আমার দেখা থ্যাংকস গিভিং
লিখেছেন লিখেছেন ফাহমিদা সুলতানা শিল্পী ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:৫৮:৪৯ দুপুর
আমি আমেরিকাতে বেশি দিন হয় নি এসেছি। এসেই হেলোইন ডে' ( ভুত উত্সব) দেখলাম আর মনে মনে ভাবলাম এটাও একটা উত্সব ? সবাই ভুতের ড্রেস পরে ভুত ভুত খেলে। এরপরই শুরু হলো থ্যাংকস গিভিং ডে। মনে হলো সেদিনই প্রথম উত্সবটির নাম শুনলাম। আর মনে মনে ভাবলাম ,এ দিন বুঝি সবাই সবাইকে থ্যাংকস দেয়। আমিও ছোট বড় সবাইকে সারা দিন থ্যাংকস দিলাম। আমি ভুলেই গেলাম যে এ উত্সবের ছবি আমি গত বছর ফটো ফিচার হিসেবে পত্রিকায় ছেপেছি। যাই হোক, থ্যাংকস গিভিং ডে' হচ্ছে ,আমরা যে আমেরিকার মাটিতে মান -সম্মান নিয়ে বসবাস করতে পারছি সে জন্য ইশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা এবং নিজের খাবার অন্যের সাথে ভাগ করে খাওয়া। প্রত্যেক বছরের নভেম্বর মাসের ৪র্থ বৃহস্পতিবারে আমেরিকায় এবং অক্টোবারের ২য় সোমবারে কানাডায় এই দিনটি পালন করা হয়। থ্যাংকস গিভিং ডে-কে অনেকে আবার দ্য টার্কি ডেও বলে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একটা অনুষ্টান।
থ্যাংকস গিভিং ডে'র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। খাবারের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। টার্কি ময়ূরর মতো বড় সাইজের বনমোরগ।যদিও আমেরিকানদের অনেকেই জানেন না থ্যাঙ্কস গিভিং কবে থেকে শুরু, কেনই বা উৎসবটির নাম থ্যাঙ্কস গিভিং ডে হলো, কাকেই বা এমন ঘটা করে থ্যাঙ্কস জানান হচ্ছে! তারা জানেন, থ্যাঙ্কস গিভিং মানেই পার্টি, বিশাল ভোজ আয়োজন, পারিবারিক মিলনমেলা।
তবে প্রথম কোথায় কিভাবে এ দিন টি পালিত হয়েছে এ নিয়ে বিতর্ক আছে। বেশিরভাগ ঐতিহাসিকরা মনে করেন ,১৬২১ সালে প্লিমথ , ম্যাসাচুসেটস বে কলোনিতে প্রথম এই দিনটি উদযাপন করা হয়েছিল। ডালাস থ্যাংকস গিভিং ফাউন্ডেশন দাবি করে ,,১৫৪১ সালে স্প্যানিশ অভিযাত্রী ফ্রান্সিসকো ভাস্কুয়েজ প্রথম থাঙ্কস গিভিং ডে পালন করে। তবে সাধারনভাবে প্লিমথ অভিযাত্রীদেরকেই এই দিনটির সূচনাকারী হিসেবে ধরা হয়। ১৬২১ সালে আমেরিকার মাটিতে প্রকৃত ফসল তোলা উপলক্ষে তারা ৩ দিন ধরে যে প্রার্থনা এবং ভোজের আয়োজন করেছিলেন ,সেটাকেই সাধারনভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে মেনে নেয়া হয়। বলে রাখা ভালো যে প্লিমথ অভিযাত্রীরা কিন্তু প্রথমেই ঘটা করে এ দিনটি পালন করে নি। নিজ ধর্ম পালনের জন্য ইংল্যান্ড -এ এরা সেপারিটিস্ট নামে ধর্ম প্রচারক দল হিসেবে পরিচিত ছিল। চার্চ অব ইংলান্ডের অন্যয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য তাদেরকে ব্রিটিশ রাজ্যের রোষানলে পড়তে হয়। ফলে ইংলান্ডে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। এদেরই একটি অংশ হলান্ডে চলে যায়। সেখানে আত্মগোপন করে থাকার পর তারা নিশ্চিন্তে জীবন যাপন এবং ধর্ম প্রচারের জন্য এমন একটি দেশ খুজতে থাকে যেখানে তাদের কাজে কেউ বাধা দিবে না। তখন এই সেপারিটিস্ট দলটি ঠিক করলো সপরিবারে তারা সদ্য আবিস্কৃত আমেরিকাতে চলে যাবে। তাদের সাথে দক্ষিন -পশ্চিম ইংল্যান্ড এবং হল্যান্ড থেকে বেশ কিছু ভাগ্যান্বেষী ব্যাক্তিও যোগ দেয় । ১৬২০ সালে মে ফ্লাওয়ার ,নিনা ও পিনটা নামে ৩ টি জাহাজে করে তারা রওনা দেয়। প্রতিকুল আবহাওয়ায় ১০২ জন যাত্রীর মধ্যে ৫০ জনই মারা যায়। কনকনে শীতের মধ্যে মে ফ্লাওয়ার জাহাজটি আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস অঙ্গ রাজ্যের প্লিমথ বন্দরে এসে পৌছায়। পুরুষরা মাথা গুজার মত কিছু বানানোর জন্য জাহাজ থেকে নিচে নামলেও শীতের কারণে নারী ও শিশুরা জাহাজেই থেকে যায়। যে কজন অভিযাত্রী প্লিমথ বন্দরে নেমেছিল শীত ,ক্ষুধা ও রোগের কারণে অর্ধেক মারা যায়। ২০ জন মহিলার মধ্যে ৫ জন বেচে রইলো। শীত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা জাহাজ থেকে নেমে নৌকায় করে নিও প্লিম্থে যায় এবং সেখানে বসতি স্থাপন করে।
ওখানেই তারা প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলে। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কিভাবে ভুট্টা চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয় এবং কিভাবে ম্যাপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।
১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য ভুট্টা নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিল। ভুট্টার ফলন এত বেশিহয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে ভূরিভোজের আয়োজন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এমন সুন্দর শস্য দান করার জন্য। তারপর উপস্থিত সবাইসবাইকে ধন্যবাদ জানান সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য।
১৭৮৯ সালের ২৬ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন প্রথম জাতীয় পর্যায়ে থাঙ্কস গিভিং ডে' কে স্বীকৃতি দেন। ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন এই দিনটিকে প্রথম বারের মত বাত্সরিক ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
প্রায় চার শ বছর আগে এ দিনটি শুরু হলেও আজও জাকজমক ভাবে পালন করা হয়। তবে বর্তমানে এদিনটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের চেয়ে পরিপূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। 'থ্যাংকস গিভিং ডে'র ঠিক পরের দিনটি হচ্ছে আমেরিকার আরও একটি ব্যতিক্রমী দিবস। যাকে বলা হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে।এই দিনে আমেরিকায় বছরের সবচেয়ে বড় সেল দেয়া হয়। আর বিপনী বিতান গুলো ভিরে উপচে পরে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন