আমার প্রথম আংটি উপহার দেয়া
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৮ মার্চ, ২০১৫, ১১:০৭:২০ রাত
২০০৫ সালের কথা, খাঘড়াছড়ি জেলাধীন রামগড় সোনাইপুল এলাকায় বলিপাড়া একটি গ্রাম। আমার এক চাচার বাড়ি। আব্বুর খালাতো ভাই, চাচা হলেও বয়সে প্রায় আমার সমান। পড়া লিখাও একই সাথে, প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের গ্রামের প্রতিষ্ঠানে একসাথে (কাকা এক বাড়িতে লজিং ছিলেন)। মাধ্যমিক দুজন দুই প্রতিষ্ঠানে, উচ্চমাধ্যমিক আবার একসাথে ফেনী জেলার স্বনামধন্য এক প্রতিষ্ঠানে। বন্ধুর মতই চলাফেরা উঠাবসা ছিল। সমাপনি শিক্ষা পৃথক প্রতিষ্ঠানে হয়েছিল।
চাচা একদিন ফোন দিলেন, উনার বোনের বিবাহ (মানে আমার ফুফু)। মনে মনে খুব আনন্দ লাগলো এই জন্য যে, বহুদিন পর আবার সেই পাহাড়ী উচুনিচু চা বাগান এলাকা ঘুরবো। যদিও ইতিমধ্যে দু'বার ঘুরে এসেছি।
দিন তারিখ ঠিক হলো, আমরা পাঁচ বন্ধু কাঁচাফুল ও ডিনার সেট নিয়ে ঠিক সময়ে তাদের বাড়ি পৌছলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে গোপনে একটি আংটি নিয়ে গেলাম, যেহেতু বন্ধুদের চেয়ে আমার সম্পর্কটা একটু বেশী। যখন স্বণের ভরি ৬হাজার টাকা, তখন এই আংটির দাম দিয়েছি মাত্র ৬শত টাকা। ছাত্র জিবনে এটাও আমার জন্য বড় এমাউন্ট ছিলো।
যাগগে বিয়েতে অনেক আনন্দ করলাম। দুদিন সেখানে ছিলাম, পরের দিন বরের বাড়িতে গেলাম। বিশাল এক টিলার উপর ফুফাদের বাড়ী। উঠছি আর নামছি, জায়গাটির নাম সম্ভবত নাকাপা (রামগড় থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে) উপরে উঠে মনে হতে লাগলো পাহাড়টি মনে হয় কাঁপছে। খুব ভয় পেতে লাগলাম। নাকাপা আবার কাঁপে কেমন করে। নিচে নেমে এদিক সেদিক গীরি পথ, উচু নিচু অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। পাহাড়িদের জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য নিলাম। পাহাড়ি মহিলারা সারাদিন বাঙ্গালীদের জমিতে কাজ করে, ধান লাগায়, জুম চাষ করে, জঙ্গল পরিস্কার করে, বাগানের ফলমুল সংগ্রহ করে ইত্যাদি ইত্যাদি, সারাদিনের মজুরি মাত্র ৫০টাকা। পুরুষের চেয়ে অর্ধেক। বাঙ্গালী ছেলেরা আবার কাজের শেষে তাদের সাথে অনৈতিক কাজটিও করতে ছাড়ে না। তারাও এটাকে আশির্বাদ হিসাবে গ্রহন করে, কারণ আরেকদিন কাজের জন্য ডাকা হবে তাই। তাদের স্বামীরাতো শান্তিবাহিনীতে, তাই তারা বছরের পর বছর স্বামী থেকে দূরে।
দু'দিন ভালই কাটলো, আসার সময় নয়টিলা মাজারে নামলাম, কিছু তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। প্রথমেই সিঁডি গণনা আরম্ভ করলাম, প্রায় ৮শত সিড়ি বেয়ে টিলার একেবারে ছুড়ায় পৌছলাম। সেখানে দুটি মাজার রয়েছে, একটি প্রায় ৩শত বছর আগের, সৌদি আরব থেকে আসা একজন ইসলাম প্রচারকের, অপরটি তার খাদেমের। একটু দূরে গিয়ে অনেক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম আগন্তুকদের অবস্থা দেখার জন্য। অবলোকন করলাম মুসলিম হিন্দু মগ চাকমাসহ বিভিন্ন ধর্মের মহিলারা মাজারে আসছে আর মুসলিম মহিলাদের দিকে চেয়ে চেয়ে নামাযে দাড়াচ্ছে, সেজদা করছে। মুসলিমরাতো নিজের কাজ নিজে করছে, অন্য ধর্মের মহিলারা একটু পর পর এদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে একটু আদটু করছে। মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালাচ্ছে, টাকা পয়সা ঢালছে। একটি পানির ড্রাম থেকে বিভিন্ন নিয়্যতে পানি পান করছে, কেউ বোতল ভরে পানি নিচ্ছে। ছেলে হওয়ার জন্য, মেয়ে বিবাহ হওয়ার জন্য মামলায় জয়ী হওয়ার জন্য ইত্যাদি।
আমি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ভয় পেতে লাগলাম, যদি আল্লাহ তায়ালার গজব এখানে পড়ে যায় আমিও রেহাই পাব না। তাড়াতাড়ি নিছের পথ ধরলাম। আমার দিকে মাজার ব্যবসায়ীদের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে, কাউকে কিছু বলি কিনা। আমি তো একা, তাই কাউকে কিছু বললাম না। নিচে এসে একজনকে জিজ্ঞেস করে পুরোপুরি তথ্য নিলাম। এতগুলো সিড়ি কে নির্মান করলো? জানতে পারলাম ফেনীর সাবেক গড়ফাদার জয়নাল হাজারী। ব্যবস্থাপনায় কারা? এলাকার সন্ত্রাসী ও মোড়লরা। বছরে একবার ওরস হয়, লাখো জনতা উপস্থিত হয়, যার যার মত করে রাত কাটায়, বাবার দরবারে ঐ রাতে অনেক নিঃসন্তান মহিলারা অন্ধকারে নিজের জন্য সন্তান চায়, এসুযোগে বখাটেদের কার্যসিদ্ধির সুযোগ তৈরী হয়, অনেক বখাটে সে দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে। ২০০৫ সালে জে,এম,বি হামলার পর থেকে নিয়মিত পুলিশি পাহারায় এগুলো হয়। এসব কিছু জেনে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করলাম।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম হায়রে, এ কিনা মুসলমানদের দেশ।
মনের ব্যথা নিয়ে ফিরে এলাম, পরে এক সময় জানতে পারলাম আমার দেওয়া উপহারটি স্বর্ণের নয়, ছিল পিতলের। মনে হচ্ছে আসমান থেকে পড়লাম। মুসলমানদের দেশে এত ধোকাবাজী। এ দেশে কি করে আল্লাহর রহমত আসবে, যেখানে ঈমান বিক্রির পসরা সাজিয়ে বসে আছে ভন্ড পীর ও মাযার ব্যবসায়ীরা, যেখানে সাধারণ দোকানদার থেকে বড় বড় কোম্পানীগুলো ধোকাবাজি করে চলে। মিথ্যা এ্যড তৈরী করে মিডিয়াতে প্রচারণা চালায় দিনরাত। যেখানে দেশের কর্ণধাররা আজ দুর্নীতিতে ডুবে আছে। সে দেশে জন্ম হওয়াটা যেন বড় অপরাধ মনে হচ্ছে।
(সাদিয়া মুকিম আপুর আজকের পোষ্টটি পড়ে এই পোষ্টটি লিখলাম)
বিষয়: বিবিধ
২৯৯৪ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিদ্যমান এই অসুস্থ মানসিক চিন্তা ও ভঙ্গুর ঈমাণী অবস্থায় দেশে কি করে আল্লাহর রহমত আসবে এ প্রশ্ন এবং অন্তহীন জিজ্ঞাসা আজ আপনার মত সকল বিবেকবান মানুষের!!
সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মাজারে যারা যায় তারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী নহে.....! ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করতে হলে সর্বপ্রথম করতে হবে কোরআন ও সহীহ্ হাদীসের অনুসরণ। মাজার নামক কবর পুজা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ রূপে হারাম।
কিন্তু মানুষ নামের কিছু শয়তান মাজারকে ইসলাম বানিয়ে ব্যবসা খুলেছে বাংলাদেশের অলিতে গলিতে......!! এই ব্যবসা বন্ধ করতে না পারলে মুসলিম জাতী হিসেবে শুধু নামই থাকবে, মুসলিম হবার জন্য যে আকিদা দরকার তা থাকবে না।
মাজারে যা হয় তা অনুসরণ অনুকরণ করলে ইমানই থাকেনা!!!
সুতরাং সাবধান, সচেতনতা মুলক পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনি কিভাবে জানলেন, না কি মনে আবেগ আসল, আর বলে দিলেন!
অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে আসলেন। এবং অভিজ্ঞতাগুলো খুব ভয়ংকর একজন মুসলমানের জন্য।
আল্লাহর রহমত হয়ত খারাপ কাজে আসবে না, তবে তাতে আল্লাহর গজব না আসলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই, ভুলে যান কেন আল্লাহ্ কখনো কখনো মানুষ কে তার ভণ্ডামি, নষ্টামির উপর অবকাশ দিয়ে থাকেন, তাতে যদি তাদের চৈতন্যোদয় না হয়য়, তাহলে আখেরে ভয়াবহ পরিণতি নিশ্চয় ভোগ করবে।
তবে আমার বিস্ময় জাগে, যখন দেখি, মাজার গির্জা, বাবার দরবারে ইজ্জত সম্ভ্রম হানি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের মা বোনদের সেইসব জায়গায় যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি!
জায়গায় জায়গায় ধোঁকা খান, আর হাতুড়ি নিয়ে বীরত্ব , অথচ কাজের কাজ কিছুই করতে পারেন না!
আসলে ভাইয়া, অনেক দুঃখ থেকে কথাগুলো লিখেছি। পাহাড়িদেরকে আমরা ভালো ব্যবহার দেখাতে পারছিনা, এ সুযোগটা খৃষ্টান মিশনারীগুলো কাজে লাগিয়ে উপজাতিদেরকে খৃষ্টান বানাচ্ছে। মুসলমান নিজেরদের তাহজিব তামাদ্দুন সব হারিয়ে আজ নিঃসহ হয়ে পড়েছে। তাইতো আজ আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে অনেক দূরে। হত্যা গুম মারামারি কাটাকাটি, জালিম শাহী নিযুক্ত হওয়া সবই আজ আমাদের হাতের ফসল।
এদিকে মাজার ব্যাপারিরা আজ ঈমান ধ্বংশে ব্যস্ত। ভোটের জন্য কান ধরতেও রাজি, উদ্দেশ্য একটাই রাষ্টীয় ক্ষমতা দখল। চতুর্দিক যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। এ মুহুর্তে মুসলমানদের তো জেগে উঠতেই হবে।
আলহামদু লিল্লাহ আমি ঈমানদার, দুনিয়াতে ঈমানদারগণ ধোঁকা খাবে এটাইতো আমাদের শিক্ষা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। মাঝে মাঝে অনেক ফাঝলামো করি বলে ক্ষমা করবেন। এটাই প্রত্যাশা।
খাগড়াছড়ি নামটি শুনলেই এক বুনো প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য চোখে ভেসে আসে! আজ ভাবীর সাথে কথা বলে জানলাম ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন যেতে ১২-১৫ ঘন্টা লাগে! শুনে তো টাশকি খেলাম! এই সময়ে ইটালি থেকে অনায়াসে বাংলাদেশে চলে যাওয়া যায়!
প্রথম চট্রগ্রাম গিয়ে বায়োজিদ বোস্তামীর মাজারের দৃশ্য দেখছিলাম! মানুষের ঈমান কোন পর্যায়ে নেমে এসেছে এটা দেখে ভয়ে ছুট দিয়েছিলাম! আর ওদিকে যেতে চাই না!
দেশে ধর্মের নামে এই প্রতরনা,লোক ঢকানো, অহরহ হচ্ছে এখানে সরকার বাধা না দিয়ে মদদ যোগায় ! আর যারা ইসলামের প্রচার আর প্রসার চায় তাদের নিয়ে জেলে ঢুকায়! আজব দেশ আমাদের!
স্বর্নের আংটিটি পিতলের এটা জেনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো!
সুন্দর উপস্থাপনায় আপানর লিখা পোস্টটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো , আরো বেশি ভালো লগেছে যখন সবশেষে আমার নাম দেখতে পেয়েছি! আলহামদুলিল্লাহ ! অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে! ভাবীকে সালাম এবং জান্নাতমনির জন্য আদর রইলো! শুকরিয়া!
যখন আল্লাহর আইনের বিপরীতে গিয়ে মনুষ্য আইন করা হয় এবং সেটার মজা ভালই নেওয়া হয় তখন কি ঈমান মজবুত হয়ে যায় ?
জ্বি আপু বায়েজিদ বোস্তামী আমিও ঘুরে এসেছি, সেখাতে কচ্ছপ এর বরকত নেওয়া হয়, শত বছরের পুরোনো কচ্ছপের শরীরে হাত ঘষে ময়লাগুলো বোতলে ভরে নিয়ে যায় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। কেই ময়লাগুলো বুকে, তলপেটে, মাথায় মাখে। কেই উপরে একটি আম গাছে লাল সুতো বাঁধে সন্তান হওয়ার জন্য। এগুলো সব শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
আপনার কথাগুলো খুব ভালো লাগলো। অনেক অনেক শুকরিয়া আপু।
ভাই আমি কি আপনার পাকা ধানে মই দিলাম না বাড়া ভাতে ছাই? আপনি সবসময় আমার সাথে শত্রুতাসুলভ আচরন করেন ক্যান এই বোন জানতে চায়! ( কান্নার ইমো)
আর হ্যা, মাজারে গিয়ে মজা পাই নি ভয় পেয়েছিলাম!
আল্লাহ তায়ালার আইনের বিপরীতে আইন তৈরী করাও কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করা। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে কোন দিনই শান্তি আসবে না। - আবু জান্নাত -একমত!
লেখাটি ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
এ তো নির্যাতন,,,,,তবে মাজারের সেই রমরমা অবস্থা এখন কমছে
মাজারের রমরমা এখনো কমে নাই ভাই। যে যেভাবে পারছে লুট করছে সাধারণ মানুষের পকেট ও ঈমান, ইজ্জত।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার পদচারনায় আমার ব্লগ ধন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন