আমাদের জান্নাতমনি ও কিছু অভিজ্ঞতা
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৬ মার্চ, ২০১৫, ১০:৩৩:৪২ রাত
আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে তাবিজের প্রতি বড়ই অনীহা ছিল, কারণ ছোট কালে আমার গলায় ঝুলতো ডজনখানেক তাবিজ, মাঝে মধ্যে হারিয়ে যেত, আম্মার সে কি বকুনি খেতাম। সাপ্তাহের মাথায় আবার তাবিজ যোগাড় করা হত, আর আমাকে তা বহন করতে হত। কারণ আমাকে ছোট কালে জ্বিনে নাকি আছর করছিল। যাগগে ছোট কালের কথা বাদই দিলাম। বুঝ হওয়ার পর থেকে সম্পূর্ণ তাবিজ মুক্ত হলাম। একটি হাদিসে এসেছে التميمة شرك তাবিজ শিরকের অন্তর্ভূক্ত। এই হাদিসটি জানার পর তাবিজের প্রতি আমার বিদ্বেশ শুরু হল।
আমার শিক্ষকতার চার বছরে আমার ছাত্র/ছাত্রীদের বুঝাতাম তাবিজ ত্যাগ করতে। যে সকল অভিবাবকের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো তাদের ছেলেমেয়েদের তাবিজমুক্ত করে ছাড়লাম। অল্প সংখ্যক অভিবাবককে বুঝাতে অপারগও হলাম।
আমার বিয়ের পর আমার মা সহ আশপাশের মহিলারা আমার স্ত্রীকে বিভিন্ন কারণে তাবিজ লাগাতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
জান্নাতমনির জন্মের মুহুর্তে আমার আব্বু এক আলেমের তাবিজ নিয়ে আসেন, লাগাতে যথাসম্ভব চেষ্টা করেও আমার অটলতার কারনে ব্যর্থ হন। আমার শাশুরী ও স্ত্রী অটল ছিলেন যে, নো ডাক্তার, নো তাবিজ। একমাত্র আল্লাহর রহমতই ভরসা। শুধুমাত্র পানি পড়া দিয়েছিলাম যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অর্থাৎ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে রাসূল (স.) ও সাহাবায়ে কেরামগণ পানি পড়া দিয়েছিলেন। তাই আমিও শুধু পানি পড়ার সুন্নাতের উপর অটল ছিলাম, আলহামদু লিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করেছেন।
জান্নাতের জন্মের পর হাতে পায়ে তাগা (একপ্রকারের কালো সুতা) লাগানো ও তাবিজ লাগানোর জন্য যারপরনাই চেষ্টা করা হয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ তাবিজ মুক্তই রাখতে পেরেছি। এখন আলহামদু লিল্লাহ কোন আছর কছর নেই।
ক'দিন পর শুরু হল হামের টিকা, পোলিও ইত্যাদি খাওয়ানোর জন্য চাপাচাপি। আমি সম্পূর্ণ অমত করলাম। রোগ হলেই তো মেডিসিন ব্যবহার, না হলে নয়। তা ছাড়া একজন দ্বীনদার হোমিও প্যাথি ডাক্তার আমায় সম্পর্ণরূপে নিষেধ করেছিলেন টিকা বা পোলিও ব্যবহার না করতে। ডাঃ সাহেব বলেছেন এতে ভবিষ্যতে ঝুকি বাড়বে। ক্ষতি ছাড়া লাভের কিছুই নাই। ডাক্তার সাহেব তার ছেলেমেয়ে ও আত্মীয় স্বজনদের সাধ্যানুযায়ী এ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। আমিও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে লাগলাম। এদিকে গোপনে আমার শিক্ষিত চাচীর পরামর্শে ২টি ইনজেকশন দিয়ে দিলো। আমি জেনে তো তেলে বেগুনে গরম। খবরদার আর একটিও যেন না দেওয়া হয়। ঐ বছরই বরিশালে একই দিনে হামের টিকার কারণে ১০জন শিশু মারা গিয়েছিল। এটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসাবে কাজ করল। সেদিন থেকে আর কখনো আমাদের পরিবারে টিকাটুকার নাম নেই।
আলহামদু লিল্লাহ জান্নাত এখন সাড়ে চার বছরে পা রাখছে। অক্টোবরে আমি ছুটিতে যাওয়ার সময় কালো ও গোলাপী রঙ্গের একটি স্কুল ব্যাগ নিয়েছিলাম। জান্নাত সেটি নিয়ে গত সপ্তাহে প্রথম স্কুলে গেল। তাতে জান্নাতের কি আনন্দ, বিকালে যখন ফোন করলাম আমাকে বলতেছেঃ আব্বু আপনি যে আমার জন্য ব্যাগ এনেছেন সেটি গায়ে দিয়ে আজ স্কুলে গিয়েছি। জান্নাতের আম্মু সংশোধন করে বললেনঃ ব্যাগ কি গায়ে দেওয়া যায়! পিঠে করে নিয়েছ।
সম্মানীত পাঠক/পাঠিকা হয়তো ভাববেন সম্পূর্ণ পারিবারিক পোষ্ট। আসলে আমার উদ্যেশ্য হল পারিবারিক বর্ণনা নয়, নিজের অভিজ্ঞতাকে শেয়ার করা। তাবিজ ছাড়াও যে বাচ্চারা আল্লাহর রহমতে বেছে থাকে সে অভিজ্ঞতা জানান দেওয়া।
জান্নাতের প্রথম স্কুলে যাওয়া যে তার বাবার জন্য কত আনন্দের, সেই অনুভুতি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম মাত্র। জান্নাতের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সে যেন সত্যিকারের মানুষ হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে পারে।
হাম ও পোলিও সম্পর্কে কারো জানা থাকলে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী, হাম ও পোলিও টিকা কতটুকু স্বাস্থ্য সম্মত? কারো জানা থাকলে জানাবেন প্লিজ।
বিষয়: বিবিধ
২১০১ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের ইতালিতে টিকা বাধ্যতামূলক! আমরা দিয়েছি! বাংলাদেশে এত ভেজাল সবকিছু তে সেটা টিকাতেই প্রবেশ করেছে জানতাম না!
সুন্দর পোস্ট টির জন্য জাযাকাল্লাহু খাইর! আমাদের মামনিকে আদর ও তার আম্মুকে সালাম জানাবেন!
আমি প্রথম
টিকার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী। অনেক জায়গায় ৮জন, ১০জন করে মরতে শুনি তো। তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম । এদিকে হোমিও ডাক্তার বিশেষ করে এই ফ্রি টিকাগুলো দিতে নিষেধ করলেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাসুম ভাই আমার ব্লগে আপনার প্রথম উপস্থিতি, সত্যিই আমি আনন্দিত। জ্ঞ্যনি ব্যক্তিদের সহচর্য চাই। জাযাকাল্লাহ খাইর
মহান রাব্বুল আলামীন এই জান্নাতী পাখীটাকে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রেখে জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে দিন। প্রাণভরে দোয়া করি সে যেন বিদ্যায় বুদ্ধিতে আচার আচরণে উম্মুল মুমিনীনগণের উত্তরসূরী হয়।
আপনার পরিবার সম্পর্কে জানার পর ইচ্ছে হচ্ছিল আপনাকে বলি জান্নাতী ফুলের একটা ছবি দিয়ে পোষ্ট দিতে। আবার পরক্ষণে ভেবেছি না বলাটা বোধ হয় ঠিক হবে না। যা হোক ভীষণ ভীষণ আনন্দ হলো আমার পোষ্টটি দেখে।
তাই আর তাবিজ কবজ টীকা টুকা নিয়ে কথা বলার মুড একদম নেই আমার।
পরিবারের সবার জন্য শ্রেনীমত ছালাম ও শুভেচ্ছা রইলো।
কিছু মানুষের চাওয়া আল্লাহ তায়ালা অজান্তেই পুরণ করেন। আপনারটিও আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে। অনেক অনেক সালাম ও শুভকামনা রইল আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি।
আপনিসহ সবার জন্য নিরন্তর দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জান্নাতের বাবা খুশি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি খুশির জোয়ার বইছে জান্নাতের অবুঝ মনে।
আমি জানার চেষ্টা করেছি টিকা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে, খুব একটা পরিষ্কার ধারণা নিতে পারিনি।
এই লিংকটা দেখে নিতে পারেন।
Click this link
পোলিওর টিকা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেলাম। এজন্য ধন্যবাদ।
পোলিও রোগটি কি ও কখন হয়, হাম রোগটি কি ও কখন হয় জানতে ইচ্ছে করছে। শুনেছি উন্নত দেশগুলোতে এসব টিকা দেওয়া হয় না। আচ্ছা এগুলো ফ্রিতে কেন দেওয়া হয়। যে দেশে সরকারের মানবতা বলতে কিছু নেই, সে দেশে শিশুদের বাচানোর জন্য এত চেষ্টা কেন? এতে কোন ইহুদিদের হাত থাকতে পারে কি না। যা মুসলিম সন্তানদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে বা প্রজনন ক্ষমতা কমে যাবে, বা ভিতূ হয়ে যাবে, মেয়েরা বড় হলে স্বাভাবিক ভাবে বাচ্ছা জন্ম দিতে অক্ষম হবে এমন কোন কারণ আছে কি না? এ সকল বিষয়গুলো আমাকে খুব ভাবায়।
অনেক শুকরিয়া ভাই।
আমি উক্ত রোগগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব, আশানুরূপ কিছু জানতে পারলে আপনাকে অবশ্যই জানাব।
আপনার জান্নাতের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভ কামনা রইলো।
আপনার মন্তব্যের সাখে সম্পূর্ণ একমত। জাযাকাল্লাহ খাইর।
আরেকটি মজার ব্যপার হলো, যাদের সাথে আমার শুরুটা মৃদু সাংঘর্ষিক হয় দেখা যায় পরবর্তীতে তাদের সাথেই আমার সম্পর্কটা বেশী মধুর হয়। ধন্যবাদ।
ঠিকানা তো পেলাম না ভাইয়া।
মাওলানা হবো কিভাবে?
জান্নাত মনিকে দেখে অনেক খুশি লাগছে! আল্লাহ আমাদের মামনিকে সুস্থ রাখুন,হায়াতে তাইয়েবা দান করুন! আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন