দ্যা জুপিটার জেনারেশন

লিখেছেন লিখেছেন আসিফ নিক্সন ০৬ জুন, ২০১৪, ০৬:৪০:২০ সন্ধ্যা

ঘুম থেকে উঠেই

নিজেকে অপরিচিত

স্হানে আবিষ্কার করলাম।

খানিকটা ভড়কে গেলাম।

মাঝে মাঝে মানুষের এরকম ভুল

হয়ে থাকে। স্নায়ুকোষগুলো বোধয়

দিনদিন দূর্বল হয়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ

করে মস্তিষ্ক সজাগ করার

চেষ্টা চালালাম। নাহ! ঠিকই

আছে। সত্যিই, আমি একটা অপরিচিত

স্হানে শুয়ে আছি। এ

কক্ষে আগে কখনো এসেছি বলে মনে পড়ে না।

অতীতে কি ঘটেছিল, কিছুই

মনে করতে পারছিনা। রুমটা বেশ

শীতল। রুমটাতে বাতাসের স্রোত

আমি স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছি।

এ-দিক ও-দিক তাকিয়ে কোন

এসি কিংবা ফ্যান

দেখতে পেলাম না। নাহ! অদ্ভুত।

আসলেই অদ্ভুত!

আমি অবাক হয়ে রুমটাতে হাঁটছি।

রুমটা ধাতব পদার্থ দ্বারা তৈরি।

কোন

দরজা কিংবা জানালা নেই।

হঠাৎ, মাথার উপরে যান্ত্রিক শব্দ

শুনে উপরের দিকে তাকালাম,

লিফটের মতো একটা যন্ত্র

ফ্লোরে নেমে আসছে।

.

যন্ত্রের

মধ্যে বসে থাকা লোকটি আমার

দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালেন।

উনার দৃষ্টিকটু চোখে ভদ্রতার

বালাই নেই।

— হ্যালো! মাই বয়! কেমন আছো?

_অসম্ভব যান্ত্রিক

কন্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন

তিনি।

— হ্যাঁ। ভালো। আপনি কে?

_খানিকটা ভয় পেলেও নিজের

কন্ঠটাকে দৃঢ় রাখার

চেষ্টা করলাম।

— আমি ডক্টর ভিক্টো! বিজ্ঞানী।

— আমি এখন কোথায়?

— স্পেসশিপে...

— কিন্তু,

আমি এখানে কীভাবে এলাম?

— হু! পৃথিবী থেকে তুলে এনে,

দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তোমার

শরীরের উপর গবেষনা করেছি।

তুমি এখন আর অন্য দশজন মানুষের

মতো নও। তুমি ট্রান্সজেনিক

বা উন্নত বৈশিষ্ট্যধারী প্রাণী।

তোমার শরীরের ডিএনএ পরিবর্তন

করে আমি তোমাকে এক

বিপ্লবী ক্ষমতা দান করেছি।

আমার গবেষনা সফল হয়েছে।

— তার মানে,

আপনি বলতে চাইছেন আমি ত্রিশ

বছর ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম!!

— ইয়েস মাই বয়।

.

আশ্চর্যজনক মুহূর্তগুলো আমি উপভোগ

করার চেষ্টা করি খুব

ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু আজ

আমি বিস্ময়ের

দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত। এ ও

কী সম্ভব!!

ডক্টর ভিক্টোর

দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম।

বুঝতে পারছিনা,

কাজটা তিনি ভালো করেছেন

কি না!!

.

স্পেসশিপ বৃহস্পতি গ্রহে অবতরণ

করল। সুপ্রাচীনকাল থেকেই

গ্রহটি জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও

জ্যোতিষীদের কাছে পরিচিত

ছিল। বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রচুর

পৌরাণিক কাহিনী এবং ধর্মীয়

বিশ্বাসও আবর্তিত

হয়েছে বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে।

রোমানরা গ্রহটির নাম রেখেছিল

পৌরাণিক চরিত্র জুপিটারের

নামে। জুপিটার রোমান পুরাণের

প্রধান দেবতা। এই নামটি প্রাক-

ইন্দো-ইউরোপীয় ভোকেটিভ

কাঠামো থেকে এসেছে যার অর্থ

ছিল আকাশের পিতা।

বৃহস্পতি গ্রহের প্রাথমিক উপাদান

হচ্ছে হাইড্রোজেন এবং সামান্য

পরিমাণ হিলিয়াম । ডক্টর

ভিক্টো আমার ডিএনএ পরিবর্তন

করে অক্সিজেন ছাড়া বাঁচার এক

অনন্য ক্ষমতা প্রদান করেছেন।

আমি বিস্ময়ের খোলস

থেকে এখনো বেরুতে পারছি না।

.

স্পেসশিপ থেকে বৃহস্পতি গ্রহের

ভূপৃষ্ঠে পদার্পন করলাম। ডক্টর

ভিক্টো আমার

সামনে এসে দাড়ালেন। উনার

মুখে অক্সিজেন মাস্ক। নিজের উপর

তিনি এই ডিএনএ রিকম্বিনেশন

প্রযুক্তির প্রয়োগ করেন নি।

তিনি হয়তো সাধারণ মানুষ হয়েই

বাঁচতে চান। আমার দিকে শীতল

দৃষ্টিতে তাকালেন। যদিও,

অক্সিজেন মাস্কের কারণে উনার

চোখ দুটো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু, আমি উপলব্ধি করতে পারছি।

.

— মাই বয়! আমার গবেষনার ফল শুধু

তুমিই নও। তোমার জন্য

আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।

আমি কিছুতেই উনার কথার অর্থ

বুঝতে পারলাম না।

বোকা চাহনি নিয়ে উনার

শুকনো মুখের

দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

উনার পেছনে স্পেসশিপের

আলোন্ধকার

থেকে ধীরে ধীরে একটি নারীর

অবয়ব ক্রমেই চোখের সামনে স্পষ্টতর

হতে লাগল। এ কী! এ তো সেই

অন্দ্রিলা! আমার অন্দ্রিলা!

নিজের চোখ দুটোও যেন আমার

সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে!

আমি ভাবতেও পারছি না!

আমি ডক্টর ভিক্টোর মুখের

দিকে তাকালাম। কেমন

একটা রহস্যময় হাসি উনার যান্ত্রিক

মুখে খেলা করছে।

— তোমার মতো ওকেও

ট্রান্সজেনিক ক্ষমতা প্রদান

করেছি। তোমরা এই গ্রহেই থাকো।

সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম গ্রহটির

প্রতিকূল পরিবেশে একটা নতুন

প্রজন্ম সৃষ্টির কাজে লেগে পড়ো।

আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন

কি তোমরা পূরণ করতে পারবে ?

— হু।

আমার কাঁধে তিনি পরম নির্ভরতায়

হাত রাখলেন। শেষ বারের

মতো বললেন,

— মাই বয়! যদি বেঁচে থাকি,

তবে আবার দেখা হবে।

ধীরে ধীরে তিনি স্পেসশিপের

দিকে পা বাড়ালেন।

কয়েকমুহূর্তের মধ্যেই

স্পেসশিপটি মহাশূন্যে মিলিয়ে গেলো।

আমি নির্বাকদৃষ্টে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।

আমার পাশে পৃথিবীর এক

অপরূপা নারী। আমার

পূর্বপ্রমিকা অন্দ্রিলা। আমি পুরাণ

দেবতা জুপিটার নই। তবে,

অন্দ্রিলাকে জুপিটারের

স্ত্রী কেরেস এর মতো লাগছে।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

সৌরজগতের এ বৃহৎ গ্রহটার

মধ্যে একটা নতুন প্রজন্ম সৃষ্টির

আশায়...

বিষয়: বিবিধ

১১৯৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

231432
০৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
নূর আল আমিন লিখেছেন : বাহ অসাধারণ গল্প শেষমেষ দেবতা না হয়েও ঐন্দ্রিলাকে পেয়ে গেলেন
231467
০৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : সৌরজগতের এ বৃহৎ গ্রহটার মধ্যে একটা নতুন প্রজন্ম সৃষ্টির আশায়...

অপূর্ব লেখনি ক্ষমতা আপনার। কিন্তু আপনাকে তো ব্লগে তেমন দেখি না। নিয়মিত হবেন আশা করি।
231541
০৬ জুন ২০১৪ রাত ১০:৪৩
ভিশু লিখেছেন : Rolling Eyes Rolling Eyes Rolling Eyes
Star Star Star

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File