চলে যায় যদি কেউ কাদিস কেন মন!
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২১ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:০৫:১৬ রাত
জন্মিলে মৃত্যু অপরিহার্য। মহান আল্লাহ তায়ালার জন্ম নেই, তাই তার মৃত্যুও নেই। পৃথিবীর সবকিছু যেহেতু আল্লাহ তায়ারই সৃষ্টি তাই তাদের মৃত্যু ও আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যদিও আমরা তা জানি না। কিন্তু ঈমান রাখি যে মৃত্যু একদিন হবেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ তোমরা যেখানেই থাক মৃত্যু তোমাকে স্পর্শ করবেই যদিও কঠিন প্রাচীরের মধ্যে থাক; নিসা-৭৮
যত বড় নাস্তিক, বিজ্ঞানী বা দার্শনিক হোক না কেন, মৃত্যুকে কেউ অস্বীকার করে না। এই সত্যটি জানার পরও কেন মানুষ মৃত্যুর ভয়ে পলায়নপর হয়? অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ হে নবী আপনি তাদেরকে বলে দেন, যে মৃত্যুর ভয়ে তোমরা পলায়নপর, নিশ্চয়ই সে তোমাদের সাথে সাক্ষাত করবেই, অতঃপর দৃশ্য ও অদৃশ্যের জান্তার নিকট তোমাদের পৌছে দেওয়া হবে, সুতরাং তোমাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে তোমাদেরকে অবহিত করা হবে; জুমআ-৮
আর পেশ করা হবে কৃতকর্মের ডায়েরী, অতঃপর আপনি অপরাধীরে ভীত সন্ত্রস্ত দেখবেন, তারা বলবে হায় আপসোস এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়নি, সবই এতে রয়েছে তারা তাদের কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে, আপনার প্রতিপালক কারো উপর জুলুম করবেন না। কাহফ-৪৯।
যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে নতশীর হয়ে বলবে হে আমাদের পালকর্তা আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদের (দুনিয়াতে পূনরায়) পাঠিয়ে দিন আমরা সৎকর্ম করব, আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েগেছি; সাজদাহ-১২।
তখন তো আর দুনিয়াতে ফিরে আসা সম্ভব নয়। তাই ফয়সালা খোদ আল্লাহ তায়ালাই করবেন। কারণ ঐদিন একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী তিনিই।
আর আমলনামা যদি ভালো হয়, চিরস্থায়ী শান্তির নীড়ে পৌছে দেওয়া হবে। দুনিয়ার দুঃখ কষ্ট অভাব অনটন জুলুম নির্যাতন কিছু্ই মনে থাকবে না। অনাবিল শান্তি আর শান্তি।
হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতের আশায় বুক বেধেছি, আমাকে নৈরাশ করবেন না, আপনার নিকট এইটুকু এই পাপীবান্দার ফরিয়াদ।
আমি জানি আমার আমলের দ্বারা আমি কখনো মুক্তি পাব না, জান্নাত চাওয়া তো দূরের কথা, আশা করার ও অধিকার আমার নাই, আপনার বান্দা হিসাবে এইটুকু নিবেদন করি যে, আমাকে অন্তত জাহান্নাম থেকে রেহাই দিবেন।
সম্মনীত পাঠক! এই লিখাটি লিখতে বসেছিলাম চিরবিদায় নিয়ে। অক্টোবরে ছুটিতে দেশে গেলাম, সখ করে একটি মটর বাইক কিনলাম। ঘুরেছিও প্রচুর।
ভুমি অফিস থেকে চিঠি এলো আমাদের সম্পত্তির খাজনা প্রায় ২০বছর বাকি, দাদার সম্পত্তি এখনো ভাগ হয় নাই, তাই অলসতা করে কেউ খেয়াল ও রাখেনি, দেওয়া ও হয়নি। আমার মেঝ জেঠাকে নিয়ে আমি ৩দিন বাইকে করে ভূমি অফিসে গেলাম, সূদে আসলে মিলে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে, অনেক কষাকষির পর ২০ হাজার টাকায় পেমেন্ট করলাম। মেজ জেঠা জায়গা জমির ব্যাপারে পারদর্শী ছিলেন, আমাদের সম্পত্তির সব কাগজপত্র উনার কাছেই থাকতো।
ডিসেম্বরে ধান কাটার পর ভাগভাটোয়ারা হওয়ার কথা ছিল। মহুরীর সাথে আলোচনা ও হয়েছে। নভেম্বরের শেষের দিকের একদিন এশার নামাজ পড়ার পর প্রতিদিনের ন্যয় তালিম করা হল। আজ হাদিসটি মৃত্যু সম্পর্কে হওয়ায় আমার আব্বু মৃত্যু সম্পর্কে আরো কিছু কথা বললেন। এতে সবাই খুব কাঁদলো, মুনাজাতের মাধ্যমে নিজেদের অতীতের গুনাহের কথা স্বরণ করে সবাই কাঁদলেন, গুনাহ মাপ চাইলেন। অতঃপর যার যার ঘরে চলে গেলেন।
খানাদানার পর রাত অনুমানিক এগারটার দিকে জেঠা হটাৎ করেই ব্রেণ স্টক করলেন, আগে থেকে ডায়াবেটিস ছিল বিধায় তাড়াতাড়ি ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তার মৃত ঘোষনা করলেন। পরদিন বিকালে লাশ বাড়িতে আনা হল। রাত ১২টার দিকে আমরা চাচাত ও জেঠাত ভাইয়েরা মিলে উনাকে গোসল দিলাম, সকাল ১০টায় জায়নাযা পড়ে দাফন করলাম।
তখন একটি হাদীস আমার মনে পড়লোঃ انما الاعمال بالخواتيم শেষ অমলই নির্ভরযোগ্য। আমার জেঠার শেষ আমল ছিল জামাতে এশার নামাজ পড়ে হাদিস শুনে মৃত্যুর কথা স্বরণ করে কান্নাকাটি করা। মৃত্যুর পর উনার চেহারা ছিল হাস্যজ্বল, ধবধবে সাদা দাড়ি সুন্দরে যেন ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল। উনার চেহারা আজও আমার সামনে ভাসে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৫ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উনার শেষ আমল ছিল জামাতে এশার নামাজ পড়ে হাদিস শুনে মৃত্যুর কথা স্বরণ করে কান্নাকাটি করা। মৃত্যুর পর উনার চেহারা ছিল হাস্যজ্বল, ধবধবে সাদা দাড়ি সুন্দরে যেন ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল।
সত্যিই অনেক মূল্যবান অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে যা অনবদ্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আল্লাহ্ পাক আপনার জেঠাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উত্তম স্থানে সমাসীন করুণ। আমীন।
প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর শুনলে মন খারাপ তো হবেই! তারপরেও মুমিনের কন্ঠে- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রজিউন পঠিত হয়!
আল্লাহ উনাকে উনার জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন, উনাকে রহমাহ দান করুন, উনার কবরকে প্রশস্থ করে দিন, উনাকে জান্নাতী মেহমান হিসেবে কবুল করুন!
পরাপারের কথা স্মরনে এনে দেয়া লিখাটির জন্য জাযাকাল্লাহু খাইর!
ঝাপ দিয়ে আসতেছি....
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : ভাইয়া আমার এসব ভাবতে খুব ভয় হয়। মাঝেমাঝে মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। আমাকে মরতে হবে, লক্ষ-কোটি বছর কবরে থাকতে হবে, পৃথিবীটাই ধ্বংশ হয়ে যাবে। কেয়ামতে কিভাবে পার পাব? এসব ভাবলে আর রাতের বেলা ঘুমাতেও পারিনা খুব ভয় লাগে। আমারও একই অবস্থা হয়অ সহমত!
ক্ষণিকের এই দুনিয়ার মোহে এমন ভাবে আমরা মশগুল হয়ে পড়েছি যে, চির বাস স্হান আখিরাতের কথা বেমালুম ভূলেই গেছি!
আল্লাহ আমাদের কে সঠিক বুঝ দান করুন!আমিন!
প্রিয় চাচা কে মহান আল্লাহ জান্নাতের মেহমান করে নিন-এই দোয়া আমাদের!!
মহান আল্লাহ্ আমাদের বুঝ দান করুন। আলহামদু লিল্লাহ পড়ে খুব ভাল লাগলো। মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযাদিন। সুন্দর লিখার জন্য।
জানি যে কোন সময় মারা যেতে পারি তবু মৃত্যুর কথা শুনলে এত ভয় লাগে কেন !! আপনার চাচাকে মহান আল্লাহ জান্নাতের মেহমান করে নিন- আমীন ।
আপনার দোয়ার সাথে আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন