অন্যরকম অনুভূতি ১/৩
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৪ এপ্রিল, ২০১৫, ০৮:১৩:১৮ রাত
২০০৯ জুলাই মাসের প্রথম দিকের কোন একদিন, রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি আমার কর্মস্থলে পরিচালকের সাথে অফিসে বসে প্রতিষ্ঠানিক আলোচনায় ব্যস্ত। বৃষ্টি থাকায় ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। আগষ্ট মাসে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা, তাই সিলেবাস ও পড়াশুনার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম।
পরিচালককে এই মাত্র বিদায় দিয়ে জানালার গ্রীল ধরে বাহিরের প্রকৃতি দেখছিলাম, মনে মনে ভাবছিলাম ২৫তো পার করছি, জীবনের ২৫টি বর্ষাও পার করলাম, আর কতকাল একা একা বর্ষাকাল দেখবো।
এমন সময় আব্বু ফোন দিলেনঃ সালাম পর্ব শেষ হতে আব্বু বললেন, পরিচালকের মোবাইল নাম্বারটা দাও। মনে হটাৎ ধাক্কা লাগল, আব্বু কেন এই মুহুর্তে পরিচালকের নাম্বার চাইল। চিন্তায় ডুবতে শুরু করলাম, আব্বু আবারও বললেনঃ মোবাইল নাম্বার কত? হুশ ফিরে পেয়ে বললাম ০১৭১৫৪৪....৫৫।
আব্বু বললেনঃ এলাকায় খুব বৃষ্টি হচ্ছে, মনে হয় বন্যা হবে, পারলে বৃহঃবারে বাড়িতে আসবি। ইনশা-আল্লাহ আসবো বলে ফোন রাখলাম।
১০মিনিট পরেই পরিচালক সাহেব আবার অফিসে আসলেন. বললেনঃ .......ভাই, আপনার সাথে একটু ব্যক্তিগত কথা বলতে চাই, জ্বি বলুন। কোন প্রকার চালাকি ছাড়া সরাসরি উত্তর চাই, রাজি আছেন তো! মনে মনে ভাবছিলাম কোন অন্যায় করিনি তো! আবার চাকুরি চলে যাচ্ছে নাতো!
পাঠকগণ অবশ্যই জানেন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চাকুরী রাত্রে আছে তো সকালে নেই, আবার সকালে আছে তো রাত্রে নেই। তাই একটু চিন্তা করেই বললামঃ জ্বি ইনশা-আল্লাহ, বলেনঃ কি জানতে চান।
আপনার কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে কিনা? বা কোন মেয়েকে বিবাহর নির্দিষ্ট করেছেন কিনা? ও.. তাহলে এই প্রশ্ন? আমি তো ভেবেছিলাম না জানি কি অন্যায় করেছি! আচ্ছা যাক. আমি কোন মেয়েকে এ পর্যন্ত ভালোবাসিনি, আমাকেও কোন মেয়ে ভালোবাসেনি।
অতঃপর উনি বললেনঃ হঠাৎ প্রশ্ন করার কারণ হল- আপনার আব্বাজান ফোন করে আপনার কাছথেকে এ বিষয়টি জানতে চেয়েছেন, তাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম। ভালই হল, উত্তর পেয়ে আপনার মা বাবা অনেক খুশি হবেন, এখন উনারা নিজেদের পছন্দমত মেয়ে দেখতে পারবেন। : ও তাহলে তারা বিবাহের জন্য লেগে পড়েছে তাই না! জ্বি হ্যা।
আমার আব্বু আলেম মানুষ, পাশের গ্রামের মসজিদে জুমার খতিব ছিলেন, নামাজের পর মসজিদওয়ালা বাড়িতেই দুপুরের খাবার খেতেন, বিকেলে বাড়িতে আসতেন। ঐ বাড়িতে আব্বুর এক চাচাতো ভাগীনী বিয়ে দিয়েছেন প্রায় ২০বছর আগে। ভাগীনীর ঘরেই সেই দিনের খাবার ছিল।
খাবার পর পানের পিক ফেলানের জন্য দরজার সামনে আসতেই সামনের ঘরের মেয়ের চোখে চোখ পড়ে গেল, যে কিনা সবে মাত্র গোসল সেরে কাপড় শুকাতে দিচ্ছিলেন। আব্বু তার ভাগিনীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ঐ ঘরের মেয়েটি কে? লিখাপড়া কতটুকু? ভাই বোন কয়জন? কে কি করে? আদব আখলাক কেমন? নামায রোজা ও পর্দা মেনে চলে কিনা? মাথার চুল লম্বা কিনা? হাত পায়ের নখ লম্বারাখা স্টইলিস্ট নয় তো? মেয়েটির বাবা সম্পর্কে মুসল্লি হিসেবে আব্বু আগেই জানতেন।
খুটিনাটি বিষয়াবলী জানার পর বাড়িতে এসে আম্মাকে জানালেনঃ মনে মনে যা খুজেছি আজ তা আজ পেয়েছি, আর দেরী করা যাবে না, যত দ্রুত সম্ভব কাজটি সেরে ফেলতে হবে।
আম্মা বললেনঃ আগে মেয়েটির বাবার সাথে কথা বলে মতামত নিন। তারপর সবাইকে জানাবো, সম্মতি পেলে আমরা গিয়ে মেয়েটিকে দেখে আসবো। একদিন পরেই আব্বু মেয়েটির বাবাকে ফোন দিলেন, বাড়ির পার্শ্বের বাজারে দেখা করতে বললেন।
ইমাম সাহেবের ফোন পেয়ে উনি তাড়াতাড়ি বাজারে এলেন। চা-নাস্তা পর্ব শেষ করে আব্বু সরাসরি বললেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে একটি প্রাইভেট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। বয়স -----, শিক্ষাগত যোগ্যতা-----, আপনার মেয়ে সম্পর্কে আমি খোজখবর নিয়েছি, আপনিও আমাদের সম্পর্কে খোজখবর নেন, মেয়ের মায়ের সাথে ও আপনার আত্মীয়দের সাথে আলোচনা করুন। যদি আপনাদের মন সায়দেয় তাহলে পরবর্তী আলোচনা।
মেয়েটির বাবা বললেনঃ আমার দৃষ্টিতে দুনিয়াতে দুই প্রকারের মানুষ সম্মানিত. প্রথমত শিক্ষক-যারা সত্যিকারের মানুষ গড়ার কারিগর। দ্বিতীয়ত ডাক্তার-যারা মানুষের সেবায় নিয়োজিত। আপনার ছেলে একজন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, তাই আমার আগ্রহের কমতি নেই, তবুও আমি বাড়িতে পরামর্শ করে দুদিন পরে বিস্তারীত জানাবো।
চলবে......
বিষয়: বিবিধ
১২৮৭ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাইয়া সাথে আছি চালিয়ে যান
আংকেল বিষয়টি জেনে খুবিই ভালো লাগলো যে আপনি আপনার বাবা মায়ের নির্বাচন ও পছন্দে জীবনের পথ চলার ক্ষেত্রে এতটা নির্ভরশীল ছিলেন মাশাআল্লাহ্।
তাড়াতাড়ি পরের পোষ্ট নিয়ে আসেন আংকেল। অপেক্ষায় রইলাম।
ইনশা-আল্লাহ তিন পর্বে পুরো বিষয়টি শেষ করার চেষ্টা করবো। দু-একদিনের মধ্যেই দ্বিতীয় পর্ব আসবে ইন শা-আল্লাহ।
আপনি কেন এতো খুশি হলেন???? বাবা মায়ের পছন্দের চাইতে নিজের পছন্দ অনেক বেশি গুরুত্বের দাবী রাখে! আমি সুবোধ বালক নই, বাবা মা কাওকে ধরে নিয়ে আসলেই করে ফেলব, হা বাবা মা যদি আমার জন্য উত্তম পাত্রীই বেছে নেন, তাহলে ভিন্ন কথা। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলের পছন্দ মন মানুসিকতা রুচি বাবার সাথে যায় না। তাই ছেলের পছন্দের অগ্রাধিকার দিতেই হবে, এটা ইসলামী বিয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
অবশ্যই মা বাবা যদি টাকার লোভে ছেলেকে ভাসিয়ে দিয়ে চায়, তখন ভিন্ন কথা। ধন্যবাদ @ সাকা ভাই
ভাল লাগল, আপনার কাহীনি দেখাযাক কিভাবে একজন থেকে দুইজন হলেন ।
এখন তো দুই থেকে তিনজন হয়ে চার জনের অপেক্ষায় - - - - আছেন তাই না ভাইয়া ।
ইস শা-আল্লাহ তিন পর্বে বিস্তারীত জানানো হবে। কে বলল চার জনের অপেক্ষায়
বাচ্ছাটি জানে তার বাবার কাছে টাকা নেই, তার মা বলেছেও, আব্বু, কাল কিনে দেব বুট। কিন্তু জেনেও বাচ্ছাটি বারবার জ্বালাতন করছে মা কে বাবাকে বুট কিনে দেয়ার জন্য।
'পনি' ও তাই! খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বিয়ের গল্প শুনতে বেশ লাগে তাই না?
কাছে নাই, অতএব আমি শান্তিবাদী, এখন আমার হাত নয়, মুখ কথা বলে!
রিমঝিম বর্ষায় জীবনসংগিনীর খোঁজানুভূতির পোস্ট পড়তে ভীশন ভালো লাগলো! আশাকরি দ্রুত পরের পর্বের সাক্ষাত পাব!
শুকরিয়া! জাযাকাল্লাহ খাইর!
পরের পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি আগ্রহ নিয়েই .....
ফাল্গুনী কুকিলের কুহুকুহু কলতানে, খরস্রোতা নদীন বহতা গুঞ্জরণে, ভোরের ঘাসে শিশির ভেজা প্রান্তরে, পদ্মায় মোহনায় সোনালী ইলিশ আহরণে কত যে মুহুর্ত একাএকা কেটেছি আপু। এজন্যই তো প্রিয় মানুষটির সন্ধানে এক অপুর্ব অনুভূতি কাজ করছিল। ইন শা আল্লাহ দ্রুত দ্বিতীয় পর্ব আসছে। বারাকিল্লাহ ফিক।
মিথ্যা বলার আর জায়গা পান না!!!! যাক, আপনার পুরনো ইয়ে যদি ব্লগে থাকতো, নিশ্চয় আপনার মুখোশ উন্মোচন করে দিতো!!! এমন ভাবে সাধু সাজতেছেন যে, আল্লাহ্ না করুন, জান্নাতের মা যদি কখনো অক্কা পায়, তাহলে এই ব্লগেরই কোন ললনা বিনা বাক্যে জান্নাতের মায়ের দায়িত্ব নিয়ে নেবে!
বিয়ের জন্য মানুষ এতো টাডায়ে থাকে, আপনাকে দেখার আগে এরকমটা আর কারও ক্ষেত্রে হতে দেখি নি!!!! পাজি পাজি পাজি পাজি পাজি পাজি!!!!!
তবে মেয়ের বাবাকে কনভিন্স করার জন্যই শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেয়া? নয়ত কি! মেয়ের বাবাকে পটালেন, বিয়ে শেষ, শিক্ষকতা পেশাও শেষ!!!! তা না হলে এই সুন্দর উত্তম পেশা ছেড়ে বিদেশ কি করছেন????
বুইড়া মনে আবার বুঝি রঙ ধরেছে? বিয়ে নিয়ে পোস্ট করা শুরু করলেন!
আমি কিন্তু আছি প্রতিনিয়ত আপনার মুখোশ উন্মোচনের জন্য।
দায়িত্বশীল পিতা-মাতার পছন্দে সংগঠিত শাদি মোবারক হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই!
আপনাদের দাম্পত্য জীবন অনাবিল সুখের বন্যায় সব সময় প্লাবিত থাকুক-এই দোয়া আল্লাহর কাছে!!
আপনার দোয়ার সাথে বলছি "আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন"।
ইন শা আল্লাহ্ পরের গুলাও পড়ব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন