ছোটকালের স্মৃতি
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৪ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:৩৫:৩৬ সন্ধ্যা
বয়স যখন মাত্র চার বছর তখনই ক্লাস ওয়ানে পড়ি, স্কুলটি বাড়ী থেকে ১০ মিনিটের পথ। বাড়ীর সামনে কাছারীঘর, এতে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম, দাদা, বাবা চাচারা সহ আশপাশের ৪/৫ বাড়ীর পুরুষরা আমাদের কাছারীতেই নামাজ পড়তো।
আমাদের বাড়ী থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে একটি বড় মাদরাসা, একজন তালীবে ইলম সব সময় আমাদের বাড়ীতে লজিং খাকতো। মাগরীব এশা ও ফজর নামাজ আর মক্তব পড়াতেন। প্রায় ৩০জন ছাত্র/ছাত্রী মক্তবে নিয়মিত। ফজরের নামাজ শেষে মুসল্লিরা বাহির হওয়ার আগেই ছেলে মেয়েরা মক্তবে হাজির।
উস্তাদ ছিলেন অনেকটা কঠোর, এলাকার বড় বড় ছেলেরা প্রায় ওনার বয়সি হলেও যোগ্যতা ও শাষনের কারণে সবাই তাকে ভয় করতো। একদিন মক্তব কামাই করলে পরদিন মা বাবা ছাড়া আসতই না। নামাজের ব্যাপারে প্রতিদিন হিসাব নিতেন, কাউকে গালি দেওয়া হলে তো সেইদিন কয়েকটি বেত উড়ে যেত, প্রতি বাড়িতে বাড়িতে আবার হুজুরের গোয়েন্দা আছে, কেউ মা বাবার কথা না শুনলে, বা কাউকে গালি দিয়ে সরাসরি হুজুরের নিকট লাইভ প্রচার হতো।
নিয়ম ছিল প্রতিদিন অন্তত ২০জন মানুষকে সালাম দিবে হবে, নামাযে আসতে একে অপরকে ডেকে নিয়ে আসতে হবে। মুরুব্বীদের কেউ মসজিদে না আসলেও হুজুর খবর নিয়েই ছাড়তেন, কেন আসল না? অসুস্থ নাকি অলসতা। ছোট থেকে বুড়ো সবাই হুজুর কে শ্রদ্ধ ও ভয় করতেন।
ছোটকাল থেকেই আলহামদুলিল্লাহ স্মৃতিশক্তি ভালোই ছিল আমার। মক্তবে কোন দিন মার খেতে হয়নি, পাঁচ বছর বয়রে ক্লাস টুতে ছিলাম, হেড স্যার ও হুজুর স্যার আমাকে খুব আদর করতেন, আমাদের সমাজের মসিজিদটি ছিল স্কুলের পাশেই, তখন জুমআর ইমাম ছিলেন আমার আব্বু, ইমাম সাহেবের ছেলে ও যহীন হওয়ায় তখন প্রায় আদরে কেটেছিল দিনগুলো।
মাগরীবের আযানের আগ থেকে প্রস্তুতী চলতো রাতের বেলায় পড়ার জন্য, যেদিন বিকালে ঘুম না গেছি, সেদিন চোখে পানি মারতে মারতে চোখ লাল করে ফেলতাম, কারণ পড়তে বসলে যেন ঘুম না আসে। ঘুম আসলে বকের মত এক পায়ে খাড়া হয়ে বই নিয়ে পড়তে হতো। এদিক সেদিক কাত হয়ে পড়ে গেলে উস্তাদের মার খেতে হত।
স্কুল থেকে বাড়ীতে আসার পথে শাপলার ঝিল, কোমর সম পানি, কাপড় ভেজালে তো বাড়ীতে আম্মুর মার খেতে হবে, তাই পেন্ট খুলে কার আগে কে লাফ দিবে, প্রায় দিনই শাপলা তোলা হত। কাঁচা কাঁচা খেতাম, আর লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ীতে আসতাম, আম্মু যেন না দেখে।
যখন ক্লাস থ্রীতে তখন বয়স মাত্র ছয়, রোল এক। প্রথম পরীক্ষার পর আর পড়া হলো না, পরীক্ষার বন্ধে কোরবানের ঈদে নানার বাড়ীতে বেড়াতে গেলাম, ৯১ সনের এপ্রিল মাসে মামাদের মক্তবে নূরানী মাদরাসা খুলেছে, আমরাই প্রথম ছাত্র। বাড়ীতে আর আসা হলো না, নানার বাড়েতেই থেকে গেলাম, প্রতি সাপ্তাকে একদিনের জন্য বাড়ী যেতাম। শনিবার ভোরে ভোরে আবার মাদরাসায় উপস্তিত হতাম।
৪/৫ বাড়ী ছাড়া এলাকার মানুষ এখনো আমাকে চিনে না, প্রায় মুরুব্বী জিজ্ঞেস করে তোমারদের বাড়ী কোথায়? আমি মাওলানা ...............এর ছেলে। ও আচ্ছা, তুমি কোথায় থাক কি কর, ইত্যাদি ইত্যাদি...।
তখন থেকে প্রায় ৭বছর মামার বাড়ীতে কাটালাম, কত স্মৃতি, কত আনন্দ বেদনা আমার নানার বাড়িজুড়ে। শুধু নিজে পড়তাম তাই নয়, মামাতো ভাইদের টিচিং এর কাজটিও আমি করতাম,
আমার এক খালাতো ভাই ছিলেন, উনি আসলে পুরো নানার বাড়ি কাঁপিয়ে ছাড়তাম, গাছে উঠা, পুকুরে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো, ভেলা ভাসিয়ে লাফ দেওয়া, সিমের বিচি দিয়ে জিক খেলা, সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে জিক খেলা, মামাদের ঘরের ছাদে নানু সিম ও কদুর গাছ লাগাতেন, আমরা পুকুর থেকে মাছ তুলে সোজা ছাদে গিয়ে সিম ও কদু দিয়ে ঝোলাবাতি রান্না করতাম।
বড় মামাকে খুব ভয় করতাম, যত দুষ্টামি করতাম সবই বড়মামা জেনে যেতেন, মাঝে মাঝে পিটাও খেতাম, আর দৌড় দিতাম।
একদিন মামার শশুর বাড়ীতে গিয়ে রাতে টিভি দেখলাম, তখন রাত আটটার খবরের পর আলিফ লায়লা দেখাতো, তাইতো সেদিন কাউকে না জানিয়ে আলীবাবা ও চল্লিশ চোর দেখে এলাম, দৃশ্যগুলো কেমন যেন ভয়ানক ছিল। তার চেয়ে ভয়ানক ছিল বড়মামা জেনে যাওয়ায় পরদিন মামার হাতে আচ্ছাকরে ধোলাই খাওয়া।
পাঠক এতক্ষণে হয়তো বিরক্ত হয়ে গেছেন, আজকের মত এখানেই রাখলাম।
(সাদিয়া আপুর সৌজন্যে)
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৪ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আরও ছোটকালের স্মৃতি কি মনে আছে ?
ভাল লাগল অনেক ভাল ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আমার কাছে মনে হচ্ছে দুষ্টুমিতে আপনি অনেক অভিজ্ঞ হলেও শিক্ষকতা করা যে আপনার ছোট বেলার নেশা তা জেনে খুবই আনন্দিত হলাম। এটি আপনার রক্তে মিশে আছে!!
তার মানে আপনি একজন বাইবর্ণ টিচার আলহামদুলিল্লাহ্।
আর হ্যাঁ আংকেল!! গতকালকে আপনাকে দুষ্টুমি করে অন্নেক কষ্ট দিয়েছি। আশাকরি মনে কিছু নিবেন না।
আসলে আপনার কণ্ঠে গানটি শুনতে চেয়েছিলাম। তাই ভিডিও টি দেখে হর্ষ বিষাদে... !!!!!
ভিডিও টি কষ্ট করে খালাম্মনির অনুরোধে দেয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনাকে শুনানোর জন্য গানটি মোবাইলে রেকর্ড করেও দিতে পারি নাই, কারণ কনভার্টার নেই, তা ছাড়া আমি সপ্টওয়ারে এতো পারদর্শী নই, তাই অন্য কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে ফেসবুকে লোড করে আপনার জন্য দিলাম।
খালাম্মুনি আমি আরবী ও উর্দূ মিডিয়ামে লিখাপড়া করায় বাংলা ও ইংলিশে তেমন অভিজ্ঞতা নেই, "হর্ষ বিষাদে" মানে কি জানাবেন। ফেসবুকে যখন এসেই ছিলেন তখন..............
ধন্যবাদ.
আর হ্যাঁ আংকেল আপনার ফেবু ...তো আমার কাছে নেই!! তাই...।
আর হ্যাঁ সাদিয়াপু ও এসে গেছে। অনেক অনেক সালাম খালাম্মুনি।
পড়তে পড়তে আবারো নিজের শৈশবে উঁকি দিয়ে এলাম!
আমাদের বাসার চিরাচরিত নিয়ম ছিলো দুপুরে ঘুমানো ! যেদিন না ঘুমাতাম আমরাও চোখে পানি দিতে দিতে জামাকাপড় ভিজিয়ে ফেলতাম! ঘুম কি আর না আসে? হাসি পাচ্ছে স্মরনে এসে সেদিনের কথাগুলো!
আমাদের বাসা আর মসজিদের দুরুত্ব মাত্র তিন মিনিট । কারন আব্বা ছিলেন ইমাম! আলাদা পর্দার সুব্যবস্থা করে আমাদের বাসাটি বাউন্ডারি করা ছিলো! আমি হুজুরের মেয়ে হিসেবে মসজিদ, স্কুল সবজায়গায় বাড়তি আদর পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের মসজিদে ছোটবেলা থেকেই নূরানি পদ্ধতিতেই শিখেছি!
খুব ভালো লাগলো আপনার আনন্দময় শৈশবকাহন জেনে! মোটেই বিরক্ত হইনি বরং মনে হলো কেনো এখানেই শেষ হয়ে গেলো!
আপনার দেয়া ইসলামী সংগীতটি শুনছি, পতিজ্বিকে বলেছি দ্রুত ইহা আমাকে গাহিয়া শুনাইতে হইবে! উনি ভাংগা গলা নিয়ে রিহার্সালে নামিয়াছেন
জাযাকাল্লাহু খাইর! সবশেষে নিজের নামটি দেখে লজ্জাবনত হয়ে ভাইকে আবারো শুকরিয়া জানাচ্ছি! অনিঃশেষ শুভেচ্ছা
চোখে পানি দিতে দিতে জামাকাপড় ভিজানো, হুজুরের সন্তান হিসাবে বাড়তি আদর, ছোটবলোয় নূরানী পদ্ধতিতে লিখাপড়া ইত্যাদি সব যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
আপনার স্মৃতিগুলো অনেক ভালো লাগলো। দুলাভাইকে আমার সালাম জানাতে ভুলবেন না (যদি উনি রেগে না যান)। যদি উনি গাইতে পারেন, আপনি ভিড়িও করবেন, অতঃপর ভাইটিকে শুনাবেন (যদি সংকোচ না মনে করেন)।
লজ্জার কারণ নেই, আপনার উৎসাহে লিখাটি। আপনাকে অনেক অনেক শুকরিয়া জানাই। পরিবারের সবার প্রতি আমার সালাম ও দোয়া রইল।
ভালো থাকবেন দোয়া রইল
খুবি ব্যস্ত ছিলাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন