মরুর বুকে মাথা গোঁজার ঠাই - ৫
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:০৩:৩৪ রাত
শ্রদ্ধেয় পাঠক, ছবিটি দেখে হয়তো ভাবছেন আমি কোন মেসেজ সেন্টারের বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। আসলে তাই নয়, আজকের লেখায় আবুধাবীতে প্রবাসী বাঙ্গালীদের কিছু অনৈতিককর্ম তুলে ধরার চেষ্টা করব, যার কারনে বাঙ্গালী জাতী ও বাংলাদেশের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। আগের পর্বে আলোচনা করেছিলাম "বাঙ্গালী" শব্দটিকে আরবীরা গালি হিসাবে ব্যবহার করে। আসলে এগুলো সব আমাদের হাতের কামাই, আমরা যদি সৎ ও সভ্যতা বজায় রাখতাম তাহলে আমাদের আজ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। আমিরাতের শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতার অধিকাংশ আইন বাঙ্গালীরাই ভঙ্গ করে। যেমন সিগনাল বা আন্ডারপাস ছাড়া রাস্তা পারাপার নিষেধ, যেখানে সেখানে থুথু ও চুইংগাম নিক্ষেপ না করা, প্রকাশ্যে ধুমপান না করা, পান খাওয়া নিষিদ্ধ হলেও বাঙ্গালী বলে কথা, বিল্ডিং, সুপার মার্কেট ও মসজিদ, বিশেষ করে চায়ের দোকানএর দেয়ালগুলো তারা বিনা পয়সায় রং করে দেয়। এমন অনেক আইন বাঙ্গালীরাই বেশী ভঙ্গ করে, যার পরিণতীতে প্রতিটি অন্যায়ের জন্য ২শ থেকে ৫শ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হচ্ছে তাদের।
দু'বছর আগে মোবাইল অপারেটর কোম্পানী "ডু" ২শ দিরহাম রিচার্চের উপর ৫০ দিরহাম বা ২জিবি ইন্টারনেট অথবা ১শ মিনিট ইন্টারন্যশনাল কল ফ্রি'র অপার দিয়ে ছিল, ব্যস তাতেই শতশত বাঙ্গালী পথেপথে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, সুপারমার্কেট ও গিফট আইটেম দোকানের সামনে ভিড় লাগিয়ে জপতে শুরু করল, ব্যালেন্স ব্যালেন্স, ব্যালেন্স ট্রান্সফার। ঈদের ছুটতে আল-আইন বেড়াতে গেলাম সেখানেও একই অবস্থা, দুবাইতে গেলাম সেখানেও একই পরিস্থিতি, ৫দিরহাম ১০ দিরহাম করে ২০০ দিরহাম বিক্রি করতে পারলেই ৫০দিরহাম ইনকাম। কেউ এটাকে পেশা হিসাবে, আবার কেউ পারটাইম হিসাবে এসুযোগ কাজে লাগাতে লাগলো, এদিকে সি,আই,ডি অনেক বাঙ্গালীকে গ্রেপ্তার করল, দেশে সাপ্লাই করল। বাংলাদেশের সুনাম অনেকাংশে খোয়া গেল। বাঙ্গালীজাতি অনেক গৃনীত হল।
বর্তমানে সেই অফার আর নেই, তবুও ব্যালেন্স ব্যবসা চলেছে, কোন মতে, ৫দিরহাম বিক্রি করে ৫.৫০ দিরহাম নিচ্ছে, অফার বন্ধ হলেও বাঙ্গালীর অভ্যাস বন্ধ হয় নাই।
ইতি মধ্যে ব্যালেন্স কারকারীরা একটি ভাল চাকরি নিয়ে নিল, তা হল আবুধাবীতে এখন ব্যাঙ্গের ছাতার মত গর্জে উঠেছে অগণিত ম্যাসেজ সেন্টার, যেখানে ম্যাসেজের নামে চলে নিকৃষ্ট অপকর্ম। কাষ্টমার থেকেও যেন ম্যাসেজার বেশী, তাই কাষ্টমার যোগান দেওয়ার কাজটাই করছে বেশ কিছু বাঙ্গালী, বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিগনালের মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে ভিজিটিং কার্ড বিলি করে, বিনিময়ে ডেইলি ১শ দিরহাম মিলে। যে সিগনাল দিয়ে আমার প্রতিদিন অফিসে আসা যাওয়া, ভিজিটিং মিডিয়ার জ্বালায় অতিষ্ঠ, তবুও দেশী হিসাবে একটি কার্ড নিতেই হয়, তাতে আমার টেবিল ভর্তি হয়ে গেলে গার্ভেজে নিক্ষেপ, কি আর করা, না নিলেও মনে কষ্ট যায়। একদিন একজনকে বললাম, ভাই আপনার একটি ছবি নিতে চাই, ছবিটি ব্লগে দেওয়া হবে, সে কি ভয়, ভাই মাপ চাই দোয়া চাই বলে দূরে চলে গেল। ম্যাসেজ সেন্টারের কার্ড বিলি করা মানে যে, মানুষকে কুকর্মের দিকে আহবান করা। এদের মধ্যেও অনেকে সি,আই,ডি'র হাতে বন্দি হয়।
কিছু বাঙ্গালী আছে যারা নিকৃষ্ট ও অনৈতিক ব্যবসায় জড়িত, এদের কথা অনেক সময় দেশের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ হয়, অসহায় মেয়েদের সুযোগ নেয় এরা, বাঙ্গালী, চায়নিজ, ফিলিপাইনি, লেবাননী, ইথিওপিয়া ও থাইলেন্ডের মেয়েদের কন্ট্রাক করে অনৈতিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। খদ্দরের তো অভাব নেই, ৯০% লোক তো ব্যাচেলর, বাঙ্গালী, পাকিস্তানী, ইন্ডিয়ানীরাই খদ্দরের তালিকায় বেশী।
আবুধাবীতে প্রথম যখন টাউন সার্ভিস শুরু হয়, বাসগুলো ফ্রি ছিল, ১বছর পর প্রতিবার ভ্রমনের জন্য ১দিরহাম করে বাসের বাক্সে ফেলতে হ্ত। বর্তমানে ২দিরহাম ফেলতে হয়, এখানে দেখা গেল বাংলাদেশীরা বেশীরভাগ দিরহামের পরিবর্তে বাংলা এক টাকার কয়েন ব্যবহার করছে। যারা নিয়মিত বাসে উঠতে হয় তারা দেশ থেকে হাজার টাকার কয়েন নিয়ে আসে, একুশটাকার জায়গায় ১টাকায় পার পেত। কিন্তু বাংলাদেশের সম্মানের কথা মোটেও তারা ভাবতো না, তাই তো আগামী বছর থেকে টাউন সার্ভিসের জন্য প্রি পেইড কার্ড ক্রয় করতে হবে, বার বার বিচার্জ করতে হবে। তাতে ব্যায় অনেক বেড়ে যাবে। কিছু বাঙ্গালীদের অনৈতিকতার কারণে সব যাত্রীকে বেশি দিরহামের প্রি পেইড কার্ড ক্রয় করতে হবে, ভাড়া অনেকগুন বেড়ে যাবে।
একদিন বিকালে সাগর পাড়ে কুর্ণিশ পার্কে ঘুরতে গেলাম, দেখলাম ৫জন দেশীভাই ভারাক্রান্ত মলিন চেহারায় বসে আছে, কাছে গিয়ে বললাম কেমন আছেন ভাই, আপনারা কি বাংলাদেশী? বলে উঠলেন: হ্যাঁ ভাই, আমিরাতে ৩বছর কাজ করতেছি, আবুধাবী টাউনে কখনো আসা হয় নাই, আজকে প্রথম আসলাম, এখানে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম, একজন আরবী লোক এসে বলল, আই,ডি দেখাতে, দেখালাম, তারপর এই রসিদটি দিয়ে চলে গেলেন, একটু দেখেন ভাই এতে কি আছে? আমিতো দেখে হতাশ হলাম, ৫শ দিরহাম জরিমানা। জিজ্ঞাস করলাম ভাই আপনার মাসিক সেলারী কত? বলল ৮শ দিরহাম। বললাম আরবী লোকটি কোন দিকে গেল, এদিকে, সবাই সেই দিকে দ্রুত বাড়ালাম, দেখা পেয়ে বললাম, জনাব: এরা এই প্রথম আবুধাবীতে এসেছে, লিখাপড়া নেই বিধায় আইনের চার্ট পড়তে পারে নাই, তাই এদের প্রতি করুণা করুন। বেচারা সোজা উত্তর করলেন, দুই দিনের মধ্যে অফিসে গিয়ে জরিমানা পেইড করে আই,ডি নিয়ে আসবেন, বললাম: তাহলে এখন নিয়ে নেন, বলল: না সম্ভব নয়, এই বলেই চলে গেল। বাঙ্গালীভাইদের চেহারার দিকে তাকাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু আমারও যে করার কিছু নেই। আধাঘন্টা ওদের সঙ্গে কাটিয়ে জরিমানা পেইড করার অফিসের ঠিকানা ও যাওয়ার পথ বলে দিয়ে বিদায় নিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১২১২ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
এ রকম ঘটনা আমাদের এখানেও ঘটে অহরহ! সত্যি খুব দু:খজনক!
শুকরিয়া শেয়ার করার জন্য
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন