অন্যায়ের দাড়িপাল্লায় দুই নেত্রী ও নিরপেক্ষতার ভন্ডামি .।.।
লিখেছেন লিখেছেন ওয়াচডগ বিডি ১৮ মে, ২০১৪, ১২:০৮:৪৪ রাত
সমসাময়িক সমস্যা গুলো মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা যারা নিরপেক্ষতার সাধু সাজছি এবং হাসিনা খালেদাকে এক পাল্লায় দাঁড় করিয়ে বাহাবা নেয়ায় ব্যস্ত হয়ে পরছি তাদের দৌড়ে কিছুটা ব্রেক কসার অনুরোধ করবো। নিরপেক্ষতা ভাল জিনিস। কিন্তু তার অর্থ এই নয় কতগুলো অন্যায়কে কেবল মাত্র ভারসাম্যের কারণে সমান ভাবে ভাগ করতে হবে। বিচারপতি হাসান, আজিজ আর প্রেসিডেন্ট ইয়াজ উদ্দিনকে নিয়ে সৃষ্ট খালেদা জিয়ার সংকট কালকে আমরা নির্দয় ভাবে খালেদা জিয়া ও তার শয়তানী নক্সার বিরুদ্ধে কথা বলেছি। বিচারপতির বয়স কমিয়ে পছন্দের বিচারপতিকে সরকার প্রধান বানিয়ে নির্বাচনী নদী পাড়ি দেয়ার মহাপরিকল্পনা খালেদা জিয়া শাসনতন্ত্র ও গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে আড়াল করতে পারেন নি। অনলাইন একটিভিষ্টদের তৎপরতা সে সময় এতটা ব্যাপক না হলেও আমরা হাতে গোনা কজন এ ব্যাপারে সমান সোচ্চার ছিলাম। বর্তমান প্রেক্ষাপট হতে সে আমলকে যদি কাঠগড়ায় দাঁড় করাই ভারসাম্যের পাল্লা সমান ভাবে ভাগ করা যাবে বলে মনে হয়না। সে সময়ের উত্তাল দিনগুলোতে খালেদা সরকারের পুলিশের গুলিতে কজন প্রাণ হারিয়েছিল? একই সময় কজন শেখ হাসিনার লালিত খুনিদের হাতে খুন হয়েছিল? একটা সংখ্যা কি কেউ দাঁড় করাতে পারবেন? খালেদা জিয়াকে ফয়সালার টেবিলে আনতে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল তার সাথে আজকের শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির একটা তুলনা করলে ভারসাম্যের প্রশ্নে আমরা কম্প্রোমাইজ করতে বাধ্য হব।
ক্ষমতার পালাবদল এই দুই নেত্রীর ভূমিকাও পালটে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সে তান্ডব তাকে ক্ষমতার দোরগোড়ায় পৌঁছতে রসদ জুগিয়েছে। যদিও সেনাবাহিনী, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মার্কিন সরকারের যৌথ প্রযোজনাকেই অনেকে ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর হিসাবে দেখে থাকেন। এ ব্যাপারে লিক হওয়া প্রাক্তন মার্কিন ফরেন সেক্রেটারি হিলারি ক্লিনটন ও শেখ হাসিনার ফোনালাপ বিবেচনায় আনা যেতে পারে। জাতিকে অনেকটা ঘুমে আচ্ছন্ন রেখে উচ্চ আদালতের সেবা-দাসদের দিয়ে তিনি অতি গোপনে একক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন শাসনতন্ত্রে। প্রাসঙ্গিক ভাবে আমাদের মনে করে দেয় পিতা শেখ মুজিবের স্বেচ্ছাচারিতা ও তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার কালো দলিল বাকশালের কথা। তাহলে আমরা কি ধরে নেব বাবার ব্যর্থ মিশন সফল করার দায়িত্ব নিয়েছেন কন্যা শেখ হাসিনা? খালেদা জিয়ার ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল কি এতটা সুদূরপ্রসারী ছিল?
মতিঝিলে হেফাজতের জমায়েতে পুলিশি বর্বরতার ভিডিওটা যারা দেখেননি তাদের দেখে নেয়ার অনুরোধ করবো। বাংলাদেশের সব শাসক চক্রই অতীতে কমবেশি স্বৈরাচারী ছিল। বর্বরতার বিবেচনায় এসব শাসকদের পুলিশও কেউ কারও চেয়ে কম যায়নি। কিন্তু শেখ হাসিনার পুলিশ মনে হচ্ছে আওয়ামী বিরোধী সবাইকে হত্যা করার লাইসেন্স নিয়েছে। তুলনার জন্য বর্বরতার কোন মানদণ্ডই এখানে প্রযোজ্য নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দলীয় ক্যাডারদের পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেয়ার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, দেশ হতে আওয়ামী বিরোধী সবাইকে হত্যা করে উচ্ছেদ করা। পুলিশ ভাণ্ডারে গুলি ছাড়াও এমন অনেক রসদ থাকে যা দিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সহজে মোকাবেলা করা যায়। কিন্তু এ যাত্রায় কোন কিছুই ব্যবহার হচ্ছেনা এক গুলি ছাড়া। ছোট বড়, কচি বুড়া কাউকে রেহাই দেয়া হচ্ছেনা। খুব কাছ হতে বুক, পীঠ ও মাথায় গুলি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এরা দেশ হতে জঙ্গিবাদ নির্মূল করছে। আওয়ামী লীগ না করলেই যদি জঙ্গি হয় তাহলে শেখ হাসিনার প্লান বাস্তবায়ন করতে গেলে গোপালগঞ্জের পুলিশকে প্রায় চার কোটি মানুষ খুন করতে হবে। সেদিকেই কি এগুচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী? এত সস্তার খুন এ দেশের হাটে মাঠে ঘাটে অতীতে কখনো পাওয়া যেত কিনা মনে করতে পারছিনা। হঠাৎ করে কি হল এই মহিলার? উন্মাদনার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে রাজনীতি নিয়ে এমন সব কথাবার্তা বলছেন যা কেবল একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগির পক্ষেই বলা সম্ভব। মা-বাবা, ভাই সহ পরিবারের সবাইকে এক সাথে হারালে যে কেউ মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে। মানবিক ও চিকিৎসা শাস্ত্রের বিবেচনায় এ আলামত খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠবে মানসিকভাবে অসুস্থ একজনকে সরকার প্রধান করার বৈধতা নিয়ে। খালেদা জিয়ার লেখাপড়ার দৌড় উল্লেখ করার মত তেমন নয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার দাবি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। গেল পাঁচ বছর রাজনীতিবিদ ও সরকার প্রধান হিসাবে এই মহিলার মুখ হতে যেসব আবর্জনা বেরিয়েছে তা কি আদৌ কোন শিক্ষিত মানুষের কথা হতে পারে? সে তুলনায় খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল অনেকটাই পুথিগত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার নামে শেখ হাসিনা রাস্তায় পৈশাচিক বর্বরতায় মানুষ খুন করিয়েছিলেন। আজ আবার তা বাতিল করার জন্য পাখির মত মানুষ খুন করছেন। গুলি করছেন জামাতিদের, খুন করছেন বিএনপি ওয়ালাদের। কাউকে রাস্তায় নামতে দেবেন না, ঘরে বসে মিটিং করা যাবেনা, রাজনৈতিক অফিস খোলা নিষিদ্ধ, এমনকি কেউ আর্ন্তজাতিক পুরস্কার পর্যন্ত নিতে পারবেনা - ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার এমন কুৎসিত ও নগ্ন লালসার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়াকে টেনে আনা হবে ঘোরতর অন্যায়। নেত্রী খালেদা জিয়া তার অন্যায়ের খেসারত দিয়েছেন এবং সামনে আরও দেবেন। কিন্তু এ অন্যায়ের সাথে শেখ হাসিনার অন্যায়ের কোন তুলনা হতে পারেনা। রাজনীতির মাঠে ভাল মানুষ সাজার অনেক রাস্তা আছে। একজন বদ্ধ উন্মাদের উন্মাদনা আড়াল করার জন্য বাকিদের বলি দেয়া হবে অন্যায় ও অবৈধ। দেশের সমসাময়িক ক্রাইসিস শেখ হাসিনার একক তৈরী এবং এ কারণে প্রতি ফোটা রক্তের দায় দায়িত্বও এই জল্লাদের। এখানে ভারসাম্যের সমীকরণ অপ্রযোজ্য ও অপ্রয়োজনীয় মিথ্যাচার।
বিষয়: বিবিধ
১২১১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যখন আমি কোনো দায়িত্বে থাকবো, সেটা আমি আবেগ ও মোহের উর্ধে্ব পালন করবো সেটা নিজের পছন্দ না হলেও- এটাই নিরপেক্ষতা।
কিন্তু নিরপেক্ষতার মানে যারা বুঝে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা তারা আছে বোকার স্বর্গে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন