শবে বরাতের দিনে রোযা রাখা - হাদীসের সনদ বিশ্লেষণ এবং মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতামত

লিখেছেন লিখেছেন তারেক_১৩৭ ১৩ জুন, ২০১৪, ০৮:৩১:২৯ রাত



হযরত আলী ইবনু আবি তলিব (রদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসূলুল্ল-হ (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ শা’বান মাসের পনের তারিখ রাত আসলে তখন তার রাতের অংশে ইবাদত করো এবং দিনের অংশে রোজা রাখো। কারণ ওই রাতে সূর্যাস্ত যাওয়ার পর মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, আছো কি কোন মাগফিরাতের প্রত্যাশী? তাকে আমি মাগফিরাত দান করবো। আছো কি কোন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি তাকে আমি সুস্থতা দান করবো। আছো কি অমুক আছো কি অমুক - এভাবে প্রভাতের সূচনা পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।

উক্ত হাদীছটি

১। ইবনে মাজাহ তাঁর সুনানে

২। ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে

৩। মুনযিরী তাঁর তারগীব ওয়াত তারহীবে

সংকলন করেছেন।

উক্ত হাদীছের সনদ পর্যালোচনাঃ

হাদীছটির সনদে নিম্নোক্ত রাবীগণ রয়েছেনঃ

১। হাসান ইবনু আলী আল খিলাল (মৃঃ ২৪২ হিঃ)

ইমাম নাসাঈ (রহঃ) ব্যতীত সিহাহ সিত্তাহর প্রত্যেকেই তাঁর থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন।

খতীব আল বাগদাদী বলেনঃ حافظ ثقة , তিনি নির্ভরযোগ্য এবং হাফিযুল হাদীছ ছিলেন।

ইয়াকুব ইবনু শাইবাহ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য ও আস্থাযোগ্য রাবী।

ইবনু হিব্বান তাঁকে নির্ভরযোগ্যদের মধ্যে পরিগণিত করেছেন।

হাফিয ইবনু হাজারও তাঁকে নির্ভরযোগ্য এবং হাফিযুল হাদীছ সাব্যস্ত করেছেন।

২। আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হুমাম ইবনু নাফি (মৃঃ ২১১ হিঃ)

আসহাবে সিত্তাহর প্রত্যেকেই তাঁর কাছ থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন।

তিনি ইবনু জুরাই আওযায়ী, মালিক, সুফিয়ান সওরী প্রমূখের ন্যায় বড় বড় ইমামদের শাগরিদ।

আলী ইবনুল মাদীনী থেকে কথিত আছে যে, হিশাম ইবনু ইউসুফ বলেছেন, আব্দুর রাজ্জাক আমাদের মধ্যে সবচে’ বড় আলেম এবং হাফিযে হাদীছ।

আহমদ ইবনু হাম্বল থেকে বর্ণিত যে, তিনি সবচে’ নির্ভরযোগ্য হাদীছ বর্ণনাকারী ছিলেন।

৩। ইবনু আবি সাবুরাহ (মৃঃ ১৬২ হিঃ)

হাফিয যাহাবী তাঁর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে এভাবে শুরু করেনঃ



মহান ফক্বীহ, ইরাকের কাজী, আবু বকর ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবি সাবুরাহ।

ইমাম আবু দাউদ বলেনঃ তিনি মদীনাবাসীর মুফতী ছিলেন।(المدينة مفتى)

ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি যঈফ রাবী ছিলেন।

ইমাম নাসাঈ বলেনঃ তাঁর বর্ণিত হাদীছ মাতরূক তথা পরিত্যাজ্য।

আব্দুল্লাহ এবং সালিহ স্বীয় পিতা ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হাদীছ জাল করতেন।

তবে একথাগুলো অতিশয়োক্তি থেকে মুক্ত নয়, কারণ হাদীছ শাস্ত্রবিদদের নিকট সর্বজনবিদিত একটি মূলনীতি এও আছে যে, একজন বর্ণনাকারী দোষ-ত্রুটির কারণ ও বিবরণ উল্লেখ ব্যতীত কেবল দোষ ত্রুটি বর্ণনা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। উপরন্তু উক্ত কারণ ও বিবরণ এর উপর প্রমাণও থাকতে হবে।

( দেখুনঃ والتكميل الرفع পৃ-৪১ )

উক্ত কিতাবে কথাটি এভাবে বলা হয়েছেঃ



“ ইবনু আবি সবুরাহ মাতরূকুল হাদীছ কিংবা জাল হাদীছ রচনাকারী হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছীনে কেরামের কেউই বিস্তারিত কারণসহ বিবরণ দেন নি। ”

যার কারণে ইমাম বুখারী (রহঃ) তাকে যঈফ ছাড়া অধিক কিছু বলেন নি। হাফিয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি দুর্বল বিধায় তিনি হাদীছশাস্ত্রে দুর্বল। মূলত এটাই বিশুদ্ধ এবং চূড়ান্ত রায়।

৪। ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ

ইমাম বুখারী 'আত-তারীখুল কাবীর' গ্রন্থে এবং ইমাম যাহাবী 'মীজানুল ইতিদাল' গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। উভয়ের কেউই তাঁকে দুর্বল বলেন নি।

হাফিয ইবনু হাজার তাঁর ব্যাপারে বলেনঃ

السادسة من صدوق

“ তিনি ষষ্ঠ স্তরের একজন সৎ রাবী। ”

( তাক্বরীবুত তাহযীবঃ খ-১, পৃ-৬৫; তাহযীবুল কামালঃ খ-২, পৃ-১৯৩ )

ইবনে হিব্বান তাকে 'কিতাবুছছিক্বা'তে উল্লেখ করে নির্ভরযোগ্য বলে সাব্যস্ত করেছেন।

( দেখুনঃ اثقات كتاب পৃ – ১৯, খ – ১ )

৫। মুআবিয়া ইবনু আবদিল্লাহ ইবনু জাফর

ইমাম নাসাঈ এবং ইবনু মাজাহ তাঁর কাছ থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন।

হাফিয আজালী তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

ইবনু হিব্বানও তাঁকে নির্ভরযোগ্যদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি চতু্র্থ স্তরের একজন গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী।

হাফিয যাহাবী বলেনঃ “ ثقة ” নির্ভরযোগ্য।

( দেখুনঃ আল কাশেফ – ২/২৭৬ )

৬। আব্দুল্লাহ ইবনু জা’ফর

'আল ইসাবা ফী তাময়িযিস্ সাহাবা' গ্রন্থে ( ২য় খন্ড পৃঃ ২৮৯ ) রয়েছে যে, তিনি নবী করীম (সঃ) এর সাহাবা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তিনি সাধারণ স্তরের সাহাবাদের মধ্যে পরিগণিত। ইতিহাসের কিতাবসমূহে তাঁর অনেক ফযীলত ও গুণাগুণ উল্লেখ রয়েছে।

৭। আলী ইবনু আবি তালিব (রঃ)

একজন জলীলুল ক্বদর সাহাবী, খুলাফায়ে রাশেদীনের একজন।

রাবী ইবনু আবি সাবুরাহ সম্পর্কে অস্পষ্ট সমালোচনাঃ

এখানে জরাহ-তা'দীল' শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি সম্পর্কে সবার অবগত হওয়া দরকার।

জরাহ এবং তা'দীল প্রত্যেকটি মূলত দুই প্রকার। জরহে মুবহাম (অস্পষ্ট সমালোচনা), জরহে মুফাসসার (ব্যাপক বিস্তৃত সমালোচনা), তা'দীলে মুবহাম (অস্পষ্ট স্বীকৃতি), তা'দীলে মুফাসসার (বিশদ সত্যয়ন ও স্বীকৃতি)।

মুবহাম বলতে সেই সব জরাহ-তা'দীলকে বুঝায় যেগুলোতে জরাহ-তা'দীলের কারণসমূহ বিবৃত হয়নি। পক্ষান্তরে যেখানে জরাহ-তা'দীলের কারণসমূহ বিশদভাবে বিবৃত হয়ে থাকে, তাকে মুফাসসার বলা হয়। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম সহ জরাহ তা'দীলের অধিকাংশ বিদগ্ধ ইমামগণের মতে, তা'দীলে মুবহামও গ্রহণযোগ্য। এতে এর কারণগুলো উল্লেখ করার কোন আবশ্যকতা নেই। পক্ষান্তরে জরাহ যদি মুবহাম হয়, তার কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। এক্ষেত্রে সমালোচনার কারণ সমূহ উল্লেখ থাকা একান্ত আবশ্যক। খতীব বাগদাদী, হাফেজ ইবনুস সালাহ ও ইমাম নববী এই মতকে অন্যান্য মতামত থেকে অত্যধিক সঠিক ও সমধিক প্রসিদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেন এবং একে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমামগণের মতামত বলে উল্লেখ করেন।

( বিস্তারিত জানতে দেখুন - আল কিফায়াহ ফী উলূমির রেওয়ায়েহঃ পৃ-১০০, ১০৮, ১০৯; মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহঃ পৃ-১১৭; আত তাকরীবঃ পৃ-২০২ )

অর্থাৎ যখন কোন রাবী বা ব্যক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করা হবে, তখন তা বিস্তারিত আকারে প্রমাণ সহকারে কারণ সহ উল্লেখ থাকতে হবে, নতুবা তা মুহাদ্দিসীনে কেরামের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

আলী ইবনে আল মাদীনী এবং ইমাম নাসাঈ, যারা দুজনেই কিছু শতক পরে এসেছেন, তারা বলেন যে, ইবনে আবি সবুরাহ "মাতরুকুল হাদীস" ছিলেন (যাঁর হাদীস বর্ণনা করা যাবে না, কারণ তিনি ঐটুকু যোগ্যতা রাখেন না।)

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এর পুত্র, আব্দুল্লাহ এবং সালিহ স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হাদীস জাল করতেন।

ইবনে আদীও ইবনে আবি সবুরাহকে হাদীস জালকারী ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য করেছেন।

কিন্তু, এ সমস্ত বক্তব্য তাদের নয় যারা ইবনে আবি সবুরাহ এর সমসাময়িক বড় বড় জ্ঞানী লোক ছিলেন, বরং তাদের মত যারা ইবনে আবি সবুরাহ এর অনেক যুগ পরে এসেছেন। তাছাড়া এই মতগুলো অতিরঞ্জিত বা অতিশয়োক্তি থেকেও মুক্ত নয়। এমনকি, ইমাম বুখারী, উলূমিল হাদীস শাস্ত্রে তার সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং গভীর অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, ইবনে আবি সবুরাহ সম্পর্কে কোন ধরণের ব্যাখ্যা ছাড়াই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন। তিনি ইবনে আবি সবুরাহকে শুধুমাত্র যঈফ বলে উল্লেখ করেছেন। এটা তাই আরও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এটা হতে পারে যে, ইবনে আবি সবুরাহ কিছুটা দুর্বল স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন, যার ফলে তিনি ইমাম বুখারীর কাছে রাবীর যোগ্যতার যে মানদণ্ড আছে, সেটা পূর্ণ করতে পারেন নি। তাই, তাঁর মতটি রাবীর পদমর্যাদা এবং ন্যায়পরায়ণতা বা পূর্ণতার ক্ষেত্রে নয়; বরং ইমাম বুখারীর নিজের কঠোর মানদণ্ড অনুযায়ী রাবীর যে যোগ্যতা দরকার ছিল, শুধুমাত্র তার ক্ষেত্রে।

ইমাম যাহাবী এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আকারে আলোচনা করেছেন। যাই হোক না কেন, এটা সুস্পষ্টভাবে বুঝে রাখা দরকার যে, হাদীস শাস্ত্রের নীতিমালা অনুযায়ী, একজন জাল হাদীস বানানো ব্যক্তি বা রাবী কখনই 'যঈফ' রাবীর তালিকাভুক্ত হতে পারে না।

ইমাম বাযযার এই হাদীসকে "লীন হাদীস" বলে যে মন্তব্য প্রদান করেছেন, তাও সম্পূর্ণ সঠিক নয়।

হাদীস তালিকাভুক্ত (কোন হাদীস কোন তালিকায় পড়বে) করার ক্ষেত্রে, হাদীস শাস্ত্রে "লীন হাদীস" এবং "ইয়াদা উল হাদীস" এই ২ টি গ্রুপের মাঝে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান।

( দেখুনঃ কাশফুল আসতার আন জাওয়াইদিল বাযযার )

কোন ভাবেই এই দাবী করা সঠিক হবে না যে, ইবনে আবি সবুরাহ জাল হাদীস রচনাকারী ছিলেন। যদি তাই হত, তাহলে ইমাম মালিক এবং অন্যান্য অসংখ্য প্রসিদ্ধ ফকীহর উপস্থিতিতে ইবনে আবি সবুরাহকে কখনোই মদীনা মুনাওয়ারাতে ইফতা তথা কাযীর পদের দায়িত্ব ও সুবিধা দেয়া হত না, এক কথায় সম্ভবও নয়।

ঠিক একই ভাবে, ইমাম মালিকের পক্ষে এটাও কখনও সম্ভব হত না যে, ঐ সময়ের পবিত্র নগরীর ৩ জন বুজুর্গ এবং প্রসিদ্ধ স্বীকৃত ব্যক্তির একজন হিসেবে তিনি ইবনে আবি সবুরাহর নাম উল্লেখ এবং প্রস্তাব করেছিলেন। খলিফা মনসুর যখন মদীনা মুনাওয়ারাতে কাযী পদের জন্য লোক খুঁজছিলেন, তখন ইমাম মালিক এই প্রস্তাব করেছিলেন অন্য ২ জনের সাথে ইবনু আবি সবুরাহকে কাযী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য।

( দেখুনঃ সিয়ারু আলামিন নুবালা এবং তাহযীবুত তাহযীব; আরও দেখতে পারেনঃ মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানীর কিতাব লাইলাতুল বারাআত )

তাছাড়াও, আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবনে আদী বাদে, অন্য কোন মুহাদ্দিসীন তাদের আগে ইবনে আবি সবুরাহর সত্যবাদীতা বা মর্যাদার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেন নি। শুধুমাত্র ইমাম বুখারীর মন্তব্য পাওয়া যায় এবং তাঁর কঠোর মূলনীতি ও মানদণ্ডের আলোকে তিনি শুধুমাত্র এই মন্তব্যটিই করেছেন যে, ইবনে আবি সবুরাহ যঈফ। (হাদীসের মতন সম্পর্কেও কিছু বলা হয় নি)।

ইমাম আবু দাউদ বলেন, সে (ইবনে আবি সবুরাহ) আহলুল মদীনার (মদীনার মানূষ) কাছে গ্রহণযোগ্য মুফতি ছিলেন।

হযরত মা'আন উল্লেখ করেন যে, আমিরুল মুমিনীন আবু জাফর আল মনসুর ইমাম মালিকের কাছে জানতে চান, " বড় বড় প্রসিদ্ধ মাশায়েখদের মধ্যে এখন কারা কারা বেঁচে আছেন? " তিনি (সাহিবুল মুতহুব) তাদের নাম পরপর উল্লেখ করে উত্তর দেন, বলেনঃ " ইবনে আবি তাঈব, ইবনে আবি সবুরাহ এবং ইবনে আবি সুলামাহ আল মাজিশুন বেঁচে আছেন এখন। "

এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, মদীনা মুনাওয়ারাহ ইসলাম এবং খাইরুল কুরুনের জমানার মুসলিমদের একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। ইবনে আবি সবুরাহ প্রথমে ইরাকের একজন মুফতী এবং কাযী ছিলেন। এটা ছিল ইমাম আবু ইউসুফের নিয়োগের আগের কথা। অতঃপর, তাঁকে মদীনা মুনাওয়ারাহর মুফতী এবং কাযী পদের সুবিধা (নিয়োগ) দেওয়া হয়। এরকম একজন প্রসিদ্ধ, নামকরা, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি কি কখনো সাদিক এবং আদিল ( সত্যবাদী এবং নির্ভরযোগ্য ) না হয়ে পারে ?? তিনি কি হাদীস জাল কারী হতে পারেন এবং রসূলুল্ল-হ (সঃ) এর উপর মিথ্যা আরোপ করতে পারেন ?? যদি তাই হয়, তাহলে কাযীর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে ইমাম মালিকের মত বুজুর্গ ও মুজতাহিদের উপস্থিতিতে এরকম ব্যক্তি কি কখনো নিয়োগ পেতে পারে ?? স্বয়ং ইমাম মালিক কি এই রকম ব্যক্তিকে শ্রেষ্ঠ ৩ জন বুজুর্গের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন ?? স্বয়ং ইমাম মালিক কি কাযী পদে নিয়োগ দানের জন্য এই রকম ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারেন ?? তাছাড়াও সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এই রকম পদে কি একজন মিথ্যুক বা হাদীস জালকারী থাকতে পারেন, অথচ যেখানে প্রধান নীতি হচ্ছে একজন মুফতিকে আবশ্যকীয়ভাবে আদিল (নির্ভরযোগ্য), সাদিক (সত্যবাদী) হতে হবে ?? এরকম মুফতিকে তো অভিজ্ঞ হতে হবে এবং কোরআন ও হাদীসের গভীর জ্ঞানও থাকতে হবে। সাথে সাথে, দ্বীনের মাসয়ালা মাসায়েল সঠিক ও পর্যাপ্তভাবেও তাকে বুঝতে হবে, পরিবেশের ভিন্নতার প্রেক্ষিতেও দ্বীন ও মাসায়েলের পরিপূর্ণ ও সঠিক বুঝ থাকতে হবে। এগুলো হল ইফতা বা বিচারকার্যের প্রাথমিক মূলনীতি এবং আবশ্যকতা। আহলুল মদীনা এত অশিক্ষিত, অবুঝ, বিবেকহীন, বোকা, অবিবেচক, অপরিণামদর্শী ছিলেন না যে, ইমামুল মাতহুব এবং বড় বড় যুগবিখ্যাত ধার্মিক বুজুর্গানে দ্বীনের যেমন মুজতাহিদ ইমাম মালিকের উপস্থিতিতে, তারা এমন এক ব্যক্তিকে কাযী এবং মুফতি হিসেবে পছন্দ করবেন বা নিয়োগ দিবেন যে কিনা হাদীস জাল করত বা মিথ্যুক ছিল !! তারা কি দ্বীনের মাসয়ালা মাসায়েলগত বিষয়াদির ক্ষেত্রে এবং ধর্মীয় বিধি বিধানের ক্ষেত্রে এমন একজনকে পছন্দ করতে পারেন যে হাদীস জালকারী ছিল ??

ইবনে আবি সবুরাহ হযরত আলী (রদ্বিঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছের নিছক একজন রাবী মাত্র। তাছাড়া, এই মন্তব্যগুলো আলী (রদ্বিঃ) এর হাদীসের মতন (বক্তব্য) এর উপর করা হয় নি। "যঈফ" শুধুমাত্র ইবনে আবি সবুরাহকেই বলা হয়েছে।

ইবনে আবি সবুরাহ প্রসিদ্ধ, বুজুর্গ, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি যেমনঃ হযরত আতা ইবনে আবি রুবাহ, ইমাম আরুজ এবং হিশাম ইবনে আবি ওরওয়াহ প্রভৃতি বুজুর্গদের ছাত্র ছিলেন এবং তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন।

তাছাড়াও, ইবনে আবি সবুরাহ, বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং হাদীসের উস্তাদ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনুল হুইমাম এর উস্তাদ ছিলেন। আবার ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন ইমাম বুখারীর উস্তাদ। পাশাপাশি ইমাম ইবনে জুওরাযী, ইমাম আবু আসিয়াম আন নাবিলেরও উস্তাদ ছিলেন।

( আরও দেখুনঃ তাহযীবুল কামাল )

যাই হোক না কেন, যারা ইবনু আবি সবুরাহকে "যঈফ" বলেছেন, তাদের মধ্যে কেউই এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে যাননি, কিংবা কোন স্পষ্ট দলীল বা প্রমাণও দিয়ে যান নি। এমনকি আমাদের জ্ঞানের আওতায় ঐসব মুহাদ্দিসীনগণ ইবনে আবি সবুরাহ কর্তৃক সম্পৃক্ত এমন কোন হাদীসকেও মওযু (জাল) বলেন নি।

অথচ ইবনে আদী, ইবনে আবি সবুরাহর অনেক হাদীস নিয়েই আলোচনা করেছেন, কিন্তু তার একটি হাদিসও তিনি মওযু বলে চিহ্নিত করেন নি, কিংবা তার ঐসব কিতাব যেখানে তিনি মওযু হাদীসগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, সেখানেও স্থান পায়নি। বাস্তব সত্য হল, ইবনে আদী যেসব হাদীস নিয়ে আলোচনা করেছেন, তার প্রত্যেকটি হাদীসই অন্যান্য নির্ভরযোগ্য রাবীদের কাছ থেকেও বর্ণিত। যার ফলে, সেসব হাদীসগুলোও প্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য রাবীদের কাছ থেকেই বর্ণিত। আর ইবনে আদী নিজেই ইবনে আবি সবুরাহর অনেক হাদীস নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মুফতী তকী উসমানী লিখেছেনঃ হযরত আলী (রদ্বিঃ) এর হাদীসটি সিহাহ সিত্তার একটি বিখ্যাত কিতাব সুনানে ইবনে মাজাহতে উল্লেখ আছে এবং ইমাম বায়হাকীর বিখ্যাত কিতাব শুয়াবুল ঈমানেও উল্লেখ আছে। তাদের উভয়েই এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এর বিশুদ্ধতা নিয়ে কোন মন্তব্য করেন নি।

ইবনে আবি সবুরাহ নামক একজন রাবী থাকায় হাদিসের কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিসীনগণ এই হাদীসকে দুর্বল বা যঈফ বলেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তিনি হাদীস জাল করতেন, তা সঠিক নয়। বাস্তব সত্য কথা হচ্ছে, তিনি মদীনার মুফতী ছিলেন; মনসুরের আমলে ইরাকের কাযী (বিচারক) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি ইমাম আবু ইউসুফের সাথে অত্যন্ত সফলও ছিলেন। তিনি ইমাম মালিকের সহযোগী ছিলেন।

একদা মনসুর, আব্বাসী খলিফা, ইমাম মালিকের কাছে ৩ জনের নাম জিজ্জেস করেন, ইমাম মালিক তার মধ্যে একজনের নাম বলেন ইবনে আবি সবুরাহ। তিনি যদি সত্যিকার অর্থেই হাদীস জালকারী হতেন, তাহলে ইমাম মালিক কখনোই তার নাম বলতেন না। তবে তার উচ্চ পদমর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তার স্মৃতিশক্তি কিছুটা কম থাকায়, অনেক ইমামগণ যেমন ইমাম বুখারী তার কিছুটা সমালোচনা করেছেন এবং তাকে যঈফ বলেছেন; কিন্তু তাকে জাল হাদীস রচনাকারি কিংবা মিথ্যুক ঘোষণা করেন নি।

ইমাম আহমদ তাকে মিথ্যুক ও হাদীস জালকারী বলেছেন। কিন্তু তার এই মন্তব্য একজনকে হাদীস জালকারী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ প্রথমত, ইমাম আহমদ ইবনে আবি সবুরাহর অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইবনে আবি সবুরাহর সমসাময়িক কোন বুজুর্গ বা মুহাদ্দিস তার সম্পর্কে এ মত পোষণ করেন নি। আর দ্বিতীয়ত, যে আরবী শব্দটি ইমাম আহমদ ব্যবহার করেছেন, তা মাঝে মাঝে এক রেওয়ায়েতের সাথে আরেক রেওয়ায়েতের মাঝে অসমাঞ্জস্যতা বা বিশৃংখলা (confusion) ইত্যাদি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়, কাউকে মিথ্যাবাদী বা হাদীস জালকারী সাব্যস্ত করার জন্য নয়।

এই কারণে অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনগণ আবু বকর ইবনে আবি সবুরাহকে দুর্বল রাবী হিসেবে সনাক্ত করেছেন, হাদীস জালকারী হিসেবে নয়।

পূর্ব যুগের মুহাদ্দিসীনদের মওযু হাদীস নিয়ে বিশাল বিশাল অনেক কিতাবই রয়েছে, কিন্তু এই হাদীসটি সেসব কিতাবের কোনটিতেই স্থান পায়নি।

এমনকি এটা সবার জানা কথা যে, ইবনে মাজাহ নিজেই প্রায় ২০ টি হাদীসকে মওযু বা জাল হিসেবে সনাক্ত করেছেন। এই হাদীসের তালিকাগুলো এখনও বিদ্যমান, কিন্তু সেখানেও ইবনে মাজাহ তার সুনানে উল্লেখিত এই হাদীসটিকে স্থান দেন নি।

অতএব, এই হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা এই যে, হাদীসটি মওযু বা জাল নয়, শুধুমাত্র দুর্বল।

হাদীছটির অবস্থানঃ

উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত হাদীছটিতে “ سبره أبى ابن ” ইবনু আবি সবুরাহ নামে জনৈক রাবী ব্যতীত অন্যান্য সকল রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। সুতরাং হাদীছটিকে বড় জোর যঈফ বলা যেতে পারে। কোন কোন মুহাদ্দিছ ইবনু আবি সবুরাহকে জাল হাদীছ রচনাকারী বলেছেন বিধায় হাদীছটিকে জাল বলা যাবে না। কারণ তিনি জাল হাদীছ রচনাকারী – কথাটি সঠিক নয়। তাঁর সম্পর্কে বিশুদ্ধ ও চূড়ান্ত রায় সেটাই যা হাফিয যাহাবী সূত্রে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, স্মৃতি শক্তির দুর্বলতার কারণে তিনি যঈফ রাবী ছিলেন।

এই কারণেই ইমাম যুরকানী হাদীছটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, যদিও তার সনদ দুর্বল কিন্তু তার রাবীগণ মিথ্যুক নন, কিংবা জাল রচনাকারী নন। সর্বোপরি তার সমর্থনে আরো হাদিছ পাওয়া যায় বিধায় হাদীছটির ভিত্তি রয়েছে।

যেমন শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়া (৭/৩১২) তে এসেছেঃ



সুনানে ইবনু মাজাতে আলী (রদ্বিঃ) থেকে মারুফ হিসেবে যঈফ সনদ দ্বারা হাদীছটি উল্লেখ হয়েছে। তেমনিভাবে আল মুনযিরী ও হাফিয আল ইরাকী তাঁর দুর্বলতার কারণ উল্লেখ করতঃ নিশ্চয়তার সাথে বলেছেন। কিন্তু হাদীছটির মধ্যে কোন মিথ্যুক ও জাল হাদীছ রচনাকারী নেই এবং তার সমর্থনে আরো হাদীছ আছে যা তার ভিত্তি আছে বলে প্রমাণ করে।

অনুরূপ ভাবে আল্লামা ইরাকীও হাদীছটিকে দুর্বল বলেছেন ঠিক কিন্তু জাল বলেন নি। তাঁর ভাষায়ঃ



“ শবে বরাতের ফজীলত ও আমল সম্পর্কীয় যে হাদীছ আলী (রঃ) সূত্রে ইবনু মাজাহতে রয়েছে তার সনদ দুর্বল। ”

মোট কথা, হাদীছটি একজন রাবীর কারণে দুর্বল তবে তার ভিত্তি রয়েছে অন্যান্য হাদীছের সমর্থন পাওয়া যাওয়ায় তার উপর আমল করা যাবে।

মাহে শা'বান এবং শাবানের পঞ্চদশে রোযা রাখার গুরুত্ব

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ক্বায়েস (রহঃ) হযরত আয়েশা (রদ্বিঃ) হতে বর্ণনা করেনঃ

" রসূল (সঃ) এর নিকট নফল রোযার জন্য অন্যান্য মাসের তুলনায় শাবান মাস ছিল অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর তিনি শাবানের রোযাকে রমজানের সাথে মিলিয়ে দেয়াকে আরও বেশী পছন্দ করতেন। "

( আবু দাউদ - সিহাহ সিত্তাহর অন্তর্ভুক্ত )

হযরত উসামাহ বিন যাইদ (রদ্বিঃ) কর্তৃক বর্ণিত, হযরত উসামা (রদ্বিঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল (সঃ), আমি আপনাকে রমজান ছাড়া এ পরিমাণ রোজা রাখতে অন্য কোন মাসে দেখিনি। যে পরিমাণ শাবান মাসে রাখেন। (উত্তরে) রসূল (সঃ) ফরমান, এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী একটি মাস, যে মাসের ফজীলত থেকে মানুষ বঞ্চিত থাকে। অথচ এ মাসে মানুষের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি রোজা অবস্থায় আমার আমল পেশ করাকে পছন্দ করি বিধায় রোজা রাখছি।

( নাসায়ী শরীফ - সিহাহ সিত্তাহর অন্তর্ভুক্ত )

তিনি বলেন, রসূল (সঃ) শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোন মাসে এত বেশী (নফল) রোযা রাখতেন না। তিনি পূর্ণ শাবান বর্ণনান্তরে কিছু দিন ব্যতীত পুরো শাবানে রোযা রাখতেন।

( বুখারী ও মুসলিম - কোরআনের পর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব বলে সমাদৃত )

উল্লেখিত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রসূল (সঃ) শাবান মাসে বেশী বেশী রোযা রাখতেন তাই হুজুরের উম্মত হয়ে আমাদেরও এই মাসে বেশী বেশী রোযা রাখা দরকার তবে শাবান ২৭, ২৮, ২৯ এ তিন দিন রোযা সঙ্গত কারণে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।

অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক মাসে ১৩, ১৪, ১৫ এ তিন দিন রোযা রাখার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমনঃ

আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রদ্বিঃ) বলেনঃ রসূল (সঃ) ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা রাখা পুরো বছর রোযা রাখার সমতুল্য।

( বুখারী ও মুসলিম )

আবু দাউদ শরীফে হযরত কাতাদাহ (রদ্বিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

রসূল (সঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আইয়ামে বীজের রোযা রাখতে (আর তা হল প্রত্যেক মাসের) তের, চৌদ্দ এবং পনের তারিখের রোযা।

( আবু দাউদ, নাসাঈ, সূত্র সহীহ )

এ হাদীছদ্বয়ের দ্বারা প্রতীয়মান হয়, প্রত্যেক মাসের ১৫ তারিখ রোযা রাখার নির্দেশ সহীহ হাদীছে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে। শাবানের পঞ্চদশ দিনে রোযা রাখা অত্যন্ত ছাওয়াবের কারণ।

তদুপরি আমরা ইবনে মাজা শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত আলী (রদ্বিঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছটি পূর্বে উল্লেখ করে এসেছি যে, শাবানের পনের তারিখ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। এ হাদীছটি সুস্পষ্ট নির্দিষ্ট শাবানের পঞ্চদশ দিনের রোযা রাখার ব্যাপারে বর্ণিত।

উল্লেখ্য যে, পূর্বে এ হাদীছের পর্যালোচনায় বলা হয়েছিল যে, হাদীছটি জাল কিংবা অত্যাধিক দুর্বল নয়। শুধু রাবীর স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে হাদীছটিকে কিছুটা দুর্বল বলা হয়েছে। আর কোন আমলের ফযীলত প্রমাণে এ ধরণের হাদীছ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য। এর কারণে ফকীহগণ শাবানের পঞ্চদশ দিবসে রোযা রাখাকে মুস্তাহাব বলে সাব্যস্ত করেছেন।

এ ব্যাপারে উলামায়ে উম্মত ও ফুকাহায়ে কেরামের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হলোঃ

১। আল্লামা যুরকানী মালেকী (রহঃ) ১৫ শাবান রোজা রাখাকে মুসতাহাব বলেছেন। তিনি বলেনঃ



" শা'বানের পনের তারিখ রাত আগমন করলে রাত জেগে থাকো তথা ইবাদতের মাধ্যমে রাতকে সতেজ করো এবং আল্লাহ তাআলার আনুগত্য প্রকাশার্থে প্রশান্তচিত্তে পদক্ষেপ গ্রহণ করো আর দিনের বেলায় রোযা রাখ। কেননা এসব কিছু মুসতাহাব। "

২। শায়খ আলা উদ্দীন আবুল হাসান আল হাম্বলী (মৃঃ ৮৮৫ হিঃ) লিখেনঃ





" শায়খ ইবনুল জাওযী আসবাবুল হিদায়াতে বলেছেন, হারাম মাসসমূহে এবং পূর্ণ শাবান মাসে রোজা রাখা মুসতাহাব। হারাম মাসসমূহের ব্যাপারে মাজদও স্পষ্টভাবে এটাই বলেছেন এবং আরো বলেছেন শাবানের পনের তারিখের রোজা আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। "

৩। হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেনঃ



" শাবানের পনের তারিখ রোজা রাখা মুসতাহাব। "

৪। হযরত মাওলানা মুফতী শফী সাহেব (রহঃ) শবে বরাতের মাসনূন আমলসমূহের আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ



" শবে বরাত সকালে তথা পনের তারিখে রোজা রাখ। "

৫। হযরত মাওলানা মুফতী আজীজুর রহমান সাহেব (রহঃ) একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেনঃ



" শাবান মাসের কোন তারিখে দিনে রোজা রাখা ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়। আর শাবানের তের তারিখের রোজার বিশেষ কোনো ফজীলত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে ১৫ শাবানের রোজার কথা হাদীছ শরীফে এসেছে যে, এ তারিখে রোজা রাখো। সুতরাং ১৫ শাবানের রোজা মুসতাহাব। কেউ রাখলে ছওয়াব পাবে, না রাখলে অসুবিধা নেই। "

আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী (দাঃবাঃ) তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনের তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসুলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।‘ সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’

তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্ল-হ (সঃ) নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, রমযানের দু-একদিন পূর্বে রোযা রেখো না। যাতে রমযানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।

একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শাবানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণকে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা আইয়ামে বীয এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে তরে ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এ মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনের পৃথক কোন বৈশিষ্ট নেই।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

234870
১৪ জুন ২০১৪ রাত ১১:০১
সবুজ সাথী লিখেছেন : শবেবরাত জিনিসটাই তো ভুয়া। এইটা প্রমাণ করতে গিয়া এত কষ্ট? হায়রে মুসলিম। phbbbbt
১৫ জুন ২০১৪ রাত ০৮:২২
181797
তারেক_১৩৭ লিখেছেন : উপরে হাদীস উল্লেখ আছে লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান সম্পর্কে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File