ইয়াহিয়া খানের প্রোতাত্মা..
লিখেছেন লিখেছেন ওয়াচডগ বিডি ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:১৫:১৮ দুপুর
নিবারণ স্যারকে যেদিন পাকিস্তানীরা নিয়ে যায় প্রতিবাদ করার মত কেউ ছিলনা। থাকলেও রাস্তায় নামার মত পরিস্থিতি ছিলনা গঞ্জে। যারা এসেছিল তাদের সবার হাতে ছিল সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র। এক লহমায় সবাইকে শুইয়ে দেয়ার মত ক্ষমতা ছিল বাহুতে। এসবের কোনটারই প্রয়োজন হয়নি শেষপর্যন্ত। দারিদ্রের কষাঘাতে বেড়ে উঠা সত্তর বছর বয়স্ক একজন স্কুল শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে দাঁড়ানোর দায়বদ্ধতা ছিলনা কারও জন্যে। স্যারও জানতেন সেটা। তাই বন্দুক উঁচু করার আগেই নাকি নিজের পরিচয় প্রকাশ করে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তারপর নীরবে নিঃশব্দে মিলিয়ে যান হাল্কা বাতাসে। সেদিন কোথায় নিয়ে গিয়েছিল তা আর কেউ কোনদিন জানতে পারেনি। সৎকার করার মত লাশেরও সন্ধান মেলেনি। কেউ কেউ বলেন কসবা সীমান্তের কোথাও নাকি পুঁতে রেখেছিল মৃতদেহটা। আবার অনেকের মতে মারা হয়নি স্যারকে। কোলকাতার কোন এক গলিতে নাকি সপরিবারের বাস করতে দেখা গেছে। খুব ছোটবেলা হতে জানি স্যারকে। নিজের বাড়ি ছেড়ে একদিনও বাইরে থাকার মানুষ ছিলেন না তিনি। তাই বিশ্বাস করিনি বেঁচে আছেন। আরও অনেকের মত নিবারণ স্যারকেও গুম করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানীরা। লাশটা ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকায় কোথাও হয়ত ছুড়ে ফেলেছিল। হয়ত শেয়াল কুকুরের আহার হয়েই পৃথিবী হতে বিদায় নিয়েছিলেন মানুষ গড়ার এই কারিগর। মহতী এই মানুষটার একমাত্র অপরাধ তিনি ছিলেন হিন্দু, তাই পাকিস্তানের অখণ্ডতার প্রতি ছিলেন হুমকি স্বরূপ। মাটিতে ট্যাংক, আকাশে জঙ্গি বিমান আর হাতে মারণাস্ত্র সহ নিয়মিত বাহিনীর কোন বিবেচনায় এই অশীতিপর বৃদ্ধ হুমকি ছিলেন তা পাকিস্তানীরা যেমন বর্ণনা করেনি তেমনি এ দেশের ইতিহাসও উন্মোচন করেনি এ রহস্য।
২০১৪ সালের এপ্রিল মাস। মধ্য দুপুরে গঞ্জের বাজার হতে উঠিয়ে নিয়ে যায় সাইদুলকে। ২০ বছরের এই তরুণ লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার রিক্সা মেরামতের দোকানে কাজ করত। অবসর সময়ে স্থানীয় বিএনপি অফিসে আড্ডা দেয়া ছিল তার অনেকদিনের অভ্যাস। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন পূর্বক উত্তপ্ত পরিবেশে বেশ সক্রিয় ছিল সাইদুল। হয়ত সেটাই ছিল তার মৃত্যু পরওয়ানা। গায়ে কালো পোশাক আর চোখে কালো চশমা লাগিয়ে র্যাবের গাড়িতে চড়ে এসেছিল ওরা। শত শত মানুষের সামনে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে উঠায় তাকে। গঞ্জের কাঁচা রাস্তা ধরে ধূলিঝড় উঠিয়ে হারিয়ে যায়। সাথে হারিয়ে যায় সাইদুল নামের একজন গ্রাম্য তরুণের পরিচয়। কেউ জানতে পারেনি তার ভাগ্যে কি ঘটেছিল। র্যাব অফিস হতে দুই লাখ টাকার একটা এলান পাঠানো হয়েছিল তার বাবার কারখানায়। বাবা সময় মত জোগাড় করতে পারেনি এত টাকা। অর্ধেক টাকা নিয়ে যেদিন র্যাব অফিসে গেলেন অফিসার টাইপের কেউ একজন জানাল সাইদুল নামের কাউকে গ্রেফতার করেনি র্যাব। ভোজবাজির মত বাতাসে মিলিয়ে গেল এই হতভাগা বাংলাদেশি। তার একমাত্র অপরাধ, সে সরকারের সমর্থক নয়।
আমাদের অবৈধ নির্বাচনের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী গতকালের এক জনসমাবেশ দাবি করেছেন ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মারা নাকি এখনো এদেশে ঘুরে বেড়ায়। অনেকদিন পর তিনি একটা সত্য কথা বললেন। ধন্যবাদ না দিলেই নয়। ৭১’সালে নিবারণ স্যারকে ইয়াহিয়া বাহিনী গুম করেছিল। একই কায়দায় ২০১৪ সালেও সাইদুলরা গুম হয়। ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মাদের এখন অবশ্য অন্ধকারের প্রয়োজন হয়না। ওরা মধ্য-দুপুরে শত শত মানুষের সামনে হতে উঠিয়ে নেয়। তারপর অদৃশ্য হয়ে যায় ভুত-পেত্মীর মত। মাঝে মধ্যে ভেসে উঠে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরী অথবা কালিগঙ্গার বুকে। চারদিকে ছড়িয়ে পরে সীমাহীন আতংক। এসব আতংকই এখন ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মাদের একমাত্র সম্বল। আয়নায় নিজের চেহারা দেখে হয়ত চমকে উঠে থাকবেন জনাবা প্রেতাত্মা। তাই মুখ ফসকে সত্য বলতে বাধ্য হয়েছেন ইয়াহিয়া খানের এই বংশধর।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন