা তাতে সাড়া দেয় না। কারণ বিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে মানষিক নিষ্ঠুরতার যন্ত্রনা, তার ঘুম ও শান্তি কেড়ে নিয়েছে, দুকে দুকে তার জীবন থেকে ছয়টি বছর কেড়ে নিয়েছে। মাইমুনার দ্বিতীয় বোনটি বিয়ের উপযুক্ত, পরপর আরো দুটি বোন সিরিয়ালে আছে। তাই মাইমুনা সিদ্ধান্ত নিলো, আগে আমার বোনদের বিয়ে হোক, পরে কোন একসময় আমাকে নিয়ে ভাববো। এখন আমাকে কেউ বিয়ের ব্যাপারে জ্বালাতন করবেন না।
মাইমূনা এখন বাড়ীতে ফজরের পর আশপাশের কয়েক বাড়ীর ছেলেমেয়েদের মক্তব পরিচালনা করেন। নিজের সামান্য আয় দিয়ে নিজের খরচ মেটান। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বোনটির বিয়ে হল। কিছুদিন পর ইদ্রিস মিয়ার অপারেশন হল। লিবারে সমস্যা ছিল। মাসখানিকের মধ্যেই দুনিয়াকে বিদায় জানালেন। ছোট ছোট দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেলেন। তখন আমি নূরানীতে পড়ি। জানাযায় আমিও শরীক হয়েছিলাম।
মাইমূনার মক্তবের যৎসামান্য আয় ও মামাদের সহযোগীতায় তাদের সংসার ও ছোট ভাইবোনদের লিখাপড়া কোন রকম চলছিল। তখন ১০বছরের একমাত্র ভাইটি মাদরাসায় পড়ে। পরিবারের এমন পরিস্থিতিকে সামনে রেখে লজিংয়ে থেকে অনেক কষ্ট করে পড়ালিখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
চলবে...........
বিষয়: বিবিধ
১২১০ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সৃজনশীল এই পরিবেশে আপনার সুন্দর লিখনীর চিন্তাশীলতার অনবদ্য সৃষ্টি অব্যাহত থাকুক এটাই প্রার্থনা। আপনার জন্য আমার অনিঃশেষ দোয়া, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সবসময় থাকবে ইনশাআল্লাহ্।
আপনি আসার সঙ্গে সঙ্গে আমার হারানো বিজ্ঞপ্তিটিও হারিয়ে গেছে। যাক ভালোই হল। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অনেক অনেক সালাম রইল।
যে কোন গল্পের চাইতে বাস্তবতার আলোকে লিখা জীবন ঘনিষ্ঠ ঘটনাগুলোর তৃপ্তি অন্যরকম। এগুলো শুধু ভালোলাগাই দেয়া না বরং জীবনের কঠিন ঘাত প্রঘাতে করনীয় সম্পর্কেও সচেতনতাবোধ জা্গ্রত করে!
শুকরিয়া! জাযাকাল্লাহু খাইর!
ভালো লাগা রেখে গেলাম...........
যাচ্ছি দ্বিতীয় পর্বে, দেখি শেষ পরিনতি কি হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন