# সমসাময়িক রাজনৈতিক ফিকাহর দিক বিদিক ।# (পোষ্ট ১)
লিখেছেন লিখেছেন কাজী মুহিব্বুল্লাহ ০৭ জুন, ২০১৪, ০৮:২৪:৫৮ রাত
যদিও রাজনৈতিক ফিকাহর (ইসলামি রাজনৈতিক ইজতিহাদের ফল,একে ইসলামি রাজনৈতিক চিন্তাও বলা যেতে পারে) ক্ষেত্রে একটা নব জাগরণ সৃষ্টি হয় ওসমানী খেলাফতের পতনের কিছু সময় আগ থেকেই ,কিন্তু ১৯২৪ সালে কামাল আতা-তুর্ক হাতে সর্বশেষ খলিফার পতনের পর থেকেই এ বিষয়ে গবেষণার নতুন গতি লাভ করে।
কামাল পাশা মৃতপ্রায় ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘোষণা করে সে স্থানে ইউরোপীয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটান । আর এর পর থেকে সমস্ত মুসলিম দেশ সমূহ ধর্মনিরপেক্ষ নামের এই নতুন রাজনৈতিক ,সামাজিক,সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা স্থায়ী রূপ লাভ করতে শুরু করে।
আর এখান থেকে মুসলিম উম্মাহর ফকিহ এবং চিন্তাবিদ গন নতুন করে ভাবতে শুরু করেন ,কিভাবে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে , যা আল-কোরান এবং সন্নাহর মূলনীতি অনুসরণ করে পরিচালিত হবে ।
ধর্ম নিরপেক্ষতার এই প্লাবনের মোকাবেলায় ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছিল তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য । একই ভাবে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় ,ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তার বিপরীতে ইসলামি চিন্তার প্রতিরূপই বা কি ? মুসলিম রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ,বুদ্ধিজীবীরা নতুন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই গড়ে উঠে নতুন নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন সমূহ ।
আর এ সকল ব্যক্তি এবং সাংগঠনিক প্রচেষ্টার ফলে নতুন ধারার রাজনৈতিক ইজতিহাদ প্রকাশ পেতে শুরু করে। {""আর এ ইজতিহাদ যেহেতু প্রয়োগ পদ্ধতিতির দিক থেকে কোরান সন্নাহর মূলনীতিকে উৎস ধরে কাজ শুরু করেছিল তাই আমরা একে ইসলামের রাজনৈতিক ফিকাহ বলতে পারি""}। আর এ ফিকাহ যেহেতু ইসলামে ছাবেত কোন বিষয় নয় (স্থায়ী যার কোন পরিবর্তন ইসলাম সম্মত নয় ) বরং মোতাগাইয়েরাত (যে ব্যাপারে ইসলাম কিছু মূলনীতি দিয়েছে এবং সময়ের এবং স্থান বিবেচনায় যা পরিবর্তনশীল ,অর্থাৎ ইজতিহদের আওতাভুক্ত) এর বিষয়, তাইসকলের ইজতিহাদের সাথে আপনি একমত না হওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন ।
আর এই সমসাময়িক রাজনৈতিক ফিকাহর নানা দিক বিদিক নিয়েই আজকের এই রচনা। তবে বলে নেয়া ভাল এ আলোচনায় শুধু মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়াস গুলিই পর্যায়ক্রমে আলোচনায় আসবে ,আমাদের ভারত উপমহাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মযজ্ঞের আলোচনা অন্য কোন এক প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে ,ইনশাল্লাহ।
সমসাময়িক ইসলামি রাজনৈতিক ফিকাহর চিন্তা-গুষ্ঠির দল উপদল (মাজাহেব ,একবচনে মাজহাব) গুলিকে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করা যায় ।
{১।খেলাফতের পূনপ্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে তার পক্ষের এবং বিপক্ষের চিন্তা গুষ্ঠি ঃ }
[খেলাফত পুনর্প্রবর্তন বিরোধী ঃ]
উনিশ শতকের গোঁড়ার দিকে যাত্রা শুরু করা এ চিন্তা-গুষ্ঠির বাস্তব সফলতা আসে মোস্তফা কামাল পাশার হাত ধরে , কামাল আতা-তুর্ক খিলাফতের অবসান,এবং ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার প্রবর্তনের মাধ্যমে এ ধারার ষোলকলা পূর্ণ করেন ।
খেলাফত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া , ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত আলিমদের মাঝে এ কাজের সূচনা করেন মিশরি পণ্ডিত আলী আব্দুর রাযেক (১৮৮৮-১৯৬৬) যিনি আল-আযহার থেকে পাশ করা একজন আলেম । ১৯০৮ সালে তিনি তার বই "ইসলাম এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূলনীতি " প্রকাশের মাধ্যমে এ আহবান শুরু করেন।
১৯২৫ সালে এ বইয়ের সাথে তিনি আরও তিন টি অধ্যায় যোগ করেন । (প্রথম অধ্যায়ে খিলাফত এবং তার ইসলামি প্রকৃতির সরূপ নিয়ে আলোচনা করেন , আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে ,ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে, রসুলের মাধ্যমে মানব জাতীর জন্য একটি "রিসালা" ( বার্তা,মেসেজ) যা কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা নয় ,ইসলাম একটি ধর্ম , রাষ্ট্র ব্যবস্থা এর অন্তর্ভুক্ত বিষয় নয়।
অন্যভাবে বলা যায় ,"খিলাফত ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত কোন বিষয় না,এবং বিচার ব্যবস্থাও ইসলাম ধর্মের আওতার বাইরের বিষয় ,রাষ্ট্র পরিচালনা,রাষ্ট্র সংক্রান্ত বিধিবিধান সবকিছুই রাজনৈতিকদের বিষয় এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিষয়ে কোন বিধানও দেয় না ,আবার এর অস্তিত্বও অস্বীকার করে না। । রাজনীতি বিদ্যা সংক্রান্ত সকল বিষয় মানুষের বুদ্ধি এবং পর্যবেক্ষণ গত জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। তার এ মতের সপক্ষে ইসলামি বিভিন্ন উৎস থেকে তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন।
একই বিষয়ে আরও একটি গ্রন্থ ১৯২৩ সালে "খিলাফত এবং উম্মাহর কর্তৃত্ব" আব্দুল গনি সানা নামে একজন আরব পণ্ডিত তুর্কি ভাষা থেকে আরবিতে অনুবাদ করেন ,তবে এর লেখক কে তা জানা যায় না।
খেলাফত ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তনের আহ্বানকারী ধারা ঃ
ইসলামি খেলাফত বিরোধী এ চিন্তার বিপরীতে আল্লামা রশিদ রেদা (১৮৬৫-১৯৩৫) "খেলাফত এবং ইমামতের গুরুত্ব " নামে ১৯২২ সালে একটি গ্রন্থ রচনা করেন ,যার মাধ্যমে তিনি ইসলামি খেলাফতের পুনর্প্রবর্তনের আহবান কারীদের পক্ষে প্রতিনিধিত্বের ভূমিকা পালন করেন। এ গ্রন্থের প্রথম অংশে তিনি খেলাফতের এককেন্দ্রিকটা ,এবং তার একাধিক হওয়া ,ইমামের একত্ব-উম্মাহর ঐক্য ,খেলাফতে ব্যবস্থা হতে মানুষের প্রত্যাশা ,মুসলিম উম্মাহর সংস্কারে ইমামতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন । অতঃপর তিনি মুসলিম উম্মাহর মাঝে রেনেসাঁ সৃষ্টির লক্ষে নতুন ইজতিহাদের ডাক দেন। তার ভাষায়" মুসলিম উম্মাহর রেনেসাঁ সৃষ্টির পূর্বশর্ত হচ্ছে ইসলামি শরিয়তের নতুন ইজতিহাদ " ।
এ বইয়ের দ্বিতীয় অংশে রশিদ রেদা আরব এবং তুর্কী ঐক্যর মাধ্যমে খেলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আহবান জানান ,এবং এ খেলাফতের কেন্দ্র হিজাজে স্থাপন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন করেন ।
এ বইয়ের তৃতীয় অংশে লেখক তৎকালীন মোসলমানদেরকে তিন ভাগে ভাগ করেন,
১। ফিরিঙ্গি (বিদেশি ,পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী) সভ্যতার তল্পিবাহক সুবিধাভোগী শ্রেণি ঃ (এরা শুধু খেলাফতই নয় ইসলামের নামে কোন যেকোনো কিছুরই অস্তিত্বের ঘোর বিরোধী। আর এরাই ছিল শিক্ষা দীক্ষা,সামরিক বাহিনী,ব্যবসা বাণিজ্য সকল দিক থেকে ক্ষমতাশালী )
২। তাক্বলিদপন্থী গোঁড়া ধর্মীয় সম্প্রদায় ঃ ( এরা যদিও ইসলামি খেলাফতের পক্ষে ছিল কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে খেলাফত মানে হাজার বছরের পুরানো ঘুণে ধরা রাজনৈতিক ব্যবস্থা,এ গুষ্ঠীই উম্মাহর পূনজাগরন এবং খেলাফতকে যুগোপযোগী করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা )
৩। ইসলাহি বা সংস্কার-বাদী আলেম সমাজ ঃ (আর এ ধারাটি লেখকের দৃষ্টিতে ইজতিহাদি রাজনৈতিক চিন্তার কলম যোদ্ধা যারা উম্মাহকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য পৌঁছে দিতে সক্ষম )
(লেখাটা একটু বড় হয়ে গেল ,সেজন্য দুঃখিত )
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন