বাকশাল এবং সমসাময়িক বিশ্ব
লিখেছেন লিখেছেন ওয়াচডগ বিডি ২০ মে, ২০১৪, ১১:৪৪:২৪ রাত
পুজিবাদের মৃত্যু ঘোষনা দিয়ে ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব হাজির হয়েছিল সমাজতন্ত্রের বানী নিয়ে। সম্পদের সূসম বন্টন এবং সবার জন্যে ন্যায় বিচারের প্রতিজ্ঞা নিয়ে সমাজতন্ত্রের উদয় ছিল সময়ের দাবি। এমন একটা দাবির মিছিলে সামিল হতে শুরু করেছিল ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকার অনেক দেশ। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফাসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্রের নামে কায়েম করা হয়েছিল একদলীয় শাষনের ষ্টীমরোলার। তাতে কি সফল হয়েছিল নির্যাতিত শ্রমজীবির দল? যাদের হারানোর কিছুই ছিলনা নূন্যতম পাওয়াই ছিল তাদের জন্যে চরম পাওয়া, এ অর্থে নিশ্চয় সফল ছিল রাশিয়া এবং চীনের মত অনগ্রসর দেশগুলোর নির্যাতিত শ্রমজীবির দল। কিন্তূ শেষ পর্য্যন্ত সেই সময়ের দাবির কাছেই হার মানতে বাধ্য হয় সর্বহারাদের স্বৈরতন্ত্র। তাই বলে সভ্যতা বিকাশে সমাজতন্ত্রের অবদানকে খাটো করে দেখার কোন উপায় ছিলনা, আজকের লাগামহীন পূজিবাদকে দিক নির্দেশনা পেতে এখনও হাতড়াতে হয় সমাজতন্ত্রের উত্থান এবং পতনের কারণগুলো।
’৭১এ বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল এমন একটা প্রত্যয় নিয়ে নয় কি? সমাজতন্ত্র ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানোফেষ্টোর অন্যতম পয়েন্ট, আর এমন একটা শোষনহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমের জন্যেই এ দেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে। শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থার অর্থ একদলীয় শাষন, ’৭১এর আগে আমাদের কি এমনটা জানা ছিলনা? জানা থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলাম এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এখন সমগ্র জাতিকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে। বাকশাল গঠন ছিল ম্যান্ডেট প্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। সমাজতন্ত্র চাই অথচ একদলীয় শাষন চাইনা, এ সমাজতন্ত্র হতে পারেনা। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন, সমসাময়িক চীন, ভিয়েতনাম এবং কিউবা কি এর উত্তম উদাহরন নয়? আজকে যারা বাকশাল নিয়ে তোলপাড় করছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ ছিল সম্পদের সূষম বন্টন তথা সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্রের কোন স্থান নেই, এ বিচারে আওয়ামী লীগের বাকশাল গঠন ছিল তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরন মাত্র।
একদলীয় শাষন ভাল কি মন্দ তার পক্ষে বিপক্ষে রয়েছে হাজার যুক্তি, এ নিয়ে হয়ে গেছে যুগব্যাপি ঠান্ডা লড়াই। বাংলাদেশের যদু মধু রাম শ্যাম আর ছিঃ’এর দল জিয়ার মত কসাইয়ের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বাকশাল তত্ত্ব দিয়ে হালাল করার প্রয়াশ নিতান্তই ছেলে মানুষী। ১৯৭৫'এ শেখ মুজিব হত্যার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বহুদলীয় গনতন্ত্র উদ্বার করা, এ সব ছেলে ভূলানো গাল-গপ্প আজকাল মাদ্রাসার ছাত্রদের কাছেও গ্রহনযোগ্য নয়। একদল কুকুর বাংলাদেশকে মরা গরু বানিয়ে ক্ষুধার্ত হায়েনার মত চেটেপুটে খাওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়েই ১৫ই আগষ্টের জন্ম দিয়েছিল। যার উচ্ছিষ্ট আজকের মজুমদার পরিবারের হাভাতে চোরের দল।
যাহা ৬ তাহাই ৯!
বাংলায় একটা কথা আছে, কানা গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল। তথাকথিত বহুদলীয় গনতন্ত্র বাংলাদেশের জন্যে কতটা সূফল বয়ে এনেছে তার র্নিলজ্জ প্রমান আজকের অসূস্থ রাজনীতি। এমন রাজনীতির ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে চোর, বাটপার আর টাউটের দল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নামেই রয়েছে ১৪টা চাদাবাজীর মামলা, আর ভুবন খ্যাত আপোষহীনার শরীরে প্রবাহিত আপোষহীন রক্তে সাতার কেটে বেড়ে উঠেছে তারেক ককোর মত নর্দমার আবর্জনা। সূস্থ রাজনীতির কোন সংজ্ঞায়ই বাংলাদেশের গনতন্ত্রকে বহুদলীয় গনতন্ত্র বলা যায় না, এ হচ্ছে পরিবারতন্ত্রের স্বৈরশাষন, যা বাংলাদেশের মালিকানা রাজতন্ত্রের মত রাজার পর রাজপুত্র, রাজপুত্রের পর উত্তরাধীকার সূত্রে দাবিদার আরও এক রাজপুত্র অথবা রাজপুত্রানীর হাতে ন্যস্ত হওয়ার চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত। রাজতন্ত্রের সাথে একটাই পার্থক্য, আর তা হচ্ছে সিংহাসনের দাবীদার রাজা, রানী আর রাজপুত্রের সংখ্যা এখানে একাধিক। কিছুদিন আগে সমাপ্ত হওয়া আওয়ামী লীগের তথাকথিত কাউন্সিল প্রমান করেছে গনতান্ত্রিক চর্চা হতে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কত শত মাইল দূরে। নেত্রীর মোসাহেবীর নগ্ন প্রদর্শনীর অপর নাম যদি দলীয় কাউন্সিল হয়, এমন কাউন্সিল গনতন্ত্রের নামে ঠাট্টা তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। যারাই জরুরী আমলে নেত্রীর নেত্রীত্ব নিয়ে সামান্যতম প্রশ্ন তুলেছিল তাদের রাজনৈতিক জানাজা পড়ানো হয়েছে কাউন্সিলের মাধ্যমে। ধিক এমন গনতন্ত্রে! জাতিয়তাবাদী ধান্ধাবাজীর পতাকা তলে জমা হওয়া রাজনৈতিক লুটেরাদের অন্য দল বিএনপির অবস্থা আরও তথৈবচ। এ দলের পরতে পরতে র্দুনীতির পচনশীল গন্ধ যার ধারক বাহক হতে ইতিমধ্যে তৈরী হয়ে গেছে 'মহান' এক রাজপূত্র, তারেক জিয়া। আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই এই রাজপুত্র যেদিন রাজার আসন হতে বিদায় নেবে তার সিংহাসনের দাবী নিয়ে এগিয়ে আসবে নতুন এক রাজকন্যা, জামাইমা জিয়া। এর নাম বহুদলীয় গনতন্ত্র? থু থু ফেলি এমন গনতন্ত্রে!
অনেকেই ১৫ই আগষ্টের নৃশংসতম হত্যাকান্ডকে বিপ্লবের সাথে তুলনা করে জৈবিক আনন্দ নেয়ার চেষ্টা করতে ভালবাসেন। জ্ঞানের এমন ভান্ডার নিয়ে যারা রাজনৈতিক তর্ক করতে চান তাদের অনুরোধ করব এ লাইনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। সেনাছাউনির লোভি কুকুরদের রক্ত পিপাসার নাম বিপ্লব হতে পারে না, এ নিছকই লোভ লালসা বাস্তবায়নে একদল নরপিচাশের ভয়াবহ নির্মমতা। জেনারেল জিয়া, জেনারেল শফিউল্লাহ, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ, কর্নেল তাহের, শাফায়েত জামিল, এই চক্ত্রের সবাই সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত বন্যা বইয়ে দেয় ৩২নং রাস্তায়, যা পরবর্তীতে রুপ নেয় হালুয়ার বখড়া নিয়ে নিজদের ভেতর কামড়া কামড়িতে। এর নাম বিপ্লব? তাও আবার বলশেভিক বিপ্লব! ধিক এমন জ্ঞানে!
আওয়ামী লীগের বাকশাল বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে যেত তা বিচার করার সূযোগ আসেনি, এর আগেই এ ধারনার কবর হয়ে যায়। বাকশালের মত একদলীয় শাষন ঐ সময়টায় পৃথিবীতে নতুন কোন আবিস্কার ছিলনা, সমাজতান্ত্রিক জোটই তার ছিল তার জ্বলন্ত প্রমান। মধ্যপ্রাচ্যের রাজা বাদশাদের রাজত্ব কি বাকশাল রাজত্ব হতে খুব বেশী দূরের রাজত্ব ছিল? বাংলাদেশ কোন কালেই বহুদলীয় গনতন্ত্রের জন্যে তৈরী ছিলনা, এর জন্ম লগ্ন হতেই ব্যক্তিতন্ত্রের হাতে গনতন্ত্রের সমাধী হয়েছে। আজও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এক কাপ চা আর একটা আকিজ বিড়ি দিয়ে যতদিন ভোটের রাজনীতি ক্রয় করা যাবে ততদিন বহুদলীয় রাজনীতির আসল অর্থ হবে ভাওতাবাজী, যা এক অর্থে বাকশালের চেয়েও নিকৃষ্ট। বাংলাদেশে এমন এক ভাওতাবাজীকেই লালন পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো, যার সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করছে প্রচার মাধ্যম, বুদ্বিজীবি নামের পরজীবি দল, ছাত্র, শিক্ষক সহ কথিত আমজনতা।
প্রশ্ন হচ্ছে, আজকের বাংলাদেশ চরিত্রহীনতার যে উচ্চতায় অবস্থান করছে বাকশাল কায়েম কি সে উচ্চতা হতেও অধিক উচ্চতায় নিয়ে যেত? হয়ত নিয়ে যেত, কিন্তূ এমন শাষন ব্যবস্থা সমাজে জিয়া-এরশাদ-খালেদা-হাসিনা মত কসাই-চরিত্রহীন-চাদাবাজ রাজনীতিবিদ এবং তারেক,ককো, মামুনদের মত রাষ্ট্রীয় লুটেরাদের জন্ম দিত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে!
উপরের লেখাটার মূল উদ্দেশ্য বাকশালতন্ত্রের স্তূতি গাওয়া ছিলনা, বরং এ ছিল তৎকালিন বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে বাকশালী ব্যবস্থার একটা বাস্তব তুলনা।
একদলীয় বনাম বহুদলীয়
"বাকশাল সমাজতন্ত্র ছিলনা, বরং এ ছিল গনতন্ত্র কবর দিয়ে মুজিব রাজত্ব পাকাপোক্ত করার রাজনৈতিক হাতিয়ার", শুনতে বেজায় ভাল শোনায়। গনতন্ত্রের প্রতি এমন অপরিসীম শ্রদ্বাবোধ এবং কমিটমেন্ট কেবল বাংলাদেশেই হয়ত খুজে পাওয়া সম্ভব। কথিত বহুদলীয় গনতন্ত্রের অলংকার এক মাথা এক ভোটের ফলাফল আজকে আমাদের কি উপহার দিচ্ছে, নেত্রী তথা পারিবারিক রাজত্ব নয় কি? হ্যা, পার্থক্য একটা নিশ্চয় আছে, আর তা হল, রাজত্বের দাবীদার এখন রাজার বদলে রানী, এবং তখত তাউসের উত্তারাধীকার এক রানীর স্থলে দুই রানী এবং স্ব স্ব রাজপুত্রদ্বয়। অতীতের বাকশালকে যদি টাকশাল নামে অভিহিত করে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা হয় খুব কি অন্যায় কিছু হবে? আজকের বহুদলীয় রাজনীতির পদচারনা কি টাকশালকে ঘিরে নয়? নিউ ইয়র্ক সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মহা আয়োজনে পালন করা হচ্ছে তারেক জিয়া মুক্তি বার্ষিকী। গনতন্ত্রের পূজারীদের কাছে সবিনয় প্রশ্ন, এ কোন মহা মানবের পূজায় নেমেছেন আপনারা? শেখ মুজিব পূজার অন্তত বৈধ একটা ভিত্তি ছিল, যার শিকরের গভীরতা ছিল জনগনের সন্মান, শ্রদ্বায় এবং ভালবাসায়। আর এই তারেক জিয়া? ক্ষমতার আবর্জনায় যার উত্থান, রাজনীতির ভান্ডার যার চুরির মালামালে পরিপূর্ন তাকে নিয়ে বহুদলীয় গনতন্ত্রের বড়াই?
দশতলা সিড়ি ভাংগার শুরুটা যেমন হওয়া চাই একতলা হতে, তেমনি সূস্থ সবল বহুদলীয় গনতন্ত্রে উত্তরনের জন্যেও চাই কিছু পথচলা। দেশীয় রাজনীতি সামন্তযূগীয় দাসবৃত্তির স্তর না পেরিয়েই বহুদলীয় রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিল, যার পরিনাম আজকের বাংলাদেশ মানেই নেত্রী এবং দলপূজার মহোৎসব।
উন্নতির যে মরা বাকে বাংলাদেশ আজ মুখ থুবড়ে পরে আছে তা হতে উদ্বার পেতে নষ্ট-পচা বহুদলীয় পাপাচার কতটা সহায়ক হবে সময়ই তা প্রমান করবে। আওয়ামীরা ক্ষমতায় এসে অল-আউট পাপাচারে লিপ্ত হয়ে দেশকে চুরি চ্যম্পিয়নশীপে বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন বানাবে এবং এর প্রতিবাদ/প্রতিদান হিসাবে ফিরিয়ে আনা হবে বিএনপি নামের আলী বাবা ৪০ চোরের দলকে (and vice-versa), এটাই ত আমাদের বহুদলীয় গনতন্ত্র, তাই নয় কি? এমন একটা বাংলাদেশ নিয়ে যারা সন্তূষ্ট তাদের জন্যে আমার এ লেখা নয়, আমার এ লেখা তাদের জন্যে যারা দেশকে দেখতে চায় সত্যিকার দেশ হিসাবে যেখানে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নিশ্চয়তার পাশাপাশি থাকবে স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা। এ অর্জন বহুদলীয় গনতন্ত্র অথবা একদলীয় লৌহ শাষনেই আসুক তাতে আমার মত সাধারন মানুষের হারানোর কিছু নেই।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ লাইনটা শুনতে চমৎকার মনে হতে পারে - কিন্তু বড় বেশীই অবাস্তব। এই যা।
আমার ধারনা - সাধারন মানুষ তা সে শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত যাই হোক - তার শাসন করার কাঠামোটা তথা তন্ত্র, ইজম ইত্যাদির দায় দায়িত্ব - যদি আর একজন কিংবা একাধিক মানুষের উপর অর্পন করে - তবে সেই সাধারন মানুষেরা কোন কালেও সুশাসন কিংবা সম্পদের সুষ্ঠভাগ পাবেনা, পেতে পারেনা। স্বাভাবতঃই আজকের কসমেটিক আচ্ছাদিত পৃথিবীতে কি পূর্ব আর কি পাশ্চাত্য - সবখানে হাহাকার, সবখানে অধিকার হীন ও বঞ্চিত মানুষের স্রোত দীর্ঘতর হতে দেখছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন