ব্লগার, আপনি আত্মহত্যা করুন ...।

লিখেছেন লিখেছেন ওয়াচডগ বিডি ১৪ মে, ২০১৪, ০২:২১:৩০ রাত

প্রেক্ষাপট-১:

গোয়ালন্দ ঘাট হয়ে ট্রেনে করে ঢাকা ফিরছি। কমলাপুর ষ্টেশনের অনতিদূরে মালিবাগ ক্রসিং পার হতেই ঠায় দাড়িয়ে গেল ট্রেনটা। মহাকালের সময় হতে হাটি হাটি পা পা করে একটা ঘন্টা বিদায় নিল, কিন্তূ ট্রেনটা সেই যে লাশ হয়ে দাড়াল আর জ্যান্ত করা গেল না। সাথে একগাদা লাগেজ, তাই অন্য দশটা যাত্রীর মত টারজান কায়দায় ট্রেন হতে লাফিয়ে রিক্সা চেপে উউউউ শব্দে গন্তব্যে পৌছার ছবি চিত্রায়ন সম্ভব হলনা। চরম বিরক্তিতে ত্যাক্ত বিরক্ত, না পারছি গিলতে না পারছি ফেলতে। পাঠক, শক্ত হয়ে বসুন, কাহিনীর এখানেই শেষ নয়, শুরু মাত্র! জানালায় থুতনি হেলিয়ে চারদিক চোখ বুলাচ্ছি, যতদূর চোখ যায় বস্তি আর বস্তি। ময়লা, নোংরা আর আবর্জনায় বেড়ে উঠা বস্তি জীবনকে এত কাছ হতে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হলনা। এক মা সদ্য প্রসূত বাচ্চাকে কোন রকমে আকড়ে চুলায় আগুন ধরানোর চেষ্টা করছে, চারদিকে আরও গোটা তিনেক নাবালক শিশুর এলোমেলো চলাফেরা। এ যেন নোংরা রাজ্যে নোংরা রানী আর শাহাজাদা-শাহাজাদীদের রাজত্ব! পাশেই এক মহিলা অন্য মহিলার কেশ চর্চার পাশাপাশি উকুন মারছে মহা আনন্দে। এক কথায় গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষের অলস এবং বৈচিত্রহীন জীবন। এক নাগাড়ে দেখতে গেলে ঝিমুনী এসে যায়। এমনটাই আসছিল বোধহয়, হুড়মুড় করে জেগে উঠলাম বিকট এক গর্জনে। ‘চু...নীর মাগি, তুরে কইলাম ভাত পাকাইতে আর তুই গেলি তুর ভাতারের মার ১৪ গুষ্টি...মারাইতে।’ স্বামী হবে হয়ত ৪টা নাবালক সন্তানের জননীর। ঝাপিয়ে পরে এলোপাথাড়ি লাথি মারতেই কোলের বাচ্চাটা ছিটকে পরল মাটিতে, বাকি ৩টা হাল্কা উত্তম-মধ্যম খাওয়ার পর পিপড়ার মত পালিয়ে গেল। দানবীয় উন্মত্ততায় চুলের মুঠি টেনে মাথা চেপে ধরল ফুটন্ত পানিতে। গগনবিদারী চীৎকারে চারদিক কেপে উঠল। এ নিয়ে বস্তির কাউকে খুব একটা উতলা মনে হলনা। আমার সহযাত্রীর অনেকেই দেখলাম প্রাণখুলে উপভোগ করছে এ দৃশ্য।

প্রেক্ষাপট-২:

এ প্রেক্ষাপটের চাক্ষুস স্বাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে নিশ্চিত, কেউ না কেউ তা খুব কাছ হতে তা দেখেছে। সপ্তাহ দু’এক আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ির এক ডাক্তার পরিবারের মহিলা ইনটার্ন ডাক্তারকে পিটিয়ে হত্যা করে গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। আসামী? স্বামী, এবং তিনিও একজন ডাক্তার। ভালবেসে বিয়ে হয়েছে ত তাতে কি! টাকা, জমি আর ঢাকায় একটা ফ্লাটের চাহিদা ত আর ভালবাসার কাছে বিকিয়ে দেয়া হয়নি! অক্ষম? লেলিয়ে দাও গোটা পরিবার, অত্যাচারে জর্জরিত কর ভালবাসার শুকনো পাতাকে, জিম্মি করে নাও শ্বশুরালয়! টাকা চাই, নইলে রক্ত!! এমন একটা চাহিদার কাছে সমাহিত কর দু’দিন আগের প্যানপ্যনানির প্রেম। ভালবাসা গেলে ভালবাসা মিলবে পানির দরে (ডাক্তার যে!), কিন্তূ ঢাকার একটা ফ্লাট গেলে?

প্রেক্ষাপট-৩:

খবরটা একেবারে তাজা। গত ১৯শে সেপ্টেম্বরের ঘটনা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন সংযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের মাষ্টার্স কোর্সের ছাত্রী মাফরুদা হক সুতপাকে তার ব্যাংকার স্বামী এবং তার পরিবার বিয়ের মেহেদী না শুকাতেই পিটিয়ে পরপারে পাঠিয়ে দিয়েছে। চাহিদার মাত্রাটা এখনো প্রকাশ পায়নি, তবে তা যে খুব একটা সীমিত ছিল তা নিশ্চয় নয়! পাত্র বাবাজীর একই দাবী, মনের দুঃখে ভালবাসার মানুষটি আত্মহত্যা করেছে।

কোন প্রেক্ষাপট নেইঃ

ব্লগার, আপনি কি একজন কবি? আপনি কি ব্যর্থ ভালবাসার অনলে জ্বলে পুড়ে অংগার হচ্ছেন? মোবারকবাদ আপনাকে। এ যাত্রায় আপনি নিজে যেমন জেল-হাজত হতে বেচে গেলেন, তেমনি অন্য একজনকে জানে বাচতে দিলেন। কবিতার আড়ালে যে পশুটাকে আপনি লালন করছেন তার সাথে শেষ মোলাকাত কবে হয়েছিল? পশুর সাথে ফয়সালা না করে ভালবাসা নিয়ে কেবল কবিতা লিখে যাওয়াই বোধহয় সমাজের জন্যে নিরাপদ। এক কাজ করুন, ব্যর্থ প্রেমের কবিতা রচনার অন্তরালে আপনার বৈষয়িক ব্যাপারগুলোর একটা সন্তোষজনক সমাধান করে ফেলুন। ঢাকায় একটা ফ্লাটের দরকার হলে পরিশ্রম করুন, আয় রোজগার বাড়ানোর ধান্ধা করুন। দয়াকরে কবিতার মোহজালে আটকে ফ্লাট চাহিদার কাছে কাউকে জিম্মি করবেন না।

আপনি ডাক্তার? ইঞ্জিনীয়ার? উকিল? শিক্ষক? ব্যবসায়ী? এবং ভালবাসার রুগী, এবং সাথে একটা ফ্লাটের চাহিদাও সংগোপনে লালন করছেন? চিকিৎসা করান এ জৈবিক এবং মানষিক রোগের। যদি ফ্লাটের চাহিদার কাছে ভালবাসা পরাজিত হয়, তা হলে আত্মহত্যা করে অমর করে যান আপনার ভালবাসা। আপনার কাহিনী লাইলী-মজনু, শীরিন-ফরহাদ এবং শেক্সপীয়ার ট্রাজেডীর নায়ক নায়িকাদের মত যুগ যুগ ধরে বেচে থাকবে।

Enough is enough!!!

বিষয়: বিবিধ

১০১৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

221704
১৫ মে ২০১৪ সকাল ১০:১২
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : ভাল লেখা।
এসব লেখা কেউ পড়েনা, পড়লে যদি আমল করতে হয়!
১৮ মে ২০১৪ রাত ১২:১০
170170
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : আপনার ভালো লাগা প্রেরনা হয়ে থাকলো.।
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:২৭
170327
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আমারও আফসোস হচ্ছে এত সুন্দর লেখার পাঠক নেই কেন?

এ অসংগতি, এ সত্যি ঘটনাগুলো সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:০৭
170339
আহমদ মুসা লিখেছেন : @ মেডাম রেহনুমা বিনতে আনিস! সন্দেহ নেই এটি খুব ভাল একটি লেখা। আমি লেখকের এ লেখাটি পড়ার আগে আরেকটি লেখা পড়েই তার সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে এটি পড়া শুরু করি। আসলেই লেখকের লেখার হাত অত্যন্ত শক্ত। সমস্যা হচ্ছে এতো সুন্দর মানসম্মত লেখা এবং সম্মানিত লেখকদেরকে পাঠকের কাছে পরিচিত হওয়ার বা করানোর জন্য আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছি তা হলো অন্য সহব্লগারদের পোস্টকৃত ব্লগে কমেন্ট করে নিজের পরিচিতিটাকে তুলে ধরা। একজন নবাগত লেখক/ব্লগার যদি ব্লগিংয়ে আসার সাথে সাথে নিজেও অন্যদের ব্লগে কমেন্ট করে নিজের মতামত শেয়ার করেন তবে সহজেই তার পরিচিতি যেমন হয়ে উঠবে তেমনি তার লেখার মানগত দিকটাও পাঠকের নজরে ধরা পড়বে। এতে করে নিজের লেখার একটি পাঠক গোষ্ঠীও তৈরী হবে।
কোন ব্লগারের লেখা যতই মান সম্মত হোক না কেন, যদি তিনি নবাগত হন এবং তার লেখাকে নির্বাচিত লেখা হিসেবে কর্তৃপক্ষ স্টীকি করে না দেয়, এসব গুনি লেখকদের মানসম্মত লেখাগুলোকে সাধারণ পাঠক এবং আমাদের মত নগন্য ব্যক্তিদের কাছে পরিচিতি পাওয়া খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে আমার মনে হয়।
222991
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:৩২
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : মতলাববাজ সাংবাদিকরা এসব নির্যাতনের কথা তুলে ধরেনা।

যেখানে টু পাইস পাওয়া যাবে, খুশী কবির, সুলতানা কামালরা বাহবা দিবে সেখানেই তাদের বিচরণ। ঢাবির ইরানী প্রেমিকের সাথে পরকীয়ায় আসক্ত অধ্যাপিকার জন্য বিসর্জন হয় তাদের কুম্ভীরাশ্রু কিন্তু লোভী স্বৈরাচারী পুরুষের নির্মমতার শিকার ললনাদের কথা আসেনা তাদের কাগজে। ধিক!
223015
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
আহমদ মুসা লিখেছেন : তথ্যপ্রযুক্তির যুগান্তকারী বৈপ্লবিক পরিবর্তের এই যুগে এখন চিন্তাশীল মানুষের চিন্তাতে যেমন ডাইনামিকভাবে বিকাশ ঘটছে তেমনি তাদের সৃজনশীলতা ও সৃষ্ট সাহিত্যেরও ব্যাপক প্রসার ও বিস্তার লাভ করছে দ্রুত গতিতে।
আজ থেকে বার বছর আগের কথাও যদি আমরা চিন্তা করি তখন লেখক ও চিন্তাশীল মানুষের পরিচিতি ও নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে এই জগতে মোটামোটি একটি অবস্থান তৈরী করা ছিল যতেষ্ট সময় সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে ব্যক্তির চিন্তাশীলতার গভীরতাও নিজের পরিচিতি বাড়ানোর পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো।
অথচ বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যপ্রযুক্তিয়ানের সুবাধে সহজেই একজন মানুষ তার চিন্তাভাবনাগুলোর দ্রুত শেয়ার করতে পারছে ।এরই সুযোগে আজ আমাদের আফসোস করতে হচ্ছে না একাডেমিক্যালী উচ্চতর পর্যায়ে কোন প্রতিভাবান যেতে না পারলেও তার প্রতিভা থেকে দেশ ও জাতি আগের মত তেমন বঞ্চিত হতে হচ্ছে না। তার চিন্তাভাবনা ও প্রতিভার বিকাশ আজ অনলাইনের মাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করতে পারছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবাদে আমার মত অজপড়া গায়ের লোকও অনেক মেধাবী ও প্রতিভাবান চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বের চিন্তাভাবনা থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারছি। ব্লগার হতে না পারলেও অন্তত বেধাবী প্রতিভাবান লেখক/ব্লগারদের লেখা পড়ার সুযোগ পাচ্ছি।
আমাদের সমাজে, মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ এমন অনেক ঘটনা অহরহ ঘটছে, যা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য যাদের ভূমিকা রাখার কথা ছিল তাদের বেশীর ভাগই আজ বিষাক্ত রাজনৈতিক দুষ্ট চক্রের ধাপটে নিজের নৈতিক দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছে পার্থিব মোহে।
ব্লগে উল্লেখিত বিভিন্ন ঘটনা/অঘটনগুলোর ব্যাপারে আমাদের মিডিয়াগুলো আজ দায়সারা গোছের নিউজ করে। এর ফলে সমাজের ভিতরের আসল চিত্রটা জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় অনেক মানুষ।
আজ সময়ের প্রেক্ষপটে প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক কিছুই পাল্টিয়ে গেছে। পাল্টিয়ে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে আমাদের মত যারা সুস্ত চিন্তা করি, সুস্ত চিন্তার বিকাশ যারা ঘটাতে আন্তরিকভাবে কামনা করি তাদেরকেই।
সম্মানিত লেখকের লেখা থেকে সমাজের অনেক বাস্তব চিত্রই ফুটে উঠেছে। যা হয়তো কোন মিডিয়ায় তেমন গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হতো না।
223028
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৩
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সত্যের কলমধারিকে স্বাগতম! নিজের ব্লগে আমন্ত্রন থাকলো আসবেন সময় করে! আর চালিয়ে যান লেখা কারো মন্তব্যের জন্য নয়, নিজের আত্ম-শান্তনা আর পরোপকারের জন্য
১৯ মে ২০১৪ রাত ১১:৪৭
170880
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে.।।
223543
১৯ মে ২০১৪ রাত ১১:৫১
ওয়াচডগ বিডি লিখেছেন : ভাই আহমেদ মুসা.।।আপনার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো।কিন্তু সময়ের অভাবে সবার লেখা পড়া এবং কমেন্ট করা হয় না.। সব মিলিয়ে ধন্যবাদ আপনাকে.।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File