একটি রাস্তার ইতিকথা......

লিখেছেন লিখেছেন ওয়াচডগ বিডি ১০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:১৩:৩৩ সকাল



চাইলে এই একটা ছবি নিয়েই লেখা যাবে বিশাল ক্যানভাসের গল্প। অনেকে বলবেন রাজনীতির গল্প, কারণ ওয়াচডগ রাজনীতি বাদে অন্যকিছু লিখতে জানে না। আপনারা সঠিক হলেও ক্ষতি নেই। অন্যের কাছে যা রাজনীতি আমার কাছে তা জীবন।, আমি যা লিখি তা আমার জন্যে জীবনের গল্প। চোখে পরার মত এমন কিছু নেই ছবিটায়। শূন্য একটা রাস্তা। উঁচু-নিচু ও আঁকাবাঁকা হয়ে চলে গেছে দুরে বহুদূরে। মনে হবে আকাশের সাথে মিশে গেছে দিগন্ত রেখায়। শখের ছবি নয় এটা, অফিসের প্রয়োজনে তোলা। আমার গল্প ছবিকে ঘিরে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে তা নয়, বরং এ রাস্তায় কি হচ্ছে না তা নিয়ে এ লেখা।

ছ’মাস আগের কথা। অফিসের কাজে প্রথম যেতে হয় রাস্তাটায়। রাস্তা বলতে খোলা মাঠ ধরে বয়ে যাওয়া সূক্ষ্ম একটা রেখা। বলা হল দুমাসের ভেতর ফুটে উঠবে এর আসল চেহারা। টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে আমার কাজ হবে এলাকায় ল্যান্ডফোন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ডিজাইন করা। একটু অবাকই হয়েছিলাম খোলা মাঠের জন্যে হাইস্পিড ইন্টারনেটের কথা ভেবে। দুই মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প। বাংলা টাকায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। টেন্ডার যেদিন চূড়ান্ত হয় অফিসের কোথাও কোন উত্তেজনা চোখে পড়ল না। প্রবেশ মুখে তরুণ, উদীয়মান ও উঠতি ব্যবসায়ীদের কাউকে জটলা করতে দেখা যায়নি। এ কাজে ৫০ বছরে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গে-হার্ড ইনক্‌ নামের কোম্পানি কাজ পাওয়ায় অস্ত্র হাতে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়েনি তাদের উপর। রিও রাঞ্চো শহরের মেয়র টমাস সুইসট্যাক, অঙ্গরাজ্যের নব নির্বাচিত সিনেটর টম উডাল অথবা বিদায়ী গভর্নর বিল রিচার্ডসনকে ফোন করতে হয়নি নিজ ক্যাম্পের কাউকে কাজ দেয়ার সুপারিশ নিয়ে। টেন্ডারের একটা অংশ লোকাল প্রতিনিধি মারফত প্রেসিডেন্ট ওবামার অফিস হয়ে তার ১৫ বছরের মেয়ে মালিয়ার পকেটে যাবে এমনটাও কাউকে বিবেচনা করতে হয়নি। টেন্ডার হেটে গেছে টেন্ডারের পথে। ও পথে ওঁত পেতে থাকেনি ডেমোক্র্যাট অথবা রিপাবলিকান দলীয় হায়েনা।

রাস্তাটার কোন নাম ছিলনা। আর থাকলেও আমার মত সাধারণ প্রকৌশলীর তা জানার কথা নয়। কাগজপত্র ঘাটতে গিয়ে জানা গেল রাস্তাটার নাম হবে 19th Street। এর সামনে পেছনে ১৮তম ও ২০তম রাস্তা। নামকরণ নিয়ে অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকান নেতাদের মারামারি করতে হয়েছে এমন সাক্ষী কেউ দেবেনা। নাম হেটে গেছে নামের পথে। ও পথে গভর্নর রিচার্ডসনকে দেখা যায়নি নিজের মা-বাবার কবর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। রাস্তার নাম নিয়ে যেমন কেউ মাথা ঘামায়নি তেমনি রাস্তা যেদিন খুলে দেয়া হবে রাজধানী সান্তা ফে হতে কারও আসার দরকার হবেনা। মোড়ে মোড়ে তোরণ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেবেনা। ১৯তম রাস্তায় নামবে না মিডিয়ার ঢল। রাস্তা হেটে যাবে রাস্তার পথে, কারণ এটাই জনপ্রতিনিধিদের কাজ।

আপনি বলবেন এ তো আমেরিকা, পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দেশ, এ দেশে এমনটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। আপনি সঠিক হলেও আমার আপত্তি নেই। ঘুম ভেঙ্গে আয়নায় তাকালে যার মুখ দেখি সে একজন মানুষ। দুহাত, দুপা, দুকান আর দুচোখ ওয়ালা স্বাভাবিক মানুষ যার সাথে সামান্যতম পার্থক্য নেই রিও রাঞ্চো শহরের সাধারণ মানুষের। অর্ধ শতাব্দী আগে যে আমেরিকায় সাদাদের বাসে কালোদের চড়ার সুযোগ ছিলনা সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এখন কালো। চাইলে সবই সম্ভব, তবে তার জন্যে চাই মনের দরিদ্রতা হতে বেরিয়ে আসা।

সন্দেহ নেই নিকট ভবিষ্যতে বদলে যাবে ১৯তম রাস্তার চেহারা। যে রাস্তার শুরুটা ছিল শূন্য হতে তাকে ঘিরে গড়ে উঠবে বিশাল এক জনপদ। মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে নিবিড় সম্পর্কের যে চিরন্তন ধারা তার প্রায় দোর গোঁড়ায় পৌঁছে যাবে এলাকার জীবন। এ নিয়ে কেউ কথা বলবে না, উচ্চবাচ্য করবে না, ক্রেডিট নেবে না রাস্তার জন্ম নিয়ে। ১৯তম রাস্তা হতে হাজার হাজার মাইল দুরে পৃথিবীর অন্য কোথাও হয়ত তৈরি হবে আরও একটা রাস্তা। এ রাস্তার টেন্ডার লাভে দু’একটা জীবন ঝরে গেলেও কেউ অবাক হবেনা, ফেলবে না দু-ফোঁটা চোখের পানি। টেন্ডার কমিশনের জন্যে হা হয়ে থাকবে ক্ষমতার শীর্ষে বসে থাকা রাজনীতিবিদদের সন্তান, হা হুতাশ করবে বিরোধী দলের সন্তান। রাস্তার নাম নিয়ে হয়ত হাঙ্গামা হবে, উত্তাল হবে মিডিয়া। মিছিল আর ভাংচুর হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শেষ পর্যন্ত আসবে উদ্বোধনের দিন। ব্যানার আর তোরণে ঢেকে যাবে উপরের আকাশ। ভাষণ হবে, মানুষের পদভারে সয়লাব হবে এলাকা। কবর হতে মৃত বাবা অথবা স্বামীকে উঠিয়েও অনেকে বিক্রি করবে ভিন্ন মেরুর ১৯তম রাস্তায়। সময়ের প্রবাহে একই রাস্তা হারিয়ে ফেলবে তার চেহারা, পদে পদে তৈরি হবে মৃত্যু খাদ। আবারও টেন্ডার হবে। তবে এ যাত্রায় নতুন নয়, পুরানো ১৯তম রাস্তার জন্যে। এ ফাকে ঘুরে যাবে শতাব্দী।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

272775
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : শতাব্দীই ঘুরবে চরিত্রের বদল হবেনা৷ হা হুতাস করে লাাভ নেই৷ আমরা এমনই বাহনের যাত্রী৷ ধন্যবাদ৷
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:৫১
216904
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
272778
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৩৩
বুড়া মিয়া লিখেছেন : তবে ভাইয়া চুরি কিন্তু একই বিশ্বব্যাপী; ওরাও করে আমরাও করি। ওদেরটা রাস্তাঘটে মারামারি না করে কথার/যুক্তির মারামারি দিয়ে হয়, আর আমাদের এখানে সশস্ত্র যুদ্ধ/টেন্ডার এই টাইপ কিছু দিয়ে হয়। কিন্তু চুরি-ডাকাতি মিস যায় না কোথাও!

এসব নিয়ে কিছু বইয়ে পড়েছিলাম আর বেশ কিছু লেকচার শুনেছিলাম, তাতে করে আমাদের সাথে ওদের চরিত্রের কোন পার্থক্য নাই! ওদের ভালো দিক যেটা আমার মনে হয়, তা হচ্ছে চুরি করলেও ওরা নিজেদের সামগ্রিক ক্ষতি করে না, কিন্তু আমরা সামগ্রিক ক্ষতি করে নিজেরা চুরি করি! ওরা চুরি করলে চুরির মাল এ্যামেরিকাতেই থাকে, ঐখানেই সার্কুলেট হয় ওদের মধ্যেই; আর আমরা চুরি করলে সেটা আমাদের থেকে হারিয়ে গিয়ে ইউরোপ-এ্যামেরিকাতে গিয়ে সার্কুলেট হয়!
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:৫১
216905
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : রিপাবলিকান ডেমোক্রেটদের কামড়া কামড়ি না থাকলেও টেন্ডার যে কোম্পানি পেয়েছে তার মালিকপক্ষের সাথে দহরম মহরন অবশ্যই ছিল। অন্তত টেলেকম খাতে স্বচ্ছতা আছে এটা মানতে আমার অনেক কষ্ট হয়।
272797
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৩৮
নোমান২৯ লিখেছেন : গভীর ভাবনার বিষয়|আহ!আমাদের জনপ্রতিনিধিরা কবে যে বদলাবে?
লেখাটি খুব ভাল হয়েছে|আপনাকে অনেক ধন্যবাদ| Rose Rose Rose
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:৫২
216906
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : আপনার ভালো লাগা প্রেরনা হয়ে থাকলো।
272806
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৯
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : ভালই তো। আমাদের দেশ হলে তো কুত্তার মত ঝাপিয়ে পড়তো টেন্ডার বাক্স নিয়ে।
১০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
216908
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : আর ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো আমরা শুধু লাফালাফি করতাম।
272821
১০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো আপনার উপলব্ধি।
তবে বুড়া মিয়া ভাই এর সাথে একমত্। আমি নিজেও দেশে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত অনেকদিন। কাজ পাওয়ার জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলির রেশারেশি এবং লবিং এর প্রত্যক্ষদর্শি।
১০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:০৬
216964
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : যতদিন আমরা পিতা এবং ঘোষক ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকবো ততদিন এই অবস্থা থেকে উন্নতি হবে না।
১০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:১৩
216965
নোমান২৯ লিখেছেন : যতদিন আমরা পিতা এবং ঘোষক ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকবো ততদিন এই অবস্থা থেকে উন্নতি হবে না।Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone শুনবে তো ভাইয়া!
সহমত|Good Luck Good Luck Good Luck
272877
১০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

উপভোগ করলাম.....

অসাধারণ পরিবেশনা / বর+ণনা..


আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে-
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে-

অপেক্ষা করাটাই কি সার হবে?????


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
১০ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
216984
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : ওয়ালাই কুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
আপনার ভালো লাগা প্রেরনা হয়ে থাকলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File