সমসাময়িক রাজনৈতিক ফিকাহের দিক বিদিক (পোষ্ট ৩)
লিখেছেন লিখেছেন কাজী মুহিব্বুল্লাহ ১১ জুন, ২০১৪, ১১:০৭:৫২ সকাল
গত দুটি পোষ্ট এ সমসাময়িক রাজনৈতিক ফিকাহর যে অংশটি খেলাফতের পুনর্প্রবর্তন কে ঘিরে বিকশিত হয়েছে সে বিষয়ের আলোচনা এসেছিল ।চলতি পোষ্ট এ সমকালীন রাজনৈতিক ফিকাহর দ্বিতীয় যে চিন্তা গুষ্ঠি তাদের বিষয়ে আলোচনা আসবে । আর এ চিন্তা গুষ্ঠিকে বলা হয় বিপ্লব-বাদী চিন্তা গুষ্ঠি বা মনব উদ্ভাবিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার চূড়ান্ত ভাবে অস্বীকার কারি চিন্তা গুষ্ঠি ।
আর এ চিন্তা গুষ্ঠিটি সমকালীন ইতিহাসের একটি বিশেষ মুহূর্তে এক বৈরি পরিবেশে বিকাশ ঘটেছিল। এ চিন্তা-গুষ্ঠির রাজনৈতিক চিন্তা,তাদের রচনাবলী এবং সে চিন্তাকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক আন্দোলন গুলোর আলোচনা করার সাথে সাথে যে পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে এ চিন্তা বিকশিত হয়েছি তা যদি আলোচনা না করা হয় তবে পাঠক সমাজ সে চিন্তার অনেক গভীরের বিষয় উপলব্ধি করা থেকে বঞ্চিত হবেন । তাই আজকের আলোচনায় বিপ্লবী রাজনৈতিক ফিকাহর পরিচয় ,যে পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থায় এ চিন্তার বিকাশ ঘটেছিল তার বর্ণনা ,এবং তাদের রচনা সমূহ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা হবে ।
২. বিপ্লব বাদী রাজনৈতিক চিন্তা ধারা ঃ
এ ধারার রাজনৈতিক ফিকাহর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানব উদ্ভাবিত বা মানব জাতীর পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা তার আমূল পরিবর্তনের পক্ষপাতী এবং মানব অভিজ্ঞতালব্ধ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তারা পরিপূর্ণ কুফরি ব্যবস্থা হিসেবেই মনে করেন । তাই যেকোনো পন্থায় এ ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন সাধন করে তদস্থলে ইসলামি ব্যবস্থার প্রবর্তনই এ চিন্তা গুষ্ঠির মূল লক্ষ । যে মৌলিক বৈশিষ্ট্য এ চিন্তা-দল টিকে অন্যদের থেকে আলাদা কয়েছে তা হচ্ছে রাজনীতির ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের ধারনা । তাদের মতে রাজ নৈতিক সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ মানুষের এ ক্ষেত্রে কোন অধিকার নেই। আর এখান থেকেই জন্ম নেয় ধর্ম রাষ্ট্রের ধরনা,ইসলামি জ্ঞানের ঐতিহ্যে (তুরাস আল-ইসলামি) যা الحاكمية الإلهية বা ঐশী সার্বভৌমত্ব" নামে পরিচিত । যদিও এ সার্বভৌমত্বের ধারনার বিষয়ে লেখক ভেদে পার্থক্য বিদ্যমান ,এ ব্যাপারে যথাস্থানে বিস্তারিত আলোচনা আসবে।
সময়ের অন্যতম ইসলামি চিন্তাবিদ,মিশরি পণ্ডিত ড.মোহাম্মদ উমারা এ চিন্তাধারার অনুসারীদেরকে {
تيار الرفض الانقلابي = বর্জন-বাদী বিপ্লবী চিন্তা গুষ্ঠি } নামে আখ্যায়িত করেছেন । তার ভাষায় [ এরাই হচ্ছে বর্তমানের বাস্তবতা,ইসলামি ঐতিহ্য,এবং উম্মাহ এবং উম্মাহর সামাজিক ব্যবস্থার প্রত্যাখ্যান কারি, উম্মাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনের অধীনে কাজ করতে অস্বীকার কারি ,এবং এবং উমাহর সকল প্রতিষ্ঠান তাদের দৃষ্টিতে জাহিলিয়্যাতের অংশ । ]
যে সামাজিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ চিন্তা ধারার উৎপত্তি ঃ
# উসমানী খেলাফত পতন পরবর্তী ইসলামি চিন্তা এবং ধর্মীয় ব্যবস্থার অবমাননা।
# ফ্রান্স,ব্রিটেন সহ অন্যন্য ইউরোপিয়ান দেশ কর্তৃক মুসলিম দেশ সমুহে উপনিবেশ।
# মুসলিম দেশ সমূহে নাস্তি-বাদী ধর্মবিরোধী সমাজ তান্ত্রিক আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব।
# ইয়াহুদি কর্তৃক বায়তুল মোকাদ্দস দখল।
# মুসলিম রাষ্ট্র কর্তৃক শরিয়ার বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি,তদস্থলে পশ্চিমা ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন।
# মুসলিম দেশ সমূহে নানা রূপে স্বৈরাচারী শাসন,এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরোধীদের উপর সীমাহীন নির্যাতন,নিপীড়ন ।
এ ধারাটি যে সকল মৌলিক রচনা ধারা প্রভাবিত তা হচ্ছে ,ইমাম ইবনে তাইমিয়ার (রাহঃ) এর রচনা সমূহ ,তার ফতওয়া { الفتاوي الكبرى = ফতওয়া কুবরি}বিশেষ করে তাতার আক্রমণের সময়ে তাতার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রদত্ত তার ফতওয়া ,ইমাম শাওকানীর (রাহঃ) [১১৭৩-১২৫০] রচনা সমূহ ,হিজবুত তাহরিরের এর চিন্তা এবং তাদের রচনা সমূহ,মওলানা মওদূদী (রাহঃ) এবং তার রচনা সমূহ ,বিশেষ করে তার গ্রন্থ { ইসলামি রাষ্ট্র ও সংবিধান} ,সাইয়্যেদ কুতুব শহিদ এবং তার রচনা সমূহ ,বিশেষ করে তার বিশ্ববিখ্যাত রচনা {معالم في الطريق }( বাংলায় এটি "ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা " নামে অনুদিত হয়েছে। )
এ রাজনৈতিক চিন্তার অনুসারীদের একটা অংশ পরবর্তীতে নানাবিধ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পরে,সমসাময়িক তাকফিরি ফেরকার উৎপত্তিও এ চিন্তার উৎস থেকেই । যদিও এ ধারার ফিকাহর অধিকাংশ অনুসারীই এখনো শান্তিপূর্ণ বিপ্লবে বিশ্বাসী এবং নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই কাজ করে যাচ্ছে।
{ বিষয়টি আরও বিস্তারিত আলোচনার দাবীদার ,পরে কোন এক সময়,অন্য কোথাও, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ }
বিষয়: বিবিধ
১৩১৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন