মৌচাকে ঢিল মেরেছিলুম
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২১ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৪০:৩৩ রাত
"মৌমাছি" মহান আল্লাহ তায়ালার এক অপুর্ব সৃষ্টি। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ আর তোমার প্রভু মৌমাছি কে প্রত্যাদেশ দিলেন -'বাসা তৈরী করো পাহাড়ের মাঝে ও গাছের মধ্যে, আর তারা যে ঘর (মৌচাক) তৈরী করে তাতে| তারপর প্রত্যেক ফল থেকে খাও, তারপর প্রভুর রাস্তা অনুসরণ করো সুগম করা পথে|' তাদের পেট থেকে বেরিয়ে আসে একটি পানীয়, বিচিত্র যার বর্ণ, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি| নিঃসন্দেহে এতে নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে [সুরা অন-নাহল ১৬:৬৮-৬৯]
'মধু সকল রোগের মহৌষধ আর কুরআন সকল মানসিক রোগের মহৌষধ এজন্য আমি তোমাদের দুটো প্রতিবিধান সুপারিশ করলাম: কুরআন এবং মধু' [সহীহ বুখারী]
পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি খাদ্যের নাম করতেই চলে আসবে মধুর নাম। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে মধু তৈরির কৃতিত্ব পুরোটাই মৌমাছি নামের ছোট্ট একটা প্রাণীর। ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ, পানি, তেল ও কিছু বিশেষ ধরনের এনজাইমের সংমিশ্রণে তৈরি হয় মধু, যা আসলে মৌমাছি কয়েক ধাপে সম্পন্ন করে।
প্রথম ধাপে কর্মী মৌমাছি মাঠে গিয়ে ফুলের মধুগ্রন্থি থেকে মধু সংগ্রহ করে। এই সংগৃহীত মধু তারা তাদের দেহের বিশেষ এক থলিতে জমা রাখে। মধু সংগ্রহ শেষে তারা মৌচাকে ফিরে যায়। কর্মী মৌমাছি তাদের সংগৃহীত ফুলের মধু মৌচাকে থাকা মৌমাছির মুখে দিয়ে দেয়।
এরপর মৌচাকের এই মৌমাছিগুলো ফুলের রসের সঙ্গে তাদের শরীর থেকে বেশ কয়েক ধরনের এনজাইম যোগ করে এবং মৌচাকে এই রস জমা করে রাখে। এভাবে বেশ কিছুদিন পর জমাকৃত এই বিশেষ রস গাঢ় মধুতে রূপান্তরিত হয়।
মৌমাছিগুলো যখন মধু সংগ্রহে দূর বহুদূর চলে যায় পথ ভুলে গেলেও রানী মৌমাছির এক ধরণের বিশেষ টাওয়ার উপরের দিকে মেলে ধরার কারণে নেটওয়ার্কের মাধ্যেমে বাসার পথ খুজে পায়। যখনই কোন মৌমাছি মধু নিয়ে বাসায় আসে তখন রাণী কর্তক নির্ধারীত কিছু সৈনিক মধুগুলো চেক করে দেখে কোন নাপাক রস পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে রানী ঐ মৌমাছিটিকে নাপাক বহন করার অপরাধে কেটে দুই টুকরো করে দেয়। যারা মৌচাক সরাসরি দেখেছেন দেখবেন বাসার নিচে অনেক কাটা মৌমাছি পড়ে আছে।
ছোট কালে অনেক দুষ্ট ছিলাম বলে মধুপোকা ও বোলতা'র বাসা দেখলেই হল, যতক্ষণ না তাড়াচ্ছি, বাসা ভেঙ্গেছি, আচ্ছামত কামড় খাচ্ছি ততক্ষণ পিছুই ছাড়ছিনা। একবার মাদরাসায় যাওয়ার পথে কবরস্থানে মধুপোকার বাসায় ইচ্ছেমত ঢিল মারলাম, অতঃপর বেশ কয়েকটি কামড়, আম্মার ভয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়া হয়নি, চলে এলাম মাদরাসায়, উস্তাদগণ বলতে লাগলেন তোমার নামকি? কোন মাদরাসায় পড়, এখানে কার কাছে এলে? যন্ত্রণা ও দুঃখে আমার জিবন যায়, উনারা আমাকে নিয়ে মসকরা করছে। পরক্ষণে আয়নায় গিয়ে দেখলাম, সবার জিজ্ঞাসা তো সত্যিই, আমি নিজেকে চিনতে পারছিনা, ছুটি শেষে মামার বাড়ি গেলাম, বড়মামি (মরহুমা) আম্মাকে খবর দিলেন, আধঘন্টার ব্যবধানে আম্মা এসে হাজির, সাথে করে মধু নিয়ে এলেন। আমিতো ভয়ে শেষ, ভেবে ছিলাম মৌমাছিকে ঢিল মেরেছি বলে আম্মা আমার মধু খাওয়ার স্বাদ পূরণ করতে বুঝি মধু এনেছেন। না ব্যপারটি মোটেও এমন নয়, আম্মু একটি বেত নিয়ে আচ্ছা করে পেটালেন, জিবনের জন্য মৌমাছিকে ঢিল মারার স্বাদ মিটিয়ে দিয়ে ওয়াদা করালেন আর কখনো এমন দুষ্টামী করবো না। অতঃপর কামড়ের ক্ষতস্থানে মধু মেখে দিলেন, ২/৩ ঘন্টার মধ্যে ব্যাথা শেষ, পরদিন পুরাই সুস্থ।
বড় হয়ে যখন মধুর গুনাগুন জানলাম, নিয়মিত মধু সংগ্রহ ও পান করা আরম্ভ। খাটি মধুর তালাশে বাগেরহাট রায়েন্দা থানার সুন্দরবন রেঞ্জেও গিয়েছিলাম ২০০৭ সালে। পরদিন এক ক্লাসমেট (যিনি খুলনা শহরে এক মসজিদের ইমাম) এর সন্ধানে খুলনা গিয়ে সংগ্রহ করি কাঙ্খিত সেই মধু। ক্লাসমেট এর বাড়ী খুলানার দাকোপ থানায়, তার চাচাতো ভাইয়ের সংগ্রহ করা ১০ কেজি মধু নিয়ে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা হয়ে ঝালকাঠি গাবখান সেতু, নলছিটি, ঝালকাঠি অতঃপর বরিশাল চরমোনাই মাদরাসায় রাত কাটালাম। পরদিন সী-ট্রাকে করে ভোলা হয়ে লক্ষীপুর মজুচৌধুরীর ঘাট, অতঃপর বাসে করে বাড়ি ফেরা।
এখনো খাটি মধুর সন্ধান পেলে দূরদুরান্তে ছুটে যাই।
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৬ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি কিন্তু এখন ঐ অভ্যাস ত্যাগ করেছি, এটা ছোটকালের গল্প বুঝলেন মশাই!। আপনাকে আন্তরীক অভিনন্দন।
আরে মশাই, জেলেরা যাকে মাছ বলে ঐটি মাছ হিসাবে খাওয়া হালাল, কারণ জেলেরাই মাছ বিশেষজ্ঞ। বই পড়ে তথ্য বিদ্যার বিশেষজ্ঞ হওয়া যায়। জেলেরা অশিক্ষিত হতে পারে, কিন্তু শরীয়তে মাছ নির্ণয়ের ব্যাপারে তাদেরকে বিশেষজ্ঞের মর্যাদায় রাখা হয়েছে। খেজুর গাছের পরাগায়ন সম্পর্কিত হাদিসটি মনে আছে তো? রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন এ ব্যাপারে তোমরাই বিশেষজ্ঞ।
এইসব আপনি কিভাবে জানলেন?
মেরেছে বেশ করেছে! এতো হতচ্ছাড়া ছিলেন কেন! এইরকম খন্যাস কে মরার উপর খাঁড়ার ঘা দেয়াই উচিত ছিল। পিটুনি খাওয়ার কথা শুনে আমার যে কি ভাল লাগছে, বলে বুঝানো যাবে না!
আর কি জন্য যে এতো বেশি মধু খান, মনে করছেন বুঝি না? ছোটরা অনেক কিছুই বুঝে, ছোট বলে মুখ দিয়ে বলে শুধু। ওই যে বলে না, 'বিয়ে করিনিতো কি হয়েছে, বর যাত্রীর সাথেও কি যাই নি'! আমিতো সব বুঝি, এমনিতে কি আর খাই সুজি! আর হা, আমার জন্য এখন মধু খাওয়ায় হারাম!
বলেছিলাম না সুন্দরবন গিয়েছি, শুধু কি হাওয়া খেতে? আমি যেখানেই যাই, ওখানকার আগপিছ না জেনে চলে আসা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেছিলেন "অজ্ঞতার চিকিৎসা হল প্রশ্ন করে জেনে নেওয়া"। এই বাণীটিকে আমার সঙ্গী করে নিয়েছি, যেখানেই যাই কিছু জানার চেষ্টায় থাকি। মৌ বিশেষজ্ঞ হিসাবে মৌ-চাষীদের বুঝিয়েছি। এবার বুঝলেন জনাব?
আমার পিটুনি খাওয়া যদি আপনার ভালো লাগা হয়, এমন পিটুনির খবর আপনাকে আরো বলবো। যাতে আপনার অনেক অনেক ভালো লাগে।
মধুর মধ্যে শিফা আছে তাই মধু ও কালো জ্বিরা আমার নিত্য সঙ্গী, আপনি অন্য কিছু বুঝে সুজি, আটা, ময়দা সব খেতে পারেন।
আল্লাহ তায়ালার হালাল করা বস্তু নিজের উপর হারাম কেন করলেন? জানতে ইচ্ছুক।
সব মুখে বলা যায় না, বুঝে নিতে হয়য়।
আমিও জীবনে একবার মৌমাছির কামড় খেয়েছিলাম তবে আমার দোষে নয় কেউ একজন ঢিল ছুঁড়েছিল মৌচাকে।
এটা ছিল এক ভয়ংকর অনুভূতি...।
খাঁটি মধু খাওয়া স্বাস্থ্য, সুস্থতা আর মেধার জন্য অনেক উপকারী। মধু আমাদের নবীজিরও অনেক প্রিয় ছিল।
সুন্দর অভিজ্ঞতালব্ধ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
তাহলে আপনিও কামড় খেয়েছেন, কি যে যন্ত্রণা, মধু লাগালে তারাতারি ভালো হয়ে যায়। আমাদের ঘরে সমসময় মধু ও কালোজ্বিরা জমা রাখি। আমাদের নবীজির প্রিয় খাদ্যটি আমিও প্রিয় করে নিয়েছি। অনেক অনেক শুকরিয়া খালাম্মুনি। জাযাকিল্লাহু খাইর।
আমার বোনটির কথা আমাকে খুব ভাবায়, কখন জানি হারিয়ে যায়। আমার একমাত্র ছোট বোনটির বিয়ের সময় আমি অনেক কেঁদেছি, সবার সামনে নয়, পুকুর পাড়ে, কাউকে বুঝতে দেইনি। এখন আমার ভাগিনি রুকাইয়া প্রায় সময় মোবাইলে বলে বদ্দা মামা আন্নে ক্ই? আমার যেন কান্না আসে। যাকগে "আমার ভাইয়া" বলাতে কথাগুলো মনে পড়ে গেল। ইউরোপের কথা আরো জানতে চাই। সময় পেলেই লিখবেন। অনেক ধন্যবাদ সাইয়ারা।
মধু ও মৌমাছির জীবন! আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি!
লিখেছেন নজরুল ইসলাম টিপু
২৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৪৮:৪৬ বিকাল
আবু সাইফ ভাই। ধন্যবাদ।
মধু নাম নিয়ে অনেক লেখক অনেক লেখা লিখেছেন,
যেমনঃ
মধুর প্রেম
মধুর ভালোবাসা
মধুর শান্তনা
মধুর প্রলাপ
মধুর গুণ্জন
মধুর সংসার
মধুর কথা
এত দেখছি মধু পাগলা!
মন্তব্য করতে লগইন করুন