ইসলামে রাজনৈতিক স্বাধীনতা (পর্ব:-৩)

লিখেছেন লিখেছেন কাজী মুহিব্বুল্লাহ ১৯ মে, ২০১৪, ০৭:৪৮:০৭ সকাল



মূল: ড আহমদ শাওকি আল-ফাঙ্গারী

ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং ইসলামে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকার কারণে দ্বিতীয় যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন গুলো তাদের লক্ষ পূরণে ব্যর্থ হয়: আমাদের পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা দেখতে পাই সমকালীন ধর্মীয় আন্দোলন এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইসলামকে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য যে আন্দোলন গুলি জন্মলাভ করেছিল তা বার বার ব্যর্থ হয়েছে । এ আন্দোলন গুলো হয় নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিঃশেষ হয়ে গেছে , আর না হয় ছোট ছোট দল উপদল বিভক্ত হয়ে শক্তি হারিয়ে ফেলছে, অথবা দেশি বিদেশি ইসলাম বিরোধি শক্তির হাতে ধ্বংসের শিকার হয়েছে । আর এ ব্যর্থটা এবং ধ্বংসের কারণ পর্যালোচনা করলে দুটি বিষয় আমারা খুঁজে পাই।

১। এ আন্দোলন গুলো তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে গণতান্ত্রিক মূলনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়নি ,এবং সংগঠনের ব্যবস্থাপনা একজন ব্যক্তি বা কেন্দ্রীয় গোষ্ঠীর হাতে সীমাবদ্ধ হয়ে পরেছে । এখানে দল-প্রধানের কথাই চূড়ান্ত আর সংগঠনে তার নিরঙ্কুশ আনুগত্যই একমাত্র পথ , ভিন্নমত পোষণ করা হারাম। আর এ পরিস্থিতিতে নিজের সৃজনশীল চিন্তাগুলি বাস্তবায়ন করতে হলে সংগঠন থেকে বের হয়ে আর একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কোন উপায় অবশিষ্ট থাকেনা । আর এভাবেই বৃহত্তর আন্দোলনের শক্তি ক্ষয় হয়ে বিরোধীদের মোকাবেলায় দুর্বল হয়ে পরে।

২। দ্বিতীয় যে বিষয়টি ইসলামী আন্দোলন এর ব্যর্থতার কারণ তা হচ্ছে , যে আদর্শের দিকে তারা মানুষকে আহবান করে সে আদর্শ সম্পর্কে নিজেদের মস্তিষ্কে পরিষ্কার ধারনা না থাকা। এবং সে আদর্শের সরূপ বিস্তারিত অবহিত না থাকার কারণে তার ব্যাখ্যা প্রধান এবং বাস্তব প্রয়োগের বেলায় নিজেদের মাঝেই মতপার্থক্য দেখা দেয়া।

ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং ইসলামি রাজনৈতিক স্বাধীনতা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা থাকার কারণে একজন ইসলামি শাসকের শাসনও বার্থ হতে বাধ্য কারন এ ধরনের ব্যক্তি স্বল্প সময়ের মধ্যই একজন কঠোর স্বৈরাচারে পরিণত হয় । সে তার কোন বিরোধী মত বা দলের অস্তিত্বকে মেনে নিতে চায়না এবং কারও পরামর্শও সে শুনতে চায়না। কোন মোসলমান যদি তার সাক্ষাতে যায় তবে তাকে নামাজের সেজদা-বনত অবস্থায়ই তাকে দেখতে পায় ,কিন্তু সেজদা থেকে সালাম ফিরিয়েই সে তার বিরোধীদেরকে জেল জুলুমের নির্দেশ দিতে বা তাদের জীবন জীবিকা কেরে নিতে একটুও সংকোচ বোধ করবে না,কারণ সে নিজেকে সবচেয়ে দিনদার এবং একনিষ্ঠ মুমিন হিসেবেই মনে করে । আর এধরনের স্বৈরাচার, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষিপ্ত হয় । তাই আমরা বলতে পারি একজন ব্যক্তি সৎ বা ধার্মিক হওয়ার পরো যদি ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং ইসলামে গন মানুষের যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না রাখলে তবে তার শাসনও ব্যর্থ হয়ে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

১১০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File