ছোটগল্প

লিখেছেন লিখেছেন যাহরে জান্নাত রুনা ১৯ মে, ২০১৪, ০৮:২৫:৪৯ সকাল

ভালোবাসা অনন্ত শ্রাবণ

যাহরে জান্নাত রুনা

মা মা দেখে যাও দাদু কাঁদছে'

ছোট্ট প্রার্থনার কন্ঠে হাহাকার।মেয়ের ডাকে সাড়া নেই আফিফার, গোছানো সংসারে উটকো জামেলার আভির্ভাব হয়েছে কাল সন্ধ্যায়, সাফিনের বাবা এসেছেন। কতো করে বুঝানো সাফিনটাকে 'বাবাকে এখানে এনোনা'। না সে শুনবে না কথা, মাসে দশ দিন এখানে থাকবেনই উনি।

প্রার্থনার হাহাকার চিৎকার স্বর বদলে হ্য়ে গেছে খিলখিল উচ্ছল তরল, দখিনের মৃদুমন্দ হাওয়া যেনো প্রার্থনার হাসির আবেশে হয়ে উঠতে চাইছে আরো সুরেল মধুর, কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না। সময়কে স্তব্দ করুণ চপেটাঘাতে নিতর করে দিয়ে দাদুর কোল থেকে এক ঝাটকায় প্রার্থনাকে টেনে নিয়ে যায় আফিফা। শুধু কেড়ে নেয়া নয়, জুরে জুরে দু একটি চড় তাপ্পড় ও পড়ে তার পিটে।

নিজেকে বড় অপরাধী লাগে শাহ মোহাম্মদ রহমানের। তিনি জানেন কোন অপরাধ ছাড়াই মার হাতে মার খেলো প্রার্থনা। অপরাধ সব তার নিজের। তিন ছেলের বাবা তিনি। তিন ছেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নি্য়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্টিত। ঢাকার কোন এক কলেজে একজন শিক্ষক, একজন বেসরকারি এক ফোন কোম্পানির জোনাল ম্যানেজার হয়ে আছে খুলনায়, ব্যাংকের বড় চাকুরী নিয়ে বড় ছেলে সাফিন সিলেটের বড়লেখায়। ছেলেদের অহেতুক জ্বালাতন দিতে ইচ্ছে করে না জনাব রহমানের, কিন্তু পরীর মতো মেয়ে প্রার্থনা তাঁকে টেনে আনে এখানে। জন্মের পর নাতনিটাকে মাত্র একবার দেখেছিলেন যখন তার বয়স ৩ বছর। ২ মাস আগে শেষ দেখা। জায়গা সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তিন ছেলে দু'মাস আগে এসেছিলো স্বপরিবারে ময়মনসিংহের শাহ বাড়িতে। মূলত প্রার্থনার মায়ায় তখনই পড়েন তিন, নাদিম ফারদিন এখনও বাচ্চা পায়নি। পুরো সংসারের একমাত্র শিশু একমাত্র আলোর ঝলমল পু্তুল প্রার্থনা।

সম্পত্তি ভাগের সময় আরেকটি চুক্তি হয়েছিলো অলিখিত রহমান সাহেব ভুলেই গিয়েছিলেন। প্রার্থনাকে দেখতে বেরিয়ে নাদিম ফারদিনদের বাসা হয়ে এখানে আসতে আসতে শতভাবে শতবার স্মরণ পড়লো তার সেই চুক্তি, আহারে বেঁচে থাকা আহারে বিবর্ণ জীবন! বড় বউ আফিফাই বেশি করে কাল রাতে মনে করিয়ে দিলো চুক্তি। অনেকটা রহমান সাহেব কে শুনিয়েই সে সাফিন কে বলে

'তোমার বাবাতো দশদিন থাকবেন, না?'

'মানে?'

'মানে জানোনা, সেই যে সম্পত্তি ভাগের সময় চুক্তি হলো তিন ভায়ের বাসায় দশদিন করে মাস কাটবে তাঁর।'

'না না ওসব কিছুনা,উনি এমনি বেড়াতে এসেছেন, তুমি টেনশন নিও না তো আমাকে ও টেনশন দিওনা।'

বউ ছেলের কথা শুনতে আর ইচ্ছে হয়নি। সকালে বারান্দায় বসলে কথাটা আবার মনে পড়ে, গন্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে এক বিন্দু অভিমানি জল। প্রার্থনা পাগলটা তা দেখে পেলে। নিজের বেদনার জল আড়াল করতে বেচারী কে একটু হাসিয়ে দেবার চেষ্টা অতঃপর......।

রহমান সাহেব আর ভাবতে পারেননা। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ান তিনি, আলতু পায়ে হেঁটে যান সেই ঘরটিতে যেখানে তাঁকে শুতে দেয়া হয়েছিলো। নিজের ব্যাগ থেকে একটা পুতলা বের করে টেবিলের উপরে রাখতে রাখতে একটুকরো কাগজে লেখেন

'বোন প্রার্থনা তুমি আমার বুড়োকালের প্রেম, তোমার প্রতি যখন আমার মায়া পড়ে তখন দাদুর নিজের বলতে আর কিছু ছিলোনা ভাই, তোমার আব্বু চাচ্চুদের সব দিয়ে দিয়েছি। তোমার দাদীর সামান্য অলংকার এগুলো আমি কাউকে দেইনি, তোমার জন্য নিয়ে এসেছিলাম, রেখে গেলাম। আমি ময়মনসিংহের যে বাড়িটিতে থাকতাম ঐ বাড়িটাও তোমার আব্বু চাচ্চুকে দিয়ে দিয়েছি বলে ওখানে যাওয়ার অধিকার আমার নাই, কোথায় যাচ্ছি জানিনা, যেখানেই যাই তোমার জন্য প্রার্থনা থাকবে খুব.............

বিষয়: বিবিধ

১০৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File