সমসাময়িক ইসলামি রাজনৈতিক ফিকাহর দিক-বিদিক (পোষ্ট ২)
লিখেছেন লিখেছেন কাজী মুহিব্বুল্লাহ ০৮ জুন, ২০১৪, ০৫:৩৪:৪১ বিকাল
আল্লামা রশিদ রেদা (রাহঃ) এর পর খেলাফত পুনর্প্রবর্তনের পক্ষে কলম ধরেন শাঈখুল ইসলাম মোস্তফা সাবরি (১৮৬৯-১৯৫৪) ।
"খেলাফত,দীন,এবং উম্মাহর নিয়ামত অস্বীকার কারিদের প্রতি নিন্দা " শিরোনামে ১৯২৩ সালে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন । এ গ্রন্থে তিনি খেলাফতে ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করেন ।
মোস্তফা কামাল পাশা পন্থি ধর্মনিরপেক্ষতা বাদীদের ব্যাপারেও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন । তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত মুসলিম বিশ্বে গণআন্দোলন গরে তোলার ডাক দেন । কামাল পন্থি নব্য নেতৃত্ব কর্তৃক খেলাফত থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পৃথকীকরণ ব্যাপারেও তিনি মোসলমান দেরকে সতর্ক করেন। কামাল পাশার তুর্কী বংশ-ভূত দের প্রতি যে স্বজনপ্রীতি মূলক উম্মাহর ঐক্য ধ্বংস কারি , আত্ম বিনাশী যেসকল আচরণ তাও উম্মাহর সামনে তিনি তুলে ধরেন । নব উত্থিত তুর্কী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে উম্মাহর ঐক্যর বিষয়ও তার লেখনী থেকে বাদ পড়েনি ।
তবে শেখ মোস্তফা সাবরি এ বইটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি তা হচ্ছে " খেলাফতকে ঘিরে বিতর্ক কারিদের দুটি ভুল ধারনার অবসান
১। খেলাফত ব্যবস্থায় ইসলামি শরিয়তের স্থান
.২। খেলাফত ব্যবস্থা বা ইসলামি রাষ্ট্রে ধর্মীয় নেতাদের অবস্থান ।
প্রথম বিষয়টিতে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদীদের আপত্তি ছিল "কেমন করে একটা স্বাধীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে যেখানে ধর্ম রাষ্ট্রকে চারদিক থেকে শরীয়তের আইনে বেধে রাখে ? "
জবাবে লেখক বলেন "যদি আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় থাকে যে ,ইসলাম ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতের জন্য নেয়ামত সরূপ ,তাহলে আমরা কি করে বলতে পারি ইসলাম আমাদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা স্থাপন করার পথে বাধা ,বরং ইসলামের বিধি নিষেধগুলি সরকার কে ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে রক্ষা করবার জন্য। আর ইসলাম উম্মাহ কে পূর্ণ স্বাধীনটা দান করে উম্মাহর সরকারকে নয় ,কারণ তাতে সরকারের স্বৈরাচার হয়ে উম্মাহর ঘারে চেপে বসার সম্ভাবনা থাকে।
আর ধর্মীয় নেতাদের ব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষতা-বাদীদের আপত্তির কারণ ছিল "তৎকালীন আলেম উলামা কর্তৃক ফিকাহর গোঁড়া তাকলিদ এবং সেকেলে রাজনৈতিক ধারনা "
এর জবাবে লেখক তৎকালীন আলেম উলামাদেরকে ব্যাপকভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তব সম্মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা গড়ে তোলার আহবান জানান।
হাসান আল-বান্নাঃ
একই ধারায় খেলাফতকে পুনরায় আগার সেই অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ যিনি গ্রহণ করেন ,তিনি হচ্ছেন শেখ হাসান আল-বান্না (রাহঃ ) (১৯০৬-১৯৪৯) যিনি ১৯২৮ সালে ইখওয়ানুল মুসলিমিন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার এ কাজের সূচনা করেন ।
"১৯৩৮ সালে তিনি ঘোষণা করেন "ইখওয়ান বিশ্বাস করে যে খেলাফত হচ্ছে ইসলামের একমাত্র প্রতীক এবং ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া সকল জাতি গুষ্ঠিকে একত্রে ধরে রাখার একমাত্র মাধ্যম । আর খেলাফত হচ্ছে একটি আবশ্যিক বিষয় যে বিষয়ে মোসলমানদিগকে অবশ্যই বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে , এ বিষয়ের সকল কার্যাবলীকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে আঞ্জাম দিতে হবে। আর খলিফা আল্লাহর দীনের অনেক হুকুম আহকামের বাস্তবায়নের উপায় বা দায়িত্বপ্রাপ্ত,যাকে ছাড়া সে হুকুম গুলি পালনের আর কোন উপায় নেই ।
আর এ কারণেই খেলাফত ব্যবস্থার ধারনা এবং তার বাস্তবায়ন ইখওয়ান এর কর্মতালিকার প্রথম দিকেই ছিল । আল-বান্নার চিন্তা মতে খেলাফত ব্যবস্থার পূর্ণ বাস্তবায়নের আগে অনেক গুলি ধাপ পার হয়ে যেতে হবে,আর তাই সমস্ত কার্যাবলী এ চূড়ান্ত লক্ষকে ঘিরেই পরিচালিত হবে।
ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার আলোচনা করতে কিয়ে হাসান আল-বান্না বিষয়টিকে কয়েকটি শিরোনামে ভাগ করেন
# ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি সমূহ
# শাসকের দায় দায়িত্ব
# উম্মাহর ঐক্য
# জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা
# সমসাময়িক অন্যান্য রাজ নৈতিক ব্যবস্থার ব্যাপারে তার অবস্থান ।
(আরও বিস্তারিত জানতে হাসান আল-বান্নার "রিসালা " পড়ে দেখা যাতে পারে )
একই ভাবে ইমাম আল-বান্না ইখওয়ানুল মুসলিম এর আন্দোলনের ধাপগুলিকে মোট ৫ টি স্তরে ভাগ করেছেন
১। মুসলিম ব্যক্তি গঠন
২। মুসলিম পরিবার গঠন বা মুসলিমের ঘর
৩। মুসলিম সমাজের পুনর্গঠন
৪। ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
৫। ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা।
একটু সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করলে এভাবে বলা যায় ,প্রথমে ইসলামি ব্যক্তিত্বের পুনর্গঠন করতে হবে ,পরে পরিশুদ্ধ এক জন মুসলিম পুরুষ অপর একজন পরিশুদ্ধ মুসলিমা নারীকে বিয়ে করে একটি ইসলামি পরিবার গঠন করবে ,বেশ কিছু ইসলামি পরিবার মিলে ইসলামি সমাজ গড়ে তুলবে, ইসলামি সমাজ সমূহ মিলে ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করবে, আর ইসলামি রাষ্ট্রগুলি মিলে ইসলামি খেলাফতের পুনর্গঠন করবে।
আর এখানেই শেষ হল খেলাফত কেন্দ্রিক সমসাময়িক রাজনৈতিক ফিকাহর চিন্তাগুষ্ঠির আলোচনা। যদিও এ বিষয়ে আরও অনেক আলোচনার দাবী রাখে ,কিন্তু একটি প্রবন্ধের পরিসরে এর বেশি আলোচনা করা যাচ্ছেনা বলে প্রিয় পাঠকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি ।
( পরের পোষ্ট এ সমসাময়িক রাজনৈতিক ফিকাহর বিপ্লববাদী চিন্তা গুষ্ঠি এবং তাদের গ্রন্থ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ )
{ অনেক হয়ত ভাবতে পারেন রাশেদ আল-ঘানুষীর বইটি অনুবাদ না করে আমি এ বিষয়ে লিখছি কান ? এ লেখাটির উদ্দেশ্য আসলে আল-ঘানুষীর বই এর আগে পাঠকদেরকে সমকালীন অন্যান্য রাজনৈতিক চিন্তার ব্যাপারে কিছু ধরনা দেয়া}
LikeLike · · Share
বিষয়: বিবিধ
১৪০৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন