স্বরচিত অসমাপিত উপন্যাসের অংশবিশেষ...

লিখেছেন লিখেছেন কাঠপেনসিল ০৩ জুলাই, ২০১৪, ১০:২৪:০৯ সকাল

আরবি রমজান মাস।

পবিত্র এই মাসটিতে পরকালের পুঁজি বাড়াতে সদা ব্যস্ত জগতের ধর্মভীরু মুসলমানেরা। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। রমজানের প্রতিটি দিনই যেন বছরের অন্যান্য দিন থেকে অনেক আলাদা। একরকম গম্ভীর ভাব বিরাজ সারাদিন। মুন্সি-মৌলভীরা মসজিদ থেকে যেন ফিরতেই চায়না। তবুও প্রিয়জনদের সাথে ইফতারে শামিল হতে সন্ধ্যার আগে আগে পৌঁছে যায় নিজ গৃহে। অলস ও আড্ডাবাজ মানুষদের পরিবর্তনটাও লক্ষ্য করার মত। যেই মানুষগুলো দোকানে দোকানে বাম পায়ের উপর ডান পা তুলে, বাম হাতে চায়ের কাপ আর ডান হাতে সিগারেট নিয়ে আড্ডা মেরে অলস সময়কে পৌঁছে দিতো রাত দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত, আজ তাদের অনেকেই ঘরে ফেরে সন্ধ্যার আগে আগে। ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকে অনেকটা সময়। পুরো ইফতারের অর্ধেকটা শেষ হতে না হতেই দৌড়ে যায় মসজিদে। প্রিয় মানুষটার হঠাৎ এমন পরিবর্তনে খুশি পরিবারের অন্যান্যরাও।

অনেক মানুষ আবার তাদের চির-সঙ্গী স্বভাবটা পাল্টাতে পারেনা। পরিচিত মানুষদের সামনে না খেতে পেরে লুকিয়ে লুকিয়ে চা-সিগারেটে মুখ লাগায় কাপড়ের আড়ালে বসে। পরিচিত কেউ দেখে ফেললে তৎক্ষণাৎ বলে দেয়, "দোস্ত... আমার গ্যাস্ট্রিক, রোজা রাখতে পারিনা।" মুচকি হেসে চলে যায় বন্ধুটি। তবে ছোট ছেলেমেয়েদের মাঝে অন্যরকম এক প্রতিযোগিতার উদ্ভব হয় এই রমজানে। বিকেলের মাঠে খেলতে গিয়ে বাক্যালাপ করতে থাকে,

- কিরে ব্যাটা, রোজা কয়টা রাখলি?

- আজকে বাদে সবগুলা।

- তোর থেকে আমি বেশি রেখেছি।

- পুকুরে ডুব দিয়ে পানি খেয়েছো কতবার?

- ইশ... একবারও না। আরে ব্যাটা... আমি কি তোর মত?

মাঠের অন্য প্রান্তে জমে ওঠা কোন কোলাহলের মাঝে কেউবা আবার চিল্লানি দিয়ে বলে ওঠে, "আরে, আরে... থুথু খাইস না, রোজা ভাঙবে।" খেলার মাঠে ঝগড়া হলে কেউবা আবার বলে থাকে, "তুই আমারে গালি দিছস নাহ? তোর রোজাও ভাইঙ্গা গেছে।"

ক্রিকেটের বল টোপা-পোনার ডোবায় পড়লে অথবা কোথাও আটকে গেলে, সেটা তুলে আনার দায়িত্ব পড়ে ভদ্র, শান্তশিষ্ট অথবা লিকলিকে দেহের অধিকারী কারো উপর। অজুহাত দেখিয়ে কেউ কেউ বলে উঠে, "আজ আনতে পারবোনা, আমি রোজা।" মধ্য থেকে দাপাকাপা ছেলেটি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে, "তুই রোজা... আর আমি কি বেরোজা?" ব্যাস, কঠিন কাজটার দায়িত্ব পড়ে নীরবে দাড়িয়ে অন্য থাকা কারো উপরে। কেউ কেউ সে দায়িত্ব এড়াতে ছল করে বলে, "আমি শুধু আজকেই রোজা থাকতে পারিনি, এতদিন সবগুলোই থেকেছি, তাই আজ বেশি দুর্বল।"

এমনি করে হয়তো কেটেছে আমাদের শৈশবটাও, যা এখন ঢেকে গেছে কালের অতলে।

রমজানের এমন দিনে ছাত্রদের মেসের চিত্রটা অনেক আলাদা। রোজা থেকে কেউ কেউ সারাদিন বই নিয়ে পড়তে থাকে, আবার কেউ বিছানায় পড়ে থাকে সোজা হয়ে। কেউবা সারারাত পাড়ি দেয় তাসের খেলায় মেতে থেকে। সেহরির সময় হলে খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুমে কাটিয়ে দেয় দুপুর পর্যন্ত। যোহরর নামাজ শেষে আবার তাস। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রোজার ক্লান্তি যেন তাদের ছুঁতেই পারে না।

বিষয়: বিবিধ

১২৫২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

241237
০৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:১২
রাইয়ান লিখেছেন : লেখাটি পড়তে পড়তে শৈশব যেন চোখের সামনে দিয়ে খেলে গেল কিছুক্ষণের জন্য। এরকমই হয় কিন্তু ! রোজা রাখা নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা , পানি বেশি খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ .... ইশ , নস্টালজিক হয়ে গেলাম ! Day Dreaming
241249
০৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:১৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
241263
০৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব খুব ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File