মিশর সংস্কৃতিঃ ফেরআউনী ঈদ
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৪ এপ্রিল, ২০১৫, ১১:৪৬:১৫ রাত
আমিরাতে এসেছি প্রায় চার বছর, আমি আসার এক বছর পর ভিসা বন্ধ হয়ে গেল। তাই কফিল বা স্পন্সর চেঞ্জ করতে ও পারতেছিনা। আমার স্পন্সর মিসরী, ধর্মে খৃষ্টান। অনেক বিষয়ে তাদের সাথে মনমালিন্য হলেও আমাকে নামাযের সময় ঠিকই সুযোগ করে দেয়। তাই ওদের সাথে মোটামুটি সখ্যতা গড়ে উঠে, ওরাও আমার কাজে সন্তুষ্ট, আমিও মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি।
মিশরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রায় সময় ওদের সাথে আলোচনা হয়। ওরা খৃষ্টান হলেও মুসলিম বিদ্ধেষী নয়, আমি খৃষ্টানদের কালচার সম্পর্কে ওদের কাজ থেকে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করি প্রায় সময়। যেমন রোজা কেমন, সালাত কেমন, রাহেব ও কিসসিস এর প্রার্থক্য কি? ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়।
গত ১২/০৪/২০১৫ ওদের ঈদ ছিল। আমি ওদের ঈদ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করলাম। অতএব যা জানলাম, তা হল ঈসা (আঃ) কে ০৯ এপ্রিল হত্যা করা হল, অতঃপর কবর দেওয়া হল। তিনদিন পর অর্থাৎ ১২ তারিখে আকাশে উড়ে গেল। এ জন্য ১২ তারিখে তারা ঈদুল ক্বিয়াম পালন করে। (কোরআনের ভাষায় ঈসা (আঃ) কে হত্যা করা হয়নি, তাদের একজনকে স্বাদৃস্য বানিয়ে দেওয়া হয়েছে)।
১৩ তারিখ মিশরের মুসলিম ও খৃষ্টান সবাই মিলে ফেরআউনী ঈদ পালন করে। ঐ দিন নাকি ফেরআউনের জন্ম। আনন্দ রেলী, শোভা যাত্রা, সারাদিন পার্কে, সমুদ্রতটে ঘুরে বেড়ানো ই্ত্যাদি ও বিশেষ প্রকারের মাছ খাওয়া এই দিনের বিষেশ আকর্ষণ। আমাদের দেশে ইলিশ খেলেও তারা কিন্তু অন্য এক ধরনের মাছ খায়।
এই মাছকে আমরা প্রবাসীরা মালবারী মাছ হিসেবে জানি। কারণ ইন্ডিয়ার কেরালার মালবার জেলায় এটি বেশী পাওয়া যায়, এমনকি আবুধাবীতে কেরালার সকল হোটেলে এই মাছটি থাকবেই। তাই বাঙ্গালী প্রবাসীরা মালবারী মাছ হিসাবেই চেনে।
মিশরীয়রা বলে (সামাকে মুমাল্লাহ) লবনাক্ত মাছ। তারা এই মাছকে আরো ১৫দিন আগে ছোট ড্রামের ভিতর লবন দিয়ে ঢাকনা আটকিয়ে রাখে।
ফেরআউনী ইদের দিন ঢাকনা খুলে মাছগুলো পরিস্কার করে সামান্য ধনিয়া ও জ্বিরা পাউডার, লেবু ও সালাদ দিয়ে খায়। পাক করতে হয় না, এক কথায় আমাদের দেশের শুটকির মত কাঁচা ও পঁচা শুটকি খায়।
এই দিন তারা আরো অনেক আনন্দ করে। যেমন ডিম রং করা,
হরেক রকমের হয়ে থাকেঃ
আরো আছেঃ
বিভিন্ন ধরনের মুখোশ আকা ও পরিধান করা ইত্যাদি।
এই ধরনের অপসংস্কৃতিতে মিশরবাসী ডুবে আছে।
আমি আগে ভাবতাম একমাত্র বাঙ্গালীরাই অপসংস্কৃতিতে লিপ্ত, এখন দেখছি শুধু বাঙ্গালী নয়, বিশ্বের আরো অনেক জাগায় অনেক জাতি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে আনন্দ উল্লাস করে। আমাদের দেশের উপজাতীরা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের উৎসব করে। হিলটেক্স এর লোকেরা হয়তো এ ব্যপারে ভালো বলতে পারবে।
আমার বিবেচনায় সারা বিশ্বে মুসলিমদের পরাজয়ের একটাই কারণ, মুসলমানরা নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য তাহজীব তামাদ্দুন বিসর্জন দিয়ে অপসাংস্কৃতিতে ব্যস্ত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অপসংস্কৃতি থেকে হেফাজত করুক। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৯ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানুষ মূল দ্বীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলেই এইসব বেদ্বীনী কাজ গুলো জীবনের অংশে পরিনত করে নিয়েছে! এটা বিশ্বের সবজায়গায় চলছে!
ইউরোপের ছুটির দিনগুলো পোস্টে আমি এর কিছুটা তুলে ধরেছিলাম!
চমৎকার পোস্টের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইর!
লেখার সর্বশেষ প্যারাটা যেমন চমৎকার।
এই খোলস থেকে বেড়িয়ে আসতে উদ্বুদ্ধকরণ এই জনসচেতনতামূলক প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে শিক্ষণীয় লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
লেবাননে এমন উৎসব আছে । এই উৎসবে সব বয়সের মেয়েরা খালি গায়ে বেলী ড্যান্স করে । বেলী ড্যান্স হলো ল্যাংটা হয়ে কোমড় দোলানোর নাচ । আমার কাছে এমন একটা ভিডিও ছিল । কারণ আমার লেবানিজ বন্ধু দিয়েছিলো । আমি উৎসবটার নাম মনে করতে পারছি না ।
ভিডিওটা আমার পুরাতন কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে অনুসন্ধান করলে পাবো হয়ত । ভিডিওটা পেলে মেয়েদের শরীর ও চেহারা অস্পষ্ট করে আপলোড করে একটা পোস্ট দিতে পারবো । তবে সময় পেলে দিবো ।
ইয়েমেনে মুসলিমরা সূর্য উৎসব করে । আলজেরিয়ার অনেক মুসলিম চন্দ্র উৎসব করে । এসব উৎসব পহেলা বৈশাখ হতে জগন্য । আমি এগুলোর ভিডিও দিবো না । নেটে এসবের ভিডিও আছে ।
সৌদি আরবের মেয়েদের বড় অংশ উৎসবের নাম করে মরুভুমিতে তাদের নাগড় নিয়ে যৌনতায় লিপ্ত হয় ও সিসা নামক মাদক সেবন করে । উল্লেখ্য সৌদি আরবের অর্ধেক মেয়েই মাদকসেবী । এরা বাংলাদেশি মেয়েদের চেয়েও বাজে ও চরিত্রহীনা । যদিও তারা আবআয়া ও নিকাব পরে ।
আল্লাহ আমাদের অপবিত্রতা ও গুনাহের কাজ হতে দুরে থাকার তৌফিক দান করুন ।
জীবনে আর ওপথে হাটিনি।
এদিন তারা ডিম বিভিন্ন রং করে ও বিভিন্ন ধরনের আর্ট করে । যেমন :
http://www.masreat.com/صور-تلوين-بيض-شم-النسيم-طبيعي/
http://nghmm.com/vb/showthread.php?t=14342
১৩ তারিখ সোমবার মিশরের মুসলিম ও খৃষ্টান সবাই মিলে Sham el Nessim উৎসব পালন করেছে । এসম্পর্কে নেটে যা পেলাম :
The holiday known as Sham el Nessim, or literally, smelling the breeze is one of them. Sham el Nessim seems to be a holiday as old as Egypt, which may have been celebrated as early as 4,500 years ago.
Sham el Nessim falls on the first Monday following the Coptic Easter. It was related to agriculture in ancient Egypt which contained fertility rites that were later attached to Christianity and the celebration of Easter. It marks the beginning of spring, and therefore, it is the spring festival of Egyptians and it becomes a national holiday.
It is called Sham El-Nessim because the harvest season in ancient Egypt was called "Shamo". In Arabic, Sham means smell and El-Nessim means air.
On Sham el Nessim, families start at dawn preparing their food, then go for picnic and enjoy the breeze of spring, which on that day they believe to have a wonderfully beneficial effect. Millions are out; some dine in the country and some celebrate on boats on the river. In Cairo where there are few public parks and open areas, people crowd all the lawns they could find.
উৎস : http://egyptholidaysdirectory.com/event/sham-el-nessim.html
http://www.touregypt.net/featurestories/shamelnaseen.htm
আশা করি - এব্যাপারে আপনি আপনার আরো অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন ।
তবে Sham el Nessim যাকে আপনি ফেরাউনী ঈদ বলছেন তা কিন্তু আমাদের পহেলা বৈশাখ হতে বেশী ভয়াবহ । কারণ এটার উদ্যোক্তাদের পুরোটাই কপ্টিক খৃস্টানরা এবং এতে ফেরাউনী আচার আচরণ জড়িত ।
আমরা চাইলে পহেলা বৈশাখকে ইসলামীকরণ করতে পারি । কিন্তু আপনার উল্লেখিত ফেরাউনী ঈদ-টাকে কোনক্রমেই ইসলামীকরণ করা সম্ভব নয় ।
আসুন আমরা সবাই বিশ্বব্যাপী ইসলামী নববর্ষ পালন করি । কারণ এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরীসীম । আমরা কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ইসলামী নববর্ষ পালন করছি । এবার আমরা ১৫ অক্টোবর ২০১৫ খৃস্টাব্দ মোতাবেক ১ লা মহররম ১৪৩৭ হিজরী তারিখ ইসলামী নববর্ষ পালন করবো । আশা করি আপনারাও আমাদরে সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে নিজেদের ইমান ও আমলকে সুদৃঢ় করার পাশাপাশি দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবী হাসিল করবেন । বিস্তারিত জানার জন্য আমার এই লেখাটা পড়ুন : http://www.today-bd.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/63998#.VSySy_D4bCA
https://www.facebook.com/notes/473053136176345/
https://www.facebook.com/notes/mohammad-fakhrul-islam/হিন্দুয়ানী-শিরকী-কুফরী-শালীনতাবর্জিত-ও-ঈমানবিধ্বংষী-বাংলা-নববর্ষ-পালন-করা-বাদ-দি/473053136176345?hc_location=ufi
সৌদি আরব ওহাবী মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় এবং আমরা ওহাবী মতবাদপুষ্ট আলেমদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকায় এই বরকতময় উৎসব পালন করছি না । কিন্তু আশার কথা হলো সারা বাংলাদেশে কম করে হলেও ১৫ টি জেলায় আমরা বা আমাদের মতো কিছু লোক পালন করে যাচ্ছে । ইনশাআল্লাহ এক সময় এটা জাতীয় উৎসবে পরিনত হবে ।
আল্লাহ ! আপনি আমাদের উপর দয়া করে এসব থেকে আমাদেরকে ও আমাদের পরিবার ও বংশধরদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত হিফাজত করুন !
মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া এখনও অর্থডোক্স পেট্রিয়ার্ক এর প্রধান অফিস। তাই এই উৎসব সেই দেশে উদযাপিত হয়।
জাপানি কাঁচা মাছ কিন্তু বেশ সুস্বাদু হয়।
আমিন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন