সংসার জীবন
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৩ মে, ২০১৫, ১১:৩৪:৫৭ রাত
গ্রামের সাদামাটা মানুষ জনাব আব্দুল খালেক সাহেব, পাঁচ ভাইয়ের সংসারে বড় হওয়ায় বিয়ের পরপরই ছোট চারভাই বিদ্রোহ করে উনাকে পৃথক করে দিলেন।
গ্রামে বাস করা প্রায় সব পরিবারই এমন, বড় ভাই বিয়ে করলে ছোট ভাই বোন সবাই মায়ের সাথে জোড় বেধে বড় ভাবীর বিরোধীতায় লেগেই থাকে। যে বড় ছেলেটি ছিল মা ও ভাই বোনদের আশা ভরসা ও ভালোবাসার প্রাণ কেন্দ্র, বিয়ের পরে কি সবাই তার ও তার স্ত্রীর বিরোধীতা করতেই হবে?
যদিও গুটি কয়েক পরিবার এর ব্যতিক্রম থাকে। বড়ভাই হয়তো মোমের মত বা বিজের মত। যে নিজেকে সম্পুর্ণভাবে পরের তরে বিলীন করে দেয়। কিন্তু এমন লোক বর্তমান সমাজে গুটি কয়েকজন।
যারা সংসারে ছোট তারা বড়দের ব্যথা বেদনা কখনো বুঝে না। তেমনি পরিবারের সন্তান আব্দুল খালেক। ফজরের পর থেকেই হালচাষ করে ১০টায় স্কুলে যায়, প্রায় সময় কানে ও মাথার চুলে কাদা লেগেই থাকে। অনেক কষ্ট করে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পৌছেছিলেন। অতঃপর ছোট ভাইদের লিখাপড়া ও সংসারের ঘানি টানতে জীবন ব্যায় করতে লাগলেন।
মায়ের কষ্ট দেখে ভাইদের পরামর্শে আব্দুল খালেক সাহেব বাড়ীর পাশেই বিয়ে করেন। প্রথম সন্তান আমিনা জন্ম হওয়ার পরপর ছোটভাইদের অভিযোগ শুরু। ভাবী মাছ গোস্ত দিয়ে ভাত দিলেও মনে হয় যেন আরো ভালো কোন তরকারী লুকিয়ে রেখেছেন, মা আলু ভর্তা দিয়ে ভাত দিলেও অনন্দমনে সবাই খেয়ে যায়। অনেক টানাপোড়নে দু,বছরের মাথায় পৃথক করে দেওয়া হল।
বিয়ের আগে ছোট ভাইদের কত শাসন করেছেন, কত কষ্ট করে লিখাপড়ার খরচ জোগাড় করেছেন, কিন্তু বিয়ের পর ছোটদের শাসন তো দূরের কথা অন্যায় দেখেও চোখ রাঙ্গাতে পারেন না, কারণ মায়ের কাছে গিয়ে ছোটরা কাঁদবে আর উনার বিরুদ্ধে নালিশ করবে।
এসব ভেবে আব্দুল খালেক পুকুরের পাড়ে গিয়ে অনেক কেঁদেছেন। মা তো শুধু দেখে দেখে জীবন পার করছে, আগে কালের মহিলা তো, চার জনের পক্ষে যাবে নাকি একজনের পক্ষে?
জীবিকার টানে আব্দুল খালেক পাকিস্তানের প্রবাসী হলেন, এদিকে পৃথক সংসারে থেকেও বড় ভাবীর কোন দোষ পেলেই চার দেবর মিলে তার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়েন। জালানী হিসাবে খড়কুড়ো ও গাছের কুড়ানো পাতাতেও তাদের আপত্তি।
ধৈর্যহারা হয়ে বড় ভাবি তার ভাইদেরকে বিষয়গুলো অবহিত করলেন, পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় তর্কবিতর্ক তুঙ্গে উঠলো। অনেক চড়াইউতরাইয়ের পর আব্দুল খালেক অপেক্ষা করতে লাগলো ছোটভাইয়েরা বিয়ে করলে হয়তো এসব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে।
অবশেষে সত্যিই তাই হল, ছোট ভাইয়েরা একে একে বিয়ে করলো, তখন নিজেদের সংসার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে গেল। এদিকে আব্দুল খালেক মিয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।
ব্লগে যারা সংসারের বড় ছেলে আছেন তারা হয়তো বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন, না পারবেন সইতে, না পারবেন কিছু কইতে। ছোট ভাই যারা আছেন তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে আমি যদি বড় ভাইয়ের জায়গায় হতাম, তখন আমার কি করনীয় হতো!
আমার ছোট্ট জ্ঞানের পরামর্শ হলঃ বড় ভাইদেরকে বাবার মত সম্মান করুন, আর ছােট ভাই বোনদের নিজের ছেলেমেয়েদের মত করে আদর স্নেহে ভরে রাখুন, নিজেকে ছোটদের তরে বিলিয়ে দিন, তবেই পাবেন সোনালী সংসার।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬২ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ পাবেন না একতরফা লেখার জন্য জান্নাতের বাবা আমার ভাইয়া ।
ছোট ভাইয়েরা বুঝতে যাবে কেন? বড় ভাইতো তাদের ভাবিব পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছেন। ছোট ভাইদের ভাবনায় বড় ভাইদের বউ চাকরানীর সমান। সুতরাং শ্রদ্ধাবোধ তৈরী???????
দায়িত্ব ছোট বড় সবার। বড় ভাবীকে মায়ের মত শ্রদ্ধা করতে হবে। আর উনিও ছোটদের সন্তানের মত করে আগলে রাখবে, তবেই শান্তির আশা করা যায়। ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যটি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। আমার পুরো লিখাটি আপনি এক কথায় প্রকাশ করে দিলেনঃ আপনার মন্তব্যটি আমার রিভিউ করলামঃ
১০০% সত্যি বলেছেন। তা ছাড়া যদি সংসারের দায়ীত্বশীলরা অবুঝ মনের হন তা হলে তো পুরো লাইফ শেষ। অনেক অনেক শুকরিয়া, জাযাকিল্লাহ খাইর আন্টিমনি।
ধন্যবাদ।
কাজী সাহেপ হতে মুন চায় নাকি?
বড় ভাই সুযোগ পেয়ে উত্তরাধিকার থেকে ছোট ভাইদের বঞ্চিত করেছে এমন ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষি আমি।
বড়রা সবসময় ছোটদের তুলনায় লাজুক ও গম্ভীর হয়। কারণ সন্তান পেটে ধারণের সময় মায়ের বেপরোয়া চলাফেরার প্রবণতা প্রথম দিকে খুব কম থাকে, লজ্জিত থাকে, ভয়ে খাকে, সকর্ত থাকে। পরে আস্তে আস্তে বেপরোয়া ভাব এসে যায়, পর্দা করতে অনীহা হয়। এর প্রভাব গর্ভজাত সন্তানের উপর অবশ্যই পড়ে। তাই সব মিলিয়ে বলতে পারেনঃ বড় ভাই যদি খারাপ হয়, তবে ছোটরা হবে আরো খারাপ। কথাগুলো আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখা, ব্যতিক্রম ও হতে পারে। ধন্যবাদ।
আপনার মূল্যবান লিখাটি পড়ে অনেক কিছু শিখলাম ।
জাযাকাল্লা,,,,,
গ্রামের মানুষরা সহজ সরল হয়। অনেক আন্তরিকতা প্রবন এবং দায়িত্ববোধ থাকে উনাদের। অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি উনাদের উদারতা শহুরে মানুষদের চাইতে বেশি!
সম্পর্কের টানাপড়ন এটা গ্রাম বা শহর উভয় পরিবারেই ঘটতে পারে। আধুনিক শিক্ষার কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু ইসলামের শিক্ষা আছে ছোটদের স্নেহ করা বড়দের সন্মান করা - উম্মাহর পরিচয় দানকারী -ইসলামের অংশ ! এখানেও আমরা নফসের কাছে হেরে যাই! দুঃখজনক!
সুন্দর সমাজের প্রত্যাশায় আশাকরি আপনার লিখনীটি সবাইকে বাতিঘরের সন্ধান দিবে!
শুকরিয়া আপনাকে!
দুনিয়াতে মানুষের দুঃখ দুর্দশার মূল কারন তো এটিই। যেখানে এই গুণগুলোর অভাব সেখানেই হিংসা বিদ্বেষ ও জুলুমের সূচনা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আত্মশুদ্ধি অর্জন করার তাওফীক দান করুক। অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ও জুলুমকরা থেকে হেফাজত করে নম্রতা, মায়া-মমতা ও ইসনাফের গুণ অর্জন করার তাওফীক দান করুক। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন