ইসলামে রাজনৈতিক স্বাধীনতা (পর্বঃ১)
লিখেছেন লিখেছেন কাজী মুহিব্বুল্লাহ ১৬ মে, ২০১৪, ০৮:৫৬:৪৯ রাত
মূল: ড আহমদ শাওকি আল-ফাঙ্গারী
ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্তমান মোসলমানদের ধারনা:
##ইসলাম তার অনুসারী এবং তার দিকে আহবান-কারিদের হাতে জুলুমের শিকার:##
আমি বর্তমান সময়ের অনেক ইসলামের দিকে আহ্বানকারী এবং ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা যারা প্রতিষ্ঠা করতে চান এমন লোকদের সাথে কথা বলেছি ,তাদের কিছু লোকের ইসলামী রাষ্ট্র এবং শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কিত ধারনা সত্যিই আমাকে শঙ্কিত করেছে। তাদের কাছে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা একধরনের ইসলামী স্বৈরাচারী পদ্ধতি ছাড়া আর কিছুই না। বিরোধী মত এর উপস্থিতি তাদের দৃষ্টিতে একধরনের সীমালঙ্ঘন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক বা ঝগড়া ইসলাম যাকে হারাম ঘোষণা কয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দল থাকাটা তাদের দৃষ্টিতে উম্মাহর মধ্য একধরনের ফাটল সৃষ্টিকারী এবং জাহিলিয়াতের দিকে আহবানের সমতুল্য। এবং শুরা (পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ) তাদের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র একটি বিবেচ্য বিষয় ,রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধ্য বাধকতা মূলক কোন কিছু না। মুসলিম শাসক বলতে তারা বুঝেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একজন সুলতান। তারা মনে করেন কোন মুসলিম শাসক যতক্ষণ পর্যন্ত দিনের আরকান সমূহ অর্থাৎ সালাত,সওম এবং যাকাত ব্যবস্থা বজায় রাখেন এবং তার নিয়ত যদি শাসিতদের কল্যাণের জন্য সঠিক বলে মনে হয় তাহলে তার উপর জনগণের আর নজরদারি করার অধিকার থাকেনা। সে তাদের দৃষ্টিতে একজন স্বৈরাচারী ,কিন্তু তাদের ভাষায় সে একজন ন্যায়পরায়ন স্বৈরাচার। একথা তারা ভুলে যান যে, স্বৈরতন্ত্র আসলে একনায়ক তন্ত্রের দিকে ধাবিত করে এবং সে আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার সমালোচনার পথ আর অবশিষ্ট রাখে না । আর এই তিন ধরনের রাজনৈতিক কুকর্মই মূলত ইসলামি শাসন ব্যবস্থার মূলনীতিকেই ধ্বংস করে দেয় ,যে মূলনীতি একজন শাসক কে আইনসম্মত শাসক হওয়ার পূর্বশর্ত বলে ইসলাম ঘোষণা করছে। শুধু তাইনা এ মূলনীতি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত শাসক কে দীন ইসলাম এবং আল্লাহকে অস্বীকার কারি কাফের বলে ঘোষণা করেছে।
مَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ)
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।
সূরা আল-মায়েদাহ আয়াত ঃ৪৪)
সাধারণ ভাবে অনেক মুসলিম ই মনে করেন যে খুলাফায়ে রাশেদিনগন (হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত চার খলিফা) একধরনের জবাবদিহিতা শূন্য স্বেচ্ছাচারী শাসক ছিলেন,যিনি মসজিদের মিম্বারে উঠে ঘোষণা করতেন, “হে মোসলমান গন তোমরা আমার কথা শন এবং মেনে নাও “,অতঃপর তাদেরকে তিনি যেকোনো কাজের আদেশ দিতেন বা নিষেধ করতেন মোসলমান-গন তা কোন প্রকার বিচার বিবেচনা ছাড়াই মেনে নিতেন । তাদের এই ঘোষণার কোন বিরোধী মত খুঁজে পাওয়া যেত না। বরং তারা সমস্বরে বলে উঠত, “আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং মেনে নিলাম হে আল্লাহর রসূলের খলিফা”
আর এধরনের ধারনা পোষণ করার আগে তারা একথা ভুলে যায় যে সে সময়ের মোসলমানরা তাদের খলিফাদেরকে বলত “যদি সৎপথ থেকে বিচ্যুত হও তবে তরবারি দিয়ে সোজা করে দিব” এমনকি ব্যক্তিগত পোশাক আশাক এর ব্যাপারেও খলিফাকে জবাবদিহি না করা পর্যন্ত নিস্তার দিত না । কি করে একজন রাষ্ট্র প্রধানের পোশাক একজন সাধারণ নাগরিকের চেয়ে লম্বা হয় ? অথচ কাপড়ের বণ্টনের ক্ষেত্রে উভয়ের অংশি দারিত্ব সমান . এভাবেই তারা তাদের শাসকদের খাদ্য,পানীয়,বেতন ভাতা থেকে শুরু করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে হিসাব গ্রহণ করতেন।
(আর এ ধরনের ভ্রান্ত ধারনার ফলাফল কি তা পরবর্তী পোষ্ট এ আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
৯১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন