তারাবিহ রাকাত সংখ্যা : একটি চিন্তা ভিত্তিক পর্যালোচনা

লিখেছেন লিখেছেন মুসাফির মাহফুজ ২০ জুন, ২০১৫, ১২:১৬:৪৯ রাত

রমাদান শুরু হওয়ার পর থেকে তারাবিহ সালাতের রাকাত সংখ্যা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে । ০৮/২০ কোনটা হবে ? হানফি বা মাযহাবী আবার আহলে হাদিস বা সালাফী ? কিন্তু তারাবিহ নিয়ে আমার ভিন্ন চিন্তা রয়েছে ।

আমি শুরুতেই তারাবিহ শব্দটার সাথে একমত নই । কেননা কুরআন ও হাদিসের পরিভাষা এটি নয় । হাদিসের পরিভাষা হল কিয়ামুল লাইল । তাই তারাবিহ নয়, বরং কিয়ামুল লাইল বলাটাই সুন্নহ সম্মত ।

রাসুলুল্লাহ স: রমাদান ও রমাদানের বাইরে কিয়ামুুল লাইল করতেন । তিনি অধিকাংশ সময় ০৮ রাকাত আদায় করতেন । অবশ্য রমাদানে তার আমল সম্পর্কে আলাদা কোন বর্ননা পাওয়া যায় না । কিন্তু সাহাবীদের পক্ষ থেকে ২০ রাকাতের দলিল পাওয়া যায় । একদিকে রাসুলের ০৮ রাকাত অন্যদিকে সাহাবিদের ২০ রাকাতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যে, কিয়ামুল লাইলে রাকাত সংখ্যা গুরুত্ব পুর্ন নয় । এবং তা শরীয়া প্রণেতা দ্বারা নির্ধারিতও নয় । আর তার পিছনের মৌলিক কারন হচ্ছে, কিয়ামুল লাইল হচ্ছে নফল ইবাদাত , এটি ফরজ নয় । সুতারং ঐচ্ছিক বিষয়ের দাবিই হচ্ছে তার বিষয়ে বান্দাকে স্বাধীনতা দেয়া ।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, রাসুল সা: কেন অধিকাংশ সময় ০৮ সালাত আদায় করতেন? কেন তিনি ০৬/১০/১২/১৪ বা তারও বেশি আদায় করতেন না ? এর মৌলিক কারন বুঝতে হলে আমাদেরকে রাসুল সা: এর অভ্যাস দেখতে হবে । আল্লাহর রাসুল সা: স্বাধারনত সালাতুল ইশা আদায় করেই ঘুমিয়ে যেতেন । এবং রাতের অর্ধেক বা দুই তৃতীয়ংশ শেষ হলে কিয়ামুল লাইল করতেন । ফলে তার কিয়ামুল লাইল এর সময়ের পরিমান হত বেশ দ্বীর্ঘ । আমরা অনুমান করলে তা প্রায় ২-৩ ঘন্টা । তিনি এই লম্বা সময়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবে সময়কে ভাগ করেছেন । কিছু সময় তেলাওয়াত , কিছু সময় রুকু , সিজদা এবং তাশাহুদে কাটান । ফলে শারিরিক ও মানসিক ভাবে তিনি থাকেন শক্তিশালি । এবং তা আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার পথে বেশ সহায়ক ।

সুতরাং রাসুলের সা: নিয়মিত অভ্যাস থেকে আমরা যে মৌলিক সুন্নত বুঝতে পারি তা হল, কিয়ামুল লাইলের সংখ্যা বিবেচ্য বিষয় নয় ; বরং বিবেচ্য বিষয় হল কত সময় ধরে কিয়াম করা হচ্ছে । টাইম ইজ ইমপর্টেন্টে । এখন আপনি যদি ২/৩ ঘন্টার বেশি সময় ধরে সালাত আদায় করেন তাহরে ০৮ রাকাতের বেশি আদায় করুন । আবার যদি ০১ ঘন্টা বা তার চেয়ে কম সময় কিয়াম করেন তাহলে ০৮ রাকাতের কম আদায় করুন । তাই কিয়ামুল লাইলের রাকাত নির্ভর করছে আপনার সময় দানের উপর ।

আমাদের কে একথা ভাল করে বুঝতে হবে যে , সালাত আদায় মানে কেবল হুটহাট ওঠা বসার নাম নয় । কিংবা না বুঝে তেলাওয়াত করে যাওয়ার বিষয় নয় । বরং তা হচ্ছে মহান মালিকের সাথে তার বান্দার এক গভীর ভালবাসার মিলন । এক ধরনের ভাবের বিনিময় । সুতরাং তারাহুড়া করে সালাত আদায় করার নাম কিয়ামুল লাইল হতে পারে না । তাছাড়া একথা সত্য যে, নফল সালাতের উদ্দেশ্য ফরজের মত নয় । এখানে দায়িত্ব পালন থেকে লবিং বা সম্পর্ক তৈরির চিন্তা বেশি । তাই স্বাধারনত নফল সালাতে সময় ও মনযোগ বেশি দেয়ার দাবি করা হয় । এখন আপনি যদি তাড়াহুড়া করে তা আদায় করেন তাইলে লবিং বা সম্পর্ক কি উন্নয়ন সম্ভব ? আবার কেউ কেউ কিয়ামুল লাইল থেকে তারাবিহ নামে আলাদা সালাতের আবিষ্কার করেন । বস্তুত এমন টা করার সুযোগ নেই । আবার অনেকেতো কিয়ামুল লাইল বা তারাবিহ কে আবশ্যকীয় মনে করেন । কিন্তু তা হাদিসের ভাষায় প্রমাণিত নয় ।

সুতরাং আপনার যদি ২০ রাকাত সালাত আদায় করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও শক্তি না থাকে তাইলে কম আদায় করুন । যদিও তা ০৮ রাকাতের কম হয় । তাড়াহুড়া করে ৪০ রাকাত পড়ার চেয়েও ধির স্থির ভাবে ০২ রাকাত আদায় করা অনেক উত্তম এবং তাই সুন্নত ।

আসুন আমরা ইসলামের মৌলিক চেতনা কে সঠিক ভাবে আকড়ে ধরি । এবং কিয়ামুল লাইল আদায় করে জীবনের সকল গুনাহ কে মাফ করায়ে নেই ।আমিন

বিষয়: সাহিত্য

১৬৯৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326788
২০ জুন ২০১৫ রাত ১২:৫১
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন :
আমি শুরুতেই তারাবিহ শব্দটার সাথে একমত নই । কেননা কুরআন ও হাদিসের পরিভাষা এটি নয় । হাদিসের পরিভাষা হল কিয়ামুল লাইল । তাই তারাবিহ নয়, বরং কিয়ামুল লাইল বলাটাই সুন্নহ সম্মত ।

মাশাআল্লাহ! জানতাম না তো? তাহলে তারাবীহ শব্দটা আসল কোত্থেকে? এটি কোন ভাষা জানাবেন কি? ধন্যবাদ আপনাকে..
326795
২০ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৩
মুসাফির মাহফুজ লিখেছেন : তারাবিহ শব্টাও আরবি ।যার অর্থ ধীরে ধীরে পড়া । বিশ্রাম নেয়া । মুলত দ্বীর্ঘ কেরাত ও সালাত হওয়ায় চার রাকাত পরে বিশ্রাম নিতে হয় । হালকা নাস্তা ও রিফ্রেশ হতে হয় । তাই একসময় তারাবিহ হয়ে যায় ।
326815
২০ জুন ২০১৫ রাত ০৩:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার যুক্তিপূর্ন পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
326848
২০ জুন ২০১৫ দুপুর ১২:৪০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : খুব ভাল লাগলো, আবুধাবিতেও ৮০% মসজিদে ৮ রাকাত পড়া হয়, এই ৮ রাকাতে ৩৫/৪০ মিনিটের মত টাইম লাগে,পড়তে ও খুব ভাল লাগে। পোষ্টটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
326862
২০ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:৫৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : তারাবিহ নামক কোন নামাজই তো ইসলামে নেই। তাহলে রমজানে তারাবিহের নামাজের কি দরকার?

রাসূল (সাঃ) সারা বছরই ৮রাকাত তাহাজ্জদ ও ৩ রাকাত ভিতির পড়তেন। রমজান উপলক্ষে বিশেষ কোন নামাজ বেশি পড়তেন না। সারা বছরের নিয়মে ৮রাকাত তাহাজ্জদ ও ৩ রাকাত ভিতির পড়তেন। মাঝে মাঝে কমবেশিও করতেন।

বুঝা গেল ক্বিয়ামুল্লাইল সারা বছরের নিয়মিত আমল। তাহলে আমরা কেন তারাবিহ নামক জিনিসটা নিয়ে শুধু রামাদানের জন্য এত বাড়াবাড়ি করছি?

রাসূল (সা) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল রামাদানের রাতের নামাজের ব্যাপারে, রাসূল (সা) বললেনঃ দুই রাকাত দুই রাকাত। যখন দেখবে সকাল হয়ে যাচ্ছে, এক রাকাত গড়ে আগের পড়া সকল রাকাতকে বেজোড় কর। (বুখারী ও মুসলিম)

এই হাদীসে রাসূল (সা) বলেন নাই ৮ রাকাত কিংবা ১১ রাকাত, বলেছেন দু'রাকাত দু'রাকাত করেই পড়তে থাকাে।

হতে পারে ২০রাকাত, হতে পারে ৪০রাকাত, অথবা কম বেশি। এ ব্যাপারে যখন রাসূল (সা) থেকে কোন রাকাআতের নির্দিষ্ট নেই।
তাই আমরা ইজমায়ে সাহাবার প্রতি দৃষ্টি দেব। যেখানে হযরত ওমরের আমলের উপর সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বিশ রাকাতের উপর ইজমা হয়েছিলেন।
এখানে কোন মাযহাবী আলেমদের ইজমা নয়। উম্মতের ১ নাম্বার সিরিয়ালের যারা, সাহাবায়ে কেরাম, তাদের ইজমা।

রামাদানে ক্বিয়ামুল্লাহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ২০ পড়া সাহাবায়ে কেরামের ইজমা ভিত্তিক আমল। মক্কায় মজজিদে হারামেও ২০রাকাত হয়, মদিনার মসজিদে নববীতেও ২০রাকাত হয়।

তাই ২০রাকাত অধিক যুক্তি যুক্ত। কিন্তু ২০রাকাতই পড়তে হবে এমন নয়। আবার কেউ ২০রাকাতের বিরোধীতা করতে হবে এমনও নয়।
জাযাকাল্লাহ খাইর
327033
২১ জুন ২০১৫ রাত ০৮:৪১
মহুয়া লিখেছেন : লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ইসলাম এর যে কোন ইবাদত, আমার বা আপনার চিন্তার ভিত্তিতে ‘স্থির হবে না ; যদি না, আমার বা আপনার সে ‘যোগ্যতা ও দক্ষতা এবং ‘অবস্থান থাকে!
ফরয নিয়ে সমস্যা নেই, সুন্নাহ বা নফল নিয়ে যে মতদ্বৈততা তা সমাধানের জন্য – ব্লগ নয়, নির্দিষ্ট কিছু ‘ফোরাম রয়েছে। ৮ রাকাত বা বিশ রাকাত - যার যেমনটা ইচ্ছা পড়তে দিন। রমাদান এক পবিত্র মাস- মানুষ যদি এমাসে একটু বেশী নিজেকে এবাদতে ব্যাপৃত রাখে, সমস্যা কোথায়।
উল্লেখিত সালাত এক সময় জামাত এর সাথেও পড়া হত না, কারণ রাসূল ( সঃ) জামাতে পড়েন নাই! হযরত উমর (রাঃ) বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন ভাবে কিয়ামুল লাইল করতে দেখে সে সময়ের ‘বিজ্ঞ সাহাবীদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতেই – সবাইকে এক জামাতে পড়ার জন্য এই পদ্ধতি চালু করেন। শিয়া অনুসারী গণ ‘উমর এর সুন্নাহ বলে এ নামাজকে বাতিল করেছেন আর এখন সূন্নিদের ‘গুনীরাও উল্টা পাল্টা আলোচনা সমালোচনা শুরু করেছেন।
আমরা যারা আম জনতা, ( অনেকেই খাস আছেন তাদের বাদ দিয়ে), তাদের কেউ কেউ উমর ( রাHappy এর চেয়ে বড় পরহেজগার হয়ে গেলে এর পরিবর্তন করতে চাইতেই পারেন, নাহলে ‘সূণ্ণাতের বা নফল এবাদত নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেই ভাল। কথায় আছে, বাঁশের চাইতে নাকি কঞ্চি দড়!
327225
২৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২০
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : এশা পড়ে ঘুমিয়ে আবার মধ্য রাতের পর ঘুম থেকে উঠে তৃপ্তিভরে তাহাজ্জুদ নামাজ ও ক্বোরআন তেলাওয়াত করতে পারবে। এখানে অতি গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে যা, ইসলামে “তারাবী” নামের কোন নামাজ নেই। রাসূল সঃ এরূপ কোন সালাতের সংযোজন কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। (বোখারী-মুসলিম) খলিফা ওমর “বিদ্‌আত” বলে এটাকে চালু করে এ বলে যে, “যারা শেষ রাতে উঠে রমজানে তাহাজ্জুদ পড়বেনা, তারা রাত্রের প্রথমার্ধে হাট বাজারে আড্ডা না দিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে ক্বোরআন শুনুক। তবে এটি একটি বিদ্‌আত”। রাসূল সঃ যা করেন নি, ধর্মে তা করাই বিদ্‌আত। বিদ্‌আত দাঁড় করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু রমজান মাসে মস্‌জিদ কমিটি চাঁদা তোলা ও হাফেজ ভাড়া করে অতিরিক্ত আয়ের ব্যবস্থা করতে এ বিদ্‌আতকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, তার চাপে মাহে রমজানে ক্বোরআন বুঝার ফরজই চাপা পড়ে হারিয়ে গেছে। তারাবীর তারাহুড়ায় হাফেজ, ইমাম ও মুসল্লী সবাই ক্বোরআন শুনে বুঝে, ক্বোরআনের গভীরে পৌঁছার সুযোগ চীরতরে হারিয়েছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাই হি রাজিউন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File