মরুর বুকে মাথা গোঁজার ঠাই - ৩

লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৫৮:০৫ রাত



অনেকেই হয়তো "ফ্রী ভিসা"র নাম শুনেছেন, আসলে বলতে গেলে "ফ্রী" বলতে কোন ভিসা আমিরাতে নেই। মুখে প্রচলিত "ফ্রী ভিসা" হল, কোন লোকাল (দেশীয়) আরবীর স্পন্সরে সার্ভেন্ট ভিসা। যেমন, সার্ভেন্ট, প্রাইভেট ড্রাইভার, ফারমার, রাখাল, পাচক ইত্যাদি ভিসায় আমিরাতে আসার পর আরবীকে ভিসার মূল্য পেইড করে দু-বছরের জন্য কিছু টাকা দিয়ে বাহিরে নিজ ইচ্ছায় কাজ করা, যেমন বাংলার অনেক আলেম ওলামা সার্ভেন্ট ভিসায় এসে টিউশনি করে। অনেকে আবার নিজে গাড়ি কিনে গোপনে ভাড়ায় চালায়। এতে ইনকামও ভালো হয়, মাসে ৫ হাজার দিরহাম, বাংলায় লাখটাকার উপর এদের ইনকাম। বর্তমানে লোকালের ভিসায় এসে বাহিরে কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এমন কেউ যদি ধরা পড়ে ৫০ হাজার দেরহাম সমান প্রায় ১১ লক্ষ টাকা লোকালকে জমিমানার আইন রয়েছে, তবুও অনেক গরীব আরবী দু-বছরে ৫ থেকে ৬ হাজার দিরহামের লোভে আইন কে তোয়াক্কা করে না। তার সার্ভেন্ট কখনো ধরা পড়লে থানায় গিয়ে মিথ্যা বলে সার্ভেন্টকে মুক্ত করে আবার ছেড়ে দেয়।

অনেক বাংলাদেশী আরবীর ঘরে চাকরি করে, পাচক, ড্রাইভার, সার্ভেন্ট, ফার্মার ইত্যাদি পেশায়, মাঝে মাঝে মালিকদের হাতে হাল্কাপাতলা মারধর ও খেতে হয়, মন জয় করে থাকতে পারলে অনেক সময় টুকটাক টাকা পয়সাও মিলে। এদের বেতন ১৫শ থেকে ২২শ পর্যন্ত হয়। আবার অনেক কৃপণ আরবী ফার্মারদের ৮শ দিরহাম বেতন প্লাস থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে।



কিছু বেদু আরবী আছে যারা আইনের তোয়াক্কা করে না, এমনকি গভর্মেন্টস এর লোকেরাও তাদের ভয় করে। কারণ তারাই যে আমিরাতে আদিবাসী।



তারা কিন্তু সত্যবাদী, জীবন গেলেও মিথ্যা বলবে না, ধোকাবাজী, বাটপারি থেকে তারা অনেক দূরে। তাদের জীবনধারণ প্রায়ই শহর থেকে অনেক দূরে, উট, ভেঁঢ়া, ছাগল, গরু, ঘোড়া ও খেজুরের বাগান নিয়েই এদের জীবন। অনেক বাংলাদেশী এদের বাগানে ও গো-চারণে কাজ করে, মাসে হাজার থেকে ১৫শ দিরহামে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে, তারা মনে করে বিদেশ মানে বাগানে কাজ করা ও উট চরানো।



মাস খানিক আগে আমি আবুধাবী থেকে প্রায় ২৫০ কি:মি: দূরে "বু-হাসা" নামক স্থানে এক বন্ধুসহ ঘুরতে গেলাম, পেট্রোল ফিল্ড "হাবসান" থেকে ৫০ কিঃমিঃ দূরে, সেখানে অনেক দেশীকে পাইলাম ১০ থেকে ১৫ বছর সেখানে এ অবস্থাতেই আছে। ৪ বছর পরপর ছুটিতে যায়। এদের খরচ ও কম কারণ বাগানের এলাকায় তেমন দোকান পাট থাকে না। যা বেতন পায় সবটুকুই দেশে পাঠায়।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১০৯৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

304802
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:০৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই মরু অভ্যন্তরে কাজ করা এক বাংলাদেশির কাহিনি নিয়ে ব্লগার নজরুল ইসলাম টিপু ভাই এর একটি লিখা পড়েছিলাম।
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:২৮
246589
আবু জান্নাত লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাইয়া, পরের পর্বগুলো পড়ার অনুরোধ রইল।
304807
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:১৪
ফারাসাত আলী খান লিখেছেন : পিলাচ
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:২৮
246590
আবু জান্নাত লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।
304824
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:০৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। খুবই কষ্টের তারপরও মানুষের বেঁচে থাকা এবং ভাল থাকার নিরন্তর অদম্য প্রচেষ্টা। গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১১
246613
আবু জান্নাত লিখেছেন : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। খালামনি আমি কিন্তু মায়ের মর্যাদায় আপনাকে রাখতে চাই। দেশের কিছু মানুষ হয়তো সচেতন হবে বিদেশ সম্পর্কে, তাই এই প্রয়াস। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। জাযাকিল্লাহু খাইর।
304832
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:৫২
আফরা লিখেছেন : মানুষের কষ্টকর জীবনের লেখা হলেও জেনে ভাল লাগল এটা ভেবে ,আলহামদুল্লিলাহ ! আল্লাহ আমাদের অনেক ভাল রেখেছেন ।

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০১:১৯
246615
আবু জান্নাত লিখেছেন : যারা বিদেশকে স্বর্গ ভাবে, তাদের একটু জাগ্রত করা আমার উদ্যেশ্য, যারা বিদেশে টাকার মেশিন আছে মনে করে তাদের চোখে আঙ্গুল দেওয়ার জন্য হতভাগার এই প্রয়াস। আল্লাহ তায়ালার অশেষ দয়ায় আমরা কিছু লোক আলহামদু লিল্লাহ মোটামুটি ভালই আছি। আপনার উপস্থিতির জন্য শুকরিয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File