মসজিদে কুবা'র সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

লিখেছেন লিখেছেন এনামুল হক মানিক ১৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৩:৪১ সন্ধ্যা



মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নবুয়ত লাভের পর মক্কায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। ইসলাম প্রচারের কারণে কুরাইশরা মহানবী (সঃ) ও তাঁর সাহাবাদের (রাঃ) উপর নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়।নির্যাতনের পরও মহানবী (সঃ) দ্বীনের দাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকলে কুরাইশরা এক পর্যায়ে মহানবী (সঃ) কে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহন করে। এমতাবস্থায় আল্লাহর আদেশক্রমে মহানবী (সঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে ইসলামের শক্রদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ৬২২ খষ্টাব্দের ২২ শে সেপ্টেম্বর মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন।



মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আসছেন এই সংবাদ পেয়ে মদীনাবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন। প্রতিদিন দলে দলে আবাল-বৃদ্ধ-বনীতা মদীনা থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত কুবা পল্লীর হাররা নামক স্থানে জড়ো হতে লাগলেন এবং তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন। কিন্তু তাঁকে না দেখে সবাই হতাশ হয়ে ফিরে যেতেন। একদিন এক ইহুদী দূর্গ প্রাচীরে উঠে বহু দূরে ধূলি উড়তে দেখে চিৎকার দিয়ে মদীনাবাসীকে হযরত মহানবী (সঃ) এর আগমনের সু- সংবাদ জানায়। সাথে সাথে মদীনাবাসী আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠে এবং মহানবী (সঃ) কে সাদরে বরণ করে নেন।



মদীনায় হিজরত করে নবী করীম (সঃ) সর্বপ্রথম আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি কুলসুম ইবনুল হিদমের আতিথ্য গ্রহন করেন। মহানবী (সঃ) এখানে ১৪ দিন অবস্থান করেন। এখানে অবস্থানকালে তিনি কুলসুম ইবনুল হিদম (রাঃ) এর খেজুর শুকানোর পতিত জমিতে মসজিদে কুবা তৈরী করেন । মসজিদে কুবা উম্মতে মোহাম্মদীর (সঃ) সর্বপ্রথম মসজিদ। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসসিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান।পবিত্র কোরআনের সুরা তওবার ১০৮ নং আয়াতে এই মসজিদের কথা উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন “যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর (মসজিদে কুবা) -তাই বেশী হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।” (সূরা তাওবা, আয়াত ১০৮)



মসজিদে কুবা প্রথম নির্মাণ থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পূনঃনির্মাণ করা হয়। মহানবী (সঃ) এর পর ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান ( রাঃ) তাঁর খিলাফতকালে সর্বপ্রথম মসজিদে কুবার সংস্কার ও পূণঃনির্মাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরো সাত বার এই মসজিদের পূণঃনির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। অনেক পুরোনো ও জীর্ন হয়ে যাওয়ার পর সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে মসজিদটি পূণঃনির্মাণ করা হয়। এই মসজিদ নির্মাণে পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়।

চার মিনার ও দোতলা বিশিষ্ট মসজিদে কুবার ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোটো গম্বুজ রয়েছে। তাছাড়া ছাদের অন্য অংশে আছে গম্বুজের মতো ছোটো ছোটো অনেক অবয়ব।পাশে আছে হরিৎ খেজুরের বাগান যা দেখলে চোখ জুড়ে যায়।হলদে বিকেলে দূর থেকে মসজিদটি দেখলে হৃদয় ভরে যায়।

মসজিদে নববীর দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই মসজিদের দূরত্ব মসজিদে নববী থেকে ৩•২৫ কিঃ মিঃ । মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) ১০ বছর কাটিয়েছেন, এ সময়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) পায়ে হেঁটে অথবা উটে আরোহণ করে কুবা মসজিদে যেতেন । এরপর তিনি সেখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতেন।হাদীস শরীফে বর্ণনা আছে যে, “মদীনার জীবনে মহানবী (সঃ) প্রত্যেক শনিবার কখনো পায়ে হেঁটে, আবার কখনো উটে আরোহন করে মসজিদে কুবায় তাশরীফ আনতেন। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত উসাইদ ইবনে হুজাইব আল আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন, মহানবী (সঃ) এরশাদ করেছেন “মসজিদে কুবায় এক ওয়াক্ত নামায আদায় করা সওয়াবের দিক থেকে একটি উমরার সমতুল্য।” (তিরমিযী)

মসজিদে কুবার এই সম্মান ও মর্যাদার কারণে মহানবী (সঃ) এর ইন্তিকালের পরও বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) যেমন হযরত আবূ বকর (রাঃ) হযরত উমর (রাঃ) প্রমুখগণ মহানবী (সঃ) এর অনুকরণে প্রায়ই মদীনা থেকে মসজিদে কুবায় আসতেন ও তাতে নামায আদায় করতেন। মহানবী (সঃ)এর অনুসরণে এখানে আগমন করা ও দু’রাকাত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব।

বিষয়: বিবিধ

৫২১৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

285262
১৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
231378
এনামুল হক মানিক লিখেছেন : শুভেচ্ছা রইলো সুশীল।
285279
১৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৯
হতভাগা লিখেছেন : ছবিসহ সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন।

এটা মদিনায় মহানবীর স্থাপন করা প্রথম মাসজিদ ।

মুনাফেকরা এটার সমান্তরাল ভাবে আরেকটা মাসজিদ মাসজিদ-এ-জেরার বানিয়েছিল যা তাকওয়ার উপর নির্মিত হয় নি , বানানো হয়েছিল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে । নবীজীকে মুনাফেকরা এখানে এসে নামাজ পড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছিলো ।

পরে আল্লাহ তায়ালা ওহী মারফত নবীজীকে জানিয়ে দিলেন মুনাফেকদের ষড়যন্ত্র এবং সেটাকে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিলেন ।
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৬
231379
এনামুল হক মানিক লিখেছেন : মসজিদে দিরার,

শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ।
285290
১৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৪
ফেরারী মন লিখেছেন : কোনকিছু নতুন জানলে বা শিখলে জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। এগুলো জানা বিষয় তবুও নতুন করে পড়ে নতুন কিছু শিখতে পারলাম। ধন্যবাদ সুন্দর একটি টপিক্স জানানোর জন্য। Rose Rose Rose
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৬
231381
এনামুল হক মানিক লিখেছেন : আপনি ঠিক বলেছেন, শুভেচ্ছা রইলো।
285313
১৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
মসজিদে কুবা ইসলামের প্রথম মসজিদ।
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৭
231382
এনামুল হক মানিক লিখেছেন : শুভেচ্ছা নিন।
285371
১৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:০৬
কাহাফ লিখেছেন :
ইসলামী ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদে ক্বুবা সম্পর্কে চমৎকার ছবি সংযোজনে সাবলীল সুন্দর উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহউ খাইরান আপনাকে।!!
মহান আল্লাহর কাছে মসজিদে ক্বুবায় অন্ততঃ আরেক বার নামাজ আদায় করার তৌফিক চাই!
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৭
231383
এনামুল হক মানিক লিখেছেন : আমিন,

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File