জীবন সংগ্রাম-শেষপর্ব
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১১ মে, ২০১৫, ১১:০৫:৩৬ রাত
দ্বিতীয় পর্ব এখানে
নূরী ও তার মা বার বার সায়েমকে তাড়া দিতে লাগলো, যেন কিছুতেই ব্যাংকের টাকা সাজিদকে না দেয়। এদিকে মুমতাহিনা ও কিছুটা অনুমান করতে লাগলো নূরী ও নূরীর মায়ের অবস্থা। তাই টাকা উত্তোলন করে ও সাজিদকে না দিয়ে ঘরেই রেখে দিল।
সাজিদ নিজে থেকে ছোটখাটাে ব্যবসা করার জন্য ব্যাংক লোনের আবেদন করলো। আব্দুর রশীদকে জিম্মাদার করে কিছু টাকা লোন নিয়ে সাজিদ ব্যাবসার দিকে এগুতে লাগলো। মোটামুটি ব্যবসা চলছে। এদিকে সায়েম পরিবারের পিড়াপিড়িতে বিষিয়ে উঠলো।
শেষ পর্যন্ত বোন ও দুলাভাইকে বলেই ফেললোঃ আমাদের নামে আব্বার রেখে যাওয়া টাকাগুলো সমানভাবে ভাগ করে অর্ধেক আমাকে দিয়ে দাও। মুমতাহিনা ছোট ভাইয়ের এমন কথায় বেহুশ হয়ে পড়লেন, দু'দিন পর সায়েমকে ডেকে বললেনঃ আমাদের রুমের আলমারিতে টাকাগুলো ভাগ করে রাখা আছে, তোমার অংশ সময় করে তুমি নিয়ে যেও।
তৎক্ষনাৎ সায়েম সাহস করলো না, রাতে নূরীর ঘেনর ঘেনর সইতে না পেরে বেচারা সায়েম বোনের রুমের দরজা টান দিলো, মুমতাহিনা ও আব্দুর রশীদ বুঝতে পেরেও ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। সায়েম চুপে চুপে আলমারী খুলল, অর্ধেক টাকা নিয়ে বৌয়ের হাতে দিল। বললঃ তোমরা মা মেয়ে মিলে বড় লোক হয়ে যাও, আমাকে আর কষ্ট দিওনা।
দুদিন পর মা মেয়ে যুক্তি করে পাশের একটি জমি কিনতে দালালের সহায়তা নিল। কিন্তু দালাল যে পরিমান টাকা দাবী করলো তার অর্ধেক টাকা মাত্র এদের হাতে আছে। তাই দালালের কাছে নত হয়ে বললঃ সায়েম যাতে না জানে, আমরা তোমার টাকার ব্যবস্থা করবো, তুমি জমির ব্যবস্থা কর।
সেই যে দালাল গায়েব হলো, আর পায় কোথায়! এদিকে সায়েমকেও বলতে পারছে না, টাকার দুঃখও সইতে পারছে না। রেগেমেগে সায়েমকে বার বার বলতে লাগলোঃ তোমার বোন ও ভগ্নীপতিকে বাড়ি ছাড়তে বলো। ঐদুটি রুম ভাড়া দিলে আমাদের মাসে ৫হাজার টাকা ইনকাম হবে, আমাদের সংসারে কোন অভাব হবে না।
এদিকে আব্দুর রশীদ ও সাজিদ মিলে ৫কাঠা জমি কিনে বাড়ি করতে লাগলো, সাজিদের ব্যবসা মোটামুটি ভালই চলছে, লোন ও শেষ হয়েছে। বাড়ি বানাতে দেখে নূরী একদিন মুমতাহিনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলোঃ বাড়ীতো তৈরী হয়ে গেছে এবার আমাদের মুক্তি দিলেই হয়, ঐ রুমগুলো ভাড়া নেওয়ার লোক অনেক আছে।
ঐদিন রাতেই মুমতাহিনা, আব্দুর রশীদ, সাজিদ মিলে সায়েম, নূরী ও নূরীর মাকে ডাকলেন, হল রুমে সবাই মুখামুখি বসলেন। দীর্ঘ জীবনের অনুভুতিগুলো মুমতাহিনা একের পর এক বলতে লাগলেন। কিভাবে মা বাবাকে হারালেন, কিভাবে বাড়িতে ফিরে আসলেন, ভাইদের মানুষ করার জন্য ঝিয়ের কাজ থেকে শুরু করে গার্মেন্ট এর কাজ করা ও আব্দুর রশীদের পরিচয় পর্ব পর্যন্ত বললেন।
অতঃপর মুমতাহিনা ঢুকরে কেঁদে উঠলেন, আর কোন কথা বলতে পারলেন না। মুমহাতিনার সাথে সায়েম সাজিদও অতীতের স্মৃতি মনে করে হুহু করে কেঁদে উঠলেন। না মুমতাহিনা আর কোন কথাই বলতে পারছে না। থ হয়ে সবাই অনেক্ষণ বসে রইলেন।
কিছুক্ষণপর আব্দুর রশীদ' ভাইদের নামে ব্যাংক একাউন্ট করা, মাসে মাসে ভাড়া বাবৎ টাকা জমা রাখাসহ বাকি ঘটনাগুলো বললেন। সায়েমের কান্না থামলেও সাজিদ ও মুমতাহিনা বরাবর কেঁদেই চলেছেন।
ভাড়ার টাকা শুনে তো সবাই অবাক, তাহলে এগুলো বাবার রেখে যাওয়া টাকা নয়!, আমার বৌ ও শাশুরী আমাকে মিথ্যা কথা বলে আমার মা তুল্য বোনটির থেকে আমাকে পৃথক করে দিলো! ভাবতে ভাবতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো সায়েম।
এদিকে নূরী ও তার মা নিজেরদেরকে অপরাধী ভাবতে ভাকতে তাদের রুমে চলে গেল। মুমতাহিনা সায়েমের মাথায় পানি ঢালছে, হাতপাখা দিয়ে বাতাশ করছে। হুশ আসার পর সায়েম' মুমতাহিনার পা ধরে ক্ষমা চাইতে লাগলো। আমি যদি তোমার সন্তান হতাম নিশ্চয় ক্ষমা করতে, তুমি সারা জীবন আমাকে সন্তানের মতই ভেবেছ, আজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
মুমতাহিনা ও আব্দুর রশীদ সায়েমকে ক্ষমা করে দিলো, কিন্তু নূরীর সাথে এক মুহুর্ত ও থাকতে চাইলো না, তাই রাতেই তারা স্মৃতি বিজড়িত বাপের বাড়িটি চোখের পানিতে ভিঝিয়ে শেষ বারের জন্য বিদায় নিল। কিছু দিন ভাড়া বাড়ীতে নিজের সদ্য বানানো বাসাবাড়ীতে উঠলো।
ততদিনে অবশ্য তাদের সন্তান নেওয়ার বয়স শেষ হয়ে যায়নি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষা করতে তারা বাচ্চা নিল। সাজিদকেও বিয়ে করালো, সাজিদের বৌ' নূসারাত ও মুমতাহিনার মন জয় করেই চলল। নূসরাত যেন দ্বিতীয় মা পেয়েছে।
মুমতাহিনা পুরাতন স্মৃতি ভূলতে লাগলো, কিন্তু মাঝে মাঝে অতীতের স্বরণ মুমতাহিনাকে খুব কাঁদাতো। বছরের ব্যবধানে মুমতাহিনার কোল জুড়ে এলো জময সন্তান (যুবায়ের ও জুনায়েদ)। আনন্দের আর কোন সীমা রইলো না। মহান প্রভূর দুয়ারে প্রাণখুলো শুকরিয়া জানাতে লাগলো।
এভাবেই সুখে শান্তিতে জীবন পার করতে লেগে গেল...........
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুমতাহিনার চোখের পানি আমাদের মাঝেও সংক্রমিত হলো! জীবনের অতি বাস্তবতাকে চমতকার লিখনীর মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য শুকরিয়া!জাযাকাল্লাহু খাইর।
এভাবেই সুখে শান্তিতে জীবন পার করতে লেগে গেল........... ভালই হলো সুখ শান্তি যেন তাদের ছেড়ে না যায়।
ভাইজান পড়ে খুবই ভাল লাগলো।।
সুন্দর লিখার জন্য শুভ কামনা থাকলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন