শ্রমিক নিষ্পেষনের ডিজিটালাইজেশনঃ তোবা গার্মেন্টস ইস্যু

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মুসাফির ০১ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:০০:১৫ রাত

শ্রমিকেরা সাংবাদিকদের বলছেন, তাদের মজুরি না দিয়ে তিন মাস খাটিয়ে যে গার্মেন্টস পণ্যগুলো উৎপাদন করা হল সেগুলোর বিপরীতে আয় করা টাকাই তো শ্রমিকদের তিন মাসের মজুরির চেয়ে অনেক বেশি। বিজিএমইএ কি সেই টাকাগুলোর কোনো খবর নিয়েছে? তোবা গ্রুপের মালিকের সব ব্যাংক একাউন্ট কি চেক করেছে? তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের মে থেকে জুলাই এই তিন মাসের বেতন, ওভারটাইম ও বোনাসবাবদ বকেয়া প্রায় ৪ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার জন্য বিজিএমইএ'র এক সপ্তাহ সময় লাগার কোন যৌক্তিকতা নেই, এটি সময়ক্ষেপন করে আন্দোলনকে নস্যাৎ করারচক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।

তোবা গ্রুপের ৫টি কারখানার শ্রমিকের অনশনের আজ ৫ম দিন চলছে। আমরণ অনশনের ৪ দিন পরে বিজিএমইএ শ্রমিকদের দাবী না মেনে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে ' আমরাসর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যাতে করে সরকার ও ব্যাংকের সহযোগিতায় কারখানা কর্তৃপক্ষ অচিরেই তোবা ফ্যাশন লি: এর শ্রমিক ভাইবোনদের বকেয়া বেতন ও ভাতা প্রদান করতে সক্ষম হয়।' লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে 'সুনির্দিষ্ট দিন তারিখের কথা না থাকলেও বিজিএমইএ'র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান কচি মুখে সাংবাদিকদের জানান-' এক সপ্তাহের মধ্যে তোবার শ্রমিকদের বকেয়া পাওনারআংশিক তারা পরিশোধ করার চেষ্টা করবেন।'

বকেয়া বেতনের জন্য শ্রমিকেরা বারবার রাস্তায় নেমেছে, কারখানার সামনে উত্তর বাড্ডার রাস্তায় পুলিশের মার খেয়েছে, রাবার বুলেটে আহত হয়ে বার বার হাসপাতালে গিয়েছে। বিজিএমইএ ঘেরাও করেছে, শ্রম মন্ত্রণালয়েও গিয়েছে। সর্বশেষ গত ২৬ জুন ২০১৪ তারিখে তোবা গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার (মিতা) সহ কারখানার ব্যাবস্থাপক এবং খোদ বিজিএমইএ’র প্রতিনিধি ফয়েজ আহমেদ, রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে আব্দুল আহাদ আনসারী লিখিত ভাবে শ্রমিক প্রতিনিধিদের কাছে অঙ্গীকার করে যে- মে মাসেরমজুরী ৩ জুলাই এর মধ্যে, জুন মাসের মজুরি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এবং ঈদ বোনাস ও জুলাই মাসের ১৫ দিনের মজুরী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রদান করা হবে। বেতনপাবে এই আশায় কাজ করে যাচ্ছিল শ্রমিকেরা। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ঈদের আগে শ্রমিকদের ভয়াবহ সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ৫ম দিনে ৬৬জনের মত শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

শ্রমিকেরা সাংবাদিকদের বলছেন, তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের মে থেকে জুলাই এই তিন মাসের বেতন, ওভারটাইম ও বোনাসবাবদ বকেয়া প্রায় ৪ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার জন্য বিজিএমইএ'র এক সপ্তাহ সময় লাগার কোন যৌক্তিকতা নেই, এটি সময়ক্ষেপন করে আন্দোলনকে নস্যাৎ করারচক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। শ্রমিকদের মজুরি না দিয়ে তিন মাস খাটিয়ে যে গার্মেন্টসপণ্যগুলো উৎপাদন করা হল সেগুলোর বিপরীতে আয় করা টাকাই তো শ্রমিকদের তিন মাসের মজুরির চেয়ে অনেক বেশি। বিজিএমইএ কি সেই টাকাগুলোর কোনো খবর নিয়েছে? তোবা গ্রুপের মালিকের সব ব্যাংক একাউন্ট কি চেক করেছে?

তাহলে সে টাকা গেল কোথায়? বিজিএমইএ প্রতিনিধি আহাদ আলি আনসারীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলা কথা থেকে কিন্তু পরিস্কার হয়ে যায় সে টাকা তোবা গ্রুপের মালিক পক্ষ স্রেফ সরিয়ে ফেলেছে: “ব্যাংকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই টাকা তোবা গ্রুপেরই অন্য কারখানা চালাকি করে ব্যাংক থেকে নিয়ে যায়”। বিজিএমইএপ্রতিনিধির এই কথা থেকে স্পষ্ট যে শ্রমিকদের বকেয়া সম্পূর্ন রুপে পরিশোধ করার অর্থ তোবা গ্রুপের কাছে ছিল কিন্তু সেই টাকা তোবা গ্রুপেরই অন্য কারখানা চালাকি করেব্যাংক থেকে নিয়ে যায়। প্রশ্ন হলো, বিজিএমইএ সেই টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য কি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে? সরকারই বা কি করছে? তাহলে তোবা গ্রুপের মালিকপক্ষের ব্যাংক একাউন্টগুলো জব্দ না করে এলসির বিপরীতে দুই মাসের বকেয়া পরিশোধ করার জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যাংক ঋণের কথা কেন বলা হচ্ছে!

বিজিএমইএর এই সংবাদসম্মেলনে বিভিন্ন ভাবে তাজরিন হত্যাকান্ডের দায়ে তোবা গ্রুপের খুনী মালিকদেলওয়ারের মুক্তিৱ সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। জনাব এসএম মান্নান কচি সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেছেন যে তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেনের জামিন হয়ে গেলে সমস্যা মিটে যাবে। তিনি আরো বলেছেন, মালিক কারাগারে থাকায় অনেক বিদেশি ক্রেতাই সেখানে কার্যাদেশ দিচ্ছে না। আর সালাম মুর্শেদী বলেন, “ব্যাংক কিন্তু সব সময় ব্যবসাকে টাকা দেয় না। অনেক সময় এর পেছনের মানুষটাকেও দেখে।” সংবাদসম্মেলনের এইসব বক্তব্য থেকে দেখা যাচ্ছে তাজরিন মালিক দেলওয়ারের কারাগারে থাকাকেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের প্রধান অন্তরায় হিসেবে হাজির করার চেষ্টা করেছে বিজিএমইএ। মালিক কারগারে থাকাই যদি মূল সমস্যা হয়, তাহলে প্রশ্ন হলো, মালিক দেলওয়ার তো কারাগারে আছে ফেব্রুয়ারি থেকে এবং সে কারাগারে থাকা অবস্থাতে এতদিনকারখানায় নিয়মিত কাজ কিভাবে হলো, কিভাবেই বা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্তশ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ হলো? তাছাড়া কার্যাদেশ যদি নাই পাওয়া যায় তাহলে মে থেকেজুলাই এই তিন মাস শ্রমিকদেরকে দিয়ে দিন রাত কিসের কাজ করানো হলো? লাখ লাখ পিস শিপমেন্টই বা কিসের হলো? মালিক ছাড়া যদি বেতন পরিশোধ নাই করা যায় তাহলে মালিক ছাড়াকারখানায় শ্রমিকদেরকে খাটানো হলো কেন এবং বিজিএমইএ লিখিত ভাবে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যেসমস্ত বকেয়া বেতন পরিশোধ করার অঙ্গীকারই বা করল কিসের ভিত্তিতে? বাস্তবে এসবই হলো শ্রমিকদেরকে জিম্মি করে খুনী মালিক দেলওয়ারের জামিন আদায় করার পায়তারা।

এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী- তোবাগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন জামিন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। আগামী রোববার-সোমবারের মধ্যে তিনি মুক্তি পেতে পারেন বলেও তিনি জানান। সুনির্দিষ্ট যে দুটি দাবী নিয়ে শ্রমিকেরা অনশন শুরু করেছে ,তার একটি সকল শ্রমিকের ৩মাসের বকেয়া মজুরী, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করণ এবং অন্যটি শ্রমিক হত্যাকারী খুনীমালিক দেলোয়ারের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। দেখাযাক এবারো শ্রমিকদের সামনে মুলা ঝুলিয়ে মালিক পক্ষ জিততে পারবে কি না

তাই বলি, শ্রমিক সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান একজায়গায় আছে। রসুল সা: বলেছেন, ” তোমরা শ্রমিকের ঘাম শূকানো আগেই তাদের পাওনা পরিশোধ করে দাও”। আর এর হেরফের হলেই সে যেই হোক না কেন, তাকে শান্তির আওতাই আনা হোক।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

249951
০১ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:২০
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আশা করা যায় মালিক পক্ষ জিততে পারবে, এরকম ঐতিহাসিক রেকর্ড ইংল্যান্ডের ভুরি-ভুরি রয়েছে। আর যদি মালিক পক্ষ কোন ক্রমে হেরে যায় – তবে সেটা এ্য্যক্সিডেন্ট!
০১ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:২৫
194279
স্বপ্নচারী মুসাফির লিখেছেন : প্রথম কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। তবুও আশায় বুক বাধি.....
249977
০১ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমাদের নৈতিক অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গিয়েছে যে যিনি নির্বাচিত হন সিবিএ কিংবা ট্রেড এসোসিয়েশন এর কোন পদে তার সদস্যদের সকল অন্যায় কে সমর্থন করা কেই সঠিক বলে মনে করেন।এই অসৎ সুবিধাগুলি পাওয়ার জন্যই চেম্বার বা ট্রেড ইউনিয়নগুলি কোন সৎ মানুষকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেনা।
০২ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:০৩
194328
স্বপ্নচারী মুসাফির লিখেছেন : কারন আমরা জাতি হিসাবে তো অন্যায়ের লালনকারী হয়ে যাচ্ছি।
250022
০২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:০৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : Jajakallahu khair for raising this important issue.
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৫৬
206133
স্বপ্নচারী মুসাফির লিখেছেন : Waa-ieakaHappy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File