বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি শ্রমিকের কান্নার ঢেউ
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী মুসাফির ২৬ জুন, ২০১৪, ০৬:২৮:৪৩ সন্ধ্যা
বিশ্বের অন্যতম পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্কের পোশাকের লেবেলে হাতে সেলাই করে কাচা হাতে লেখা শ্রমিকদের করুণ আঁকুতি সাড়া ফেলেছে বিশ্বমিডিয়ায়। মিরর, মেট্রো, গার্ডিয়ানের মতো পত্রিকা ফলাও করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনগুলো ছিল বৃহস্পতিবারের সর্বাধিক পঠিত প্রতিবেদনের তালিকায়ও।
২০১৩ সালের এপ্রিল বাংলাদেশের রানা প্লাজা ধসে নিহত ১১শ’র বেশি মানুষের কান্না যেন বাসা বেঁধেছে ওই লেবেলগুলোতে। রানা প্লাজা ধসের সময় ভবনটিতে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি হচ্ছিল তাদের মধ্যে একটি ছিল প্রাইমার্ক। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের নামও।
এখন পর্যন্ত তিনজন নারী তাদের কেনা গরমের পোশাকের লেবেলে পেয়েছেন হৃদয়স্পর্শী এসব লেখা। তিন নারীর একজন সোয়ানসি, একজন সাউথ ওয়েলস ও আরেকজন নর্দান আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের।
প্রথমে ২৫ বছর বয়সী সোয়ানসির রেবেকা তার পোশাক ধোলাইয়ের সময় লেবেলে হাতে সেলাই করে ‘ফোর্সড টু ওয়ার্ক এক্সটিং আওয়ারস’ লেখা দেখে আঁতকে ওঠেন। তাকে লেখাটি নাড়া দেয় প্রবলভাবে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জানান প্রাইমার্ককে। তবে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারে নি।
এ খবর প্রকাশের পর জোনস নামে ২১ বছর বয়সী আরেক তরুণী জানান তিনি তার পোশাকের লেবেলে পেয়েছেন একইভাবে লেখা ‘ডিগ্রেডিং সুয়েটশপ কন্ডিশনস’।
এই দুই নারী একে অন্যকে না চিনলেও প্রাইমার্কের শোরুম থেকে ১০ পাউন্ড দিয়ে তাদের পোশাক কেনেন।
পোশাক শ্রমিকদের প্রতিকূল পরিবেশে বেশি সময় খাটিয়ে কম মজুরি দিয়ে কাজ করানোর বিরুদ্ধে এটাকে বড় প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন ক্রেতারা। আর এসব পোশাকের বেশিরভাগের যোগানদাতা বাংলাদেশের শ্রমিকরা।
জোনস বলেন, আমি সত্যিই খুব ব্যথিত হয়েছিলাম যখন লেবেল থেকে জানলাম বিরুদ্ধ পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। আমি প্রাইমার্ক থেকে অনেক পোশাক কিনি, কিন্তু আর না। এই লেবেল আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে আমাদের প্রিয় এসব পোশাক কত কষ্টে তৈরি হয়। আমি জানি না এভাবে প্রতিবাদ জানানোর পরিকল্পনা কার বা কীভাবে এটা লেবেলে যুক্ত হলো। কিন্তু এটা আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।
জোনস তার পোশাকটির একটি ছবি তুলে টুইটারে টুইট করেন। তিনি বলেন, এটা পরার পর আমার তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন মারা যাচ্ছি। কিন্তু পরে জানলাম প্রাইমার্কের আরও পোশাকে এই লেবেল পাওয়া গেছে।
এর আগে রেবেকা জানান, তিনি আর কখনই প্রাইমার্কের পোশাক পরবেন না। কারণ বিদেশি ক্লান্ত শ্রান্ত শ্রমিকের তৈরি এ পোশাক জেনে পরতে তিনি রীতিমতো ভয় পাচ্ছেন।
নর্দান আয়ারল্যান্ডের আরেক ক্রেতা কারেন উইসিংসকা বেলফাস্ট থেকে কেনা তার দু’টি ট্রাউজারের লেবেলে একই ধরনের লেবেল পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
তবে প্রাইমার্ক তার ট্রাউজারটি তৈরি করেছে চীনের কারাগারের শ্রমিকদের মাধ্যমে। কারেন বলেন, আমি লেবেলে একটি নোট পেয়ে খুবই ভেঙে পড়ি, ব্যথিত হই। আরও কষ্ট পাই যখন জানতে পারি এটি প্রতিকূল শ্রমপরিবেশে এটি কারাগারে তৈরি হয়েছে!
কিন্তু এতকিছুর পর প্রাইমার্কের একজন মুখপাত্র এ ঘটনাকে ‘অদ্ভুত’ বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি ক্রেতাদের তাদের পোশাক ফিরিয়ে দিতে বলেন তদন্তের জন্য।
তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করছি কীভাবে অরিজিনাল লেবেলের সঙ্গে বাড়িত এ লেবেল যুক্ত হলো। মূল বিষয়টি আমাদের জানা দরকার। এই ট্রাউজারগুলো সবশেষ ২০০৯ সালে অর্ডার দেওয়া হয় এবং বিক্রি শেষ হয় একই বছরের অক্টোবর মাসে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিস্মিত হিয়েছি এতদিন পর বিষয়টি সামনে আসায়। আমরা ওই কাস্টমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি ট্রাউজার দু’টি পেতে। নয়জনের একটি টিম এসব পোশাক পরীক্ষার পর বাজারে ছাড়ে প্রাইমার্ক। স্পষ্ট করা প্রয়োজন, কারাগার কিংবা জোর করে শ্রমিকদের দিয়ে তৈরির কোনো নমুনা আমাদের পরীক্ষকদের চোখে পড়েনি।
প্রাইমার্কে নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে ১১শ’র বেশি শ্রমিক মারা যাওয়ার পর। কারণ তাদের পোশাকের অন্যতম উৎস বাংলাদেশ।
কোম্পানিটি সম্প্রতি ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও মৃতদের পরিবারে সদস্যদের সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানায় প্রাইমার্ক।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বিষয়: বিবিধ
১১৫৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন