অন্যরকম অনুভূতি ৩/৩
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:৫৮:৫৩ সন্ধ্যা
প্রথম পর্ব-Click this link
দ্বিতীয় পর্ব-Click this link
কিছু দিন আগে অবশ্য আব্বু আম্মু আমার চাহিদা সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ বললাম মাদরাসার ছাত্রী হলে নিম্নে আলিম কমপ্লিট, স্কুলের হলে এইচ এস সি, ধার্মীকতার বিষয়টিতো আমার বলার প্রয়োজন নেই।
পক্ষখানিক পর আব্বু বললেনঃ দেখ বাবা, সবদিক মিলাতে পারলেও শিক্ষা ও ধার্মীকতার দিকটি মেলাতে পারলাম না, আশপাশে অনেক খোজ নিয়েছি, ভালো মেয়েরা মেট্রিক পর্যন্ত ও যেতে পারে না, এইট নাইন থাকতেই বিয়ে হয়ে যায়, এই মেয়েটি আলহামদুলিল্লাহ সবদিক থেকে ভালো, কিন্তু এস এস সি পর্যন্তই লিখা পড়া। বললাম আপনাদের আগ্রহ থাকলে আমার কোন আপত্তি নেই। তাই আম্মা "তোর পছন্দ হয়েছে কিনা?" জিজ্ঞাস করতেই বললাম ঠিক আছে মা। আম্মা ভিতরের দিকে ফিরে গেলেন।
একটু পরেই আব্বু মামা নানা ও মেয়েটির বাবা ফিরে আসলেন। আব্বু আম্মার সাথে একটু কথা বলেই সামনে এসে বললেনঃ আলহামদু লিল্লাহ মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। আমার ছেলের জন্য এটাই প্রথম দেখা কোন মেয়ে। মেয়ের বাবা জানালেনঃ আমার মেয়েকেও এ পর্যন্ত কাউকে দেখাই নাই, আপনার ছেলেই প্রথম।
মামা বললেনঃ মোহরে ফাতেমীতে বিয়ে হলে ভালো হয়, মেয়েটির বাবা জানতে চাইলেন বর্তমান বাজার হিসাবে কত টাকা হয়? মামা বললেন ৮৫হাজার টাকার মত। মেয়েটির বাবা কেমন যেন থমকে গেলেন, কিন্তু কিছু বলতেও পারছেন না, কারণ ইমাম সাহেব এখানে, মামাও একজন আলেম। তাছাড়া আমিও পাঞ্জাবী পাগড়ী পরাই ছিলাম। উনার নিরবতা দেখে আমি মামাকে চুপে চুপে বললামঃ মামা উত্তম স্বর্ণ রূপার মূল্য হিসাব করলে ১লক্ষ টাকা হবে, বলুন মোহরে ফাতেমী ১লক্ষ টাকা নির্ধারণ করতে চাই। মেয়েটির বাবা তাতে সায় দিলেন। দিনটি ছিল মঙ্গলবার, শুক্রবারে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ হল।
উল্লেখ্য যে মেয়েটির বাবা একজন মুক্তি যোদ্ধা ও সত্তরের দশকে এইচ এস সি পাশ করে ছিলেন, তাবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্তের কারণে যথেষ্ট ধার্মীক। বর্তমানে ছোটখাট ব্যবসায়ী।
আব্বু বললেনঃ আমরা ৫/৭ জন এসে আপনার মেয়েকে নিয়ে যাব, যদি আপনার অনুমতি পাই। মেয়ের বাবা বললেন আপনার যত খুশি নিয়ে আসবেন, আলহামদু লিল্লাহ আমার তাওফীক আছে, আমাকে শুধু সংখ্যাটা জানালেই হবে। আব্বু পরামর্শ করে পরে জানাবেন বলে বিদায় নিলেন। আমি ওখান থেকে কর্মস্থলেই চলে গেলাম।
বুধবারে মেয়ের মামা, আমার মামা ও আব্বু গিয়ে প্রয়োজনীয় কাপড় ও কসমেটিক আইটেম কিনে নিলেন। বৃহঃপতি বারে জানালেন আমরা ত্রিশজন আসবো। মেয়ের বাবা বললেন মাত্র ত্রিশজন কেন? আপনার আত্মীয়দেরকে মানাতে পারবেন তো! হ্যাঁ পারবো। মেয়েদের বাড়ীতে যেহেতু খাওয়ার আয়োজন শরীয়ত অনুমোদন করে না, তাই ত্রিশজনও আমার কাছে অনেক বেশী মনে হচ্ছে। মেয়ের বাবা বললেন আমার পক্ষ থেকে বলছি, আপনি অন্তত একশ লোক নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বু ত্রিশজনের উপরই অটল রইলেন।
বৃহঃপতিবার যথা নিয়মে বাড়ীতে গেলাম। গিয়ে তো হতভাগ! একি? আমার নানা মস্ত বড় এক গরু নিয়ে হাজির, বড় নাতীর বিবাহ বলে কথা। মামা মামি, নানা নানী, খালাম্মা, খালাতো মামাতো ভাই বোন সবাই হাজির, কিন্তু আমার অনুভুতিতে যেন জং পড়েছে, তাই এইমাত্র বাড়ীতে এলাম।
বাড়ীর আশপাশ বন্যার পানিতে থৈথৈ করছে। বৃষ্টিও হচ্ছে প্রচুর, কিভাবে সবকাজ সামাল দিবো, ভাবতে থাকলাম। কিন্তু আমার মামা আব্বু ও ছোট ভাই মিলে যে সব কাজ সেরে ফেলেছে, আমি জানতাম না। এশার নামাযের পর চাচাতো খালাতো মামাতো ভাইদের নিয়ে বড় প্লেটে বিরিয়ানী খেলাম। কোনমতে রাতটা কাটালাম। ঘুম কি হয়? শুধুই টেনশান, ছিলাম কোন জগতে? আছি কোথায়? কাল থেকে আবার নতুন জীবন শুরু করতে হবে। পারবো কি মা বাবা ভাই বোন আত্মীয়দের নিয়ে আগের মত একই মায়ার বন্ধনে থাকতে? কিভাবে দাম্পত্ত জীবন সামলাবো? মেয়েটি যদি মায়ের অবাধ্য হয়, তখন আমার কি হবে? আশপাশের পরিবারগুলোর দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম, তারা বৌ নিয়ে কেমন সংসার করছে, কেউ শান্তিতে, কেই আবার অনলে জ্বলছে, আমার জানি কেমন হয়? এভাবে আরো কত চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভোর রাত্রে একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
সকালে পরিপাটি ও যাওয়ার প্রস্তুতী নিতে লাগলাম। পুকুরে গিয়ে ইচ্ছেমত গোসল করলাম। ঘরে এসে দেখি কত কান্ড। আশপাশের ভাবীরা দূর থেকে কত হাসি, নিজের গোসল নিজেই করলো, আমাদের হাদিয়া থেকে মাহরূম করল। আমরা অন্তত দূর থেকে হলেও সাহায্য করতাম। খবর পাঠিয়ে বললামঃ কতটাকা হাদিয়া চান? এমাউন্ডটা বললেই পেইড করে দিব। কিন্তু না কোন ভাবিই সাহস করে নাই। যাক বাচা গেল।
ঠিক ১২টার সময় বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। জুম'আ ওখানে গিয়েই পড়ার ইচ্ছা, বের হওয়ার সময় আম্ম এক গ্লাস দুধ দিলেন, বললাম এখন দুধ খাবো কেন? নানী বললেন মা দিয়েছে খেয়ে নে। দুধ খেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলাম। কেন যেন মনে হচ্ছে চিরতরে মায়ের বুক থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে বের হলাম। বন্যার কারনে কিছু পথ ট্রলারে করে গিয়ে গাড়িতে উঠলাম। আযানের পরপরই নতুনদের বাড়ীর মসজিদে পৌছলাম। বড় মামা জুমআর নামায পড়ালেন, মেঝ মামা বিয়ে পড়ালেন। ওদের নির্ধারিত ইমামকে ঠিকই টাকা পরিশোধ করলাম। মসজিদে থাকতেই কেমন যেন কাঁদতে মন চাচ্ছে, তাই প্রায় আধা ঘন্টা আকাশের সাথী হয়ে কাঁদলাম, হঠাৎ করে যেন আকাশের কান্নাও বেড়ে গেল। সবাই আমাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কান্না যেন থামছেই না।
অতঃপর বাড়িতে যাওয়ার জন্য মসজিদ থেকে বের হলাম। আমার ছোট শালা ছাতা নিয়ে আমার পাশাপাশি চলছিল। একটি কাছারী ঘরের মধ্যেই খাবারের আয়োজন। এই বৃষ্টিতে আয়োজনের কোন কমতি ছিল না। আমি নানাশশুর ও ছোট শালা একসাথে এক প্লেটে হালকা খেয়ে নিলাম। বিকেলে বৃষ্টি কমলো। আমরাও বাড়ীর দিকে পা বাড়ালাম। গাড়ী থেকে নেমে আগের মতই ট্রলারে করে বাড়ীতে প্রবেশ করলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৭ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মায়ের গলা জড়িয়ে কাদলেন,আবারও কাদলেন...ভাই এত কান্দেন ক্যান ?? বিবাহ হল সুখের বিষয়....গলা জড়িয়ে হাসবেন,তা না করে কাদলেন....আজব জিনিস !!
কিন্তু বাস্তবতা সেদিন চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল, আসল সুখতো মায়ের আচল ধরে বেচে থাকা, যেখানে মায়ের মায়ের শাষন ও ভালোবাসা নির্বিঘ্নে চলতে থাকে। কিন্তু মায়ের আঁচল ছেড়ে পরকে আপন করে সুথ খোজা যে কত কঠিন বিয়ের পরেই টের পাবেন। পুটির মায়ের আশায় তো অনেক গদ্য রচনা করলেন, যেদিন পুটির মাকে ঘরে তুলবেন, ঐ দিন থেকে বাস করবেন ভিন্ন এক জগতে। যে জগৎ হবে মায়ের ভালোবাসা ও ভাইবোনের স্নেহ মায়া থেকে অনেক দূর। তাই তো মনের অজান্তে অনেক কাঁদলাম। ধন্যবাদ।
আর জানতে চাই আপনার ইয়ে এই লেখাগুলো পড়ে কিনা?
জাযাকাল্লাহু খাইর!
কুইজের ব্যাপারে আপনাদের তিন বন্ধুর মনোকষ্ট নেই তো আর?
কিন্তু আমি তো টেনশনে পড়ে গেলাম - - -।
ভাইয়া আপনার বর্ণনা আবেগ আর ভালবাসায় পূর্ন । খুব ভাল হয়েছে ভাইয়া ।
আল্লাহ আপনাদের জীবনকে সুন্দর ও সুখে পরিপূর্ণ রাখুন । আমীন ।
যাই হোক শুরুর দিন কেঁদেছেন এখন হাসি খুশি আছেনতো?
দুধ খেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলাম। কেন যেন মনে হচ্ছে চিরতরে মায়ের বুক থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি......।
এতো সুন্দর গভীর উপলব্ধি আপনার বিয়ের আগেই ছিল যা খুবই মর্মস্পর্শী।
ভীষণ অনুভূতিমাখা চমৎকার একটি লিখা। দারুণ উপভোগ্য ও অসাধারণ আংকেলজ্বি।
অনেক অনেক দোয়া রইলো আপনাদের সকলের জন্য।
আমিও,, বলবনা।
সবাই জেনে যাবে।
চালিয়ে জান,,
ভালো লাগলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন