ভারত বাংলাদেশ সর্ম্পক
লিখেছেন লিখেছেন এ এম এম নিজাম ১৬ মে, ২০১৪, ১২:৫২:৫৩ রাত
বোকা জামাইয়ের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার গল্প হয়তো অনেকে শুনেছেন। আজ সময়ের প্রয়োজনে গল্পটা আবার বলি। ছেলে নতুন বিয়ে করেছে। স্বভাবে একটু হাবাগোবা। যাবে শ্বশুর বাড়ি। মা খুব চিন্তিত। বোকা ছেলেটা শ্বশুর বাড়িতে আবার কী না কী কা- করে বসে!
মা আগেই তাকে বলে দিলেন, ‘বাবা প্রথমবারের মতো শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছ, যাওয়ার আগে তাদের বাড়িতে কিছু নিয়ে যাবে। তাহলে সবাই খুশি হবে।’ ছেলে যথারীতি চলল। বাজারে গিয়ে দোকানিকে বলল, ভাই আমাকে ‘কিছু’ দেন তো। দোকানি তার দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিছু কী দিব? মিষ্টি, দই, রসগোল্লা, নাকি জিলাপি? সে বলল, না, ‘কিছু’ দিতে হবে এগুলোতে হবে না। তখন দোকানি একরকম রাগ হয়ে তাকে একটা কচু দিয়ে বলল এটাই ‘কিছু’।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের কাছে ‘কিছু’ এবং ‘কচু’ এর প্রসঙ্গটা হয়তো এখনো পরিস্কার নয়; তবে আশা করি শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আপনাদের পরিস্কার হবে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ। যার একটাই লক্ষ্য ছিল শাসক শ্রেণীর (পাকিস্তান) নিপীড়ন, শোষণের হাত থেকে দেশ এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করা। বাঙালি জাতির অবিসাংবাদিত নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে যার সুস্পষ্ট চাপ লক্ষ করা যায়। সেদিনের ভাষণ শুনে মনে হয়েছিল বাংলাদেশ আর পিছনে ফিরে কারো দিকে তাকিয়া থাকবে না।
কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর পর আজ সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ যেন এক নতুন শকুনের খপ্পরে পড়েছে। যা সত্যি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য যেমনি কলংকের বিষয় তেমনি আমরা এর দায় এড়াতে পারি না। স্বাধীনতার এক বছর পরই আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে সাথে আমরা বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও শান্তিচুক্তি (১৯৭২) থেকে আজ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে প্রায় শাতধিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। আমার মনে হয় পৃথিবীর কোথায়ও এমন একটি দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা তাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে মাত্র ৪০-৪৫ বছরে এতগুলো চুক্তি সাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের আরেকটি প্রতিবেশি রাষ্ট্র মায়ানমার যার সাথে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো চুক্তি সই করা হয়নি বললেই চলে। তাহলে কি ধরে নেব; মায়ানমার রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের কাছে তেমন কোনো গুরুত্বের দাবি রাখে না? বিষয়টি বাস্তব হলে মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা, রহিঙ্গা সমস্যার মতো আর্ন্তুজাতিক বিষয়গুলো খুব সহজে সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা। আসলে এখানে বিষয়টি হচ্ছে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও সদিচ্ছার অভাব, শাসক শ্রেণীর অর্থনৈতিক লোলুপ দৃষ্টি। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। যেকারণে বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূখ- ও সম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করছে। অথচ বাংলাদেশ যেন এক্ষেত্রে ন্যূনতম ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হতে পারল না। এক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রভাবে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছে না। তাহলে কি ধরে নেব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পররাষ্ট্রনীতির মধ্যে তুলনা করার মতো সময় আমাদের সামনে এসেছে? এত অসম ও নতজানু চুক্তি সই করার পর তার প্রতিদানস্বরূপ কোন আশানরূপ ফলাফল না পাওয়ার পর বাংলাদেশের (ক্ষমতাশীন শাসক শ্রেণী) কাছে ভারত যেন এক অদৃশ্য অবতার তাকে দু‘হাত বরে দিতে পারলেই যেন এদেশের মুক্তি।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতের চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত এদেশের জনগণকে কোনদিনই স্পষ্ট করে কখনোই কিছু বলা হয় না। অবাক হবার মতো বিষয় যে, ভারতের বিদ্যুৎ চাহিদা ২ লাখ মেগাওয়াটের বিপরীতে উৎপাদন মাত্র দেড় লাখ মেগাওয়াট। যেখানে ৫০ হাজার মেগাওয়াট অর্থাৎ চাহিদার এক-চতুর্থাংশ ঘাটতি সেখানে ‘বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ’ ভারত বাংলাদেশকে কিভাবে বিদ্যুৎ দেবে? ভারতের পক্ষ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট যা পরবর্তীতে ৫০০ মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি জানা গেছে, ওই বিদ্যুৎ বিক্রির পরিমাণ আরও ১০০ মেগওয়াট বাড়াবে। বিষয়গুলো কেমন গোলমেলে মনে হতে পারে। কিন্তু এ সম্পর্কিত কোনো কিছুই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে কখনই জানানো হয় না। বরং ভারত এ সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদ্যুৎ-করিডোরসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নেবে তাই তারা চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকার অকাতরে সেই চাহিদাগুলো পূরণ করছে। পরিবর্তে বাংলাদেশের তিস্তা নদীর পানিবণ্টনসহ অমীমাংসিত দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলোর কোনো সুরাহাই করা হচ্ছে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব বিষয়গুলো কখনো উত্থাপনই করা হয় না। বরং সবশেষ বিদ্যুৎ-করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্তসহ অতীতে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়েই দেয়া হয়েছে।
নতুন করে এবার ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকার ও ভারত সরকার নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কার স্বার্থে এই করিডোর? উত্তরটা খুঁজে পাওয়া যে খুবই দুরূহ ব্যপার তা মোটেও নয় বরং আমরা যেন এক নেশার ঘোরে আছি যা আমাদের কে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আপনারা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন।
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে। দু’দেশের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি এটাকে বলছে ‘বিদ্যুৎ করিডোর’। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় গ্রিড লাইন আসামের রাঙ্গিয়া রাওতা থেকে বড়পুকুরিয়া হয়ে আবার ভারতে যাবে। দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রকম করিডোরে ভারতই লাভবান হবে। আর অর্থনৈতিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে এ দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্ব থেকে পশ্চিম অঞ্চলে বিদ্যুৎ লাইন টেনে নিতে অনেক কৃষি জমিই নষ্ট হবে। ফলে অসংখ্য কৃষক তার আবাদি জমি হারাবে। যার বিরূপ প্রভাব ফেলবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে। এছাড়াও বাংলাদেশের যেসব এলাকার ওপর দিয়ে ভারতের হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন যাবে-সেসব এলাকায় থাকবে নানাবিধ দুর্ঘটনার আশঙ্কা। তাছাড়া জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনাগুলো আদায় না করে নিজের দেশের এত ক্ষতি করে ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটা হবে আত্মঘাতী। অভিন্ন নদীসমূহের ওপর ভারতীয় বাঁধ নির্মাণের প্রতিকার, পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, তিনবিঘা করিডোর হস্তান্তর, ছিটমহল ও অপদখলীয় সম্পত্তি হস্তান্তরসহ স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ আকাশচুম্বী বাণিজ্য ঘাটতির নিরসনসহ অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়াদির মীমাংসা আগে প্রয়োজন। ইতিহাস সাক্ষী যে, নেয়ার চেয়ে ভারতের দেয়ার অভ্যাস কম। তারা চুক্তি করে, তবে মানে শুধু নিজেদের অংশটুকু। অন্যের অনুকূলের অংশ নানা অজুহাত তুলে ঝুলিয়ে রাখে। কখনো তা বাস্তবায়ন হয় না।
এ করিডোর থেকে বাংলাদেশ কী সুবিধা পাবে এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ সচিব জানিয়েছিলেন, ’আমাদের মনে হয় এখনও হিসাব করার সময় আসেনি। রিজিওনাল কো-অপারেশন ইজ এ উইন উইন সিচুয়েশন। এখানে উভয় দেশের বেনিফিট অবশ্যই। আমরা ওখান থেকে অবশ্যই কিছু বিদ্যুৎ পাবো।’
ভারতকে বিদ্যুতের করিডোর দিলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাবে- এ প্রশ্নের জবাবে ভারতের বিদ্যুৎসচিব বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ যাবে এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাবস্টেশন থাকবে এ কারণে কিছু বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাবে।’
প্রিয় পাঠক, শুরুতে আমি আপনাদেরকে বোকা জামাই এর শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার গল্পটা শুনিয়েছি, যার মূল কারণটি ছিল এই যে, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিদ্যুৎ সচিবদ্বয়ের নিকট বাংলাদেশের পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা উভয়ে তার উত্তর দেন এভাবে ‘বাংলাদেশ কিছু পাবে’। স্বাধীনতার পর ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত কোন চুক্তিতেই বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি যা সবারই জানা। মজার ব্যপার হচ্ছে সে চুক্তিগুলো উভয়ের দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট করে থাকার পরেও বাংলাদেশে প্রতারিত হয়েছে। আর এখানে উভয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ আমলারা যখন বলে বাংলাদেশ কিছু পাবে তখন আমরাতো একথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, কিছু অচিরেই কচুতে পরিণত হবে।
ইতোপূর্বে ভারত ত্রিপুরার পালাটানায় এক হাজার মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়। এ সময় বাংলাদেশকে তারা ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে। এই ট্রানজিট ব্যবহার করে ত্রিপুরাতে ভারত খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রীও নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হয়েছে তা জানা না গেলেও ভারত লাভবান হয়েছে এ নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। ওই সময় ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল-ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ ট্রানজিট সুবিধা দিলে তিস্তার পানি চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পালাটানায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সকল ভারী যন্ত্রপাতি নেয়া হলেও তিস্তার পানি চুক্তি আজও হয়নি।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, এই বিদ্যুৎ করিডোরে বাংলাদেশের কোন লাভ হবে না বরং বিস্তর আর্থিক, কৃষি ও পরিবেশগত ক্ষতির পাশাপাশি মারাত্মক বিপদের আশঙ্কাই রয়েছে। ভারত এই বিদ্যুৎ সরবরাহে বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি ব্যবহার করবে। এতে করে ঐ জমি পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। বিদ্যুতের জন্য টাওয়ার বসাবে। টাওয়ার পাহাড়ার জন্য তাদের বাহিনী মোতায়েন করবে। যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
আর আমাদের বর্তমান সরকার ‘বন্ধুত্বের’ নিদর্শন হিসেবে সব উজাড় করে দিচ্ছে নিজের দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও ত্রিপুরায় বিপুল পরিমাণ পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য ভারত তার নিজের ভূ-খ-ের ওপর দিয়ে এই হাই ভোল্টেজ গ্রিড লাইন না নিয়ে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে নিয়ে যাবে। আর আমাদের লাভ দেখাচ্ছে যে, আমাদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হবে। এটা অনেকটাই ছেলে ভোলানো গল্পের মতো। কারণ পশ্চিমবঙ্গে তাদেরই বিদ্যুতের সঙ্কট রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে কলকাতায় ট্রাম চলছে না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকে লোডশেডিং। তারা কিভাবে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিবে?
বাংলাদেশের গ্রিড লাইন ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চল থেকে প্রাথমিকভাবে ৬০০০ মেগাওয়াট (এই পরিমাণ লক্ষাধিক মেগাওয়াটে পৌঁছতে পারে) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা তাদের পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে যেতে পারলে তবেই বিদ্যুৎ বিক্রি করবে আমাদের কাছে যা সুদূর পরাহত।
পর্যবেক্ষক মহল আরো বলছেন, ভারতের সাথে ইতোপুর্বে সম্পাদিত প্রতিটি চুক্তিই প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে রয়েছে তীব্র সমালোচনা ও অসন্তোষ। ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়েছে প্রতারণামূলকভাবে। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছে, তবে পানি আসছে না। রাজশাহী অঞ্চলের সব উপনদী, শাখা নদী শুকিয়ে গেছে। তিস্তার পানির চুক্তিই ভারত করেনি। যে চুক্তি হতে যাচ্ছিল তাও ছিল আপত্তিকর ও বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে যমুনাতেও এখন পানির আকাল দেখা দিয়েছে। উজানে শত শত বাঁধ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সহস্রাধিক নদী হত্যা করেছে। গোটা উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়েছে মরুকরণ প্রক্রিয়া। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা ছাড়া বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার কোন যুক্তি নেই। আগে পানি দাও তারপর বিদ্যুৎ করিডোর- এটা হতে হবে শর্ত। এছাড়াও ভারত অবাধে বাংলাদেশে ফেনসিডিল পাচার করে আমাদের ভবিষ্যৎ পপ্রন্মকে নষ্ট করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। তাদের বিএসএফ, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জ্ঞাতসারেই এসব মাদক পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। তারা আমাদের এমন বন্ধু যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদের ঘিরে আমাদেরকে চোর সাব্যস্ত করছে বহির্বিশ্বের কাছে। তারা সীমান্তে পাখির মতো প্রতিনিয়ত গুলী করে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা করছে। তারা আমাদের কাছ থেকে বেরুবাড়ি নিয়েছে ৪০ বছর আগে বিনিময়ে তিনবিঘা করিডোর আজও দেয়নি। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিমতে ছিটমহল ও অপদখলীয় সম্পত্তি বিনিময় করার কথা থাকলেও আজও বাস্তবায়ন করেনি তারা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এসে চুক্তি করলেও তা তাদের লোকসভায় এখন পর্যন্ত পাস করেনি।
বিশেজ্ঞ ও বাংলাদেশের পরিবেশবিদদের মতে একতরফাভাবে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে সুবিধা নিবে তার বিনিময়ে বাংলাদেশকে কিছই দেবে না সেটা কোনো মতেই হতে পারে না। বাংলাদেশ ভারত দু‘দেশের অমিংসাতি বিষয়গুলো মীমাংসা করা আজ সময়ে দাবিতে পরিণত হয়েছে এগুলো মীমাংসা করেই তারপরে বিদ্যুৎ করিডোর দেওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে এটি আলোচনা হতে পারে। তাছাড়া বিদ্যুৎ করিডোর দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌত্ব, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ উচিত ছিল এ বিষয়ে অভিজ্ঞ পরিবেশবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিবীদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের যাচাই বাচাই করা।
শিক্ষার্থী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানুষ মরে। জ্যান্ত মানুষ গুম হয়। তবুও লজ্জা হয়না। বেহায়ার মত মিথ্যা কথা বলে। ছি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুধু কচুই পাচ্ছি আর সপন্ দেখছি বিরানির।
ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন