সরকার ভারত থেকে ডিজিটাল ডাক্তার আনবে কি?
লিখেছেন লিখেছেন আলইগ ইবনে লেণদুপ দোরজি বিন মিরজাফর ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:২০:১৩ রাত
এত টাকা ভর্তি ফি হলে কারা তাদের সন্তানদের ডাক্তারী পড়াতে পারবেন?আবার নাকি পাশ নাম্বার বাড়িয়ে ২০ থেকে ৪০ করা হয়েছে।পত্রিকার রিপোর্ট দেখুন--
মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া শর্তের বেড়াজালে শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়েছে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো। এতে শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হবে বলেও আশঙ্কা করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। ফলে চিকিৎসক তৈরির কারিগর এ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে দেশের মেধাবীদের একটি অংশ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। আগামী বছর থেকে বেসরকারিভাবে যে বিপুল পরিমাণ ডেন্টিস্ট তৈরি হতো তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের ঘোষিত ভিশন ২০২১ লক্ষ্য অর্জনে আরো ৬৭ হাজার নতুন ডাক্তার ও ১০ হাজার ডেন্টিস্ট প্রয়োজন। কিন্তু ভর্তির ক্ষেত্রে এই নীতিমালা বহাল থাকলে ভিশন ২০২১ অর্জন ব্যর্থ হবে বলে মনে করেন তারা।
জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী না পাওয়ায় প্রায় অর্ধশত মেডিকেল কলেজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬ হাজার ৫১০ আসনের বিপরীতে এসব কলেজগুলোতে মাত্র ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। ৬৬টি মেডিকেলের মধ্যে মাত্র ১০টি ছাড়া সবক’টির ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসন এখনো শূন্য পড়ে আছে। কোনো কোনো মেডিকেল কলেজে ১০ থেকে ১৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে! কয়েকটি মেডিকেলে এখনো কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়নি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর ভর্তির শেষ সময় অথচ এখনো প্রতিষ্ঠানগুলোর এই অবস্থা।
সূত্র মতে, রাজধানীর মেডিকেল কলেজগুলোতে ২০-২৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বাইরের কলেজগুলোর পরিস্থিতি আরো খারাপ। ১০ থেকে ১৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এসব মেডিকেল কলেজে। কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ এখনো শিক্ষার্থী পায়নি। এক্ষেত্রে বেশি বিপাকে রয়েছে বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলো। অধিকাংশ ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়নি। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) ট্রেজারার ইকরাম হোসেন বিজু বলেন, ৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ৬ হাজার ৫১০ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৫শ’র কিছু বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মেডিকেলে ভর্তির কোটা পূরণ হয়েছে। অন্য মেডিকেলে ১০ থেকে ২৫টি কোটা পূরণ হয়েছে। তাই পাস নম্বর না কমালে মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে শুধুমাত্র ৫ নম্বর কম পাওয়ার জন্য সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছে না।
জানা গেছে, চলতি বছর থেকে মেডিকেলে ভর্তির জন্য পাস নম্বর ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভর্তি ফি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। যদিও অভিযোগ রয়েছে, অনেক মেডিকেল কলেজ বাড়তি ফি আদায় করছে। তবে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকরা ভর্তি ফি সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মেই নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর কমানোর বিষয়ে কয়েক দিন আগে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকরা। ওই দাবি আমলে নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সভা করে ভর্তির জন্য পাস নম্বর ৪০ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) সূত্রে জানা গেছে, বারডেম, হলি ফ্যামিলি, ন্যাশনাল মেডিকেল, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ মেডিকেল, পপুলার মেডিকেল, আনোয়ার খান মডার্ন, গ্রিন লাইফ, চট্টগ্রামের মা ও শিশু মেডিকেল, রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জের জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থী ভর্তির নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারেনি। বিপিএমসিএ’র সভাপতি ও ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, পাস নম্বর ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করায় কমসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ কারণে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না তারা। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ৬৫ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে নিশ্চিত হচ্ছে। এ ধরনের সিদ্ধান্তে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাঘাত ঘটবে।
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ মোঃ সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, ভর্তি প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দেয়ায় শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়েছে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো। তিনি বলেন, একেক বছর একেক রকম নিয়ম করা হচ্ছে। গত বছর ভর্তির ক্ষেত্রে নম্বর ছিল ১২০। এতে পাসের নম্বর ছিল ২০। এ বছর তা বাড়িয়ে পাশের নম্বর ৪০ করা হয়েছে। তিনি জানান, গত বছরই বেসরকারি মেডিকেলে প্রায় ২৫ শতাংশ আসন এবং ডেন্টালে প্রায় ৬০ শতাংশ আসন খালি ছিল। নতুন নীতিমালায় পাস নম্বর ৪০ করায় ৮০ শতাংশ মেডিকেল কলেজ বন্ধ হয়ে যাবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৪ হাজার ৪শ’ ৩০ জন চিকিৎসক, ১৬ হাজার ৪শ’ ৫০ জন নার্স এবং বিভিন্ন পার্যায়ের আরো ৪০ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়বে। শাহ মোঃ সেলিম বলেন, বর্তমান নীতিমালার কারণে জিপিএ ১০ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হতে পারবে না। অথচ জিপিএ ৮ পেয়েও শুধুমাত্র টাকার জোরে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশ থেকে ডিগ্রী এনে দেশে প্র্যাকটিস করবে। এটাকে এক দেশে দুই নীতি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএমসিএ’র উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য ও শমরিতা মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে গড়ে প্রতি ১৫ জনে এক জন বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হয়। এক্ষেত্রে পাস নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ২০ করলে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এবছর সরকার ভর্তির ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। অথচ ভারতে গড়ে ভর্তি ফি ৭৫ লাখ রুপি, নেপালে ৪৫ লাখ রুপি, মালয়েশিয়ায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। মকবুল হোসেন বলেন, সরকার দ্বৈত নীতি গ্রহণ করায় জিপিএ ৮ প্রাপ্ত ৭৭৬ জন ধনী শিক্ষার্থী বিএমএন্ডডিসির অনুমতি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। যার ফলে দেশের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর জিপিএ ১০ পেয়েও দেশে অনেকে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারছে না। তিনি পূর্বের ন্যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রেও নিজস্ব উদ্যোগে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি প্রদানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সরকার সবসময় বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে, সরকার চায় দেশে ভালো মানের হাসপাতাল ও কলেজ স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগক্তারা যেন এগিয়ে আসেন। কিন্তু তাই বলে তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করবেন তা মেনে নেয়া যায় না। এজন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো অনুমোদনের শর্ত ও আইন মেনে কাজ করছে কিনা তা নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। কলেজগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। যদিও এ সিদ্ধান্তকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সাথে সংশ্লিষ্টরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের মতে, শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা শিথিল না করা হলে এই পেশার সাথে জড়িতরা বিপাকে পড়বে। একই সঙ্গে ভর্তি সংক্রান্ত শর্তে পাস নম্বর ৪০ পাওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের ভিশন ২০২১ এর ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে মনে করেন তারা।
তবে বিপিএমসিএ’র সঙ্গে ভিন্নতা পোষণ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, মেধাহীন ছাত্রদের জন্য মেডিকেল শিক্ষা নয়। সব শিক্ষার্থীদের মেডিকেল শিক্ষায় পড়া উচিত না। তাই শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এই মানদ- করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি মেডিকেলের নামে অনেকে ব্যবসা করছেন। সব সময় ব্যবসার দিকে না তাকিয়ে কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
পোস্ট গ্রাজুয়েট ডক্টরস্ এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু বলেন, বিদেশের মাটিতে বিশেষ করে ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ বা শ্রীলংকায় আমাদের মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার গুণগতমানের জন্য একটা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। এ কারণে প্রতিবছর ৪০০ থেকে ৫০০ ছাত্র-ছাত্রী এদেশে পড়তে আসে। ফলে দেশ পাচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা এবং বহির্বিশ্বে অর্জন করছে সুনাম। তিনি বলেন, গুণগতমানসম্পন্ন ডাক্তার হতে হবে। ডাক্তারদের মেধা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে। তাই সংখ্যা বাড়িয়ে নয়, গুণগতমানের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ভাবুন দেশের সবাই---সরকার কি দেশী না বিদেশী।
সরকারের উচিত অধিক ছাত্র-ছাত্রীদের ডাক্তারি পাশ করার পরিবেশ স্রিস্টি করা,দেশের পাশ করা ডাক্তারদের বাইরে পেশার জন্য পাঠানোর ব্যাবস্থা করা তা না করে করছেন উল্টোটা।একেই বলে শিক্ষিত সরকারের আহাম্মকী চিন্তা ভাবনা!!!
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ উচিত কথা বলেছেন আর্সলান সাহেব
মন্তব্য করতে লগইন করুন